হাসিনা পরিবারের ১২৪ ব্যাংক হিসাবে ৬৩৫ কোটি টাকা
Published: 11th, March 2025 GMT
শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ১২৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬৩৫.১৪ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। রাজউকের ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা মূল্যের ৬০ কাঠা প্লট পাওয়া গেছে। ৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকার ১০ শতাংশ জমিসহ ৮টি ফ্ল্যাট পাওয়া গেছে। এসব টাকা ও প্লট-ফ্ল্যাট ইতোমধ্যে অবরুদ্ধ বা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী, পরিবার ও স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পাচার করা অর্থ ফেরাতে প্রধান উপদেষ্টা গতকাল বৈঠকে বসেছিলেন। বৈঠক শেষে প্রেস সচিব শফিকুল আলম ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ছয়টি দেশে হাসিনা পরিবারের সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। এগুলো হচ্ছে– যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং এবং কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ। এর মধ্যে মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাশিয়া থেকে আসা বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে এসব দেশের কোনটিতে কত সম্পদ রয়েছে, তা জানা যায়নি। এ-সংক্রান্ত দুটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এই পরিবারের সাত সদস্যের আন্তর্জাতিক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
পাচারের টাকা ফেরাতে বিশেষ আইন
পাচার করা টাকা কীভাবে আনা যায়, সেটা ত্বরান্বিত করার জন্য একটা বিশেষ আইন করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অধ্যাদেশের মাধ্যমে এই আইন করা হবে। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে বিফ্রিংয়ে প্রেস সচিব এ কথা জানান।
শফিকুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ফোকাস ছিল, পাচার করা টাকা কীভাবে আনা যায়। সেজন্য গত ২৯ সেপ্টেম্বর ১১ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে গতকালের বৈঠকে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০০ ল ফার্মের (আইনি সেবা প্রতিষ্ঠান) সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কথা বলেছেন। একটা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাছাই হবে। ৩০টি ল ফার্মের সঙ্গে চুক্তি হবে।
প্রেস সচিব জানান, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে শ্বেতপত্রে লেখা ছিল ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার পাচার হয় বাংলাদেশের ‘ব্যাংকিং সিস্টেম’ থেকে।
ঈদের পর টাস্কফোর্সের আরেকটি বৈঠক ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এখন থেকে এ বিষয়ে প্রতি মাসে বৈঠক হবে। প্রথম সিদ্ধান্ত হলো, একটা বিশেষ আইন হবে। এ জন্য বেশ কয়েকটি আইনি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে টাস্কফোর্স কথা বলছে।
প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী চলমান এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ড.
সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিপুল সম্পদের সন্ধান
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাচার করা সম্পদের তথ্য পেয়েছে সরকারি যৌথ তদন্ত দল। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি, যুক্তরাষ্ট্রে ৭টি ও যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি সম্পত্তির তথ্য জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর ফাঁকির অভিযোগে ১১টি মামলার তদন্ত করছে। এতে সংশ্লিষ্ট দু’জন ব্যক্তির বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং ৩৯টি ব্যাংক ও ১০২ কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়েছে। ৩৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা রয়েছে।
অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মামলায় অগ্রগতি
পাচার করা টাকা ফেরত আনতে ১১টি মামলা বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে সরকার। এতে যুক্ত ১ হাজার ৩৭৪টি ব্যাংক হিসাবের ৬১৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা এবং ১৮৮টি বিও হিসাবের ১৫.৫০ হাজার কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করেছে বিএফআইইউ। ৮৪ অভিযুক্তকে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
১ সেমিস্টারে ৪০০ কোটি টাকা টিউশন ফি
