ভারতের বরেণ‌্য অভিনয়শিল্পী, অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মন্ত্রী চিরঞ্জীবী। চার দশকের অভিনয় ক‌্যারিয়ারে তেলেগু, তামিল, হিন্দি, কন্নড় ভাষার অনেক সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। বিশেষ করে তেলেগু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তার অবদান অনেক।

চিরঞ্জীবী তার একজীবনে যশ-খ্যাতি যেমন কুড়িয়েছেন, তেমনি অঢেল সম্পদেরও মালিক। উত্তরাধিকার হিসেবে পুত্র রাম চরণ নিজেকে উচ্চ অবস্থানে নিয়ে গেছেন। আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়, তার জীবনে অপূর্ণতা বলতে কিছু নেই! কিন্তু আদতে জীবন এমন নয়। কারণ মানুষের জীবনের ভাঁজে ভাঁজে গল্প লুকিয়ে থাকে। চিরঞ্জীবী তার পারিবারিক অজানা অধ্যায় শেয়ার করেছেন একটি পডকাস্টে।

চিরঞ্জীবীর আসল নাম শিব শংকর ভারা প্রসাদ কোন্দিলা। তবে চিরঞ্জীবী নামেই অধিক পরিচিত। তার বাবার নাম কোন্দিলা ভেঙ্কট রাও আর মায়ের নাম অঞ্জনা। তার বাবা-মা সংগ্রামী জীবনযাপন করেছেন। বিশেষ করে তার মা বড় ধরনের ট্র্যাজেডির মধ্য দিয়ে জীবন কাটিয়েছেন।

চিরঞ্জীবী বলেন, “এমন একটি ঘটনা আছে, যা নিয়ে ভাবলেই চোখে জল চলে আসে। গর্ভপাতের কারণে আম্মা তিন সন্তানকে হারান। অথবা এক বছর, দুই বছর এবং আড়াই বছরের সন্তানকে হারান আমার আম্মা।”

ভাই-বোনদের একা সামলাতেন চিরঞ্জীবীর মা। তা জানিয়ে এই অভিনেতা বলেন, “আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি, তখন আমার একটি বোনের জন্ম হয়, তার নাম ছিল রমনা। সেই সময়ে বাবা প্রতিদিন বাইরে চলে যেতেন আর আম্মা একাই আমাদের সামলাতেন।”   

চিরঞ্জীবীর এক বোন মারা যায়। সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এই মেগাস্টার বলেন, “আমার বোন রমনার ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। আমি আর আম্মা বোনের মরদেহ রিকশায় করে বাড়ি নিয়ে এসেছিলাম। আমরা জানতাম না কীভাবে শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে হয়। সেই সময়ে আমাদের প্রতিবেশী ছিল একটি মুসলিম পরিবার। তারা আমাদের সহযোগিতা করে। খবর পেয়ে বাবা বাড়ি আসেন। এরপর আমরা বোনের শেষকৃত্য সম্পন্ন করি।”

সর্বশেষ কোন্দিলা ভেঙ্কট রাও এবং অঞ্জনা দম্পতির চার সন্তান জীবিত রয়েছেন। তারা হলেন— চিরঞ্জীবী, নাগেন্দ্র বাবু, পবন কল্যাণ ও বিজয়া দুর্গা।

১৯৭৮ সালে তেলেগু ভাষার ‘পুনাধিরুলু’ সিনেমার মাধ্যমে রুপালি পর্দায় পা রাখেন চিরঞ্জীবী। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে বিভিন্ন ভাষার ১৫০টির বেশি সিনেমায় কাজ করেছেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে— ‘খাইদি’, ‘পাসিবাড়ি প্রণাম’, ‘ইয়ামুডিকি মুগুডু’, ‘গ্যাং লিডার’, ‘ঘরনা মুগুডু’ প্রভৃতি।

কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ গত বছর ভারত সরকার চিরঞ্জীবীকে পদ্মবিভূষণ পুরস্কার দিয়েছে। ২০০৬ সালে এই দক্ষিণী মেগাস্টারকে পদ্মভূষণ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়।

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া 

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে: টিউলিপ

বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিক জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট আসনের এমপি ও ও সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, আপনারা বুঝবেন যে, এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারকে কোনো প্রসঙ্গ বা মন্তব্যের মাধ্যমে আমি বিশেষ গুরুত্ব দিতে পারি না। এটা পুরোপুরি আমাকে হয়রানি করার জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার। এমন কোনো প্রমাণ নেই যে আমি ভুল কিছু করেছি।’ খবর-বিবিসি

বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে সোমবার লন্ডনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি বলেন, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষগুলোর কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। পুরোটা সময় তারা মিডিয়া ট্রায়াল চালিয়েছে। আমার আইনজীবীরা উদ্যোগী হয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছিলেন। তবে তারা কখনও এর জবাব দেয়নি।’

প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে করা তিনটি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা পৃথক তিন মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে রোববার এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব। আদালতে দুদকের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তার করা গেল কিনা, সে-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ২৭ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন আদালত। ১০ কাঠা প্লট নেওয়ার অন্য অভিযোগে শেখ রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ১৩ জানুয়ারি মামলা করেন দুদকের একজন সহকারী পরিচালক। মামলায় শেখ হাসিনা, টিউলিপসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়। 

এর আগে জানুয়ারির মাঝামাঝিতে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করেন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) ছিলেন। দেশটির আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে।

গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপের খালা বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আর্থিক সম্পর্কের বিষয়ে বারবার প্রশ্ন ওঠায় টিউলিপ সিদ্দিক মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

সম্প্রতি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অর্থনৈতিক অসঙ্গতির অভিযোগ উঠে। এরপর নিজের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগকে তদন্তের আহ্বান জানান টিউলিপ। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস।

টিউলিপ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দেন। তবে এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, তার বিরুদ্ধে যে তদন্ত হয়েছে সেখানে, মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস তার বিরুদ্ধে মন্ত্রিত্বের নীতি ভঙ্গের কোনো প্রমাণ পাননি। কেয়ার স্টারমার অফিসিয়াল চিঠিতে টিউলিপ সিদ্দিককে বলেন, ‘আপনার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার সময় এটা পরিষ্কার করতে চাই যে, মিনিস্ট্রিয়াল ওয়াচডগের উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস আমাকে আশ্বস্ত করেছেন- তিনি আপনার বিরুদ্ধে মন্ত্রিত্বের নীতি ভঙ্গের কোনো প্রমাণ পাননি এবং আর্থিক অসঙ্গতির কোনো প্রমাণ খুঁজে পাননি।’ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