স্টাম্প হাতে নিয়ে দু’জনের ডান্ডি ডান্স, কিংবা ড্রেসিংরুমে ভাংড়া... ছত্রিশের বিরাট কোহলি আর সাঁইত্রিশের রোহিত শর্মাকে কোথাও গিয়ে দু’জনকে এতটুকু সিনিয়র মনে হয়নি। শুভমান-রাহুলদের সঙ্গে সমান তালে উদযাপন করেছেন তারা। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতার পর নিয়ম মেনে সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন। ভারতীয় অধিনায়ক তাঁর দলের সাফল্যের কিছু রহস্যের কথাও শুনিয়েছেন। কিন্তু দুবাইয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের কৌতূহলী মন বুঝে নিতে কষ্ট হয়নি রোহিতের। তাই সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে এসে চেয়ার ছেড়ে উঠে যাওয়া মিডিয়াকে থামিয়ে দেন।
‘ওহ, আরেকটি কথা। আমি এখনই এই ফরম্যাট থেকে অবসর নিচ্ছি না। এটা এই কারণে জানানো যে ব্যাপারটি নিয়ে যাতে গুজব না ছড়ায়।’ অট্টহাসি তাঁর। এর আগে বিরাট কোহলিও ব্রডকাস্ট ক্যামেরার সামনে ভারতীয় এই দলের পরবর্তী লক্ষ্য নিয়ে কথা বলেন। ‘আপনি যখন দল ছেড়ে যাবেন, চাইবেন যেন দল ভালো অবস্থায় থাকে। আমি মনে করি, আমাদের ভালো একটা দল আছে। যারা আগামী আট বছর বিশ্বক্রিকেট শাসন করার সামর্থ্য রাখে। শুভমান, শ্রেয়াস, কে এল রাহুল, হার্দিক দারুণ ব্যাটিং করেছে।’ দুই দুইয়ে চার করে ভারতীয় মিডিয়ার নতুন কৌতূহল– তাহলে কি ২০২৭ বিশ্বকাপেও চলবে রো-কো জুটি (রোহিত আর কোহলিকে মিলিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় এ জুটির নামকরণ)।
সর্বশেষ আইসিসির তিনটি টুর্নামেন্টে যে দল ২৪ ম্যাচের মধ্যে ২৩টিতে জয় পেয়েছে, সেই দলের অধিনায়ক যদি বলেন আরও খেলবেন, তাতে প্রশ্ন তোলার মানুষ কোথায়। যে দল গত আঠারো মাসে দু-দুটি শিরোপা জিতেছে, সেই দলের তারকা ব্যাটার কোহলি যদি পরের বিশ্বকাপেও খেলার লক্ষ্য রাখেন, তাকেই বা থামাবেন কে?
আসলে এই বয়সেও কোহলি যে ফিটনেস ধরে রেখেছেন, যে দক্ষতায় তিনি ইনিংস টেনে নিয়ে যাচ্ছেন, তাতে করে দক্ষিণ আফ্রিকায় পরের বিশ্বকাপে তাঁকে দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আর রোহিতের স্মৃতিতে টি২০ বিশ্বকাপ আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থাকলেও ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের কোনো মুহূর্ত নেই। তাই তিনিও চালিয়ে যেতে পারেন আরও দুই বছর। তবে এজন্য শুধু নিজেকে নয় দলকেও সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য তৈরি করতে হয়। যেটা কয়েক বছর ধরেই করে চলেছে ভারতীয় দল। এটাতো কেউ অস্বীকার করবে না যে এবারে দুবাইয়ের এক ভেন্যুতে পাঁচটি ম্যাচ খেলার সুবিধা পেয়েছে ভারত, তবে এটাও ঠিক গত ২০২৩ বিশ্বকাপে তারা ভিন্ন ভিন্ন ৯টি ভেন্যুতে খেলেছে। গত বছর টি২০ বিশ্বকাপে তারা নিউইয়র্কে শুরু করে শেষ ছয়টি ম্যাচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাঁচটি ভিন্ন ভেন্যুতে খেলেছে। ২৩টি জয় এসেছে তাদের ষোলোটি ভেন্যুতে।
‘আমাদের দলের মান ঠিক কী, তা এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়। অনেক কম দলই দেখেছি, যারা কিনা টানা দুটি আইসিসি টুর্নামেন্ট জিতেছে অপরাজিত থেকে। সেখানে কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ছিল না, যা হোক হবে– এভাবেই আমরা এগিয়ে গিয়েছি। তবে আমাদের দলে সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য ক্রিকেটার রয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই দেখুন, দলের এগারো জনের যে যখন ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছে, সে তার সেরাটা দিতে চেষ্টা করেছে। দলের মধ্যে বোঝাপড়াটা বেশ ভালো আমাদের। টুর্নামেন্টের আগেও বলেছি বাইরে থেকে অনেক চাপ ছিল। যদি আমরা এখানে একটি ম্যাচ হেরে যেতাম, তাহলে বাইরে থেকে অনেক কথা হতো। কিন্তু সেসব বাইরে ঠেলে ছেলেরা তাদের খেলায় মনোযোগ ধরে রেখেছে, তারা আনন্দ খুঁজে নিয়েছে ম্যাচ থেকে। এভাবেই দু-তিন বছর ধরে খেলছি আমরা আর এ কারণেই আজ এখানে।’
গর্বিত অধিনায়ক রোহিত। তারা যে আসলেই সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য তৈরি, তার একটা উদাহরণ বোধহয় এবারের ঋষভ পন্ত। কোচ গৌতম গম্ভীর তাঁর মতো ফর্মে থাকা ব্যাটারকে বসিয়ে রেখে এবার কে এল রাহুলকে খেলিয়েছেন। কেন? তার উত্তর কে এল রাহুল দিয়ে দিয়েছেন সব ম্যাচেই।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব র ট ক হল আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রসূতির মৃত্যুতে হাসপাতালে ভাঙচুর, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ-সেনাবাহিনী
