তিন মিনিটে নদী পার, ট্রেনযাত্রীদের গুনতে হবে বাড়তি ভাড়া
Published: 11th, March 2025 GMT
যমুনা নদীর ওপর নতুন রেলসেতু নির্মাণ হয়েছে। আগের সড়ক সেতু দিয়ে আর রেল চলছে না। ফলে ট্রেনে যমুনা নদী পাড়ি দিতে সময় লাগছে ২-৩ মিনিট। আগে সেখানে সময় লাগত ২০ থেকে ২৫ মিনিট। অবশ্য দ্রুত নদী পাড়ি দিতে উত্তরের রেলযাত্রীদের বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে। এই সেতু ব্যবহার করে চলা ট্রেনের আসন ভেদে ভাড়া বাড়বে ৪৫ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত। ১৯ মার্চ থেকে বাড়তি ভাড়া কার্যকর হবে।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, যমুনা রেলসেতুটির দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। কিন্তু সেতুটিকে ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছে। অর্থাৎ সেতুটির প্রতি কিলোমিটার দূরত্বকে ২৫ কিলোমিটারে বাড়িয়ে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। অবশ্য যমুনা সড়ক সেতু দিয়ে ট্রেন চলার সময়ও প্রতি কিলোমিটারকে ১৭ কিলোমিটার ধরে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল। নতুন সেতুতে প্রতি কিলোমিটারে আট কিলোমিটার বেড়েছে।
বড় সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য টোল আদায় করা হয়। রেলওয়ে সেতুর টোল যাত্রীদের টিকিটে সরাসরি যুক্ত করে দেয়। আর এই বাড়তি অর্থ যুক্ত করার নির্দিষ্ট একটি পদ্ধতি অনুসরণ করে রেলওয়ে। একে রেলওয়ে ‘পন্টেজ চার্জের’ জন্য বাড়তি দূরত্ব বলছে, যা ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসছে।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, নতুন সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ হিসেবে বাড়তি ভাড়া আদায়ের রেওয়াজ ব্রিটিশ আমল থেকে চালু আছে। এত দিন কোন সেতুতে কত বাড়তি আদায় করা হবে, এর সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়ম ছিল না। পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চালুর সময় সেতুর বাড়তি ভাড়া হিসাবের ক্ষেত্রে নতুন করে চালু বড় সেতুর প্রতি কিলোমিটারকে ২৫ কিলোমিটার ধরে ভাড়া নির্ধারণের নিয়ম চালু হয়েছে।
নতুন সেতুতে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। তবে রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, তারা সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল নির্ধারিত করে দিয়েছে।রেলওয়ে সূত্রমতে, বর্তমানে রেলে কিলোমিটারপ্রতি এসি শ্রেণির ভিত্তি ভাড়া ১ টাকা ৯৫ পয়সা। নন-এসি শ্রেণির ভিত্তি ভাড়া ১ টাকা ১৭ পয়সা। এর সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত করা হয়। এ ছাড়া আন্তনগর ট্রেনে বিরতিহীন চার্জ যুক্ত করা হয় আরও ১০ শতাংশ। দেশে লোকাল, মেইল, কমিউটার ও আন্তনগর—এই চার ধরনের ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে ভাড়ার হার কিছুটা কমবেশি আছে। আন্তনগর ট্রেনেও বিভিন্ন শ্রেণি রয়েছে। এগুলো হলো শোভন চেয়ার, এসি চেয়ার, এসি সিট ও এসি বার্থ (শুয়ে যাওয়ার আসন)। লোকাল ট্রেনে সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা। আন্তনগরে তা ৩৫ টাকা। তবে সেতু ও উড়ালপথ থাকলে সর্বনিম্ন ভাড়া বাড়ে। রেলের ভাড়া প্রতিটি আসনের ভাড়া নির্ধারণে এসব হিসাব আমলে নেওয়া হয়।
ট্রেনের টিকিট বিক্রি ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, ১৮ মার্চ ঢাকা থেকে রাজশাহী যেতে ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার শ্রেণির আসনের ভাড়া ৪০৫ টাকা, স্নিগ্ধা (এসি চেয়ার) শ্রেণির আসনের ভাড়া ৭৭১ টাকা ও এসি সিট শ্রেণির আসনের ভাড়া ৯২৬ টাকা দেখাচ্ছে। কিন্তু একই ট্রেনে ১৯ মার্চে শোভন চেয়ার শ্রেণির আসনের ভাড়া ৪৫০ টাকা, স্নিগ্ধা (এসি চেয়ার) শ্রেণির আসনের ভাড়া ৮৬৩ টাকা ও এসি সিট শ্রেণির আসনের ভাড়া ১০৩৫ টাকা দেখাচ্ছে। একইভাবে লালমনিরহাট এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, বনলতা, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, সিল্কসিটি, পদ্মা, নীলসাগর, চিলাহাটি এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস, একতা, দ্রুতযান, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, বুড়িমারী এক্সপ্রেসসহ সব ট্রেনেরই ভাড়া বাড়ছে।
মূল সেতু পার হতে ট্রেনে লাগবে ২-৩ মিনিট। আর দুই পারের স্টেশন সয়দাবাদ ও ইবরাহিমাবাদের মধ্যে দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। এই অংশ পার হতে ৭ মিনিটের বেশি লাগবে না।আল ফাত্তাহ মো.মাসুদুর রহমান, যমুনা রেলসেতু প্রকল্পের পরিচালকচালু হচ্ছে যমুনা রেলসেতু
যমুনা নদীতে বর্তমান সড়ক সেতুর পাশে আরেকটি নতুন রেলসেতু নির্মাণ করা হয়েছে জাপানের অর্থায়নে। এই রেলসেতুতে আসা ও যাওয়ার দুটি লাইন রয়েছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকেই নতুন সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে একটি লাইন দিয়ে আসা-যাওয়া করে। এখন আর যমুনা সড়ক সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল করে না। তবে ১৮ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন রেলসেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করা হবে।
