গাজীপুরে ২ মহাসড়ক অবরোধ, যানচলাচল বন্ধ
Published: 11th, March 2025 GMT
বকেয়া বেতন এবং কারখানা শ্রমিককে মারধরের ঘটনায় গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শ্রমিকরা। এতে এই দুই মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন যাতায়াতকারীরা। অনেকেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন। শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে মৌচাকের আশপাশের সব কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায় একটি পোশাক তৈরি কারখানার শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকাল ৭ টা থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। সকাল ১০টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ ছিল।
অপরদিকে, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা মৌচাকে অবস্থিত গ্লোবাস কারখানার শ্রমিককে মারধরের ঘটনায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। তাদের আন্দোলনের ফলে আশপাশের অন্তত ১৫ টি কারখানা ছুটি দেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন:
বাসের চাকায় পিষ্ট মোটরসাইকেল আরোহী স্বামী-স্ত্রী
রাজশাহীতে মোটরসাইকেলে ট্রাকের ধাক্কা, নিহত ২
শিল্প পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকরা জানায়, টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকায় বি এইচ আই এস ( B.
আজ সকালে কাজে যোগ দিতে গিয়ে শ্রমিকরা দেখেন, কারখানার সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের নোটিশ সাটিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ওই নোটিশ দেখে শ্রমিকরা সকাল ৭টা থেকে কারখানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন।
একপর্যায়ে শ্রমিকরা হোসেন মার্কেট ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সামেনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝেয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
কারখানার সামনে দেওয়া নোটিশে বলা হয়েছে, “এতদ্বারা অত্র কারখানার সকল কর্মী ও কর্মচারীদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, ১০ মার্চ অনুমান সকাল ১০ টার সময় কর্মী ও কর্মচারীগণ নিয়ম বর্হিভূতভাবে কাজ বন্ধ করে কারখানার অভ্যন্তরে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে। কর্মী ও কর্মচারীগণকে কাজে যোগদানের জন্য বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কর্মী ও কর্মচারীগণ কাজে যোগদান থেকে বিরত থাকে। কর্মী -কর্মচারীগণের এই ধরনের আচরণ অবৈধ ধর্মঘটের সামিল।
কর্তৃপক্ষ মনে করছে, উচ্ছৃঙ্খল কর্মী-কর্মচারীগণ কারখানাতে যে কোনো ধরণের নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে। যার কারণে কারখানা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ শ্রম-আইন ২০০৬ এর ১৩(১) ধারা মোতাবেক ১১ মার্চ হতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করল।”
অপরদিকে, গত শনিবার মৌচাকের গ্লোবাস কারখানায় কয়েকজন শ্রমিককে ডেকে নিয়ে মারধর করে স্টাফরা। এরপর শ্রমিকরা কারখানার ভেতর আন্দোলন শুরু করেন। পরে ঝামেলা মিটে গেলেও আজ পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রয়েছে। এ কারনেই আজ বিক্ষোভ শেষে মহাসড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। তাদের আন্দোলনের কারণে আশপাশের সব কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, “সকাল ৭টা থেকে শ্রমিকরা গত মাসের বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করছে। মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা চলছে।”
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন অবর ধ বন ধ র ও কর ম র ধ কর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সৌদিতে বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু, লাশ আনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরিবার
সংসারের অভাব ঘুচাতে ধারকর্য করে এক নির্মাণ শ্রমিক তাঁর ছেলেকে পাঠিয়েছিলেন সৌদি আরবে। দেড় বছরের মাথায় সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। সচ্ছলতা দূরের কথা, ঋণ পরিশোধ করার আগেই গত ৩ মার্চ দাম্মাম শহরের একটি এলাকায় গ্যাস সঞ্চালন লাইনের কাজ করতে গিয়ে এক দুর্ঘটনায় মারা যান কাউছার। ৬ দিন আগে মৃত্যুর খবর পেলেও এখনও স্বজন জানেন না কবে দেশে ফিরবে তাঁর লাশ। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালের জয়দা গ্রামে।
জানা গেছে, মঠবাড়ী ইউনিয়নের অলহরী জয়দা গ্রামের বাসিন্দা নির্মাণ শ্রমিক মোতাহার আলী। ৮ ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় ছেলে কাউছারও নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। সংসারে একটু সচ্ছলতার মুখ দেখতে বছর দেড়েক আগে ছেলে কাউছারকে সৌদি আরবে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন বাবা মোতাহার। নুন আনতে যার পান্তা ফুরায়, তাঁকে জোগাড় করতে হয় ৬ লাখ টাকা। ঋণ নিয়ে ছেলেকে পাঠান সৌদি আরবে। দাম্মাম শহরের সাক্কো নামে একটি কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজ করতেন কাউছার। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস গত ৩ মার্চ স্থানীয় সময় বেলা ১১টার দিকে দাম্মাম শহরের আল হাসা জাফরা এলাকার গ্যাস সঞ্চালন লাইনের কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা যান কাউছার।
তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হন প্রতিবেশী এক প্রবাসীর কাছ থেকে। কিন্তু ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও ছেলের লাশ বাংলাদেশি কোন সংস্থার মাধ্যমে দেশে ফিরবে, কবে ফিরবে– এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না স্বজন। পরিবারের দাবি, সরকার যেন তাদের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি দ্রুত লাশ দেশে আনতে পদক্ষেপ নেয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, কাউছারের স্ত্রী জেসমিন তাঁর ১৫ মাসের মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন। মেঝেতে বসে আছেন বাকরুদ্ধ বাবা। ছেলের খোঁজখবর জানতে চাইতেই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন মোতাহার। তিনি বলেন, ‘আমার সব স্বপ্ন শেষ। এত কষ্ট, ঋণ-কর্য যার জন্য করলাম, তাকেই আল্লাহ নিয়ে গেল। আমি এখন কী করব? একদিকে ঋণের চাপ, অন্যদিকে ছেলের বউ, নাতনি ও আমার পরিবারের খরচ কীভাবে চালাব সেই চিন্তা।’
কাউছারের স্ত্রী জেসমিন বলেন, ‘তিন বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে। ওরে বলছিলাম, ঋণ কইরা বিদেশ যাওয়ার দরকার নাই। কোনো আপদ-বিপদ হইলে মানুষ টেহা ছাড় দিত না। ওর বিদেশ যাওয়ার আট দিন পর জন্ম হইছে মেয়েটার। এখন মেয়ের ভবিষ্যৎ দেখব কে?’
এ বিষয়ে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ ওয়েল ফেয়ার সেন্টার ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল হাসান তাহেরি জানান, পরিবার আবেদন করলে তা পাঠিয়ে দেবেন ওয়েজ অর্নার কল্যাণ বোর্ডে। এর পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সব ধরনের ব্যবস্থা নেবেন।