কোনো ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য বা কারণ ছাড়াই পুঁজিবাজারে বিমা খাতে তালিকাভুক্ত পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স  লিমিটেডের শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) এমন তথ্য জানিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে এতথ্য জানা গেছে।

তথ্য মতে, শেয়ার দর অস্বাভাবিক বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে গত ১০ মার্চ ডিএসই কোম্পানিকে চিঠি পাঠায়। ওই চিঠির জবাবে কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, কোনো রকম অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ছে।

আরো পড়ুন:

বিএসইসির ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে: রাশেদ মাকসুদ

সিকদার পরিবারের ৪২ বিও অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধের আদেশ

প্রসঙ্গত, পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের গত ১২ ফেব্রুয়ারি শেয়ার দর ছিল ১৭.

৬০ টাকায়। যা ১০ মার্চ লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ২০.৪০ টাকায়। অর্থাৎ ১ মাসে শেয়ারটির দর বেড়েছে ২.৮০ টাকা বা ১৬ শতাংশ।

এভাবে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক বলে মনে করে ডিএসই কতৃপক্ষ।

ঢাকা/এনটি/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড এসই

এছাড়াও পড়ুন:

চন্দনাইশের ‘হাতপাখা’ গ্রামে ১০ কোটি টাকার ব্যবসা

চন্দনাইশ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জিহস ফকিরপাড়া গ্রাম। এ গ্রামটি এখন ‘হাতপাখা গ্রাম’ হিসেবে খ্যাত। কারণ এই গ্রামেই তৈরি হয় দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় হাতপাখা, যা মজবুত ও টেকসই। এই পাখা বানানো হয় তালপাতা ও বেতের সাহায্যে। সারা বছর চাহিদা থাকলেও চৈত্র-বৈশাখ মাসে দারুণভাবে বেড়ে যায় হাতপাখার চাহিদা। গরমে একটু শীতল পরশ পেতে মানুষ হাত বাড়ান চন্দনাইশের হাতপাখার দিকে। 
বর্তমান আধুনিক যুগে এসেও এ হাতপাখার কদর একটুও কমেনি। বরং চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সারা বছর এখানকার কারিগররা হাতপাখা তৈরি করেন। বৈশাখী মেলা বিশেষ করে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলীখেলা উপলক্ষে লালদীঘির মেলায় চন্দনাইশের হাতপাখার বিশাল বাজার বসে। শুধু লালদীঘির মেলায় চন্দনাইশের ফকিরপাড়ায়া তৈরি করা ৩ লাখ হাতপাখা বিক্রি হয়। এখানকার কারিগররা মূলত বৈশাখী মেলাকে টার্গেট করেই বানান বিভিন্ন ধরনের রংবেরঙের তালপাতার হাতপাখা। এ গ্রামের শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই একেকজন দক্ষ পাখাশিল্পী। তারা ইতোমধ্যে শেষ করেছেন পাইকারদের অর্ডারকৃত হাতপাখা তৈরির কাজ। বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে পাইকারি ব্যবসায়ীরাও বিভিন্ন মেলায় নিয়ে যেতে শুরু করেছেন তালপাতার হাতপাখা। পাশাপাশি পাখাশিল্পীরাও ব্যক্তিগতভাবে বিক্রির উদ্দেশ্যে মেলায় নিয়ে যাবেন হাতপাখা। পাখাশিল্পীরা জানিয়েছেন, এখানকার প্রতিটি হাতপাখা ২০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়। গড় হিসেবে প্রতিটি হাতপাখা ২৫০ টাকার ওপরে। এ গ্রাম থেকেই প্রতিবছর প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের ৪ লাখ হাতপাখা বিক্রি হয়।
ঐতিহ্যবাহী চন্দনাইশের জিহস ফকিরপাড়ার হাতপাখা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে প্রয়োজনীয় সংখ্যক হাতপাখা তৈরি শেষ করেছেন এখানকার শিল্পীরা। এ গ্রামের প্রতিটি বাড়ির উঠানে হাতপাখা তৈরির কাজে বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ, তরুণ-তরুণী, এমনকি শিশু-কিশোররা পর্যন্ত ব্যস্ত। গ্রামের ৫ শতাধিক পরিবার হাতপাখা তৈরির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
স্থানীয়রা জানান, আধ্যাত্মিক সাধক জিহস ফকিরের নামানুসারে এ গ্রামটিকে জিহস ফকিরপাড়া হিসেবে নামকরণ করা হলেও বর্তমানে গ্রামটি পরিচিতি পেয়েছে ‘হাতপাখা গ্রাম’ হিসেবে।
