Samakal:
2025-04-30@11:42:50 GMT

সংঘর্ষের দু’দিন পর মিলল ৩ লাশ

Published: 10th, March 2025 GMT

সংঘর্ষের দু’দিন পর মিলল ৩ লাশ

নেত্রকোনার খালিয়াজুরীতে হাওরের বিলে মাছ শিকার করা নিয়ে সংঘর্ষের দু’দিন পর ধনু নদী থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার উপজেলার নাওটানা এলাকায় নদীতে ভাসমান অবস্থায় লাশ তিনটি পাওয়া যায়। গত শনিবার মাছ শিকার করতে যাওয়া লোকজনের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের এ সংঘর্ষ হয়।
নিহত তিনজন হলেন– নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে হৃদয় মিয়া (২৯), আটপাড়া উপজেলার স্বরমুশিয়া গ্রামের রুস্তম আলীর ছেলে শহীদ মিয়া (৫৫) এবং মদন উপজেলার বাগজান গ্রামের আবদুল কদ্দুছের ছেলে রোকন মিয়া (৫২)। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন খালিয়াজুরী থানার ওসি মো.

মকবুল হোসেন।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত শনিবার খালিয়াজুরীর ইজারাকৃত কাঁঠালজান ও মরাগাঙ্গের মাছ লুট করার জন্য ধনু নদীর পাড়ে জড়ো হন হাজারো মানুষ। তাদের সঙ্গে মাছ ধরার সামগ্রীর পাশাপাশি লাঠি ছিল। ময়মনসিংহের নান্দাইল, গৌরিপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের তাড়াইল, নেত্রকোনা সদর, আটপাড়া, কেন্দুয়া, মদন ও খালিয়াজুরীর মানুষ এদিন মাছ শিকারে এলে এলাকার লোকজন প্রতিরোধের চেষ্টা করেন।
এর আগে এক সপ্তাহে মদনের নূরেশ্বর, খালিয়াজুরী উপজেলার কীর্তনকলা, কারি, উচাবাইদা, হাইলা বিলসহ হাওরের কয়েকটি ইজারাকৃত বিলের মাছ লুট করেন শিকারিরা। প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করেই এমন ঘটনা ঘটছে। বিলগুলোর ইজারা মূল্য অন্তত ৪ কোটি টাকা। 
গত শনিবার সংঘর্ষের সময় মাছ শিকারিরা রসুলপুর ফেরিঘাটে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ালে কেউ কেউ সাঁতরে ধনু নদী পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন থেকে কয়েকজন নিখোঁজ থাকার কথা পরিবারের সদস্যরা জানান। এরপর থেকে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ডুবুরিদল নিয়ে নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন। 
সোমবার বিকেলে তিনজন মাছ শিকারির লাশ উদ্ধার করা হয়। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। ঘটনার দিন সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছিলেন। শতাধিক যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ নিয়ে এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
লাশ উদ্ধারের পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। এ সময় সেখানে শত শত মানুষ ভিড় করেন। নিহত তিনজনের বাড়িতে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। নিহত রোকন মিয়ার ছেলে সুমন (২৮) বলেন, তাঁর বাবা শখ করে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। সেখানে এলাকাবাসী ও ইজারাদাররা তাঁকে মেরে নদীতে ফেলে দেয়। তিনি তাঁর বাবার হত্যার বিচার চান।
আটপাড়ার স্বরমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য সুফিয়া আক্তারের ভাষ্য, শহীদ মিয়া দিনমজুর ছিলেন। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি। তিনি মারা যাওয়ায় পরিবারটি অসুবিধায় পড়ে গেছে। সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সাত্তার বলেন, ‘শুনেছি মাছ ধরতে গিয়ে শহীদ মিয়া মারা গেছেন। তাঁর সংসারে এখন উপার্জনশীল কেউ নেই।’
খালিয়াজুরীর লেপসিয়া ফাঁড়ির নৌপুলিশের আইসি জাহাঙ্গীর হোসেন খান মদনের বাগজান গ্রামের রোকনের লাশটি রসুলপুরঘাট থেকে উদ্ধার করেন। তবে কতজন নিখোঁজ, তা তিনি জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে তিনজনের লাশ হস্তান্তর করা হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
খালিয়াজুরী থানার ওসি মো. মকবুল হোসেন বলেন, শনিবার সংঘর্ষের সময় তিনজন নদী সাঁতরে পার হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। পার হতে না পেরে তারা ডুবে মারা যান। এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা কাজ করছেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল শ উদ ধ র স ঘর ষ র উপজ ল র এল ক য় পর ব র ল কজন ত নজন

