তালুত ছিলেন বনী ইসরাইল গোষ্ঠীর বাদশাহ। পবিত্র কোরআনে তাঁর কথা উল্লেখ আছে।
বনী ইসরাইলীরা হজরত মুসা (আ.)–এর কাছে আল্লাহর কাছে এমন দোয়া করার আবেদন জানান, যাতে আল্লাহ তাঁদের জন্য একজন বাদশাহ পাঠান। উত্তরে তিনি বলেন, ‘তোমরা তো তাঁর অনুগত হবে না।’ এরপরও তাদের পীড়াপীড়িতে মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। আল্লাহ বনী ইসরাইলিদের জন্য তালুত নামে একজনকে পাঠান।
পবিত্র কোরআনে তালুতের দৈহিক শক্তি এবং জ্ঞানের প্রশংসা করা হয়েছে। তবে নবীর ভবিষ্যদ্বাণী ফলে যায়। তারা ঠিকই তাঁর অনুগত হতে অস্বীকৃতি জানায়। হজরত মুসা (আ.
পরে তালুতের নেতৃত্বে জালুতের, অর্থাৎ বাইবেলের গোলাইয়াথের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার সময় তালুত তাঁর লোকজনকে এক চুমুকের বেশি নদীর পানি পান না করার নির্দেশ দেন। কিন্তু তারা সে আদেশ অমান্য করলে তাদের পেট ফুলে যায়।
রণাঙ্গনে তালুত ঘোষণা করেন, জালুতকে যে হত্যা করতে পারবে, সে রাজত্বের এক-তৃতীয়াংশ পাবে এবং বাদশাহ হিসেবে তাঁর উত্তরাধিকারী হবে। হজরত দাউদ (আ.) জালুতকে হত্যা করে এই পুরস্কার অর্জন করেন।
পবিত্র কোরআনে সুরা বাকারায় আল্লাহ বলেছেন, ‘তুমি কি তাদেরকে দেখোনি, যারা মৃত্যুভয়ে হাজারে হাজারে নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে গিয়েছিল? তারপর আল্লাহ্ তাদের বলেছিলেন, তোমাদের মৃত্যু হোক। পরে তিনি তাদেরকে জীবিত করলেন। আল্লাহ তো মানুষকে অনুগ্রহ করেন; কিন্তু অনেক মানুষই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।’
আল্লাহ আরও বলেছেন, ‘তুমি কি মুসার পরবর্তী বনী-ইসরাইল প্রধানদের দেখোনি? যখন তারা নিজেদের নবীকে বলেছিল, আমাদের জন্য একজন রাজা ঠিক করো যাতে আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে পারি, সে বলল, যদি তোমাদেরকে যুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়, তবে তোমরা কি মনে কর তখন তোমরা যুদ্ধ করবে না? তারা বলল, যখন নিজেদের ঘরবাড়ি ও সন্তানসন্ততি থেকে দূরে পড়ে আছি তখন কেন আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করব না? তারপর যখন তাদের ওপর যুদ্ধের বিধান দেওয়া হলো, তখন তাদের মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া বেশির ভাগই পৃষ্ঠপ্রদর্শন করল। আর আল্লাহ্ সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালো করেই জানেন।
আরও পড়ুনপ্রকাশ্যে প্রথম কোরআন তিলাওয়াত করা হলো৩০ আগস্ট ২০২৩‘তাদের নবী তাদেরকে বলেছিল, আল্লাহ্ তালুতকে তোমাদের রাজা নিযুক্ত করেছেন। তারা বলল, আমরা যখন কর্তৃত্ব করার জন্য বেশি যোগ্য তখন সে কেমন করে আমাদের ওপর কর্তৃত্ব করবে, আর প্রচুর ধনসম্পদও তো তাকে দেওয়া হয়নি।
‘সে (নবী) বলল, আল্লাহই তাকে মনোনীত করেছেন আর তিনি তাকে দেহে ও মনে সমৃদ্ধ করেছেন। অবশ্যই আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাঁর কর্তৃত্ব দান করেন। আল্লাহ্ প্রাচুর্যময় তত্ত্বজ্ঞানী। তাঁর কর্তৃত্বের লক্ষণ এই যে তোমাদের কাছে একটা তাবুত (সিন্দুক) আসবে, যাতে তোমাদের জন্য তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে প্রশান্তি ও কিছু জিনিস যা মুসা ও হারুনের বংশধরেরা রেখে গিয়েছে, ফেরেশতারা সেটা বয়ে নিয়ে আসবে। নিশ্চয়ই এতে তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা বিশ্বাস করো।
