বনানীতে দুই নারীকে চাপা দেওয়া গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সাময়িক স্থগিত, চালক গ্রেপ্তার
Published: 10th, March 2025 GMT
রাজধানীর বনানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় পথচারী নারী পোশাক শ্রমিক নিহতের ঘটনায় জড়িত ট্রাক চালককে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির সাইবার ক্রাইম ইউনিট। রাজধানী ঢাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই চালকের নাম টিটন ইসলাম। ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তেজগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে ঘাতক পিকআপটি জব্দ করা হয়েছে। রাতে পিকআপের চালক টিটন ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত ওই গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সাময়িক স্থগিত করেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। ঢাকা মেট্রো-২ সার্কেলের (ইকুরিয়া) উপপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) সানাউল হক স্বাক্ষরিত এক পত্রে বিষয়টি জানানো হয়। পত্রে ঢাকা মেট্রো-ন-১৪-০৭৬২ নম্বর মোটরযানের মালিককে মোটরযানটির যাবতীয় কাগজপত্র ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে ঢাকা মেট্রো-২ সার্কেলের কার্যালয়ে হাজির হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। অন্যথায় মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন স্থায়ীভাবে বাতিল করাসহ মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
সোমবার সকালে রাস্তা পারাপারের সময় সড়ক দুর্ঘটনায় বনানী এলাকার চেয়ারম্যানবাড়ী ইউটার্নে এক নারী নিহত এবং অপর একজন আহত হয়েছেন। তারা দু’জন স্থানীয় একটি পোশাক কারখানার কর্মী। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা বনানী চেয়ারম্যানবাড়ী সড়কের উভয় পাশ অবরোধ করে রাখেন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এমনকি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন তারা।
রাজধানীর অন্যতম প্রধান এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নগরজীবনে নেমে আসে ভয়াবহ দুর্ভোগ। সড়ক দুর্ঘটনায় সহকর্মী হতাহতের প্রতিবাদে সকাল ৭টার দিকে সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। অবরোধের কারণে বনানী-মহাখালী, মগবাজার, গুলশান, উত্তরাসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকা পড়ে অনেকেই গন্তব্যে হেঁটে যেতে বাধ্য হন।
সড়ক দুর্ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সকালে চেয়ারম্যানবাড়ী এলাকায় কয়েকজন নারী রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। এ সময় রাস্তার মাঝখানে চলে আসা এক নারীকে দ্রুতগতির পিকআপ ভ্যান চাপা দিয়ে চলে যায়। পরে সঙ্গে থাকা অন্যরা তাঁকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ থেকে মহাখালীর আমতলী পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নিলে দু’পাশের সড়কে শত শত গাড়ি আটকে পড়ে। প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা পর দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের দিকে পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের আশ্বাস ও শ্রমিক নেতাদের হস্তক্ষেপে আন্দোলন প্রত্যাহার করে সড়ক ছেড়ে দেন তারা। এরপর ধীরে ধীরে বনানী, মহাখালীসহ আশপাশের এলাকায় যান চলাচল শুরু হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার তারেক মাহমুদ বলেন, শ্রমিকরা তিনটি দাবি জানিয়েছিলেন। দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে তারা সড়ক ছেড়ে দিয়েছেন।
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন বন ন ড এমপ সড়ক দ র ঘটন ক দ র ঘটন দ র ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
গুরুত্ব পাবে রোহিঙ্গা সংকট ও মানবাধিকার প্রসঙ্গ
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আগামী বৃহস্পতিবার চার দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন। প্রায় সাত বছরের মাথায় তাঁর দ্বিতীয় দফা সফরে মূলত রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট এবং মানবাধিকারের প্রসঙ্গ অগ্রাধিকার পাবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাতিসংঘ মহাসচিব শুক্রবার ঢাকায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর তাঁরা দুজনে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে একসঙ্গে কক্সবাজার যাবেন। সেখানে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করবেন।
