রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই পাড়ায় (সাজেক ভ্যালি) আগুনে পুড়ে সর্বস্ব হারিয়েছে ৩৮টি ত্রিপুরা ও লুসাই পরিবার। দুই সপ্তাহ ধরে গির্জা, মন্দির ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে দিনযাপন করছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা। এখন পোড়া ভিটায় কেউ ঘর তৈরি করে, কেউ আবার তাঁবু টানিয়ে কোনোরকম মাথা গোঁজার চেষ্টা করছেন। ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টাতেও রয়েছেন তাঁরা।

গতকাল সোমবার রুইলুই পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি পরিবার ঘর তৈরি আর তাঁবু টানানোর কাজ করছে। সরকারি-বেসরকারি যে সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছেন, তা দিয়েই নিজের ভিটেমাটিকে বসবাসের উপযোগী করার চেষ্টা করছেন বলে জানান আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা।

সরেজমিন কথা হয় করুণা ত্রিপুরার সঙ্গে। জানান গতকাল সকাল থেকে পোড়া ভিটায় কাঠ, বেড়া ও টিন দিয়ে ছোট ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। সরকারি-বেসরকারিভাবে কিছু সহায়তা পেয়েছেন। তা দিয়েই ঘর বানানোর চেষ্টা করছেন তিনি। বীর বসু ত্রিপুরা নামে আরেক বাসিন্দাকেও দেখা গেল দোচালা টিনের ঘর তৈরির কাজ করছেন। এরই মধ্যে ওপরে টিনের ছাউনি দেওয়া হয়েছে। তবে চারপাশে বেড়া দিয়ে ঘেরা হয়নি। কেবল সূর্যের তাপ থেকে বাঁচতে একপাশ ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। গত রোববার থেকে ঘর নির্মাণের কাজ করছেন বলে জানান বীর বসু। সরেজমিন বেশ কয়েকটি ঘর তৈরির জন্য ভিটেতে কাঠ-বাঁশসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী জড়ো করতে দেখা যায়।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সাজেকের রুইলুই ভ্যালিতে আগুনে পুড়ে যায় বসতঘর, কটেজ-রিসোর্ট, রেস্তোরাঁসহ ১০২টি স্থাপনা। বসতঘর পুড়ে যাওয়ায় বাসিন্দারা পাশের গির্জা, মন্দির ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এর মধ্যে অনেকে বসতঘর নির্মাণের কাজ শুরু করলেও পুড়ে যাওয়া ৩৫টি রিসোর্ট-কটেজের কোনোটিরই পুনরায় নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির নেতারা জানান, আগুনে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

আগুনের ঘটনার পর খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়ন, বাঘাইছড়ি সেনা জোন, উপজেলা প্রশাসন এবং বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা দেয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের নিত্যপণ্য সহায়তা করা হয়েছে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য অনিত্য ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, বাসিন্দারা যেখানে আশ্রয় নিয়েছেন, দুই সপ্তাহে সেখানে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই তাঁরা পোড়া ভিটেতে ঘর তৈরির চেষ্টা করছেন। তিনটি পরিবার এরই মধ্যে নতুন করে ঘর নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেছে। আরও কয়েকটি পরিবার ঘর নির্মাণের কাজ করছে।

সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেববর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, আগুনে পুড়ে যাওয়া স্থান পরিমাপ করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বসতঘর নির্মাণ শুরু হলেও রিসোর্ট-কটেজ নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঘর ন র ম ণ র ক জ র ক জ করছ ব সরক র পর ব র ঘর ত র করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে আগুনে পুড়ল ৫০ দোকান, গুদাম ও বসতঘর

চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ থানাধীন আতুরার ডিপো এলাকায় ভয়াবহ আগুনে পুড়ছে ফলের আড়ত, দোকান, বসতঘর ও ঝুট কাপড়ের গুদাম। আজ রোববার বিকেলে আমিন জুট মিলের বিপরীতে মুরাদপুর সড়কের পাশে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি গাড়ি অংশ নিয়েছে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আগুনে অন্তত ৫০টি দোকান, ঘর ও গুদাম পুড়ে গেছে। এর মধ্যে মুদিদোকান, পানদোকান, ফলের আড়ত, প্লাস্টিকের গুদাম, ঝুট কাপড়ের গুদাম, পোলট্রি ও গোখাদ্যের গুদাম রয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, তারা বেলা ২টা ৫৮ মিনিটে আগুন লাগার সংবাদ পায়। এরপর ছয়টি গাড়ি আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে ঝুট কাপড়ের গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। আগুন লাগার পর মুরাদপুর–অক্সিজেন সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুর রাজ্জাক সন্ধ্যা সাতটায় প্রথম আলোকে বলেন, রাস্তার পাশের দোকানগুলোর পেছনে প্লাস্টিক, ঝুট কাপড়, মুরগি ও গোখাদ্যের গুদাম রয়েছে। গুদামের দিক থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগুন এখনো পুরোপুরি নেভেনি, তবে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আগুনে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০টি দোকান, গুদাম ও বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরও ফায়ার সার্ভিসের চারটি গাড়ি সেখানে কাজ করছিল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পুড়ে যাওয়া দোকানগুলোয় কলা, আপেলসহ নানা ফল পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। দোকানের দিক থেকে আগুন নিভে গেলেও দোকানগুলোর পেছনে বসতঘর ও গুদামে আগুন জ্বলছিল।

মন্টু সওদাগার নামে এক আড়তদার বলেন, আগুন মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে তাঁর বেল, কলা ও আপেল পুড়ে গেছে। কিছু বের করা যায়নি। অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।

বশির উদ্দিন নামের অপর এক দোকানি বলেন, দোকানের পেছনের দিকে গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বেলা দুইটার পরপর আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস আসতে আসতে আগুন আরও বড় হয়ে যায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রামে আগুনে পুড়ল ৫০ দোকান, গুদাম ও বসতঘর