সংস্কারের জন্য টাস্কফোর্সের সুপারিশগুলো কেন গুরুত্বপূর্ণ
Published: 11th, March 2025 GMT
গত দেড় দশকে দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য অনেক বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানার আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২ অনুযায়ী, দেশের সবচেয়ে বেশি ধনী ১০ শতাংশ মানুষের হাতে এখন দেশের মোট আয়ের ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে সবচেয়ে গরিব ১০ শতাংশ মানুষের আয় দেশের মোট আয়ের মাত্র ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। আয়বৈষম্যের চেয়েও ভয়াবহ সম্পদের বৈষম্য। ধনী ১০ শতাংশের হাতে সম্পদের ৫৮ দশমিক ৫ শতাংশ পুঞ্জীভূত আর নিচের দিকের ৫০ শতাংশের হাতে আছে মাত্র ৪ দশমিক ৮ শতাংশ সম্পদ।
এই ব্যাপক অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে পারে সামাজিক নিরাপত্তা খাত। কিন্তু বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল এবং যতটুকু বরাদ্দ হয়, তারও একটা বড় অংশ প্রকৃতপক্ষে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছায় না। মোট বরাদ্দ বেশি দেখানোর কৌশল হিসেবে এ খাতে এমন কিছু কর্মসূচি দেখানো হয়, যা বাস্তবে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিই নয়। ফলে প্রয়োজনের তুলনায় খুব কমসংখ্যক দরিদ্রই সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা পায়, আর যা–ও বা পায়, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। সেটাও আবার মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় না করার কারণে প্রতিবছর প্রকৃত অর্থে কমতে থাকে।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির এই সীমাবদ্ধতাগুলো দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত হলেও বিগত সরকারের আমলে এগুলোর কোনো সুরাহা করা হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ–সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের রিপোর্টে এই সীমাবদ্ধতাগুলো উঠে এসেছে। সেই সঙ্গে সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কতগুলো সুপারিশও করা হয়েছে।
গত ৩০ জানুয়ারি টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। যদিও বিদ্যমান প্রবল অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই। এখানে টাস্কফোর্সের রিপোর্টে উঠে আসা সামাজিক নিরাপত্তা খাতের সীমাবদ্ধতা ও সেগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো—
সামাজিক নিরাপত্তা খাতের সমস্যাটাস্কফোর্স হিসাব করে দেখিয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের কর্মসূচিগুলোর বরাদ্দ এত কম যে তা মাথাপিছু জাতীয় আয়ের মাত্র ২ থেকে ৫ শতাংশ এবং জাতীয় দারিদ্র্যসীমার তুলনায় অনেক কম। যেমন মাসিক বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতা জাতীয় দারিদ্র্যসীমার আয়ের ১৪ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ভাতা দারিদ্র্যসীমার আয়ের ২২ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় না করার কারণে প্রতিবছর যা জাতীয় আয়ের তুলনায় আরও কমতে থাকে।
সামাজিক নিরাপত্তা খাত হিসেবে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়, এ রকম ছয়টি খাতের মধ্যে পাঁচটিই প্রকৃত অর্থে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নয়। এ রকম কয়েকটি খাত হলো সরকারি কর্মচারীদের পেনশন, কৃষি খাতে ভর্তুকি, সঞ্চয়পত্রের সুদ, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বিনা মূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ ইত্যাদি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। এ বরাদ্দের ৩৩ শতাংশই করা হয়েছে পেনশন ও সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধ বাবদ।
সরকারি হিসাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ ও জাতীয় বাজেটের ১৭ শতাংশ। টাস্কফোর্স দেখিয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন খাতের বরাদ্দ বাদ দিলে প্রকৃত বরাদ্দ দাঁড়ায় জিডিপির ১ দশমিক ২ শতাংশ ও জাতীয় বাজেটের ৭ শতাংশ। আইএলওর (আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা) হিসাবে এই হার আরও কম, জিডিপির শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। বরাদ্দের এই হার বিশ্বের নিম্নমধ্যম আয় (৪.
