এটি স্পষ্ট করে বলা গুরুত্বপূর্ণ– ইসলামবাদ ও ইসলাম এক বস্তু নয়; দুটি আলাদা। ইসলামবাদ এমন এক রাজনৈতিক মতাদর্শ, যা শরিয়াকেন্দ্রিক রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলতে চায় এবং ইসলামের নামে রাজনৈতিক শক্তি গড়ার লক্ষ্যে সামাজিক আন্দোলনে তৎপর থাকে। 

গত দশকে আরব বসন্তের দ্বিতীয় তরঙ্গে (২০১৮-১৯) ইসলামপন্থিদের জনপ্রিয়তার ক্রমাগত হ্রাস স্পষ্ট হয়েছে, যা সুদান, ইরাক, লেবানন এবং কিছুটা কম পরিমাণে আলজেরিয়ায় ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে ছড়িয়ে পড়ে। এটি তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও ধর্মীয় পরিসরের মধ্যকার পার্থক্য আরও স্পষ্ট করে তোলে। তবে সিরিয়ার অগ্রগতি নতুন মাত্রার সূচনা করে, যা এ অঞ্চলে ইসলামবাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুনভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার চাহিদা তুলে ধরে। 
২০২১ সাল থেকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোকে অপমানজনকভাবে বিদায় নিতে তালেবানের সাফল্য; ২০২৩ সালের অক্টোবরে আল-আকসা ফ্লাড অপারেশন এবং গত বছরের শেষে দামেস্কে এইচটিএসের সশস্ত্র প্রবেশ।

এসব ঘটনা ইসলামবাদী তৎপরতার তিনটি মূল বিষয় তুলে ধরে। এক.

বিদেশি দখলদারিত্বের অবসান; দুই. পশ্চিমা সমর্থিত ইহুদিবাদী বসতি স্থাপন প্রকল্প প্রতিরোধ; তিন. কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার উৎখাত। তবে তাদের উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জগুলো হলো– ইসলামবাদীরা এখনও স্বাধীনতা ও মানবিক মর্যাদার পাশাপাশি আরব বসন্তের স্তম্ভ অর্থনৈতিক সুবিচার যথাযথভাবে অর্জন করতে পারেনি। 
সিরিয়ার নতুন সরকার গভীরভাবে পোক্ত বৈষম্য দূর না করেই বাজার অর্থনীতি গ্রহণ করেছে। এ সিদ্ধান্তের লক্ষ্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে দ্রুত একীভূতকরণ। তবুও দীর্ঘস্থায়ী অসম বণ্টন সমস্যা মোকাবিলায় এখানে কোনো স্পষ্ট পরিকল্পনা ছিল না। এটি এমন এক জটিলতা, যা বাজার অর্থনীতির কারণে আরও বাড়তে পারে। তদুপরি দখলদারিত্ববিরোধী সংগ্রাম, ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ এবং স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মধ্যে সম্পর্কগুলো এখনও সুস্পষ্ট করা হয়নি। 

একাধিক বিষয় ঘিরে জনপরিসরে বিতর্ক চলমান; বিশেষ কোনো বিষয়ে কেন্দ্রীভূত নয়। কারও কারও মতে, আসাদ সরকারের পতন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধ ঘাঁটির পতন, যা ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য ক্ষুণ্ন করবে। কেউ কেউ যুক্তি দেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের মুক্তির পথে অটল থাকাও জরুরি। 
যেসব রাষ্ট্র ইসলামবাদকে তাদের পথের দিশারি হিসেবে গ্রহণ করেছে, যেমন বিপ্লবী (ইরান), নির্বাচনী (২০১২-পরবর্তী তুরস্ক), অভ্যুত্থানের মাধ্যমে (সুদান) অথবা ঐতিহ্যবাহীরূপে (সৌদি আরব), তাদের অতীতের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছে। তবু আজও এ অঞ্চলে ইসলামের শক্তিশালী আবেদন রয়েছে। তা ছাড়া আগামী বছরগুলোতে এ অঞ্চলের আসন্ন বিভিন্ন ইসলামী আন্দোলন যেভাবে বহুমুখী সংকট মোকাবিলা করবে, তা ধর্মের দীর্ঘমেয়াদি ভূমিকাকে উৎসাহিত করবে।

