৩৮৫ কোটি টাকা দেনার ভারে ডুবছে বিসিসি, বাড়ছে ক্ষোভ
Published: 11th, March 2025 GMT
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) ৩৮৫ কোটি টাকার দেনার ভারে ডুবতে বসেছে। ব্যয়ের তুলনায় আয় না বাড়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য ব্যয় মেটাতে পারছেন না। ফলে কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। একইভাবে কাজ শেষ করেও পাওনা না পাওয়ায় ঠিকাদারদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
২০০২ সালে বরিশাল পৌরসভা সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয়। তখন প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন সাবেক পৌর মেয়র ও কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামাল। তারপর পর্যায়ক্রমে তৎকালীন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শওকত হোসেন হিরণ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং সর্বশেষ আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত সিটি মেয়র নির্বাচিত হন।
গত ৫ আগস্ট অভ্যুন্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতকে বরখাস্ত করে এবং বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেয়।
বরিশাল পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীতকরণের পর থেকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করা নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের বেশ কয়েকবার ঝামেলা হয়। এমনকি, সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুতের লাইনও কেটে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। কিন্তু কোনোভাবে পুরো বিল পরিশোধ করেনি কোনো মেয়রই।
বিগত ৫ বছরে বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করেননি তৎকালীন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। একই পাথে হাটেন সাদিক আব্দুল্লাহর ছোট চাচা ও পরবর্তী মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত। যে কারণে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে বিদ্যুতের বকেয়া বিলের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৪ কোটি টাকা।
একইভাবে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হলেও ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করেননি তৎকালীন মেয়র। ঘুষ না পাওয়ায় অনেক বিল আটকে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে সাবেক মেয়র সাদিকের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতও তার সময়ে অনেক ঠিকাদারের বিল আটকে দেন। ফলে ঠিকাদারদের বকেয়া বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ কোটি টাকার মতো। আর বিপুল পরিমাণ বকেয়া বিল পরিশোধ করতে পারছে না সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনের কাছে পাওনা ৩০০ কোটি টাকা আদায়ের জন্য ঠিকাদারেরা প্রতিদিনই ধর্না দিচ্ছেন। কিন্তু ফান্ড না থাকায় বিল পরিশোধ করতে পারছে না সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।
শুধু বিদ্যুৎ বিল আর ঠিকাদারদের পাওনার টাকা নয়, ফান্ড সংকটের কারণে বিসিসির অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পেনশনের বকেয়া ২০ কোটি টাকাও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের আয়ের চারটি উৎস রয়েছে। তাদের মধ্যে রাজস্ব আয়, রাজস্ব খাত, সরকারি অনুদান এবং বিদেশি সহায়তা। তবে বরিশালে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কারখানা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান না থাকায় রাজস্ব বাড়ানো যাচ্ছে না। একইভাবে বিগত ৫ বছরে সরকারের পক্ষ থেকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নের জন্য কোনো বরাদ্দ দেয়া হয়নি। আভ্যন্তরীণ আয় দিয়ে চলছিল সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা করার কাজ। এ ক্ষেত্রে সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ কিছুটা সফল হলেও ঠিকাদার, বিদ্যুতসহ অন্যান্য বকেয়া বিল পরিশোধে সফলতা পাননি।
সাদিক আব্দুল্লাহ আওয়ামী লীগ মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের টিকিটে নতুন মেয়র হন খোকন সেরনিয়াবাত। অসুস্থ হওয়ায় তিনি সিটি কর্পোরেশন চালাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হন। এক্ষেত্রে মেয়রের সহধর্মিনী লুনা আব্দুল্লাহ সিটি কর্পোরেশনে অবৈধ হস্তক্ষেপ শুরু করেন।
অভিযোগ রয়েছে, লুনা আব্দুল্লাহ বিভিন্ন প্রকল্প থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তবে গত এক বছরে খোকন সেরনিয়াবাত বরিশালে চোখে পড়ার মতো কোনো উন্নয়ন কাজ করতে পারেননি। আভ্যন্তরীণ আয় বাড়লেও সরকারি কম বরাদ্দ ও প্রয়োজনীয় বিদেশি অনুদান না পাওয়ায় বেহাল দশা বিসিসির।
কর্মচারীদের বেতন ভাতাসহ অন্যান্য ব্যয় মেটাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে বর্তমান প্রশাসককে। এ বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, সিটি কর্পোরেশনের দেনার পরিমাণ এত বেশি যে তা আভ্যন্তরীণ আয় দিয়ে কোনোভাবেই পরিশোধ করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ঠিকাদাররা প্রতিনিয়ত টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু অভ্যন্তরীণ আয় থেকে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের পর যে টাকা থাকে, তা থেকে বিদ্যুৎ বিলসহ সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হচ্ছে।
