শোভন কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন জরুরি
Published: 10th, March 2025 GMT
মানসম্পন্ন শিক্ষা ও শোভন কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা না গেলে অর্থনৈতিক উন্নতির পরবর্তী ধাপে পৌঁছানো কঠিন হবে। আর শোভন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন জরুরি। যুব সম্প্রদায়ের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শোভন কর্মসংস্থান খাতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগও দরকার।
গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ আয়োজিত ‘জাতীয় এসডিজি রিপোর্ট (ভিএনআর) ২০২৫: যুবসমাজের ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এ আয়োজনে সহযোগিতা করে ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ এবং ইউনাইটেড নেশনস পোভার্টি-এনভারমেন্ট অ্যাকশন।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক এবং গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড.
অনুষ্ঠানে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, মানসম্পন্ন শিক্ষা ও শোভন কর্মসংস্থান নিশ্চিত না হলে পরবর্তী ধাপে যাওয়া কঠিন হবে। তিনি আরও বলেন, বিগত সময়ে শিক্ষা, কর্মসংস্থান, বাকস্বাধীনতা এবং জলবায়ু খাতে বেশ উন্নতি হয়েছে। তবে এর সুফল সমগ্রিকভাবে নায্যতার ভিত্তিতে প্রতিটি নাগরিকের কাছে পৌঁছায়নি। আগামীতে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে তিনি রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিতের ওপর জোর দেন।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, শোভন কর্মসংস্থান করতে গেলে নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন করা জরুরি। একই সঙ্গে তিনি বিভিন্নমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয় আনার ওপর জোর দেন।
তিনি আরও বলেন, অগ্রাধিকার সমস্যার প্রতিটির ভেতরে আরও অগ্রাধিকার ইস্যু আছে। এর মধ্যেও অনেক টানাপোড়েন আছে। আমরা কীভাবে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাব, সেটাই বড় কথা। সেটা যদি ভালোভাবে করা যায় তাহলে প্রতিবেদন (ভিএনআর) ভালোভাবে হবে। প্রতিবেদন ভালো হলো কিন্তু কাজের কাজ হলো না– যা অতীতে হয়েছে। তাহলে কিন্তু অগ্রগতি হবে না।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক বলেন, স্বপ্রণীত জাতীয় পর্যালোচনার ভিত্তিতে ভিএনআর প্রতিবেদন প্রস্তুত হওয়ার কথা। কিন্তু এ প্রতিবেদন চূড়ান্তকরণে হস্তক্ষেপ ছিল বেশি। তাই প্রতিবেদনে জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি। নাগরিকের মতামতের ভিত্তিতেই পরবর্তী প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হবে। এ ক্ষেত্রে শুধু সাফল্য নয়, ব্যর্থতার বিষয়েও উল্লেখ থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মহাপরিচালক (এসডিজি-বিষয়ক) শিহাব কাদের বলেন, প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে যুবসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন বিভাগে যুব সেন্টার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত যুব ঘোষণাপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে যুব সমাজের ভূমিকা যে কত গুরুত্বপূর্ণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে, যেসব উন্নয়নশীল দেশ যুব সম্প্রদায়ের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শোভন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করেছে, সেসব দেশ দ্রুত আর্থসামাজিক উন্নয়ন অর্জনে সক্ষম হয়েছে। দারিদ্র্যের মাত্রাও সেসব দেশ দ্রুত হারে হ্রাস করতে পেরেছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিএসইসিতে আন্দোলন: এখনও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেননি চেয়ারম্যান
গত বৃহস্পতিবারে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কর্মকর্তারা লাগাতার কর্ম বিরতির ঘোষণা দিলেও আজ রোববার বেশিরভাগ কর্মকর্তারা কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। কর্মকর্তাদের ডেস্কে গিয়ে দেখা গেছে, স্বাভাবিক কোন কাজ চলছে না। সকলের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারের সব অংশীজনদের সঙ্গে আজ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত টানা দু'ঘণ্টা বৈঠক করেছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদসহ তিন কমিশনার।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ জানান, তিনি এখনও কোনো কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য আলোচনা করেননি।
গত বুধবার বিএসইসির চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারকে চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে তাদের পদত্যাগ দাবি ও চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে চেয়ারম্যানের গানম্যান আশিকুর রহমান বাদী হয়ে নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম ও রেজাউল করিমসহ ১৬ জন কর্মকর্তাকে আসামি করে একটি মামলা করেছিলেন।
রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় করা ওই মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আজ কমিশনে কাজে যোগদান করেননি।
সাংবাদিকরা বিএসইসির চেয়ারম্যানের কাছে ওই মামলায় কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা হবে কিনা, কিংবা এ বিষয়ে কমিশনের পরবর্তী সিদ্ধান্ত কি জানতে চেয়েছিলেন। চেয়ারম্যান এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি।
এর আগে কমিশনের সঙ্গে শেয়ারবাজার অংশজনরা জরুরি বৈঠক করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম এবং পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, কর্মকর্তাদের যৌক্তিক কোনো দাবি বা ক্ষোভ থাকলে তা যথাযথ আইন ও নিয়ম মেনে প্রক্রিয়ায় কমিশন বা সরকারের কাছে জানানোর উপায় রয়েছে। কমিশনের কোনো সিদ্ধান্তে কেউ বিক্ষুব্ধ হলে তা আইনি প্রক্রিয়ায় মোকাবেলা করারও অধিকার অন্য সবার মত কমিশন কর্মকর্তাদেরও রয়েছে। এ ঘটনায় দেশের শেয়ারবাজারের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
গত বুধবার চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অবরুদ্ধ করে তাদের দাবি জানানো এবং পরবর্তী ঘটনাক্রমগুলো ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত- এমন মন্তব্য করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান বলেন, সকল অংশীজন আশা করে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর যাতে না ঘটে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ দায়িত্বশীল আচরণ করবেন।
ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, বিএসইসি হচ্ছে শেয়ারবাজারের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ সংস্থার সুনাম সংবেদনশীলতা ও মর্যাদা সমুন্নত রাখার দায় বাজার সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের।
বুধবারের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় কমিশনের নিরীহ, সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তারা যাতে কোনোরূপ হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে কমিশনের কাছে অনুরোধ করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে বিগত দিনে শেয়ার বাজারে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন তিনি।
মমিনুল ইসলাম আরও জানান, উদ্ভূত ঘটনায় শেয়ারবাজারে লেনদেন স্বাভাবিক রাখতে তৎপর রয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। এ ঘটনায় কেউ যাতে পরিস্থিতির সুযোগ নিতে না পারে, তার জন্য স্টক এক্সচেঞ্জের সারভিলেন্স এবং মনিটরিং কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে আজ ঢাকার শেয়ারবাজার ডিএসইতে স্বাভাবিক লেনদেন হলেও দর হারিয়েছে ২৭৪ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড। দর বেড়েছে ৫৮টির।
টাকার অংকে মোট লেনদেন হয়েছে ৩৩৬ কোটি টাকার শেয়ার ও ফান্ড। তবে প্রধানমূল্য সূচক ডিএসইএক্স ২৯ পয়েন্ট হারিয়ে ৫১৭৪ পয়েন্টে নেমেছে।