নিয়মিত বাহিনীকেই কার্যকর করতে হবে
Published: 11th, March 2025 GMT
অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ (ডিএমপি) যে ‘অক্সিলারি ফোর্স’ বা অতিরিক্ত বাহিনী নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার কার্যকারিতা ও যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, পুলিশকে সহায়তাকারী হিসেবে ৫০০ জনকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আইন মোতাবেক পুলিশ বাহিনীর নিয়মিত সদস্যরা যে ক্ষমতা ভোগ ও দায়িত্ব পালন করেন, তাঁরাও সেটা করবেন। আবার পুলিশ কর্মকর্তারা আইনগতভাবে যে সুরক্ষা পান, সেটাও তাঁরা পাবেন।
অতিরিক্ত বাহিনী নিয়োগের আগে প্রশ্ন উঠবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যেসব বাহিনী আছে, তারা কতটা দায়িত্ব পালন করছেন? দেশে এখন যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, আনসার ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন। তারপরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতটা নাজুক কেন?
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বেসরকারি সংস্থায় কাজ করছেন, এমন লোকদের ‘অক্সিলারি ফোর্সে’ নেওয়া হবে। তঁাদের প্রশিক্ষণ থাকলেও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘অক্সিলারি ফোর্স বলতে বোঝায় পুরো ফোর্স নয়, তবে আধা সরকারি ফোর্স, পুলিশকে সহযোগিতার জন্য এ ধরনের ফোর্স ব্যবহার করার বিষয়টি পুলিশ আইনেই আছে।’ যুক্তরাজ্যসহ অনেক
দেশে এই ব্যবস্থা আছে। সেখানে বিশেষ পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত বাহিনী নিয়োগ করা হয়।
মেট্রোপলিটন পুলিশের অর্ডিন্যান্স-১৯৭৬ ধারায় আছে, ডিএমপি কমিশনার যদি মনে করেন যেকোনো ব্যক্তিকে সহযোগী পুলিশ হিসেবে নিয়োগ প্রদান করতে পারেন। কিন্তু নিকট অতীতে এ ধরনের নিয়োগের কোনো দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে নেই। এর ফলে এ উদ্যোগ কতটা কার্যকর হবে—তা একটি প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। কোন প্রক্রিয়ায় এবং কাদের অক্সিলারি ফোর্স হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন।
মূল কথা হলো, অতিরিক্ত বাহিনীর যে সংখ্যক সদস্য নিয়োগের কথা বলা হচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা ২ কোটি ৩২ লাখের বেশি। আর ডিএমপির লোকবল মাত্র ৩৪ হাজার। এর সঙ্গে ৫০০ সদস্যের সংযোজন কার্যত কোনো ফল দেবে না। ঢাকা শহরে যতগুলো শপিং মল ও মার্কেট আছে, সেগুলো পাহারা দেওয়ার জন্য এই সংখ্যা যথেষ্ট নয়।
ডিএমপি কমিশনার বিভিন্ন স্থানে টহল বাড়ানোর কথা বলছেন, আবার বাসায় ঈদে গ্রামের বাড়িতে গেলে অর্থ ও অলংকার নিজেদের দায়িত্বে রাখার কথা বলেছেন। আওয়ামী লীগ আমলে যাঁরা ডিএমপির কমিশনার ছিলেন, তাঁরাও একই রকম সদুপদেশ দিতেন। এ ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন লক্ষণীয় নয়।
অতএব, কেবল লোকদেখানো কিংবা সংখ্যা বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত বাহিনী নিয়োগ কতটা কার্যকর হবে, তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। হঠাৎ করে আইনশৃঙ্খলার অবনতির পেছনে মব ভায়োলেন্স অনেকটা দায়ী। অথচ এ ক্ষেত্রে ডিএমপির তেমন সক্রিয়তা দেখা যায় না। তাঁরা সক্রিয় থাকলে কতিপয় ব্যক্তি আসামিকে ছাড়িয়ে নিতে থানা অবরোধ করতে পারতেন না।
রাজধানী ঢাকায় ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, যৌন হয়রানি ও মব সহিংসতার মতো অপরাধ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আসন্ন ঈদে এ ধরনের অপরাধ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে। এই পরিস্থিতিতে যেকোনো মূল্যে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না, যেটা নতুন সমস্যা তৈরি করে বা প্রশ্ন তৈরি করে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত সদস য ড এমপ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে ভাঙচুর মন্দ বার্তা দেয়
‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালিত হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতেও ইসরায়েলি নৃশংসতার নিন্দা এবং অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।
