ক্ষমতার অপব্যবহার ও জালিয়াতি করে রাজউকের আবাসন প্রকল্পে ১০ কাঠা করে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে ছয় মামলার চার্জশিট দিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এদিকে শেখ হাসিনা, তাঁর পরিবার ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পাচার অর্থ চিহ্নিত করার ক্ষেত্রেও বেশ অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট-বিএফআইইউ ও যৌথ তদন্ত দল ইতোমধ্যে পাচার-সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

গতকাল সোমবার কমিশন ওই ছয় মামলার চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে। মামলার বাদীরা শিগগির আদালতে চার্জশিট পেশ করবেন। প্রধান আসামি শেখ হাসিনাসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা পলাতক। দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে, আইন অনুযায়ী তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। গতকাল দুদক মহাপরিচালক মো.

আক্তার হোসেন ব্রিফিংয়ে চার্জশিট অনুমোদনের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
চার্জশিটে বলা হয়, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তাঁর ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজ মালিকানায় ও তাঁর ছেলে, মেয়ে, বোন, বোনের মেয়ে ও বোনের ছেলের নামে ঢাকা শহরে বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও তা হলফনামায় গোপন করেছেন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পের বরাদ্দ-সংক্রান্ত আইনবিধি, নীতিমালা ও আইনি পদ্ধতি লঙ্ঘন করেছেন। তাঁর দপ্তরসহ প্রকল্পের বরাদ্দবিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউক কর্মচারীদের প্রভাবিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওই প্রকল্পের অতি মূল্যবান কূটনৈতিক এলাকায় ২৭ নম্বর সেক্টরে ১০ কাঠা করে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে মোট ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। প্লটগুলোর দখল বুঝে নিয়ে রেজিস্ট্রিমূলে গ্রহণ করে আসামিরা দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। 

শেখ হাসিনা ছাড়াও ছয় মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), বোন শেখ রেহানা, ভাগনি ও দুর্নীতির অভিযোগে পদত্যাগ করা ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক, আরেক ভাগনি আজমিনা সিদ্দিক ও ভাগনে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। 
গত ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ও অন্যদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছিল। এর মধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মকর্তাসহ আসামি আটজন। জয়ের বিরুদ্ধে করা মামলায় তাঁর মা শেখ হাসিনাসহ মোট ১৫ জনকে আসামি করা হয়। ছয় মামলার আসামি ছাড়াও চার্জশিটে নতুন যুক্ত হয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব মো. সালাউদ্দিন।

জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৪ আসামির মধ্যে রয়েছেন এই মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য মেজর (অব.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (ইঞ্জিনিয়ার), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান। 
চার্জশিটে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজের ও পরিবার সদস্যদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ছয়টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছিলেন।

শেখ হাসিনা ও তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে গত ২২ ডিসেম্বর ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এর আগে শেখ হাসিনা, বোন শেখ রেহানা পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছিল। এই টিমকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগটি অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয় কমিশন। প্লট জালিয়াতি মামলা, চার্জশিটের পাশাপাশি ওই সব অভিযোগের অনুসন্ধান চালছে।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব ক সদস য প রকল প র পর ব র র ব যবহ র র জউক র মন ত র কর ছ ন ত মন ত বর দ দ র সদস ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেরা একাদশে ভারতের ৫, নিউ জিল্যান্ডের ৪, আফগানিস্তানের ২

সদ্য সমাপ্ত আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেরা একাদশে জায়গা পেয়েছেন ভারতের পাঁচ ক্রিকেটার। চ্যাম্পিয়ন ভারতের অর্ধেকের বেশি খেলোয়াড় সেরা দলে ঢুকলেও অধিনায়ক রোহিত শর্মার জায়গা হয়নি।

রানার্সআপ নিউ জিল্যান্ডের চার ক্রিকেটার রয়েছেন একাদশে। দলটির অধিনায়ক মিচেল স্ট‌্যানারকে সেরা একাদশেরও অধিনায়ক করা হয়েছে। এছাড়া, আফগানিস্তানের দুই ক্রিকেটার রয়েছে একাদশে। জায়গা হয়নি অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ ও স্বাগতিক পাকিস্তানের কোনো ক্রিকেটারের।