১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর সড়ক সেতু চালু হয়। ওই সেতুতে শেষ মুহূর্তে রেল যুক্ত করা হয়। এর মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৬ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ার পর ট্রেন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। ঘণ্টায় সেতু দিয়ে ২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করত।
নতুন রেলসেতু নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৬ সালে। প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। পরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা।নতুন সেতুতে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। তবে রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, তারা সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল নির্ধারিত করে দিয়েছে। তবে এর চেয়েও কম গতিতে ট্রেন চলাচল করবে।
যমুনা সড়ক সেতু দিয়ে প্রতিদিন ৩৮টি ট্রেন চলাচল করেছে। চাহিদা থাকার পরও লাইন ও সেতুর সক্ষমতা না থাকায় ট্রেন বাড়ানো যায়নি। এমনকি ভারী মালবাহী ট্রেন চলাচলেও বাধা ছিল। নতুন সেতু দিয়ে অধিক ট্রেন এবং মালবাহী ট্রেন চালানো যাবে বলে রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
যমুনা নদীর বুকে রেলসেতু। ১৮মার্চ সেতুর উদ্বোধন করা হবেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ র ণ র আসন র ভ ড় ক ল ম ট র গত ত য ক ত কর সড়ক স ত র লওয়
এছাড়াও পড়ুন:
সুবর্ণ-সোনার বাংলাসহ ১০ ট্রেনের সময় পরিবর্তন
বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ট্রেন চলাচলের নতুন সময়সূচি কাল সোমবার থেকে কার্যকর হচ্ছে। নতুন সময়সূচিতে সুবর্ণ এক্সপ্রেসসহ পাঁচটি আন্তনগর ট্রেনের চট্টগ্রাম থেকে যাত্রার সময় এগিয়ে আনা হয়েছে। আর যাত্রার সময় পিছিয়েছে সোনার বাংলাসহ পাঁচ আন্তনগর ট্রেনের। তবে সুবর্ণ ও সোনার বাংলার ঢাকা থেকে ছাড়ার সময় অপরিবর্তিত থাকবে।
ট্রেন চলাচলের সময়সূচিকে রেলের ভাষায় ওয়ার্কিং টাইম টেবিল (ডব্লিউটিটি) বলা হয়। সোমবার থেকে কার্যকর হবে ডব্লিউটিটি-৫৪। এর আগের ডব্লিউটিটি-৫৩ কার্যকর হয়েছিল ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর।
ট্রেন পরিচালনার সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে দুটি অঞ্চলে বিভক্ত। একটি অঞ্চল যমুনা নদীর পূর্ব পাশে, যা পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে (ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট-ময়মনসিংহ বিভাগ) হিসেবে পরিচিত। আর যমুনা নদীর পশ্চিম পাশ নিয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে গঠিত (রাজশাহী-রংপুর-খুলনা বিভাগ)। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের অধীনে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন রুটে বর্তমানে ২৯ জোড়া আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে।
ট্রেন চলাচলের নতুন সময়সূচি অনুযায়ী, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ছাড়বে সকাল ৭টায়। আগে সাড়ে ৭টায় ছেড়ে যেত। ৪৫ মিনিট এগিয়ে আনা হয়েছে চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেসের যাত্রার সময়। আগে সন্ধ্যা ৬টায় ছেড়ে গেলেও এখন ছাড়বে বিকেল সোয়া ৫টায়।
তারাকান্দি থেকে ঢাকাগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ছাড়বে বিকেল সাড়ে ৫টায়, আগে ছেড়ে যেত সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। জামালপুর থেকে বিজয় এক্সপ্রেস চট্টগ্রামের উদ্দেশে এখন থেকে ১০ মিনিট আগে রাত ৮টায় ছাড়বে।
কক্সবাজার এক্সপ্রেস এখন দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের পরিবর্তে দুপুর সাড়ে ১২টায় কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।
এদিকে যাত্রার সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে পাঁচটি ট্রেনের। এর মধ্যে সিলেট থেকে ঢাকাগামী পারাবত এক্সপ্রেস এখন থেকে ছাড়বে বিকেল ৪টায়। আগে ছেড়ে যেত বেলা সাড়ে ৩টায়।
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের যাত্রার সময় ১৫ মিনিট পিছিয়ে বিকেল ৫টা করা হয়েছে। আগে পৌনে ৫টায় ছেড়ে যেত।ঢাকা থেকে জামালপুর এক্সপ্রেস এখন ছাড়বে বিকেল সোয়া ৫টায়। ভূঞাপুরগামী এই ট্রেন আগের সময়সূচি অনুযায়ী ছাড়ত বিকেল সাড়ে ৪টায়।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার এক্সপ্রেসের যাত্রার সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে ৩০ মিনিট। এখন রাত সাড়ে ১০টার পরিবর্তে রাত ১১টায় ঢাকা ছাড়বে এই ট্রেন।
নতুন সময়সূচি অনুযায়ী সোমবার থেকে ট্রেন চলাচলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিচলন কর্মকর্তা (সিওপিএস) মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, রেলের নতুন টাইম টেবিলে কিছু ট্রেনের যাত্রার সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে।