ঢাকার বায়ুদূষণ কমছেই না, আজ সকালে বিশ্বে তৃতীয়
Published: 11th, March 2025 GMT
বিশ্বের ১২৬ নগরীর মধ্যে আজ মঙ্গলবার সকালে বায়ুদূষণে তৃতীয় স্থানে আছে ঢাকা। আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে আইকিউএয়ারের মানসূচকে ঢাকার গড় বায়ুমান ১৮৩। এ মানকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে গণ্য করা হয়।
বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান তুলে ধরেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।
আজ আইকিউএয়ারের দেওয়া সতর্কবার্তায় ঢাকাবাসীর উদ্দেশে পরামর্শ, বাইরে বের হলে সুস্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। খোলা স্থানে ব্যায়াম করা যাবে না। আরও একটি পরামর্শ, ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হবে।
আজ বায়ুদূষণে শীর্ষে আছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। বায়ুর মান ২৪৮।
গত ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে এক দিনও নির্মল বায়ু পায়নি রাজধানীবাসী। চলতি মাসেরও একই হাল।
আজ অন্য বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামে বায়ুর মান ১৩৬, রাজশাহীতে ১৭২ ও খুলনায় ১৫৪।
রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উৎসগুলোর মধ্যে আছে কলকারখানা ও যানবাহনের দূষিত ধোঁয়া, ইটভাটা, বর্জ্য পোড়ানো। দূষণ রোধে হাঁকডাক এবং নানা ধরনের প্রকল্পও কম হয়নি সরকারি স্তরে, কিন্তু দূষণ কমছে না।
দূষণসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ক্যাপসের এক জরিপে দেখা গেছে, ডিসেম্বরে যত বায়ুদূষণ ছিল, তা গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ। আবার গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতেও দূষণের মান ছিল ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উপাদান হলো বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির দু’পক্ষে সংঘর্ষ ভাগবাটোয়ারা নিয়ে
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর সীমান্ত সড়কে কয়লা ও চুনাপাথরবোঝাই ট্রাক থেকে প্রতিদিন অন্তত তিন লাখ টাকার চাঁদাবাজি হয়। এ চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ ও ভাগবাটোয়ারা নিয়ে সীমান্তবর্তী দুটি ইউনিয়নের বিএনপি নেতাকর্মী দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছেন। এর জেরে সোমবার রাতে উপজেলার মহিষখলা বাজারে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এতে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ২৫ জন আহত হন। একজন নিহত হওয়ার খবর প্রকাশ হলেও স্বজনরা বলছেন, তিনি ঘটনাস্থলেই ছিলেন না; মারা গেছেন হৃদরোগে।
চাঁদাবাজির ঘটনায় বিএনপির দুই পক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করছে। মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাঁদাবাজি-চোরাচালান ঠেকাতে মহিষখলায় পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বড় শুল্ক স্টেশন চারাগাঁও ও বাগলী থেকে চুনাপাথর ও কয়লার একটি বড় অংশ সম্প্রতি ট্রাকে মহিষখলা হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে। বিগত সরকারের শেষ সময়ে এই পথে ট্রাক চলাচল শুরু হলেও সরকার পরিবর্তনের পর এ পথে ব্যস্ততা বেড়েছে। প্রতিদিন আড়াইশ থেকে তিনশ ট্রাক চলছে। ৫ আগস্টের আগে উত্তর বংশিকুণ্ডা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আইনুদ্দিনের নেতৃত্বে এ সড়কে চাঁদাবাজি হতো। এর ভাগ প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের পকেটেও যেত। আইনুদ্দিন কারাগারে থাকায় এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
