ভূমি লুট চলছে, ঠেকানো যাচ্ছে না বোরহান-শাহানকে
Published: 10th, March 2025 GMT
‘দিনের বেলা গ্রামের নারী-পুরুষ সবাই মিলে পাহারা দিই। তিন পুলিশও থাকে এখানে। সন্ধ্যা হলেই নামে তাণ্ডব, পুলিশ যখনই সরে বা ডিউটি বদলের মাঝে একাধিক নৌকা লাগিয়ে বোমা মেশিনে শুরু হয় পার কাটা। এভাবে কাটতে থাকলে অদ্বৈতবাড়ী থেকে শাহ্ আরেফিন (রহ.) মাজারমুখী সড়ক নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।’
তাহিরপুর সীমান্তে থাকা দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় হিন্দু ধর্মীয় উৎসবের
স্থান অদ্বৈত মন্দিরের পাশে দাঁড়িয়ে শুক্রবার বিকেলে এসব কথা বলছিলেন বিশ্বম্ভরপুরের রামেন্দু কুমার দাস রানু। রানু জানান, রাজারগাঁওয়ের সবাই জানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের জেলা সহসভাপতি জাঙ্গালহাটির বাসিন্দা বোরহান উদ্দিন ও ডালারপারের শাহানশাহ্র নির্দেশে শ্রমিকরা এখানকার পার কাটছে বহুদিন ধরে। স্থানীয়রা এ বিষয়ে কথা বললে রাতে এসে মারধর করে তাদের লোকজন।
পাশে দাঁড়ানো আরেক ব্যক্তি বলেন, বোরহান ও শাহানশাহ্কে গ্রেপ্তার করে শায়েস্তা না করলে এই পার কাটা থামবে না। গত সরকারের সময়ে তাদের সমালোচনা করার সাহসই কারও ছিল না। এখনও নেই। পার কেটে বালু বিক্রি করেই তারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে।
গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জানান, এসব নিয়ে কথা বললেই মারামারি হয়। পুলিশ কখন আসে আর কখন যায়, সবই তাদের জানা থাকে। পুলিশ না থাকলেই নৌকা লাগিয়ে মেশিন দিয়ে শুরু হয় পার কাটা। সড়কের পাশে এসে শুক্রবারও মেশিন লাগিয়েছিল তারা। এই সড়ক ভাঙলে মন্দিরও যাবে নদীতে। যাদুকাটায় শতকোটি টাকা ব্যয়ে শাহ্ আরেফিন-অদ্বৈত সেতুর কাজ চলছে। এভাবে বালু কাটতে থাকলে এই সেতুও পড়বে হুমকিতে।
গ্রামের বাসিন্দা ও অদ্বৈত মন্দির পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি মধুসূদন রায় গেল দু-তিন দিনে নদীর পার কাটার ভয়াবহতা দেখিয়ে বলেন, প্রশাসন এসে দু’-একজনকে ধরে নিলেও, যারা পার কাটার গডফাদার, তাদের কাজ তারা ঠিকই চালায়।
দুই ঘণ্টা রাজারগাঁও এলাকায় অবস্থানকালে গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠরা বলেন, পার কাটার সঙ্গে জড়িত সবাই রাজারগাঁও জাঙ্গালহাটির বোরহান এবং ডালারপারের শাহানশাহ্র লোকজন। তারা মালেক, জামাল, রতন, কবির, বিল্লালসহ কিছু লোককে দিয়ে এসব করায়। বিল্লাল যুবলীগের স্থানীয় ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি। পাঁচ আগস্টের আগে তাদের দাপট আরও বেশি ছিল।
স্থানীয় আরেক জনপ্রতিনিধি বলেন, লাউড়েরগড় আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে ছোট একটি খাল ছিল, সেখান থেকে তারা বালু তুলতে তুলতে খালকে বড় নদীতে পরিণত করেছে। এখন লাউড়েরগড় আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ও পড়েছে হুমকির মুখে। গ্রামের কিছু তরুণ জানায়, বোরহান উদ্দিন স্বেচ্ছাসেবক লীগ করলেও তাঁর ভাই আব্দুল মালেক বিএনপির সঙ্গে জড়িত। নদীর পার কাটার সময় বোরহানের পাশাপাশি আব্দুল মালেকও সক্রিয় থাকে।
এ প্রসঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বোরহান উদ্দিন জানান, গত শুক্রবারও মসজিদে জুমার নামাজ আদায়ের পর এই পার কাটা নিয়ে সবাইকে সচেতন করেছেন। নিজে জড়িত থাকলে তিনি সেটা করতেন না। শাহানশাহ্ বলেন, তিনি বালুর ব্যবসা করলেও সেখানকার পার কাটেননি।