আমার দৃষ্টিতে চারটি মূল বিষয় ঘিরে ইসলামবাদ এবং এ অঞ্চলের বাস্তবতার মধ্যে সম্পর্ক গড়াবে। জাতীয় স্বাধীনতা, ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ, সব ধরনের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই এবং সম্পদ, সুযোগ ও সম্পত্তির সুষ্ঠু বণ্টন বিবেচনায় নিয়ে একটি অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনের সক্ষমতা।
এগুলোসহ নিকট ভবিষ্যতে ঘটতে পারে এমন কিছু ঘটনা আরব যুবকদের ধর্মীয় ভাবধারায় ক্রমবর্ধমান আস্থা তুলে ধরে, যদিও কোনো স্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেই। আল-আকসা প্লাবন, যেমনটি আমি আগে লক্ষ্য করেছি, ৩০ বছরের কম বয়সী আরবদের মধ্যে ধর্মের সঙ্গে পুনরায় সংযোগ স্থাপন এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হওয়ার ক্রমবর্ধমান প্রবণতা স্পষ্ট করে। আমি বিশ্বাস করি, সিরিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এই ক্রমবর্ধমান প্রবণতাকে আরও জোরদার করতে পারে।
এই শাসন ব্যবস্থার আসল সমস্যা হলো জনসাধারণের সঙ্গে ক্রমবর্ধমানভাবে জড়িত তীব্র ধর্মীয় ভাবধারার উত্থান, যা দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হলো, এতে অর্থপূর্ণ সংস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিক পথের অভাব রয়েছে।

হেশাম গাফর: ইসলামী চিন্তাভাবনা, আন্দোলন ও সংঘাত নিরসন বিশেষজ্ঞ; মিডল ইস্ট আই থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ক ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

শিশু ও নারী ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ এমজেএফের, জাতীয় শিশু কমিশন গঠনের দাবি

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশু ও নারী ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)। সরকারের কাছে জাতীয় শিশু কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে এমজেএফ বলেছে, এই কমিশনকে অবশ্যই অপরাধীদের ন্যায়বিচারের আওতায় আনতে, তদন্তপ্রক্রিয়া আরও কার্যকর করতে এবং শিশু সুরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করতে কাজ করতে হবে।

আজ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে মানবাধিকার ও সুশাসনের জন্য কাজ করা বেসরকারি সংস্থা এমজেএফ। ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিভিন্ন ঘটনার ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমাদের বিচার ও সুরক্ষাব্যবস্থা নারী ও শিশুদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।...বেশির ভাগ ভুক্তভোগী সামাজিক লজ্জা ও তথাকথিত পারিবারিক মর্যাদার কারণে মুখ খুলতে পারে না। কিন্তু আমরা যদি এ বিষয়ে আওয়াজ না তুলি, তাহলে অপরাধীরা নীরবতার সুযোগ নিয়ে বারবার এমন ঘৃণ্য অপরাধ চালিয়ে যাবে।’ সমাজকে অপরাধীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এবং নারী ও মেয়েদের জন্য একটি নিরাপদ ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে সম্মিলিতভাবে কাজ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শাহীন আনাম।

গত ১০ দিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় যৌন সহিংসতার নয়টি ঘটনার কথা উল্লেখ করে এমজেএফের বিবৃতিতে বলা হয়, গণমাধ্যমে আসা এই ঘটনাগুলো হিমশৈলের চূড়ামাত্র। ভয় ও সামাজিক চাপের কারণে অনেক বেশি ভুক্তভোগী নীরবে ভুগছে, অভিযোগ দায়ের করতে পারছে না।...২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক নারী দিবসে যখন বিশ্ব ‘সব নারী ও মেয়েদের জন্য: অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে উদ্‌যাপন করছে, তখন বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি লজ্জাজনক এবং এটিকে জরুরি ভিত্তিতে মোকাবিলা করতে হবে। এমজেএফ নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশকারী শিক্ষার্থী, নারী ও পুরুষদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে।

বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সুশীল সমাজ ও নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানাই, এমন একটি সমাজ গড়ে তুলতে একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে, যাতে নারী ও শিশুরা ভয়মুক্তভাবে বাঁচতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিশু ও নারী ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ এমজেএফের, জাতীয় শিশু কমিশন গঠনের দাবি