সামাজিক নিরাপত্তা খাতের এই অপ্রতুল বরাদ্দ আবার অসংখ্য কর্মসূচিতে বিভক্ত করে বরাদ্দ করা হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ রকম ১৪০টি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে সরকারের ৩০টি দপ্তর। কর্মসূচিগুলোর বরাদ্দের মধ্যেও ব্যাপক বৈষম্য রয়েছে, সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পায়, এমন পাঁচটি কর্মসূচিতে মোট বরাদ্দের ৫৫ দশমিক ২ শতাংশ, ১০টি কর্মসূচিতে মোট বরাদ্দের ৬৮ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২০টি কর্মসূচিতে মোট বরাদ্দের ৮০ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়। অন্যদিকে সবচেয়ে কম বরাদ্দ পাওয়া ৫০টি কর্মসূচিতে জোটে মাত্র মোট বরাদ্দের ১ দশমিক ৩ শতাংশ! এর অর্থ হলো বেশির ভাগ কর্মসূচিতেই নামমাত্র বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা সুবিধাভোগীদের প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির একটি বড় সমস্যা হলো, যথাযথ সুবিধাভোগী নির্বাচন। দেখা যায়, বিভিন্ন কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের অনেকেই ভাতা পাওয়ার যোগ্য নন, আবার ভাতা পাওয়ার যোগ্য এ রকম অনেকেই কোনো ভাতা পাচ্ছেন না। খানার আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২ অনুযায়ী, ৫৩ দশমিক ৯ শতাংশ দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবার কোনো ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি পাচ্ছে না (এক্সক্লুশন এরর), অন্যদিকে দরিদ্র ও প্রান্তিক নয়, এমন ৬২ শতাংশ পরিবার কোনো না কোনো ভাতা পাচ্ছে (ইনক্লুশন এরর)।
যথাযথ তথ্য ও পরিসংখ্যানের ঘাটতি এ ক্ষেত্রে বড় সমস্যা তৈরি করে। যেমন শনাক্তকরণের বৈশিষ্ট্য, গণনার পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার ভিন্নতার কারণে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিবন্ধীবিষয়ক পরিসংখ্যানে কোনো মিল নেই। ন্যাশনাল সার্ভে অন পারসনস উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজের (এনএসপিডি ২০২১) হিসাবে দেশের জনসংখ্যার ২ দশমিক ৮ শতাংশ (৪৬ লাখ) প্রতিবন্ধী। ডিজঅ্যাবিলিটি ইনফরমেশন সিস্টেমের (ডিআইএস) তথ্য অনুসারে, অক্টোবর ২০২৪ নাগাদ প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৩৪ লাখ। বিবিএসের খানার আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২ অনুসারে প্রতিবন্ধীর হার ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ বা ৯৪ লাখ। টাস্কফোর্স মনে করে, একই বিষয়ে এ রকম ভিন্ন পরিসংখ্যান থাকার অর্থ হলো পরিসংখ্যানগুলো যথাযথ নয়, বাস্তবে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা হয়তো আরও বেশি।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আরও একটা বড় দুর্বলতা হলো, বেকার ভাতার মতো সামাজিক বিমাভিত্তিক কোনো কর্মসূচি না থাকা, যার ফলে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর একটা বিশাল অংশ কোনো ধরনের সামাজিক নিরাপত্তার আওতার বাইরে থেকে যায়। এ ছাড়া শহুরে দরিদ্রদের একটা বড় অংশ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাইরে রয়ে গেছে। সুবিধাভোগীদের মাত্র ২০ শতাংশ শহরের বাসিন্দা, যার মধ্যে একটা বড় অংশ আবার সরকারি পেনশনগ্রহীতা।
টাস্কফোর্সের সুপারিশসামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার জন্য টাস্কফোর্স বেশ কতগুলো সুপরিশ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কতগুলো সুপারিশ হলো—
১. দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেয়, এমন কর্মসূচির (বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মা ও শিশুর ভাতা, খাদ্যনিরাপত্তা কর্মসূচি) ওপর গুরুত্ব দেওয়া, দারিদ্র্য বিমোচনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এমন কর্মসূচিকে সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচির আওতা থেকে বাদ দেওয়া; যেমন সরকারি কর্মচারীদের পেনশন, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ ইত্যাদি। একই বিষয়ে আলাদা অনেক কর্মসূচি না রেখে একত্রিত করে ব্যয় হ্রাস ও অদক্ষতা দূর করা।