গুতেরেসের সফর সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে তিনি (আন্তোনিও গুতেরেস) রমজান মাসে সংহতি জানাতে বাংলাদেশে আসছেন। প্রতিবছর তিনি রমজান মাসে মুসলিম দেশগুলোতে সফর করে থাকেন। এই সফরে তিনি রোহিঙ্গাদের নিয়ে আলোচনা করবেন। সেখানে আন্তর্জাতিক সহায়তার বিষয়টিও উঠে আসবে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে সংস্কার, নির্বাচন এবং জাতিসংঘের সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে কি না, জানতে চাইলে গোয়েন লুইস বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারের সময়ে বাংলাদেশিদের পাশে থেকেছে। ফলে জাতিসংঘের সহযোগিতা ও সংহতি চলবে। কী ধরনের সহযোগিতা চাওয়া হবে এবং অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো কী, তা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বা ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকার জাতিসংঘকে জানাবে। জাতিসংঘ বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।
রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতারহজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মহাসচিবকে স্বাগত জানাবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাতিসংঘ মহাসচিব সরাসরি হোটেলে যাবেন।
পরদিন সকালে মহাসচিবের অবস্থানরত হোটেলে তাঁর সঙ্গে প্রথমে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
এরপর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে তাঁর দপ্তরে বৈঠক করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব। বৈঠক শেষে একটি ফ্লাইটে কক্সবাজারে যাবেন তাঁরা। সেখান থেকে তাঁরা রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির পরিদর্শনে যাবেন।
রোহিঙ্গা শিবিরে জাতিসংঘের কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা নিজ নিজ কার্যক্রম সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিবকে ব্রিফ করবেন। শরণার্থীশিবির পরিদর্শনের পর রোহিঙ্গা ও পবিত্র রমজানের প্রতি সংহতি জানিয়ে সেখানেই জাতিসংঘ মহাসচিবের সম্মানে ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাতে কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন জাতিসংঘ মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা।
আগামী শনিবার ঢাকায় জাতিসংঘের কার্যালয়ে যাবেন আন্তোনিও গুতেরেস। সেখানে জাতিসংঘের কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি। এরপর দুপুরে হোটেলে ফিরে গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেবেন আন্তোনিও গুতেরেস। এ ছাড়া সেখানে বাংলাদেশে যুবসমাজ ও নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি।
এদিন বিকেলে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। সন্ধ্যায় জাতিসংঘ মহাসচিবের সম্মানে ইফতার ও নৈশভোজের আয়োজন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। পরদিন রোববার সকালে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে জাতিসংঘ মহাসচিবের।
রাখাইনের দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সহায়তা প্রত্যাশাগৃহযুদ্ধের কারণে মিয়ানমারের রাখাইনের পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সেখানে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির বাংলাদেশকে জানিয়েছে, রাখাইনের দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা না করা গেলে এবার শুধু রোহিঙ্গা নয়, সেখানে বসবাসরত অন্য জনগোষ্ঠীর সদস্যরাও সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে। তাই সেখানকার দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সহযোগিতা চাইছে জাতিসংঘ।
তবে বাংলাদেশ জাতিসংঘের এমন অনুরোধকে এখনো ইতিবাচকভাবে দেখছে না। নিরাপত্তাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে এ প্রস্তাবকে ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করছে।
গত অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি) রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ১২ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনটিতে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইনের পণ্য প্রবেশে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে। কোনো আয়ের উৎস নেই। ভয়াবহ মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস নেমেছে। জরুরি সেবা ও সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি মার্চ অথবা আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে রাখাইন রাজ্যে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।
জাতিসংঘ ইতিমধ্যে রাখাইনের পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয় বাংলাদেশকে জানিয়েছে। বৈশ্বিক সংস্থাটি বাংলাদেশ হয়ে রাখাইনে সহায়তা পাঠাতে চায়। ইতিমধ্যে কক্সবাজার হয়ে আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে সহায়তার একটি চালান সেখানে পাঠিয়েছে জাতিসংঘ।
তবে দ্বিতীয় চালান পাঠাতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে সংস্থাটি। দ্বিতীয় চালানটি আর বাংলাদেশ অতিক্রম করতে দেয়নি সরকার। দীর্ঘদিন ধরেই রাখাইনে সহায়তা দিতে বাংলাদেশকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে আসছে জাতিসংঘ। প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে সীমান্ত দিয়ে পণ্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে সরাসরি সরবরাহব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে।