ডাস্ট অ্যালার্জি হলো এক ধরনের পরিবেশগত প্রতিক্রিয়া। ঠান্ডা, সর্দি বা রাইনাইটিস, কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠা, চর্মরোগ, অ্যাকজিমা বা দাদ, হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট এ সবই ধুলার অ্যালার্জির কারণে দেখা দিতে পারে। এই ডাস্ট অ্যালার্জির জন্য দায়ী ধুলাবালির এক ধরনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পোকামাকড়। এই পোকাগুলোকে ডাস্ট মাইটস বা ধুলার পোকা বলা হয়ে থাকে। এরা আকারে আণুবীক্ষণিক আকৃতির হয়ে থাকে।
লক্ষণ আর উপসর্গগুলো
ডাস্ট অ্যালার্জির অ্যালার্জেন বাড়িতে আর্দ্র পরিবেশে বড় হয় এবং ভেতরের পরিবেশের সঙ্গে খুব ভালোভাবে মানিয়ে নেয়। যদি আপনার মধ্যে ডাস্ট অ্যালার্জির প্রবণতা থাকে, তাহলে আপনার শরীরে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলোর মধ্যে একটি বা একসঙ্গে অনেক উপসর্গ দেখা দিতে পারে–
lহাঁচি
lসর্দি বা নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখে জ্বালা বা চুলকানি এবং চোখে জ্বালা-যন্ত্রণা
lচামড়ায় জ্বালা বা চুলকানি
lনাক বন্ধ হয়ে যাওয়া।
ডাস্ট অ্যালার্জির দ্বারা সৃষ্ট অ্যাজমায় নিম্নলিখিত উপসর্গ দেখা দিতে পারে–
lশ্বাস নিতে কষ্ট, নিঃশ্বাস ফেলার সময়
বুকে সাঁ সাঁ করে শব্দ,
lঘুমানোর অসুবিধা ইত্যাদি।
ডাস্ট মাইটস বা ধুলার পোকাগুলো মানুষের খসে পড়া মৃত চামড়ার কোষগুলো ব্যবহার করে বেঁচে থাকে আর ওগুলো দিয়েই প্রধানত বাড়ির ধুলা-ময়লা তৈরি হয়। ডাস্ট মাইটস বা ধুলার পোকাদের বাড়ির ডাস্ট মাইটস এবং স্টোরেজ মাইটস এই দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। এরা সাধারণত বাতাসের মাধ্যমে নাকের ভেতরে অস্বাভাবিক জ্বালা-যন্ত্রণার জন্য দায়ী। ডাস্ট মাইটসের মতো অ্যালার্জেনের (অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী জীবের) উপস্থিতিতে আপনার শরীর অ্যান্টিবডি বা প্রতিরোধক অবস্থা তৈরি করে আপনাকে এই প্রতিক্রিয়া থেকে বাঁচতে এবং নিজের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় করতে সাহায্য করে। এই প্রতিক্রিয়া স্থানীয়ভাবে বা শরীরের কোনো একটি বিশেষ অংশকে আক্রান্ত করতে পারে। কিছু বিরল ক্ষেত্রে, এই ডাস্ট অ্যালার্জি শরীরে অ্যানাফাইলেটিক শক নামক জীবনসংহারি ভয়াবহ শারীরিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। অসাবধানতাবশত শুধু ডাস্ট মাইটস পেটে চলে গেলে প্রাণসংহারি এ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এই ডাস্ট মাইটস গদি, কার্পেট এবং আসবাবের ওপর অবস্থান করে। কিছু ক্ষেত্রে ডাস্ট মাইটস খাদ্যসামগ্রী নষ্ট বা বিষাক্ত করে ফেলতে পারে। অল্পবয়সী এটোপিক বা অ্যালার্জিপ্রবণ শিশু, হাঁপানি রোগী এবং অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা এ ধরনের অ্যালার্জিতে অধিক হারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
রোগ নির্ণয়
ঠিক কোন অ্যালার্জেন বা জীবটি ডাস্ট অ্যালার্জির জন্য দায়ী তা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে কিছু রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা প্রয়োজন। প্রচলিত পরীক্ষার সময় একটি ত্বকে ছিদ্র করে পরীক্ষা করা হয়, যেখানে অ্যালার্জি নির্ণয় করতে বাড়ির ডাস্ট মাইটসের একটি নির্যাস ব্যবহার করা হয়। এরপর অপেক্ষা করে পর্যবেক্ষণ করা হয় কতক্ষণ পর ওই জায়গায় অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া শুরু হচ্ছে এবং কী পরিমাণ জায়গা ফুলে গেছে বা লাল হয়ে গেছে তা মেপে দেখা হয়। রোগাক্রান্ত ব্যক্তির ত্বক যদি পরীক্ষার সময় সংবেদনশীল হয়, তবে রক্ত পরীক্ষা করানো সুবিধাজনক হয়। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে অ্যালার্জির নির্দেশক কিছু অ্যান্টিবডি শনাক্ত করা যেতে পারে। নাকের ভেতরের মিউকোসা বা শ্লেষ্মা বা চোখের কনজাংটিভার প্রতিক্রিয়া দেখেও অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করা যেতে পারে।
কোন অ্যালার্জেন ডাস্ট অ্যালার্জির কারণ তা জানতে পারলে ডাস্ট অ্যালার্জির চিকিৎসা খুব সহজ হয়ে যায়। শরীরের মধ্যস্থতাকারীর ওপর চিকিৎসা নির্ভর করে। যেমন– হিস্টামাইন এবং লিউকোট্রাইন এসব রাসায়নিক পদার্থ অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া ঘটাতে সাহায্য করে।
ইমিউনোথেরাপি বা রোগপ্রতিরোধক থেরাপি– এটি চিকিৎসার আরেকটি নতুন পদ্ধতি, যেখানে রোগীর অ্যালার্জির সংবেদনশীলতা কমিয়ে দেওয়া হয়। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং কার্যকর পদ্ধতি।
উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা
lঅ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মুখে খাওয়ার স্টেরয়েডের মতো ওষুধগুলো দেওয়া হতে পারে।
lকিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ধুলার কারণে রোগের সূত্রপাত এড়াতে এবং সেই সূত্রে অ্যালার্জি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।
l বিছানার চাদর এবং বালিশের কভার গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
l কার্পেট সরিয়ে ফেলুন।
lআসবাব ভালোমতো ভ্যাকুয়াম ক্লিনিং করুন।
প্রয়োজনে একজন অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা শুরু করুন। v
[ত্বক, চর্ম ও অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞ
ডা.
