ইউক্রেনের সুমি ও রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে নতুন সাফল্যের কথা জানিয়েছে মস্কো। অপরদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে সৌদি আরবে আলোচনায় বসার আগে মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি গঠনমূলক সংলাপ করতে সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

মঙ্গলবার লোহিত সাগরের তীরবর্তী শহর জেদ্দায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদল বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। এই বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি চুক্তির জন্য একটি ‘কাঠামো’ নিশ্চিত করার জন্য জোর চেষ্টা চালাবেন।

আসন্ন আলোচনা সত্ত্বেও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে, কুরস্ক সীমান্তের কাছে সুমি এলাকায় ছোট গ্রাম নোভেনকে ‘মুক্ত’ করেছে তাদের বাহিনী। এছাড়া কুরস্কের লেবেদেভকা, মালায়া লোকনিয়া, চেরকাসকোয়ে পোরেচনয়ে এবং কোসিৎসা গ্রাম পুনরুদ্ধারের ঘোষণাও দিয়েছে মস্কো।

২০২২ সালে সর্বাত্মক আক্রমণের প্রথম দিকে ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলের কিছু অংশ দখল করে নেয় রাশিয়া। কিন্তু এরপর থেকে সেখানে আর কোনো অঞ্চল দখল করেনি রুশ সেনারা।

রাশিয়ার নোভেনকে দখলের দাবির বিষয়ে কিয়েভ এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। বিশ্লেষকদের মতে, গ্রামটি রুশ সেনাদের ইউক্রেনের প্রধান সরবরাহ পথ বন্ধ করতে সহায়তা করতে পারে।

গত রোবার এক ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘কেবল শক্তিশালী ফ্রন্ট-লাইনের ওপর ভিত্তি করে কূটনীতি শক্তিশালী হবে। আর আমরা ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইনের চাহিদা পূরণের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।"

কে কার সঙ্গে দেখা করছে

যুদ্ধের অবসান ঘটাতে কিয়েভকে আলোচনায় বাধ্য করার চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এমন এক আলোচনায় জেলেনস্কির সঙ্গে হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রকাশ্য বিবাদ হয়। ফলশ্রুতিতে ইউক্রেনের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি, স্যাটেলাইটের তথ্যে প্রবেশাধিকার ও দেশটিতে সাহায্য বন্ধ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের মতে, একটি খনিজ চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে ট্রাম্পের ক্রোধের শিকার হয়েছেন তিনি। ওই চুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি। তবে ট্রাম্প প্রশাসন তা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। পরিবর্তে ইউরোপকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির জন্য সাহায্য বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।

ইউরোপীয় নেতারা রুশ হুমকির বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এরই মধ্যে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে সম্মত হয়েছেন। ওয়াশিংটন ইউক্রেনের ন্যাটো উচ্চাকাঙ্ক্ষার ওপরও ঠান্ডা পানি ঢেলে দিয়েছে।

গত শনিবার জেলেনস্কি নিশ্চিত করেছিলেন যে, তিনি সৌদি আরবে যাবেন এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠকের পর ইউক্রেনের কূটনৈতিক ও সামরিক প্রতিনিধিরা মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠক করবেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ১০ থেকে ১২ মার্চের মধ্যে ইউক্রেনীয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলোচনার জন্য সৌদি আরব সফর করবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র প র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেটে থানায় লালগালিচা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বললেন, ‘এগুলো ওঠাও’

সিলেটে থানা পরিদর্শনে গিয়ে লালগালিচা বিছানো দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এ সময় তিনি লালগালিচায় না উঠে থানার সামনে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কুশল বিনিময় করেন। এরপর সিলেটের পুলিশ কমিশনারকে লালগালিচা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন।

বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টায় সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে বিমানবন্দর থানায় যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এ সময় থানার সামনে তাঁকে স্বাগত জানাতে লালগালিচা বিছিয়ে মঞ্চ প্রস্তুত করা ছিল। কিন্তু তিনি লালগালিচায় না হেঁটে সালাম দিতে প্রস্তুত থাকা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এরপর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. রেজাউল করিমের কাছে লালগালিচা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপদেষ্টা।

এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলতে শোনা যায়, ‘এগুলো ওঠাও...। না করেছি যেটি কেন রাখছ থানায়? এখন ওঠাও।’ এ সময় পুলিশ কমিশনারকে বলতে শোনা যায়, ‘প্রথম আসছেন সে জন্য...’। এতে উপদেষ্টা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি, এগুলো হবে না। প্রটোকল করতে করতে তোমাদের সময় শেষ। মেইন কাম করতে পারতেছ না।’ পরে উপদেষ্টা থানার ভেতরে প্রবেশ করলে লালগালিচা সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর কমিশনারসহ অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন উপদেষ্টা।

‘মবকে এখন পুলিশ ভয় পাচ্ছে না’

এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘মবকে এখন পুলিশ ভয় পাচ্ছে না। এটা কিন্তু অনেক কমে আসছে। সিলেটে যে ঘটনা ঘটেছে, তাদের কিন্তু আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। অনেকেরই কিন্তু ধরে ফেলা হয়েছে। এখানে কিন্তু কাউকে পাস করা হয়নি যে এইটা আমার এই ভাইয়ের ছেলে কিংবা এইটা এই ভাইয়ের ভাই—এই হিসেবে কিন্তু আমরা করিনি। যে অন্যায় করেছে, তাকেই আমরা আইনের আওতায় আনছি।’

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সবার কাছে গণমাধ্যমের মাধ্যমে অনুরোধ, কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতেই আইন থাকবে। পুলিশের মানসিকতা পরিবর্তন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘চেঞ্জ অনেক হয়েছে। রোজার সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে যা–ই বলুক না কেন, আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে।’

পুলিশের গাড়ি থেকে আসামি ছিনতাইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা ছিনতাই করে নিচ্ছে, তাদের কিন্তু আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। এগুলোর ক্ষেত্রে আপনারা সত্যি ঘটনা যেটা, সঙ্গে সঙ্গে জানাবেন, আমরা ব্যবস্থা নেব। অনেক সময় তাদের অ্যাকশন নিতে দেরি হয়। এতে আমাদের অনেক সংকট রয়ে গেছে। এদের গাড়িঘোড়ার কিন্তু অনেক সংকট। অনেক গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। পুড়ে গেছে। থানা পুড়ে গেছে। এগুলো তো সব আমরা করে দিতে পারিনি। আমরা তো একটা নতুন গাড়ি পর্যন্ত কিনে দিতে পারিনি। যেহেতু প্রসিডিউর অনেক ইয়ে...টাকা স্যাংশন হতে। এটা যদি হয়, তাদের অবস্থার আরও উন্নতি হবে।’

অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘অস্ত্র যতটা এক্সপেক্টেশন ছিল, তত কমপ্লিট হয় নাই। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। যেটা আমরা পারিনি, সেটা তো আমরা বলব না। অস্ত্র বাইরে থাকলে তো কিছুটা হুমকি থাকবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