জিহস ফকিরপাড়া গ্রামের মৃত বাদশা মিয়ার পুত্র আবদুল শুক্কুর (৫৬) জানান, বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে হাতপাখা তৈরি করছেন তিনি। বাবা-মার কাছ থেকেই তিনি শিখেছেন হাতপাখা তৈরির কলাকৌশল। বাবার মৃত্যুর পর তিনি হাতপাখা পেশা আগলে রেখেছেন বছরের পর বছর। হাতপাখা বিক্রির টাকায় তিনি ইতোমধ্যে পাঁচ বোনকে বিয়ে দিয়েছেন। নিজে বিয়ে করেছেন। একমাত্র ছেলেকে পাঠিয়েছেন প্রবাসে। বর্তমানে পরিবার নিয়ে সুন্দরভাবে দিন কাটছে তাঁর।
তিনি আরও জানান, সারা বছরই তালপাতার চাহিদা থাকে। বিশেষ করে চৈত্র-বৈশাখ মাসে যখন তাপদাহ শুরু হয়, তখন চাহিদা বেড়ে যায়। বর্তমানে প্রচুর হাতপাখার চাহিদা রয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি প্রায় ২ হাজার হাতপাখা  পাইকারদের কাছে সরবরাহ করেছেন। এসব পাখার অধিকাংশই বিক্রি হবে জব্বারের বলীখেলা উপলক্ষে লালদীঘির মেলায়। প্রতিজোড়া হাতপাখা পাইকারি হিসেবে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি। মেলায় তিনি নিজেও বিক্রি করবেন হাতপাখা।
তিনি জানান, চৈত্র-বৈশাখের এই খরতাপে দেশে যে পরিমাণ হাতপাখার চাহিদা রয়েছে তার অধিকাংশই মূলত চন্দনাইশের ফকিরপাড়া গ্রামে তৈরি করা হয়।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে মাইজভান্ডার ওরশ শরীফ ও আনোয়ারার মোহছেন আউলিয়ার বার্ষিক ওরশ শরীফ, পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ ও দেশের বিভিন্নস্থানে অনুষ্টিত বৈশাখী মেলা, বলী খেলা, গরুর লড়াই ইত্যাদিতে হাজার হাজার হাতপাখা বিক্রি হয়। 
পাখা শিল্পীরা জানান, হাতপাখা তৈরীর প্রধান উপকরনগুলো হলো তালপাতা, বেত,  বাঁশ ও রং। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলাগুলোর বনাঞ্চল থেকে বাঁশ ও বেত সংগ্রহ করতে হয়। আর হাতপাখা তৈরীর প্রধান উপকরণ তালপাতা সংগ্রহ করতে হয় পটিয়া উপজেলা, নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে।
এক সময় এ গ্রামের আবদুল মোনাফ বানাতেন প্রচুর তালপাতার হাতপাখা। বর্তমানে তিনি প্রবাসী। মুলত হাতপাখা বিক্রির টাকায় তিনি পাড়িয়েছেন প্রবাসে। বিগত ২ মাস আগে তিনি এসেছেন গ্রামে। তিনি নিজে তৈরী করেছেন ১০০ হাতপাখা। যা তিনি নিজেই বিক্রি করবেন জব্বার মিয়ার বলি খেলা উপলক্ষে লালদিঘীর আশেপাশে বসা মেলায়। তিনি প্রতিটি হাতপাখা বিক্রি করবেন ৩০০ টাকা ধরে।
হাতপাখা তৈরীর ইতিকথাঃ পাখাশিল্পীরা জানান, ১৯৪০-৪২ সালের দিকে গ্রামের বেশ কয়েকজন যুবক বেকারত্ব থেকে বাচঁতে জীবিকার সন্ধানে বের হন। তারা কুমিল্লা জেলার কোন এলাকা থেকে তালপাতার হাতপাখা তৈরীর কলা-কৌশল শিখে আসেন। আর তখনকারদিনে বিদ্যুৎ সুবিধার অপ্রতুলতার করণে দ্রুত প্রসার ঘটে তাদের তৈরীকৃত হাতপাখার। এখানকার তৈরীকৃত নানা প্রকারের হাতপাখা দেখতে সুন্দর ও অত্যন্ত মজবুত হওয়ায় ধীরে ধীরে সারাদেশে এর চাহিদা ও সুনাম গড়ে উঠে। পুরো পাখাগ্রাম ঘুরে জানা যায়, এলাকার সহস্রাধিক পরিবারের ৫ হাজারেরও অধিক সদস্য তালপাতার হাতপাখা তৈরীর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে। 
পাখাশিল্পীরা আরো জানান, তারা মূলত ৭ তারী, ৯ তারী, ১১ তারী, ১৩ তারী ও ১৫ তারীর হাতপাখা তৈরী করেন। এরমধ্যে ৯ এবং ১১ তারী পাখার চাহিদা থাকে বেশী।চাহিদা সম্পন্ন হাতপাখাগুলো তালগাছের ডিগ পাতা দিয়ে তৈরী করা হয়। ফলে এটি মজবুত ও টেকসই হওয়ায় দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়। তাদের তৈরীকৃত হাতপাখা নিয়ে বেকায়দায়ও পড়তে হয়না। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা এসে সিংহভাগ হাতপাখা কিনে নিয়ে যায়। এমনকি অগ্রিম টাকা দিয়ে পরিমাণ মতো অর্ডার দিয়ে যায় পাখাশিল্পীদের।
পাখা শিল্পীরা জানান, ভবিষ্যতে এ শিল্পটি টিকিয়ে রাখতে সরকারী সহযোগিতা প্রয়োজন। সরকারীভাবে আর্থিক ঋণ পেলে তাদের তৈরীকৃত হাতপাখা বাণিজ্যিকভাবে বিদেশে রপ্তানী সম্ভব হবে। ইতিমধ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকেই কিছু কিছু হাতপাখা বিদেশে নিয়ে যান। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