এর পর আল্লাহ বলেছেন, ‘তারপর তালুত যখন সসৈন্যে অভিযানে বের হলো তখন সে বলল, আল্লাহ একটা নদী দিয়ে তোমাদেরকে পরীক্ষা করবেন। তাই যে-কেউ সেই নদী থেকে পানি পান করবে, সে আমার দলে থাকবে না, আর যে ওই পানি। পান করবে না সে আমার দলে থাকবে। এ ছাড়া যে-কেউ তার হাত দিয়ে এক আজলা পানি নেবে সে-ও। কিন্তু (যখন তারা নদীর কাছে গেল) তাদের অল্প কয়েকজন ছাড়া বেশির ভাগ লোকই তার থেকে পানি পান করল । যখন সে (তালুত) ও তার সঙ্গে যারা বিশ্বাস করেছিল তারা তা পার হলো তখন তারা বলল, আমাদের (এমন) শক্তি ও সাধ্য নেই যে আজ জালুত ও তার সৈন্যের সঙ্গে যুদ্ধ করি। কিন্তু যারা আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বিশ্বাস করেছিল তারা বলল, 'আল্লাহর অনুমতিক্রমে কত ছোট দল বড় দলকে পরাস্ত করেছে। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন।
আরও পড়ুনসুরা ওয়াকিয়ায় কেয়ামত সম্পর্কে জানা যায়০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩তারা যখন জালুত ও তার সৈন্যবাহিনীর সম্মুখীন হলো তখন তারা বলল, হে আমাদের প্রতিপালক। আমাদের ধৈর্য দাও, আমাদের পা অবিচলিত রাখো ও অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করো।
‘সুতরাং তখন তারা আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাদের পরাজিত করল। দাউদ জালুতকে বধ করল ও আল্লাহ্ তাকে কর্তৃত্ব ও হিকমত দান করলেন এবং যা তিনি ইচ্ছা করলেন তা তাকে শিক্ষা দিলেন। আল্লাহ্ যদি মানবজাতির একদলকে অন্য দল দিয়ে দমন না করতেন, তবে নিশ্চয় পৃথিবী ফ্যাসাদে পূর্ণ হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ বিশ্বজগতের প্রতি মঙ্গলময়। এ সবই আল্লাহর নিদর্শন যা আমি সঠিকভাবে তোমার কাছে আবৃত্তি করছি আর তুমি তো রাসুলদের একজন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৪৯–২৫২)
আরও পড়ুনবাদশাহ ও এক বালকের ঘটনা০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য দ ধ কর আল ল হ ব দ র জন য কর ত ত ব র আল ল ব দশ হ আম দ র তখন ত
এছাড়াও পড়ুন:
‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম হলো ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’
‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বাদ দিয়ে নতুন বছরের শোভাযাত্রার নামকরণ করা হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।
বর্ষবরণের আয়োজন নিয়ে শুক্রবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে কথা বলেন চারুকলা অনুষদের ডিন আজহারুল ইসলাম। তিনি শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের তথ্য তুলে ধরেন।
আজহারুল ইসলাম বলেন, “সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এবারের শোভাযাত্রা হবে আনন্দময়।”
আরো পড়ুন:
কিরিবাতি থেকে বাংলাদেশ, পঁচিশের বর্ণিল বরণ
নববর্ষ: বিবিধ ভাবনা
এবারের বর্ষবরণে ২৮ জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ থাকবে; শোভাযাত্রাটি ‘সবার হয়ে উঠবে’, এমনই মনে করছেন আয়োজকরা।
'মঙ্গল শোভযাত্রা’ নামটি বদল করার বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলার মধ্যে স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল সেটি এবার থাকছে না। এই ধারাবাহিকতায় নতুন বাংলা বছর শুরুর তিন দিন আগে বদলে গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত শোভাযাত্রাটির নাম।
২৩ মার্চ সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়ে আসা মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলানোর আভাস দিয়েছিলেন।
বিষয়টি সমালোচনা শুরু হলে পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদযাপন সংক্রান্ত এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেছিলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়নি।
এরপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে মঙ্গলবার উপদেষ্টা ফারুকী বলেন, নাম ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ থাকবে নাকি তা পরিবর্তন করা হবে, তা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
এর আগে তার দেওয়া ব্ক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা।
ঢাকা/রায়হান/রাসেল