টাস্কফোর্সের সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ছেলের একটি সেমিস্টারের টিউশন ফি হিসেবে ৪০০ কোটি টাকা বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এ তথ্য জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, তদন্তের স্বার্থে আমরা ব্যক্তির নাম প্রকাশ করছি না। কতটা ইনোভেটিভ (উদ্ভাবনী) প্রক্রিয়ায় টাকা পাচার হয়েছে। আমরা জানতাম ওভার ইনভয়েসিং, আন্ডার ইনভয়েসিং, ব্যাংকিং সিস্টেম বা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা চলে গেছে। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় লুপ হোল (ফাঁক) দেখা গেছে।
৯৭ শতাংশ পাঠ্যপুস্তক বিতরণ সম্পন্ন
৩৮ কোটি পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে ৯৭ শতাংশ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। তিনি বলেন, এ বছর পাঠ্যপুস্তক বিতরণ বিলম্বিত হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে ৩৯ কোটি ৬০ লাখ পাঠ্যবই বিতরণ করার কথা ছিল। এর মধ্যে ৩৮ কোটি ২৯ লাখ ৬১ হাজার কপি ছাপানো হয়েছে। ছাপানো বই মোট বইয়ের ৯৭ দশমিক ২ শতাংশ। এসব বই ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এখনও ১ কোটি ৫ হাজার বই ছাপানো সম্ভব হয়নি।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরকার মনে করছে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এসব বই ছাপানো এবং বিতরণ করা সম্ভব। আজ মঙ্গলবার থেকে আগামী বছরের পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানান তিনি।
বিফ্রিংয়ে উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর এবং সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব র র প চ র কর মন ত র ব তরণ
এছাড়াও পড়ুন:
রেকর্ড, রেকর্ড ও রেকর্ড
রেকর্ড, রেকর্ড আর রেকর্ড!
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের মেয়েদের শুরুটা হলো রেকর্ডময় এক জয়ে। মেয়েদের ওয়ানডেতে এ দিন বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরি করেছেন নিগার সুলতানা।
তাঁর সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ পেয়েছে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এরপর থাইল্যান্ডকে ১৭৮ রানে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের জয়ের রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ।
২৭১ রান ডিফেন্ড করতে নেমে থাইল্যান্ডকে নিগারের দল অলআউট করেছে ৯৩ রানে। এর আগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জয়ের রেকর্ড ছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে মিরপুরে আয়ারল্যান্ডকে ১৫৪ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা।
লাহোরে সিটি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন মাঠে ২৮২ রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিল থাইল্যান্ড। ওপেনিং জুটিতে নাত্তইয়া বুচাথাম ও চানিডা সুত্তিরুয়াং তুলেছিল ৩৮ রান। তবে এরপরের গল্পটা বাংলাদেশের দুই স্পিনার ফাহিমা খাতুন ও জান্নাতুল ফেরদৌস। দুজনেই নিয়েছেন ৫টি করে উইকেট।
শুরুটা করেন ফাহিমা। ওপেনার বুচাথামকে ব্যক্তিগত ১৭ রানে আউট করেন ফাহিমা। আরেক চানিডাকেও আউট করেছেন ফাহিমা। টপ অর্ডারের আরেক ব্যাটসম্যান নান্নাপাট কনচারোয়েনকিকেও আউট করেছেন তিনি। মিডল অর্ডারে ধস নামিয়েছেন জান্নাতুল। ওপেনিং জুটিতে ৩৮ রানের পর থাইল্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি এসেছে চতুর্থ উইকেট জুটিতে, ১৮ রানের। এর বাইরে কোনো জুটি দুই অঙ্কের ঘরেও যেতে পারেনি। ৫ উইকেট নিতে ফাহিমা খরচ করেছেন ২১ রান, জান্নাতুল ৭ রান।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিং করতে নেমে নিগারের ৮০ বলে ১০১ রানের ইনিংস এবং শারমিন আক্তারের অপরাজিত ৯৪ রানে ৫০ ওভারে ৩ উইকেটে ২৭১ রান করেছে বাংলাদেশ। ৭৮ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন নিগার। তাঁর সেঞ্চুরিটি এই সংস্করণে নিগারের প্রথম ও বাংলাদেশের তৃতীয়। আগের দুটি সেঞ্চুরিই ফারজানা হকের। ২০২৩ সালে মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে ১৫৬ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন ফারজানা হক, সেটিই এত দিন মেয়েদের ওয়ানডে বাংলাদেশের দ্রুততম সেঞ্চুরি ছিল। তাঁকে পেছনে ফেলে আজ মেয়েদের ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন নিগার।
বাংলাদেশের পরের ম্যাচ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে, আগামী রোববার।