প্রতিষ্ঠানটির বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে, এটি একটি পরিত্যক্ত ঘর। ওই ঘরের ভেতরেই ‘জেরিন প্যাকেজড ড্রিংকিং ওয়াটার’ নামে পানি সরবরাহের কারখানা গড়ে তুলেছেন সাখাওয়াত হোসেন নামে এক ব্যক্তি। কালীগঞ্জ উপজেলার পিরোজপুর গ্রামে গড়ে ওঠা ওই কারখানাটিতে নোংরা পরিবেশে পানি জারে ভরে তা ‘বিশুদ্ধ’ খাবার পানি হিসেবে বাজারজাত করা হচ্ছে। উপজেলার বারবাজার, মান্দারতলা, সূবর্ণসারা, সাতমাইল, চুড়ামনকাঠিসহ বিভিন্ন বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে বোতলজাত 
এই পানি। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাবার পানি সরবরাহের কারখানাটি নির্মাণে কোনো ধরনের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। মানা হয়নি কোনো বিধিমালা। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ল্যাব বা কেমিস্ট নেই। বিশুদ্ধ বোতলজাত পানি সরবরাহের কারখানা নির্মাণে সায়েন্স ল্যাবরেটরি, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি), বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদনসহ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রিমিসেস সার্টিফিকেট, শ্রমিকদের শারীরিক সুস্থতার সনদ, পরিবেশগত ছাড়পত্র ও কলকারখানার সনদের বিধান রয়েছে। কিন্তু জেরিন প্যাকেজড ড্রিংকিং ওয়াটার কর্তৃপক্ষের এগুলোর কোনোটাই নেই। 
সরেজমিন কারখানাটিতে গিয়ে দেখা গেছে, পরিত্যক্ত একটি রান্নাঘরের মধ্যেই গড়ে উঠেছে জেরিন প্যাকেজড ড্রিংকিং ওয়াটার। ঘরটির ওপরে অর্ধেক ভাঙাচোরা টিন ও অর্ধেক টালির ছাউনি দেওয়া। নিচে পুরোনো পাকা মেঝে। ঘরের মধ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন পোকামাকড়। কারখানাটির পাশেই রয়েছে গোসলখানা ও শৌচাগার, যা একেবারেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। পানির কারখানার মেঝেতে বাধ্যতামূলক টাইলস বসানোর নিয়ম থাকলেও তা মানেনি প্রতিষ্ঠানটি। কারখানায় নিয়োজিত দু’জন শ্রমিক কাজ করলেও দেখা গেছে, তাদের হাতে গ্লাভস, পায়ে স্যান্ডেল বা শরীরে কোনো অ্যাপ্রোন নেই। এ ছাড়া বোতল জার পরিষ্কারে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ব্যবহারের কথা থাকলেও, সেটি মানা হচ্ছে না। 
কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় এক বছর ধরে পানি বাজারে বিক্রি করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ জার পানি বিক্রি করা হয়। গ্রাহকদের কাছে ২০ লিটারের একজার পানি সরবরাহ করে ৪০ থেকে ৫০ টাকা নেওয়া হয়। গ্রীষ্ম মৌসুমে কখনও এর চেয়ে বেশি দামেও পানি বিক্রি করা হয়।  
কারখানাটিতে নোংরা পরিবেশে খাবার পানি বোতলজাত করার বিষয়ে জানতে চাইলে জেরিন প্যাকেজড ড্রিংকিং ওয়াটারের মালিক সাখাওয়াত কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদন ও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজ সম্পর্কে অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্রেড লাইসেন্সসহ কিছু কাগজ আছে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় অন্যান্য অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।
কারখানাটির বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ঝিনাইদহ কার্যালয়ের কর্মকর্তা নিশাত মেহের বলেন, নোংরা পরিবেশে খাবার পানি বোতলজাত হতে পারে না। শিগগিরই কারখানাটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
কুষ্টিয়ার উপজেলা বিএসটিআইর সহকারী পরিচালক (সিএম) দেবব্রত বিশ্বাস জানান, কালীগঞ্জে বোতলজাত খাবার পানি সরবরাহের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান অনুমোদন নেয়নি। বিএসটিআইর পক্ষ থেকে শিগগির এসব অবৈধ কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালন করা হবে। 
প্রয়োজনীয় কাগজ না থাকলে কেউ কোনোভাবেই ড্রিংকিং ওয়াটার প্লান্টের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন না জানিয়ে এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ঝিনাইদহ কর্মকর্তা মুনতাসিরুল রহমান বলেন, ওই কারখানার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.