ঢাকা/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বর শ ল স ট পর ম ণ সরক র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
৩৮৫ কোটি টাকা দেনার ভারে ডুবছে বিসিসি, বাড়ছে ক্ষোভ
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) ৩৮৫ কোটি টাকার দেনার ভারে ডুবতে বসেছে। ব্যয়ের তুলনায় আয় না বাড়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য ব্যয় মেটাতে পারছেন না। ফলে কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। একইভাবে কাজ শেষ করেও পাওনা না পাওয়ায় ঠিকাদারদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
২০০২ সালে বরিশাল পৌরসভা সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয়। তখন প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন সাবেক পৌর মেয়র ও কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামাল। তারপর পর্যায়ক্রমে তৎকালীন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শওকত হোসেন হিরণ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং সর্বশেষ আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত সিটি মেয়র নির্বাচিত হন।
গত ৫ আগস্ট অভ্যুন্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতকে বরখাস্ত করে এবং বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেয়।
বরিশাল পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীতকরণের পর থেকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করা নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের বেশ কয়েকবার ঝামেলা হয়। এমনকি, সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুতের লাইনও কেটে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। কিন্তু কোনোভাবে পুরো বিল পরিশোধ করেনি কোনো মেয়রই।
বিগত ৫ বছরে বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করেননি তৎকালীন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। একই পাথে হাটেন সাদিক আব্দুল্লাহর ছোট চাচা ও পরবর্তী মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত। যে কারণে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে বিদ্যুতের বকেয়া বিলের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৪ কোটি টাকা।
একইভাবে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হলেও ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করেননি তৎকালীন মেয়র। ঘুষ না পাওয়ায় অনেক বিল আটকে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে সাবেক মেয়র সাদিকের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতও তার সময়ে অনেক ঠিকাদারের বিল আটকে দেন। ফলে ঠিকাদারদের বকেয়া বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ কোটি টাকার মতো। আর বিপুল পরিমাণ বকেয়া বিল পরিশোধ করতে পারছে না সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনের কাছে পাওনা ৩০০ কোটি টাকা আদায়ের জন্য ঠিকাদারেরা প্রতিদিনই ধর্না দিচ্ছেন। কিন্তু ফান্ড না থাকায় বিল পরিশোধ করতে পারছে না সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।
শুধু বিদ্যুৎ বিল আর ঠিকাদারদের পাওনার টাকা নয়, ফান্ড সংকটের কারণে বিসিসির অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পেনশনের বকেয়া ২০ কোটি টাকাও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের আয়ের চারটি উৎস রয়েছে। তাদের মধ্যে রাজস্ব আয়, রাজস্ব খাত, সরকারি অনুদান এবং বিদেশি সহায়তা। তবে বরিশালে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কারখানা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান না থাকায় রাজস্ব বাড়ানো যাচ্ছে না। একইভাবে বিগত ৫ বছরে সরকারের পক্ষ থেকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নের জন্য কোনো বরাদ্দ দেয়া হয়নি। আভ্যন্তরীণ আয় দিয়ে চলছিল সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা করার কাজ। এ ক্ষেত্রে সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ কিছুটা সফল হলেও ঠিকাদার, বিদ্যুতসহ অন্যান্য বকেয়া বিল পরিশোধে সফলতা পাননি।
সাদিক আব্দুল্লাহ আওয়ামী লীগ মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের টিকিটে নতুন মেয়র হন খোকন সেরনিয়াবাত। অসুস্থ হওয়ায় তিনি সিটি কর্পোরেশন চালাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হন। এক্ষেত্রে মেয়রের সহধর্মিনী লুনা আব্দুল্লাহ সিটি কর্পোরেশনে অবৈধ হস্তক্ষেপ শুরু করেন।
অভিযোগ রয়েছে, লুনা আব্দুল্লাহ বিভিন্ন প্রকল্প থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তবে গত এক বছরে খোকন সেরনিয়াবাত বরিশালে চোখে পড়ার মতো কোনো উন্নয়ন কাজ করতে পারেননি। আভ্যন্তরীণ আয় বাড়লেও সরকারি কম বরাদ্দ ও প্রয়োজনীয় বিদেশি অনুদান না পাওয়ায় বেহাল দশা বিসিসির।
কর্মচারীদের বেতন ভাতাসহ অন্যান্য ব্যয় মেটাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে বর্তমান প্রশাসককে। এ বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, সিটি কর্পোরেশনের দেনার পরিমাণ এত বেশি যে তা আভ্যন্তরীণ আয় দিয়ে কোনোভাবেই পরিশোধ করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ঠিকাদাররা প্রতিনিয়ত টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু অভ্যন্তরীণ আয় থেকে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের পর যে টাকা থাকে, তা থেকে বিদ্যুৎ বিলসহ সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হচ্ছে।
ঢাকা/বকুল