পরে এ সড়কে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নেন স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতারা। চাঁদা তোলা ও ভাগবাটোয়ারা নিয়ে উত্তর ও দক্ষিণ বংশিকুণ্ডা (একাংশ) বিএনপি’র নেতাকর্মীর বিরোধ চলছে গেল কয়েক মাস ধরেই। কয়েকদিন আগে বিএনপির উচ্চপর্যায় থেকে সমঝোতার চেষ্টা করেও সফলতা আসেনি।
উত্তর বংশিকুণ্ডা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হাসান শিকদার বলেন, ‘বহিস্কৃত বিএনপি নেতা হযরত আলীর ছোট ভাই যুবদলের সোহেল রানা প্রতিদিন দুইশ থেকে তিনশ ট্রাক থেকে এক হাজার টাকা করে চাঁদা তোলেন। তারা দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করায় আমরা প্রতিবাদ জানাই। এতে সাবেক ছাত্রদল নেতা হারুন মাহমুদ আকাশকে সোমবার তারা মারধর করেন। পরে হারুন ঘটনাটি গ্রামের লোকজনকে জানালে গ্রামবাসী ইফতারের পর জড়ো হয়ে মহিষখলা বাজারে গেলে সংঘর্ষ ঘটে।’ এ সময় এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর মামলার সুবিধার্থে প্রচার করা হয়– দাবি করে এ ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘হোসেনপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।’
সাবেক ছাত্রদল নেতা উপজেলার দক্ষিণ বংশিকুণ্ডা ইউনিয়নের দাতিয়াপাড়ার বাসিন্দা হারুন মাহমুদ আকাশ বলেন, ‘হযরত আলী ও তাঁর ভাই মুক্তার হোসেন প্রতিদিন দুইশ থেকে তিনশ গাড়ি থেকে চাঁদা তোলেন। দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ায় প্রতিবাদ করেছি। পরে তারা (হযরতের সমর্থকরা) আক্রমণ করে। এ সময় গ্রামের লোকজন সাবেক দুই ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের নেতৃত্বে মহিষখলা বাজারে আসেন। সেখানে আমার সমর্থক বিএনপি নেতাকর্মীরাও ছিলেন। হযরত আলীর লোকজন আমাদের দেখামাত্রই ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে।’
মধ্যনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান হযরত আলী বলেন, ‘রাতের বেলা বিভিন্ন ট্রাক থেকে চাঁদা তুলেন হারুন মাহমুদ ও তাঁর লোকজন। পরে ট্রাকওয়ালাদের আমাদের কারও নাম বলে দেন।’ তিনি দাবি করেন, প্রশাসনসহ এলাকাবাসী বাধা দেওয়ার পরও বড় বড় ট্রাক এ সড়ক দিয়ে চলছে। তাঁর দাবি, সোমবার দাতিয়াপাড়া থেকে ১৫-২০টি গাড়িতে লোকজন এনে হামলা চালায় হারুন মাহমুদের সমর্থকরা। এ সময় তাঁর পক্ষের ২০ জন আহত হন। তাদের নেত্রকোনার কলমাকান্দা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হোসেনপুরের মোহাম্মদ আলীর ওপর ঢিল পড়ে। পরে তিনি মারা যান। তার ছেলেদের দাবি, তিনি হৃদরোগে মারা গেছেন।
উত্তর বংশিকুণ্ডা ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হেলাল মিয়া বলেন, সীমান্তের এ সড়ক দিয়ে চুনাপাথর, কয়লার ট্রাক বছর দুয়েক আগেও যায়নি। এগুলো নৌপথে নেওয়া হতো। বছরখানেক হয় এ পথে চুনাপাথর-কয়লা যাচ্ছে। শত শত ট্রাক যাওয়ায় সড়কের অবস্থাও বেহাল। বাড়ি-ঘর ধুলোময়। শব্দে ঘুমানো যাচ্ছে না। সড়কের বেহাল দশা ঠেকাতে প্রতিবাদ করেও লাভ হচ্ছে না।
মধ্যনগর থানার ওসি সজীব রহমান বলেন, মহিষখলায় সংঘর্ষে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের কয়েকজন আহত হয়েছেন। মোহাম্মদ আলী মারামারি শুরুর আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।