স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়ে কক্সবাজারে মশালমিছিল
Published: 11th, March 2025 GMT
সারা দেশে নারীর প্রতি অব্যাহত সহিংসতা এবং মব (দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা) বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্যর্থ হয়েছেন দাবি করে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে কক্সবাজারে মশালমিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে কক্সবাজার নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠনের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মশালমিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে ঘুম গাছতলা এলাকার পুরাতন শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শেষ হয়। পরে সেখানে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদ সমাবেশ। কর্মসূচিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), উদীচী, খেলাঘর আসর, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, গ্রিন ভয়েস, ডিভা ফাউন্ডেশনসহ কয়েকটি সংগঠনের কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। সভাপতিত্ব করেন জেলা খেলাঘরের সভাপতি সুবিমল পাল পান্না।
সমাবেশে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কক্সবাজার জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ দেব বলেন, ‘এমন বাংলাদেশ আমরা কখনো চাইনি। পোশাকের নামে নারী লাঞ্ছনাকারী ও নারী নিপীড়নকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। সাত মাসে মব জাস্টিসের নামে যেসব বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেসবেরও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে।’
বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন কক্সবাজার জেলা শাখার নেত্রী ফাতেমা আক্তার বলেন, যে পুরুষ ধর্ষণ করে, সে কখনো মানুষ হতে পারে না। সে বিকৃত মস্তিষ্কের পিশাচ। এমন পিশাচের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঘরোয়া রান্নার স্মৃতিময় বই ‘খাদ্যবিলাস’
নাম বললেই চেনা যাবে, আনোয়ারা তরফদার এমন কোনো বিখ্যাত রন্ধনশিল্পী নন। তাঁর রান্না একান্তই ঘরোয়া, তবে তাঁর সৃজনশীলতা ভিন্নতর। সেসব রান্নার রেসিপি নিয়েই প্রকাশিত তাঁর রান্নার বই ‘খাদ্যবিলাস’–এর মোড়ক উন্মোচন হলো আজ বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে।
একসময়ের জনপ্রিয় সাময়িকী সাপ্তাহিক ‘বিচিত্রা’য় প্রায় ৩০ বছর আগে আনোয়ারা তরফদারের রান্নার রেসিপিগুলো প্রকাশিত হয়েছিল। পরে সেই লেখাগুলো নিয়ে বইও প্রকাশিত হয়। অনেক দিন থেকেই বইটি বাজারে ছিল না। আনোয়ারা তরফদারের মেয়ে কবি শামীম আজাদ বইটি নতুন করে সম্পাদনা ও পরিবর্ধন করেছেন। প্রকাশ করেছে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। তিনি বলেন, ষাটের দশকে মধ্যবিত্ত পরিবারের রান্নার বিলাস বাহুল্য ছিল না বটে, কিন্তু তার মধ্যেও বিশেষ বিশেষ দিনে প্রিয়জনদের সামনে ভালোমন্দ রান্না তুলে ধরতে চাইতেন সব গৃহিণী। সীমিত বাজেটে কীভাবে হৃদয়, বুদ্ধি, মমতা এবং ভালোবাসায় সাধারণ রান্নাকে অসাধারণ সুস্বাদু করে আপনজনের রসনা তৃপ্ত করা যায়, সে ব্যাপারটি আনোয়ারা তরফদারের ‘খাদ্যবিলাস’ বইটিতে রয়েছে।
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘আমরা এখন বাণিজ্যের পৃথিবীতে বসবাস করছি। একটা সময় প্রকৃতি ও সভ্যতা জড়াজড়ি করে থাকত। এখন চলছে প্রকৃতি বিনাশী কর্মকাণ্ড। এই রান্নাগুলো কেবল খাদ্য প্রস্তুত করা নয়, এর সঙ্গে সেই সময়ের যৌথ জীবন, সংস্কৃতি, প্রকৃতি সংলগ্নতা আর মায়া–মমতার বিষয়ও মিলে মিশে আছে। এই রান্না একান্তই বাঙালির ঘরোয়া রান্না। ঘরে ঘরে বাঙালির রান্না যেন টিকে থাকে, সেই কামনা করি।’
অর্থনীতিবিদ সেলিম জাহানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন শাহীন আনাম, আফজাল হোসেন, আব্দুন নূর তুষার, আলপনা হাবিব ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মজুমদার বিপ্লব। মায়ের স্মৃতিচারণা করেন ছেলে ফজলে আকবর তফরদার ও বইটির সম্পাদক কবি শামীম আজাদ। ধন্যবাদ জানান নাতি লাবিব তালুকদার।
‘খাদ্যবিলাস’ বইটি নিয়ে আলোচকেরা বলেছেন, এই রান্নার মধ্যে জড়িয়ে আছে স্মৃতি। একটি সময়কে ধরে রাখা আছে। এগুলো আসলে মায়ের হাতের রান্না। আর মায়ের হাতের রান্না শুধু খাদ্য নয়, অমৃতের মতো।
আনোয়ারা তরফদারের জন্ম গত শতকের ত্রিশের দশকে বৃহত্তর সিলেটে। স্বামী ছিলেন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। স্বামীর চাকরিসূত্রে অবিভক্ত ভারতের আসাম ও পরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে থেকেছেন। স্বামীর সীমিত আয়ে তিনি নিপুণভাবে সংসার পরিচালনা করেছেন। বাঙালির চিরায়ত রান্নায় তাঁর ছিল বিশেষ পারদর্শিতা। এ ছাড়া সূচিকর্ম, মৃৎপাত্রে অঙ্কনসহ বিভিন্ন কারুকর্মেও তাঁর বিশেষ সৃজনশীলতা ছিল। একটা সময় তিনি ঢাকায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে মেয়েদের পুঁতির গয়না তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।