২. জীবনচক্রভিত্তিক কর্মসূচি চালু করা, যার মাধ্যমে দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারের সদস্যরা জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে সুবিধা পেতে পারে; যেমন মা ও শিশু ভাতা, শিক্ষাবৃত্তি, বেকার ভাতা, বয়স্ক ভাতা ইত্যাদি। শহুরে দরিদ্ররা যেন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতার মধ্যে থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. যথাযথভাবে সুবিধাভোগী বাছাই করতে হবে। এ জন্য সুবিধাভোগী বাছাইয়ের মানদণ্ড ও প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে, আধুনিক টুলস ব্যবহার করতে হবে, বাছাই প্রক্রিয়া দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে, স্থানীয় জনগণের মতামতের সুযোগ রাখতে হবে।
৪. সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ভাতার পরিমাণ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নির্ভুল ডেটাবেজ তৈরি করতে হবে এবং তা নিয়মিত আপডেট করতে হবে। সুবিধাভোগীদের আর্থসামাজিক অবস্থা নিয়মিত মনিটরিংয়ের আওতায় রাখতে হবে এবং এর মাধ্যমে কারও আর্থসামাজিক পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটার পর তাদেরকে কর্মসূচির আওতা থেকে সরিয়ে নিতে হবে। কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর জন্য বেকার ভাতা চালু করতে হবে, শুরুতে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক খাতের জন্য এবং পরে তা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের জন্যও প্রযোজ্য হবে।
কোনো কোনো কর্মসূচিকে সর্বজনীন করারও সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স, যেমন ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম (ইউবিআই) বা সর্বজনীন ন্যূনতম আয়ের কর্মসূচি। শুরুতে দেশের সব মানুষকে এর আওতায় আনা সম্ভব না হলেও সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে এই কর্মসূচি চালু করার কথা বিবেচনার সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স।
টাস্কফোর্স রিপোর্টে আরও যা থাকতে পারতটাস্কফোর্স রিপোর্টে দক্ষিণ এশিয়া এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ অপ্রতুল বলে সমালোচনা করা হলেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাবদ বরাদ্দ জিডিপি ও জাতীয় বাজেটের কত শতাংশ করা উচিত, সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা হয়নি। টাস্কফোর্স এখানে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ যেমন ভারত ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করে খাতভিত্তিক সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করতে পারত।
রিপোর্টে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য টিসিবি, ওএমএস ইত্যাদি কর্মসূচিকে সমন্বিত করার কথা বলা হলেও আইনগত বাধ্যতামূলক কোনো খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির সুপারিশ করা হয়নি। দেশের দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি রয়েছে, যেমন টিসিবি, ওএমএস, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (কাবিখা), টেস্ট রিলিফ (টিআর), ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ), জেনারেল রিলিফ (জিআর) ইত্যাদি।
এসব কর্মসূচি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নয়, কোথায় কবে কখন কাকে কী পরিমাণ সহায়তা দেওয়া হবে, তা সুনির্দিষ্ট থাকে না, অনেকটা সরকারে থাকা ব্যক্তিদের ইচ্ছা–অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। ফলে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে খাদ্য সংগ্রহ ও বিতরণে কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে না। দেখা যায়, প্রয়োজনের সময় খাদ্যসহায়তা কর্মসূচি উল্টো কমে গেছে। যেমন বর্তমানে উচ্চমূল্যস্ফীতির মধ্যে খাদ্যসহায়তামূলক কর্মসূচি হিসেবে চাল ও গম বিতরণ বৃদ্ধির বদলে কমে গেছে। গত বছরের ১ জুলাই থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারিভাবে চাল ও গম আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ লাখ ২৩ হাজার টন বা ১১ দশমিক ২০ শতাংশ কম বিতরণ করা হয়েছে।
দুর্নীতি ও অদক্ষতার অজুহাত দিয়ে আশির দশকের শেষের দিকে বাধ্যতামূলক রেশনব্যবস্থা ভেঙে বিভিন্ন শর্তযুক্ত খাদ্যসহায়তা কর্মসূচি চালু করা হলেও এসব কর্মসূচি কিন্তু দুর্নীতি ও অদক্ষতা থেকে মুক্ত নয়। বরং অনিয়মিত ও অনির্দিষ্ট হওয়ার কারণে কৃষককে মূল্যসহায়তা প্রদান, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের খাদ্যনিরাপত্তার কোনোটাই নিশ্চিত করা যায় না এসব খাদ্যনিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে। প্রয়োজনের তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় টিসিবি বা ওএমএসের ট্রাকের পেছনে নিম্ন আয়ের মানুষ অনেক সময় ভোর থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও খালি হাতে ফিরে যায়।
