ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম বলেছেন, গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পটপরিবর্তন বাংলাদেশের সামনে এক সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করেছে। ফলে বাংলাদেশের সামনে সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি হয়েছে।

সোমবার রাজধানীতে বাংলাদেশ–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় প্যানেল আলোচক হিসেবে উইলিয়াম বি মাইলাম এমন অভিমত দেন। ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) ‘ট্রাম্প যুগে বাংলাদেশ–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক’ শীর্ষক ওই আলোচনার আয়োজন করে।

আইবিএফবির সভাপতি লুৎফুন্নেসা সউদিয়া খানের সভাপতিত্বে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সংগঠনের নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনায় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতি, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) সহায়তা বন্ধের প্রভাব, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা—এসব প্রসঙ্গ উঠে আসে।

উইলিয়াম বি মাইলাম বলেন, ‘নাটকীয় পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ এখন এক সন্ধিক্ষণে এসে পৌঁছেছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর আমি ভেবেছিলাম বাংলাদেশ একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ এখন কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র থেকে একটি গণতান্ত্রিক ও প্রভাবশালী রাষ্ট্র হওয়ার পথে এগোবে। এখন বাইরের বিশ্বে বলা যাবে, বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে যুক্ততার মাধ্যমে অবাধে ব্যবসা–বাণিজ্য করা যাবে।’

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে সাবেক মার্কিন এই রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে একটি নির্বাচন হবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ও স্থিতিশীল করার স্বার্থে সহায়তার জন্য মানবাধিকার সংস্থা রাইট টু ফ্রিডম কাজ করবে।

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপরাষ্ট্রদূত জন এফ ডেনিলোভিচ বলেন, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেসব নীতি গ্রহণ করেছেন, সেগুলোর বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নীতি এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিকেই বিবেচনায় নিয়ে করা হয়েছে। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তেমন যোগসূত্র নেই। যেমন ইউএসএআইডির সহায়তা বন্ধের বিষয়টি মূলত অভ্যন্তরীণ। এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কোনো যোগ নেই। আবার অভ্যন্তরীণ কারণেই সীমান্ত নিরাপদ রাখতে অভিবাসননীতি নেওয়া হয়েছে। কাজেই নতুন মার্কিন এসব নীতি ও পদক্ষেপের উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে লক্ষ্যে রেখে বা বাংলাদেশের জন্য নয়।

ট্রাম্পের জমানায় বাংলাদেশ–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কেমন হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে জন এফ ডেনিলোভিচ বলেন, বিষয়টি বলার মতো সময় এখনো আসেনি। আর যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার সবকিছুই প্রেসিডেন্টের হাতে নয়। কংগ্রেসসহ আরও কিছু বিষয় রয়েছে।

সাবেক এই মার্কিন উপরাষ্ট্রদূত আরও বলেন, বাংলাদেশে উগ্রবাদ ও সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে অনেক অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশে উগ্রবাদ ও সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে সমালোচনাগুলোকেও সত্য দিয়েই মোকাবিলা করতে হবে। মিথ্যাকে মিথ্যা দিয়ে নয়, সত্য দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে।

‘ডিপ স্টেট’–সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে জন এফ ডেনিলোভিচ বলেন, রাষ্ট্রীয় নীতি নিয়ে কাজ করার জন্য যদি বিভিন্ন পদ্ধতি নেওয়া হয়, সেটা ডিপ স্টেট নয়, সেটা রাষ্ট্রের নীতি। এ নিয়ে বাংলাদেশ ও বিভিন্ন দেশে অনেক অপতথ্য আছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) সভাপতি এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করেছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তা নাকচ করে দিয়েছেন—দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি ভালো ইঙ্গিত। বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ।

হুমায়ুন কবীর বলেন, এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের সম্পর্ক চ্যারিটি (দান–খয়রাত) নয়। যুক্তরাষ্ট্র কিংবা চীন—সব দেশই বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব চায়। সম্পর্ক আরও উন্নত হলে দুই দেশ থেকেই বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ আসবে। গণতান্ত্রিক দুর্বলতায় এত দিন যা কাজে আসেনি। গণতান্ত্রিক ও মুক্তবাজার অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশে মার্কিন উদ্যোক্তাদের আরও বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশের জন্য অন্যান্য সহযোগিতার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তাও প্রয়োজন বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ এম শাহান। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এতে এই দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার সহজ হবে। স্থিতিশীল গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনই শেষ কথা নয়। যদি একটা নির্বাচনকেই লক্ষ্য ধরা হয়, তাহলে কোনো দিন গণতন্ত্র সুসংহত হবে না। সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। নির্বাচনসহ সব ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের চর্চা, সংস্কার, উন্নয়ন ও ব্যবসা–বিনিয়োগে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল দ শ র জন য গণত ন ত র ক গণতন ত র সহয গ ত

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে ১৭ এপ্রিল সমাবেশ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ

গাজায় ইসরায়েলের চলমান নৃশংস গণহত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। একই সঙ্গে অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।

গণতন্ত্র মঞ্চ গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে ১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করবে।

আজ বুধবার দুপুরে নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে মঞ্চের বর্তমান সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সভায় এ কথা বলা হয়। পরে গণতন্ত্র মঞ্চ এ নিয়ে গণমাধ্যমে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায়।

বিজ্ঞপ্তিতে গাজা খালি করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আবাসন তৈরির পাঁয়তারাকে বেসামাল আগ্রাসী অপতৎপরতা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। পাশাপাশি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থন ও সংহতিও ব্যক্ত করা হয়।

সভায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসনের স্থবিরতা ও অকার্যকারিতায় সামাজিক নৈরাজ্যের বিস্তার ঘটছে, মব–সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ছে। জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে উৎকণ্ঠা বাড়ছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে বলেও সভায় বলা হয়।

গণতন্ত্র মঞ্চের ওই সভার প্রস্তাবে বলা হয়, সামাজিক নৈরাজ্যের এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে বিনিয়োগসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে।

সভায় উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সহসভাপতি কে এম জাবের। নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, নাগরিক ঐক্যের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার প্রমুখ।

নতুন সমন্বয়ক

আগামীকাল ১০ এপ্রিল থেকে পরবর্তী তিন মাসের জন্য গণতন্ত্র মঞ্চের নতুন সমন্বয়কের দায়িত্বপালন করবেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম। মঞ্চের বর্তমান সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আজকের সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএনপি ২৯০ আসন পেলেও দুই-তিন বছরের বেশি টিকতে পারবে না: মজিবুর রহমান
  • গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে ১৭ এপ্রিল সমাবেশ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ
  • সংসদীয় গণতন্ত্র নয়, ‘মৌলিক গণতন্ত্রের’ অন্য রূপ
  • পশ্চিমা গণতন্ত্র ও মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বের বিবেক কি জাগবে না