গাজায় আক্রান্ত ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে যেসব কর্মসূচি নেওয়া হয়, তাতে ছাত্র-তরুণসহ সর্বস্তরের মানুষ যোগ দিয়েছে। এর মাধ্যমে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশ আক্রান্ত ফিলিস্তিনিদের পাশে আছে। এসব কর্মসূচির লক্ষ্য ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধ করতে বিশ্ববিবেককে জাগ্রত করা।
বাংলাদেশে সোমবারের কর্মসূচিটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালনের উদাহরণ এটাই প্রথম। বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ঢাকাসহ বেশির ভাগ শহরে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালিত হয়েছে; যা অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
কিন্তু কর্মসূচি ঘিরে সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, গাজীপুর, বগুড়াসহ কয়েকটি শহরে বাটা শোরুম, কয়েকটি রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যেভাবে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটল, তা উদ্বেগজনক। কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক আছে কিংবা কোথাও ইসরায়েলি পণ্য আছে—এই গুজব ছড়িয়ে একদল লোক যথেচ্ছ হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছেন। কক্সবাজারে ভাঙচুরের ঘটনায় কয়েকজন পর্যটক আহত হন। এসব ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। বাটা কোম্পানির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই কোম্পানির সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো সম্পর্ক নেই। যাঁরা রেস্তোরাঁ ও বাটার দোকানে হামলা করেছেন, তঁারা একটি প্রতিবাদ কর্মসূচিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছেন।
এসব ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা এমন একসময়ে ঘটল, যখন ঢাকায় সরকারের উদ্যোগে বড় আকারের বিনিয়োগ সম্মেলন চলমান। সোমবারই চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনটি শুরু হলো। এসব অঘটন আমন্ত্রিত অতিথিদের কী বার্তা দিল?
এ কথা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে যে কতিপয় ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অপরাধমূলক কাজের মাধ্যমে একটি মহৎ কর্মসূচিকে বিতর্কিত করেছে, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। যখন তাঁদের জানা আছে অতীতে এ ধরনের কর্মসূচি ঘিরে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে, তখন তাঁরা আগাম ব্যবস্থা নিলেন না কেন?
সংবাদমাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অপরাধীদের ধরতে কেন নির্দেশনা দিতে হবে? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রথম কর্তব্য ছিল প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সেই কাজটি তারা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন ভাঙচুর ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় এনে অন্তত তারা পেশাগত দায়িত্ববোধ প্রমাণ করুক।
মঙ্গলবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, হামলা ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এর বাইরেও অনেকে আছেন। ভাঙচুর ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। নিকট অতীতের অনেক ঘটনায় অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণেই তারা এসব অপকর্ম করতে সাহস পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপরাধীদের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। সেসব ভিডিও দেখেও তারা বাকি অপরাধীদেরও শনাক্ত করতে পারে।
নীতিনির্ধারকদের মনে রাখতে হবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন না হলে কিংবা লুটপাটকারী ও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে না পারলে দেশি কিংবা বিদেশি—কোনো বিনিয়োগকারীই বিনিয়োগ করতে উৎসাহ দেখাবেন না। এ রকম অবস্থায় সোমবারের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের মুখোমুখি করতে হবে।