লক্ষ্মীপুরে কর্তব্যরত ভিজিটরের অবহেলায় একটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহিদা বেগম (৩২) নামে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর অভিযোগে গ্রামবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভাঙচুর চালিয়েছে। এসময় অবরুদ্ধ করে রাখা হয় ভিজিটর আকলিমাকে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে এ ঘটনাটি ঘটে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে খবর পেয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ও অবরুদ্ধ ভিজিটরকে উদ্ধার করে।
পরে স্বামীর আবেদনের প্রেক্ষিতে মৃত প্রসূতির লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ ।
প্রসূতির পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, বুধবার বিকালে পশ্চিম চৌপল্লী গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী মহসিন তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শাহিদা বেগমের প্রসব বেদনা দেখা দিলে উত্তর জয়পুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের নিরাপদ প্রসব সেন্টারে নিয়ে আসেন। কর্তব্যরত ভিজিটর আকলিমা বেগমের সহায়তায় রাতে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে শাহিদার একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। বাচ্চা প্রসবের পর থেকে শাহিদা বেগমের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয়। স্ত্রীর ব্যথা যন্ত্রণা সহ্য না করতে পেরে স্বামী মহসিন বারবার স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভিজিটরকে অনুরোধ করেন জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু ভিজিটর আকলিমা তাকে অন্য হাসপাতালে নিতে দেননি। নিজেই শাহিদা বেগমকে চিকিৎসা দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে ভোর রাতে সাহিদার মৃত্যু হয়।
বিষয়টি গোপন করে আকলিমা সাহিদার স্বামীকে পার্শ্ববর্তী শামসুল হুদা জেনারেল হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। শাহিদার স্বামী তার স্ত্রীকে শামসুল হুদা জেনারেল হসপিটালে নিয়ে গেলে তারা উক্ত রোগী গ্রহণ করতে রাজি হননি।
পরবর্তীতে নোয়াখালীর প্রাইভেট হসপিটালে নিয়ে গেলে হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক জানান রাতেই শাহিদার মৃত্যু হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ স্বজনরা শাহিদার লাশ নিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মিছিল করে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা হাসপাতালে ভাঙচুর করে।
খবর পেয়ে স্থানীয় দত্তপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে চন্দ্রগঞ্জ থানা ওসির নেতৃত্বে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে রাত ৮টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। অবরুদ্ধ ইউনিয়ন পরিবার-পরিকল্পনার পরিদর্শক আকলিমা আক্তারসহ অন্য নারী নার্সদের সেনাবাহিনী ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়জুল আজিম নোমান জানান, নিহতের লাশ পরিবার নিয়ে গেছে। অবরুদ্ধ ভিজিটরসহ অন্যদের সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। মামলা অথবা লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে পরিবেশ শান্ত রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক নাজমুল হাসান মুঠোফোনে বলেন, “প্রসূতি মা শাহিদা ডেলিভারি ব্যথা নিয়ে যখন এসেছে, তখন তার প্রচুর জ্বর ছিল। আমাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বরত ভিজিটর আকলিমা রোগীর স্বজনদের বলছে আপনারা লক্ষ্মীপুর নিয়ে যান। তারা বলছে আপনারা চেষ্টা করেন। কারণ এ রোগীর আগের দুইটি সন্তান এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে হয়েছে। এটি ওই-অঞ্চলের নারীদের আস্থার সেবা কেন্দ্র। প্রতি মাসে প্রায় ৪০টি ডেলিভারি হয় এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। রোগীর বাচ্চা নরমালে হয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখা দিলে সকালে প্রসূতি মাকে স্বজনরা নোয়াখালী নিয়ে যায়। এরপর তারা লাশ নিয়ে এসে হাসপাতালে ভাঙচুর করে। ভিজিটরকে অবরুদ্ধ করে রাখে, পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে উদ্ধার করে সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায় বলে আমি শুনেছি।”
ঢাকা/লিটন/টিপু