এছাড়াও পড়ুন:

বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ

রপ্তানি খাতকে প্রতিযোগী সক্ষম করতে আইএমএফের পরামর্শ মেনে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়হার বাজারভিত্তিক করতে হবে। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সবচেয়ে প্রভাব পড়বে উৎপাদন ও সেবা খাতে। অথচ বিশ্ব বাণিজ্যিক সংস্থা ঘুমাচ্ছে। আইসিসি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আজ বুধবার রাজধানীর গুলশানে ওয়েস্টিন হোটেলে ‘বিশ্বব্যাপী আর্থিক প্রবণতা ও সংস্কার; বাংলাদেশের ওপর প্রভাব’ শীর্ষক ডায়ালগে এমন মতামত উঠে আসে। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশ এ ডায়ালগের আয়োজন করে।

আইসিসি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন আইসিসি বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হা–মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইসিসি গ্লোবাল ব্যাংকিং কমিশনের চেয়ারম্যান ফ্লোরিয়ান উইট।

মূল প্রবন্ধে আইসিসি গ্লোবাল ব্যাংকিং কমিশনের চেয়ারম্যান ফ্লোরিয়ান উইট বলেন, এআই বৈশ্বিক আর্থিক খাতের ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতকে এগিয়ে নিতে হবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে একটি পরিবর্তন আসবে। কোনো কারণে আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচি আটকে গেলে বাংলাদেশের ঋণমান কমে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বিনিময়হার বাজারভিত্তিক করা, না করা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে আইএমএফ ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি আটকে আছে।

আইসিসিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট এ. কে. আজাদ বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে প্রতিবছর কৃষি খাতের অবদান কমছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে শিল্প ও সেবা খাত। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি এককভাবে আসছে তৈরি পোশাক থেকে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক উৎপাদন খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উৎপাদন খাত ক্ষতির মুখে পড়লে স্বাভাবিকভাবে সেবা খাত ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে। বাড়তি শুল্ক দেশের অর্থনীতিকে কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে সে বিষয়ে আইসিসি বাংলাদেশ একটি জরিপ করতে পারে। এছাড়া সরকারি–বেসরকারি খাতের সবাইকে নিয়ে একটি সেমিনার আয়োজন করতে পারে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের তুলনায় অনেক দেশ এখন প্রতিযোগী সক্ষমতায় এগিয়ে আছে। ব্যাংককের সুদহার ২ থেকে ৩ শতাংশ। পাকিস্তানের বিনিময়হার অনেক বেশি। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারতসহ যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সুদহার বেশি। এখনই নীতি সহায়তার মাধ্যমে উৎপাদন খাতকে প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

আলোচনায় আরও অংশ নেন– বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) ও ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার, ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন, বিআইবিএমের অধ্যাপক ড. শাহ মো. আহসান হাবিব, এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব উর রহমান, এডিবির বাংলাদেশ অফিসের প্রাইভেট সেক্টর অপারেশন্স বিভাগের লিড ইনভেস্টমেন্ট অফিসার বিদ্যুৎ কুমার সাহা এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের কর্পোরেট, বাণিজ্যিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংকিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান এনামুল হক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