রেজাউল ইসলাম বলেন, নোংরা পরিবেশে উৎপাদিত পানি পান করলে মানুষের শরীরে নানা পানিবাহিত রোগ হতে পারে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।
কালীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম জানান, কোনো প্রতিষ্ঠানের নোংরা-অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার পানি বাজারজাতকরণের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর মকর ত সরবর হ র ব যবস থ ব তলজ ত পর ব শ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মানিকগঞ্জে রমজানে তৃষ্ণা মেটায় ‘সাহিদুলের মাঠা’

পবিত্র রমজানে ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ শরবত বা পানীয়। আর সেটা যদি মাঠা হয়, তাহলে তো কথাই নেই! সারা দিন রোজা রেখে সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন মাঠা রোজাদারদের ক্লান্তি দূর করে নিমেষেই। তাই রমজানে মাঠার কদর বেড়ে যায়।

রমজান মাস এলেই কদর বেড়ে যায় মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে পরিচিত ‘সাহিদুলের মাঠা’র। রোজার প্রথম দিন থেকেই শহরের প্রসিদ্ধ দই-মিষ্টির দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে সাহিদুলের মাঠা। এ ছাড়া তাঁর বাড়ি থেকেও অনেকে মাঠা কিনে নিয়ে যান।

সদর উপজেলার নতুন বসতি গ্রামের ষাটোর্ধ্ব খন্দকার সাহিদুল হক নিজের বাড়িতেই মাঠা তৈরি করে আসছেন। ২০১৬ সাল থেকে শুধু রমজান মাসেই তিনি মাঠা তৈরি ও বিক্রি করেন। বছরের অন্য সময় তিনি বোরহানি তৈরি করে বিভিন্ন খাবার হোটেলে সরবরাহ করেন।

শনিবার সকালে খন্দকার সাহিদুল হকের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে বসে কথা হয়। তিনি বলেন, ভোর থেকেই গরুর দুধ জ্বাল দিয়ে মাঠা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথমে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা দুধ জ্বাল দিতে হয়। ঠান্ডা হওয়ার পর জ্বাল দেওয়া দুধ আরেকটি পরিষ্কার পাত্রে রাখা হয়। তিন থেকে চার ঘণ্টা এভাবে রাখার পর জমাট বাঁধা দই হয়। পরে বড় পাত্রে দই নিয়ে পরিমাণমতো চিনি, লবণ ও লেবুর রস মিশিয়ে সজোরে ঘোটা দিতে হয়। বেলা ১১টার মধ্যেই তৈরি হয়ে যায় সুস্বাদু মাঠা। প্রতিদিন এক থেকে দেড় মণ দুধ জ্বাল দেন। এ থেকে এক থেকে দেড় মণ মাঠা তৈরি করেন।

মাঠা তৈরির পর তা বোতলে ভরা হয়। এরপর এসব মাঠা ব্যাগে ভরে রিকশায় ও সাইকেলে করে শহরের দই-মিষ্টির দোকানগুলোতে সরবরাহ করেন সাহিদুল। আবার কেউ কেউ তাঁর বাড়ি থেকেই মাঠা কিনে নিয়ে যান।

সদর উপজেলার দীঘি গ্রামের আইয়ুব পাশা বলেন, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন পরিবেশে গরুর খাঁটি দুধ দিয়ে মাঠা তৈরি করেন সাহিদুল। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হওয়ায় তাঁর বাড়ি থেকে প্রতিদিনই আশপাশের গ্রামের রোজাদাররা মাঠা কিনে নিয়ে যান। তিনি নিজেও মাঝেমধ্যে কিনে থাকেন।

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক চিকিৎসক বদরুল আলম চৌধুরী বলেন, পানীয়ের মধ্যে মাঠার গুণাগুণ অনেক। দুধ দিয়ে তৈরি হয় বলেই মাঠাতে দুধের পুষ্টিগুণ থাকে। এ ছাড়া ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের ঘাটতি মিটতে পারে মাঠা থেকেই। নিয়মিত মাঠা পান করলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমে এবং হজমে সহায়তা করে।

জেলা শহরে মদিনা গ্র্যান্ড সুইটস অ্যান্ড বেকারির জীবন হোসেন বলেন, সারা বছর মাঠার চাহিদা থাকলেও রোজায় চাহিদা আরও বাড়ে। সাহিদুলের মাঠা ও বোরহানির কদর ক্রেতাদের কাছে অনেক বেশি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রমজানে দ্রব্যমূল্য: জাপানের সততা বনাম আমাদের বাস্তবতা
  • গাজায় এবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করলো ইসরায়েল
  • চুপ করুন, ছোট মানুষ: পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ইলন মাস্ক
  • ত্রাণের পর এবার গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করছে ইসরায়েল
  • রাজশাহীতে নির্ধারিত দামে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না, অন্য পণ্যের দামও বাড়তি
  • রোজার বাজারে ভিন্ন অভিজ্ঞতা এবার
  • দুই পানি শোধনাগার প্রকল্প ১০ বছর ধরে আটকা, প্রধান উপদেষ্টার বিস্ময়
  • যমুনা সার কারখানার উৎপাদন শুরু, গ্যাসের চাপ কম
  • মানিকগঞ্জে রমজানে তৃষ্ণা মেটায় ‘সাহিদুলের মাঠা’