রবিবার নিউ জিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে ২০১৩ সালের পর আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা ঘরে তোলে ভারত। সোমবার আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেরা একাদশ ঘোষণা করা হয়।

আরো পড়ুন:

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি
পুরস্কার বিতরণীতে পাকিস্তানের কেউ নেই, ব্যাখ্যা চেয়েছে পিসিবি

কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে মাহমুদউল্লাহর নাম প্রত্যাহার

চ্যাম্পিয়নদের ফাইনালের নায়ক ছিলেন রোহিত শর্মা। নিউ জিল্যান্ডের দেওয়া ২৫২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় রোহিত ৮৩ বলে ৭৬ রান করে ভারতের কাজটা সহজ করে দেন। তবে পুরো টুর্নামেন্টে খুব একটা ভালো কাটেনি তার। ৫ ম্যাটে মাত্র ১ ফিফটিতে ১৮০ রান করেছেন।

৪ ম্যাচে ২৬৩ রান করে টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হওয়া রাচীন রাভিন্দ্রা আছেন একাদশে। তার সঙ্গে ওপেনার হিসেবে আছেন আফগানিস্তানের ইব্রাহিম জাদরান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭৭ রানের নজরকাড়া ইনিংস খেলে ইব্রাহিম জায়গা করে নিয়েছেন একাদশে। এরপর বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার ও রোহেল রাহুল একাদশে আছেন। যারা ভারতের একাদশেও একই পজিশনে ব্যাটিং করে শিরোপা জেতাতে বড় অবদান রেখেছেন।

বিরাট ২১৮, আইয়ার ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ২৪৩ এবং রাহুল ১৪০ রান করেছেন। রাহুল আছেন উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে। নিউ জিল্যান্ডের গ্লেন ফিলিপস ৫ ম্যাচে ১৭৭ রানের সঙ্গে এবার টুর্নামেন্টে ৩টি অসাধারণ ক্যাচ নিয়েছেন। দলে একমাত্র পেস অলরাউন্ডার আজমতউল্লাহ উমারজাই। ব্যাটিংয়ে ৩ ম্যাচে ১২৬ রান ও বোলিংয়ে ৭ উইকেট নিয়েছেন এই পেস অলরাউন্ডার।

স্ট্যানার দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ফাইনালে তুলেছেন। সঙ্গে বল হাতে ৯ উইকেটও নিয়েছেন। ইনজুরি থেকে ফিরে এসে মোহাম্মদ সামি ৯ উইকেট নিয়ে রেখেছেন অবদান। ৯ উইকেট পেয়েছেন বরুণ চক্রবর্তীও। তিনিও আছেন একাদশে। এছাড়া টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ১০ উইকেট পাওয়া ম্যাট হেনরি প্রত্যাশামাফিক একাদশে আছেন।

দলটির দ্বাদশ খেলোয়াড় ভারতের অক্ষর পাটেল। বোলিংয়ে ৫ উইকেটের সঙ্গে ব্যাটিংয়ে ১০৯ রান করেছেন স্পিন অলরাউন্ডার।  

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল: রাচীন রাভিন্দ্রা (নিউ জিল্যান্ড), ইব্রাহিম জাদরান (আফগানিস্তান), বিরাট কোহলি (ভারত), শ্রেয়াস আইয়ার (ভারত), লোকেশ রাহুল (উইকেট রক্ষক-ভারত), গ্লেন ফিলিপস (নিউ জিল্যান্ড), আজমতউল্লাহ উমারজাই (আফগানিস্তান), মিচেল স্ট্যানার (অধিনায়ক-নিউ জিল্যান্ড), মোহাম্মদ সামি (ভারত), ম্যাট হেনরি (নিউ জিল্যান্ড), বরুণ চক্রবর্তী (ভারত), অক্ষর পাটেল (দ্বাদশ-ভারত)।

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