পান্থপথ, ঢাকা]
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড স ট ম ইটস উপসর গ র জন য পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
থাইরয়েডজনিত সমস্যা
থাইরয়েড হরমোন মানুষের বৃদ্ধি, বিকাশ, শারীরবৃত্তিক আর বিপাকীয় নানা ক্রিয়া-প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ কম বা বেশি হলে শরীরে দেখা দেয় নানা বিপত্তি। এগুলো হরমোনের কার্যগত সমস্যা। থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি হলে ‘হাইপোথাইরয়েডিজম’ হয়। থাইরয়েডজনিত সমস্যার মধ্যে হাইপোথাইরেডিজম রোগীর সংখ্যা বেশি। এটি থাইরয়েডের সবচেয়ে পরিচিত সমস্যা। সাধারণত মহিলারা এ রোগে আক্রান্ত হন বেশি। প্রতি আটজন মহিলার মধ্যে একজন হাইপোথাইরয়েডিজম সমস্যায় ভুগে থাকেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অটোইমিউন কারণে এটি দেখা দেয়। এছাড়া থাইরয়েডে অস্ত্রোপচার, থাইরয়েড গ্রন্থির প্রদাহ, আয়োডিনের ঘাটতি, রেডিয়েশন ও কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় হাইপোথাইরয়েডিজম হতে পারে। থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতিজনিত প্রতিক্রিয়া ধীরে ধীরে পরিলক্ষিত হয় বলে বেশির ভাগ রোগী সমস্যা বুঝতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে রুটিন পরীক্ষার সময় থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। হাইপোথাইরোডিজম আক্রান্ত ব্যক্তির অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ, ওজন বেড়ে যাওয়া, শীত শীত ভাব, অবসাদ, চুল ও ত্বকের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মহিলাদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত মাসিক বা অতিরিক্ত মাসিক, গর্ভ ধারণে অক্ষমতা, অকাল গর্ভপাত প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে। নবজাতকদের সাধারণত কনজেনিটাল হাইপোথাইরোডিজম দেখা দেয়। তাদের ক্ষেত্রে দৈহিক ও মস্তিষ্কের গঠন ও বিকাশ ব্যাহত হয়, এমনকি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হতে পারে।
থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত সক্রিয়তার কারণে থাইরয়েড হরমোন বেশি নিঃসৃত হলে তাকে হাইপারথাইরয়েডিজম বলে। এর ফলে বুক ধড়ফড় করা, অতিরিক্ত ঘাম, বারবার ক্ষুধা লাগা, ওজন কমে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, অতিরিক্ত গরম লাগা, মহিলাদের মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া অথবা কম হওয়া, বন্ধ্যত্ব প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এছাড়া থাইরয়েড গ্রন্থির গঠনগত কিছু রোগ রয়েছে। যেমন গয়টার বা গলগন্ড, থাইরয়েড নডিউল এবং থাইরয়েড ক্যান্সার।
বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭০ কোটিরও বেশি মানুষ থাইরয়েডের সমস্যায় আক্রান্ত। বাংলাদেশের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হয় প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ থাইরয়েড জটিলতায় ভুগছেন। সাধারণত পুরুষের তুলনায় নারীর মধ্যে থাইরয়েডজনিত সমস্যা হার বেশি দেখা দেয়। মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবে থাইরয়েডের
রোগী চিকিৎসকের কাছে কম আসে। বয়স ও লিঙ্গ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন উপসর্গ ও জটিলতা দেখা যায়। অনেক সময় উল্লেখযোগ্য কোনো উপসর্গ না থাকায় আক্রান্ত ব্যক্তি বুঝতে পারেন না।
ফলে অনেকের ক্ষেত্রে এটি শনাক্তের বাইরে থেকে যায়। এর দরুন পরবর্তীকালে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই থাইরয়েডের বিপত্তিজনিত কারণে যেসব লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যায় তা সম্পর্কে অবগত হতে পারলে এ রোগের ব্যাপারে
সচেতন হওয়া সম্ভব। সন্দেহজনক যে কোনো উপসর্গ দেখা দিলে বা থাইরয়েডের বিপত্তি শনাক্ত হলে অবশ্যই একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। v
[ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ও হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ]