সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বেড়েছে ২৭ শতাংশ
Published: 10th, March 2025 GMT
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় মোট ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৮১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধেই গেছে ৬২ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পরিচালন বাজেটের একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ ৩৪ শতাংশ গেছে সুদ পরিশোধে। এর মধ্যে দেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ৫৩ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ৯ হাজার ২২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছিল ৪৯ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে শুধু সুদ পরিশোধেই প্রয়োজন হবে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। সেই বাজেটই অব্যাহত রেখেছে অন্তর্বর্তী সরকার। অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ছয় মাসে পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বাজেট বাস্তবায়নের হার বরাদ্দের ৩৬ দশমিক ৭০ শতাংশ। মোট ১ লাখ ৮৬ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ১ লাখ ৫০ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা। তবে উন্নয়ন ব্যয় কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশে। টাকার অঙ্কে ৪০ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ খাতে ব্যয় হয়েছিল ৪৩ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা।
উন্নয়ন ব্যয় গত অর্থবছরের তুলনায় কমলেও বাড়তি সুদ পরিশোধ ব্যয়ের ওপর ভর করে সার্বিক বাজেটে বস্তবায়ন হার গত বছরের চেয়ে কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গত ও এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে বাজেট বাস্তবায়ন হার ছিল যথাক্রমে ২৫ দশমিক ৫৩ এবং ২৭ দশমিক ২১ শতাংশ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি রোধে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে সরকারি ব্যয়েও সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরই সঙ্গে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কাটছাঁট হয়েছে। এতে উন্নয়ন ব্যয় কমেছে। তবে সরকারের নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধ ব্যয় ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। তাছাড়া পরিচালন বাজেটে কাটছাঁটের খুব একটা সুযোগ থাকে না। আবার অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ব্যয় বাড়ায় পরিচালন বাজেটে ব্যয় কমানো সম্ভব হয়নি।
ছয় মাসে পরিচালন বাজেটের আওতায় অন্যতম বড় খরচের খাত হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা। এ খাতে ব্যয় হয়েছে ৩১ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৩০ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া ছয় মাসে জ্বালানি, সারসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি বাবদ ব্যয় হয়েছে ৩৫ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। একই সঙ্গে পাবলিক অর্ডার ও সেফটি খাতে ৩৮ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে ২২ হাজার ৭১০ কোটি টাকা, প্রতিরক্ষায় ১৩ হাজার ২০৭ কোটি টাকা, কৃষিতে ১৫ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা এবং স্বাস্থ্যে ৬ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে বিদেশি ঋণ শোধ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়াল
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল বাবদ ৩২১ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের প্রায় সমান। গত অর্থবছরে (২০২৩–২৪) মোট ৩৩৭ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে। এর মানে হলো, এবার প্রথম ৯ মাসেই গত অর্থবছরের কাছাকাছি ঋণ পরিশোধ হয়ে গেছে।
আজ বুধবার বিকেলে প্রকাশিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তৈরি জুলাই–মার্চ মাসের বিদেশি ঋণ পরিস্থিতির হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। সেখানে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধের এই তথ্য পাওয়া গেছে।
ইআরডির তথ্য অনুসারে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) দেশে মোট প্রায় ৪৮১ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি ঋণ এসেছে। এ সময়ে ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হয়েছে অর্থছাড়ের প্রায় দুই–তৃতীয়াংশের সমান।
অন্যদিকে আলোচ্য ৯ মাসে বিদেশি ঋণ বাবদ পরিশোধের মধ্যে আসলের পরিমাণ ২০১ কোটি ডলার। আর সুদ বাবদ ১২০ কোটি ডলার পরিশোধ হয়েছে। ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২৫৭ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে ৬৪ কোটি ডলার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে।
এদিকে গত জুলাই–মার্চ সময়ে ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ, যা গতবারের একই সময়ে পাওয়া প্রতিশ্রুতির অর্ধেকের কম। গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৭২৪ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল।
জুলাই–মার্চ সময়ে সবচেয়ে বেশি ১২২ কোটি ডলার ছাড় করেছে এডিবি। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক ১০৭ কোটি ডলার ও জাপান ৮৯ কোটি ডলার দিয়েছে।