ভারতের খাদ্যনিরাপত্তা আইন ২০১৩-এর আওতায় যে অনুপাতে মানুষকে রেশনের আওতায় আনা হয়েছে, সে অনুপাতে (গ্রামের মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশ ও শহরের ৫০ শতাংশ) বাংলাদেশের নাগরিকদের রেশনের আওতায় আনতে হলে মোটামুটি তিন কোটি রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্য রেশন সংগ্রহ করতে হলে সরকারকে কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে খাদ্যশস্য সংগ্রহের ওপর জোর দিতে হবে।
এতে কৃষকের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি এবং দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা দুটোই নিশ্চিত হবে। সেই সঙ্গে বাজারে এসব পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আর ভিন্ন ভিন্ন খাদ্যসহায়তা কর্মসূচিগুলোকে রেশনব্যবস্থায় একীভূত করে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে চুরি, দুর্নীতি, অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে টেকসই ও জনবান্ধব করতে টাস্কফোর্সের রিপোর্টে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ থাকার প্রয়োজন ছিল। আশা করি, টাস্কফোর্সের রিপোর্টে থাকা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর পাশাপাশি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক খাদ্যবণ্টন কর্মসূচির ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
কল্লোল মোস্তফা লেখক ও গবেষক
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দর দ র ও প র ন ত ক ম ট বর দ দ র স প র শ কর পর স খ য ন জনগ ষ ঠ র বর দ দ দ ঠ র জন য র বর দ দ র আওত য় ব যবস থ দশম ক ২ সরক র র ১ দশম ক আয় র ম কর র ক ব তরণ র একট এ রকম সবচ য় সমন ব
এছাড়াও পড়ুন:
নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটে নবম গ্রেডে চাকরির সুযোগ
নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটে রাজস্ব খাতভুক্ত স্থায়ী পদে জনবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশি নাগরিকেরা নির্ধারিত ফরমে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
অনলাইন ছাড়া কোনো আবেদনপত্র গ্রহণ করা হবে না। অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণ ও পরীক্ষার ফি জমাদান শুরুর ১৫ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০২৪ সালের ২৩ জুলাইয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কোটা নির্ধারিত হবে।
নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট এ নিয়োগে নারী প্রার্থীদের আবেদন করার জন্য উৎসাহিত করেছে। নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইটের নোটিশ বোর্ডে আবেদনের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। প্রবেশপত্র প্রাপ্তির বিষয়টি অথবা প্রার্থীর মুঠোফোনে এসএমএসের মাধ্যমে যথাসময়ে জানানো হবে।
পদের বিবরণ ও বিস্তারিত
১. বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
পদসংখ্যা: ১৫
গ্রেড: নবম
বেতন স্কেল: ২২,০০০-৫৩,০৬০ টাকা
আবেদনের বয়স: ৩২ বছর
আবেদনে শিক্ষাগত যোগ্যতা: কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে (ক) পুরকৌশল, তড়িৎকৌশল, যন্ত্রকৌশল, পানিসম্পদ কৌশল, কৃষি ইঞ্জিনিয়ারিং, রিভার ইঞ্জিনিয়ারিং, হাইড্রলিকস, হাইড্রলজি, এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে অন্যূন দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএতে স্নাতক (সম্মান) বা সমমানের ডিগ্রি; অথবা (খ) পদার্থবিদ্যা, ফলিত পদার্থবিদ্যা, গণিত, ফলিত গণিত, মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিষয়ে প্রথম শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএতে স্নাতকোত্তর বা সমমানের ডিগ্রি বা অন্যূন দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএতে স্নাতক (সম্মান) বা সমমানের ডিগ্রিসহ অন্যূন দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএতে স্নাতকোত্তর বা সমমানের ডিগ্রি।
আবেদন ফি
পরীক্ষার ফি বাবদ ২২৩ টাকা আবেদনের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জমা দিতে হবে আবেদনকারীদের।
আবেদনের শেষ সময়
আবেদনপত্র জমার শেষ তারিখ ১৫ মে ২০২৫, বিকেল ৫টা।
আবেদনের বিস্তারিত জানতে ও দেখতে এখানে ক্লিক করুন।