দেশে ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত
Published: 11th, March 2025 GMT
দেশে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ লোক কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে এই রোগের প্রাদুর্ভাব উদ্বেগজনক হারে উর্ধ্বমুখী। কিডনি রোগের কারণে শুধু ব্যক্তিগত জীবনই বিপর্যস্ত হয় না বরং এই রোগ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপরও বিশাল অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে। কিডনি রোগের মারাত্মক পরিণতি, অতিরিক্ত চিকিৎসা খরচ এবং চিকিৎসা ব্যয় সাধ্যাতীত হওয়ায় সিংহভাগ রোগী প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা যায়।
বিশ্ব কিডনি দিবস-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কিডনি এওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটির (ক্যাম্পস) আয়োজনে আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘কিডনি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণ: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এমন তথ্য জানান।
গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাম্পস-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডা.
তিনি বলেন, বাংলাদেশেও কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাব উদ্বেগজনক। তথ্য মতে, প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ লোক কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার কিডনি রোগী ডায়ালাইসিসের ওপর নির্ভরশীল হয়। শহর ও গ্রামাঞ্চলে সমানভাবে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। দারিদ্র্য, অসচেতনতা, চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতা এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। আরও ২৪ থেকে ৩০ হাজার রোগী হঠাৎ কিডনি বিকল হয়ে সাময়িক ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়। এই রোগ আমাদের দেশের জন্য একটি বড় অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা। পক্ষান্তরে, সবাই যদি কিডনি রোগের ব্যাপকতা, ভয়াবহতা, পরিণতি ও কারণ সম্পর্কে সচেতন থাকে এবং স্বাস্থ্য সম্মত জীবনযাপন করে তা হলে ৬০-৭০ ভাগ ক্ষেত্রে এই মরণঘাতী কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব।
কিডনি রোগের সাধারণ কারণগুলো হলো- অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, স্থূলতা, নেফ্রাইটিস, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান, ব্যাথানাশক ঔষধের অতিরিক্ত ব্যবহার, জন্মগত ও বংশগত কিডনি রোগ, মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ ও পাথুরে রোগী। আমরা একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবো যে, প্রায় সবগুলো কারণই আমাদের অস্বাস্থ্যকর জীবন ধারার সঙ্গে জড়িত, একটু সচেতন হলে প্রতিরোধ যোগ্য। তাছাড়া যারা ঝুঁকিতে আছেন যেমন যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ওজন বেশি, বংশে কিডনি রোগ আছে, যারা ধূমপায়ী, যারা তীব্র মাত্রার ব্যাথার ঔষধ খেয়েছেন, যাদের পূর্বে কোনো কিডনি রোগের ঝুঁকি আছে তাদের বছরে অন্তত ২ বার প্রস্রাব ও রক্তের ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করে নেওয়া উচিৎ। কেননা প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগ শনাক্ত করতে পারলে চিকিৎসার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
ডা. সামাদ বলেন, কিডনি বিকলের চিকিৎসা সর্বাধিক ব্যয়বহুল। ফলে চিকিৎসা করতে গিয়ে পুরো পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। তাই ক্যাম্পস এর স্লোগান ‘কিডনি রোগ জীবননাশা-প্রতিরোধই বাঁচার আশা’ ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চাই। অর্থাৎ কিডনি রোগ প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করে চিকিৎসার মাধ্যমে মরণব্যাধি কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন গণসচেতনতা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ডন ক ডন র গ এই র গ
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের শুল্ক ও ভারতের সিদ্ধান্ত—দুটোই উদ্বেগজনক
আজ থেকে ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্কব্যবস্থা কার্যকর হতে যাচ্ছে। একই দিনে ভারতের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের তৃতীয় দেশে রপ্তানি পণ্যসম্ভার নিয়ে যাওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করা হয়েছে, যা একটি উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এই সিদ্ধান্ত, যা ভারতীয় বন্দর এবং বিমানবন্দরগুলো দিয়ে পণ্য পরিবহনের ওপর প্রভাব ফেলবে, বাংলাদেশে রপ্তানি কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে ভুটান, নেপাল এবং মিয়ানমারের বাজারে। এই সুবিধা বাণিজ্য সহজতর করতে এবং খরচ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাই আকস্মিক এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য ‘লজিস্টিক্যাল’ চাপ বাড়াতে পারে, যা আঞ্চলিক বাজারে এর প্রতিযোগিতার সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
এই সিদ্ধান্ত তৈরি পোশাকের মতো বর্ধনশীল খাতের প্রতিযোগিতায় প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা যাচ্ছে। তবে এটি প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের একটি বৃহত্তর সমস্যাকে তুলে ধরছে। এমন একটি পদক্ষেপ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
বিশ্ববাণিজ্য ক্রমেই আরও জটিল এবং প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে সহযোগিতা আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দুটি দেশ দীর্ঘকাল ধরে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ভাগাভাগি করে আসছে। বাণিজ্যের সুষ্ঠু প্রবাহ রক্ষা করা উভয়ের জন্যই অপরিহার্য।
ভারত বাংলাদেশের শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদারগুলোর মধ্যে একটি। এই নীতিগত পরিবর্তন ভবিষ্যতে উভয় দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সংগতিপূর্ণ নয়। আমরা আন্তরিকভাবে আশা করি যে ভারত তার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করবে এবং উভয় দেশের জন্য উপকার হয়, এমন একটি সমাধান বের করতে আলোচনায় বসবে। দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক বাজারের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য সহযোগিতামূলক একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। এই ধরনের সিদ্ধান্ত উভয় দেশের সম্মিলিত উন্নতি এবং প্রবৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করা উচিত নয়।
সবশেষে ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্কব্যবস্থা কার্যকর হওয়া এবং অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের জন্য বাণিজ্য লজিস্টিকসের ক্ষেত্রে যে সুবিধা, অধিকার এবং উপকারিতা কমে যাচ্ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর উচিত বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের জন্য একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা।
সেলিম রায়হান, নির্বাহী পরিচালক, সানেম