ইউএনও আবুল হাসেম বলেন, রাজারগাঁও, অদ্বৈতবাড়ি, লামাশ্রম, শাহ্ আরেফিন-অদ্বৈত সেতু এলাকায় যাদুকাটার পার কাটা ঠেকাতে কয়েকদিন অভিযান হয়েছে, কয়েকজনকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে, তবু থামানো যাচ্ছে না সেখানকার পার কাটা। বোরহান উদ্দিনসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় না আনলে, পার কাটা ঠেকানো যাবে না। বিষয়টি পুলিশ সুপারকে জানাবেন তিনি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘পিপল ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ’ নাম চায় ইসলামী আন্দোলন
বাংলাদেশের বর্তমান নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পরিবর্তে নাগরিকতন্ত্র ও জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ চালুর প্রস্তাব করেছিল সংবিধান সংস্কার কমিশন। তবে নতুন এ প্রস্তাবনায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পরিবর্তে ‘পিপল ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ’ তথা ‘বাংলাদেশ জনকল্যাণ রাষ্ট্র’ নামের প্রস্তাব দেয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে অবস্থিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের হাতে সংস্কার প্রস্তাব তুলে দেয় ইসলামী আন্দোলনের প্রতিনিধিদল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে দলটি ১৩০টি প্রস্তাবে একমত, ২৫টি দ্বিমত এবং ১১টিতে আংশিকভাবে একমত। এ ছাড়া দলটি ৪১টি নতুন প্রস্তাব এবং ৪টি মৌলিক প্রস্তাব দিয়েছে।
ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, রাষ্ট্রের নাম হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রস্তাব করেছে ‘ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ’। কারণ, এই নামের মধ্যেই জনকল্যাণ নিশ্চিত করার কথা বলা আছে।
আশরাফ আলী আকন বলেন, ‘রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে সুশাসন, ন্যায়বিচার, উন্নয়ন, মানবাধিকার রক্ষা এবং দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমরা চারটি মৌলিক প্রস্তাব পেশ করেছি, যা বাস্তবায়ন একান্ত প্রয়োজন। আর এসব প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। প্রস্তাবগুলো হলো আত্মশুদ্ধি, জবাবদিহি, শরিয়াহ আইন ও সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন।’
বিদ্যমান আইনে দুর্নীতি, দুঃশাসন, চুরি, ধর্ষণসহ অন্যায়-অনাচার বন্ধ করা যায়নি জানিয়ে শরিয়াহ আইন করার দাবি জানান আশরাফ আলী আকন। সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের দাবি জানান তিনি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সব প্রস্তাবে সবাই একমত হবে বলে কমিশন মনে করে না। কমিশনের পক্ষ থেকে মতামতগুলো পর্যালোচনা করা হবে বলেন তিনি।
আগামী শনিবার থেকে প্রতিদিনই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একাধিক দলের সঙ্গে সংলাপ করবে বলে জানান আলী রীয়াজ। আগামী ১৫ মের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শেষ করা হবে বলেন তিনি। তারপর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার কথা জানান।
ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহম্মেদ সেখ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব প্রকৌশলী মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম উপস্থিত ছিলেন।
এ পর্যন্ত ৩২টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে মতামত পেয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন।