গাজীপুরে বেক্সিমকো শিল্পপার্কের লে-অফ করা ১৪টি কারখানার আরও ১৬ হাজার ১৪২ শ্রমিককে পাওনা বাবদ ৫৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে পাওনা পরিশোধের দ্বিতীয় দিনে আজ সোমবার এই বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হয়। এর আগে গত রোববার প্রথম দিনে বন্ধ হয়ে যাওয়া দুই প্রতিষ্ঠানের ২৪৫ জন শ্রমিকের ৮০ লাখ টাকা পাওনা পরিশোধ করা হয়েছিল।

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো.

আরিফ আহাম্মেদ আজ ১৬ হাজার শ্রমিকের পাওনা পরিশোধের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আজ বেলা ২টা থেকে শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ শুরু হয়। এদিন ১৬ হাজারের বেশি শ্রমিকের পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বেক্সিমকোর মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান খালিদ শাহরিয়ার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সোমবার বেক্সিমকোর সাতটি পোশাক কারখানার মোট ১৬ হাজার ১৪২ জন শ্রমিকের পাওনা দাবির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে। গত দুদিনে ৯টি পোশাক কারখানার সকল পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। অবশিষ্ট কারখানার শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।’

এদিকে আজ সকালে বেক্সিমকো শিল্পপার্কে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে একের পর এক শ্রমিক তাঁদের আইডি কার্ড ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে পাওনা টাকার হিসাব বুঝে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। কারখানার প্রধান ফটকের সামনে কথা হয় সুইং অপারেটর মমিন শেখের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রায় ৮ বছর এখানে কাজ করেছি। তাঁর হিসাবে সব মিলিয়ে এক লাখ টাকার বেশি পাওয়ার কথা। কিন্তু পেয়েছেন ৭২ হাজার ৮০৮ টাকা।

বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ ও শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বেক্সিমকো শিল্পপার্কের বন্ধ ঘোষণা করা ১৪টি প্রতিষ্ঠানের মোট শ্রমিকসংখ্যা ৩১ হাজার ৬৭৯ জন। আর কর্মচারীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৬৫ জন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এসব কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গত ৬ মার্চ বেক্সিমকোর বন্ধ ঘোষিত এসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধে ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেছে সরকার। ঋণ হিসেবে কোম্পানিটিকে এই অর্থ দিয়েছে সরকার। ওই দিন বেক্সিমকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওসমান কায়সার চৌধুরীর কাছে ওই চেক হস্তান্তর করেন শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। ওই সময় জানানো হয়, ৯ মার্চ থেকে শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ শুরু হবে। সেই অনুযায়ী রোববার দুপুরের পর ২৪৫ জন শ্রমিককে প্রায় ৮০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়।

কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানায়, শ্রমিকদের পাওনা বাবদ দেওয়া অর্থ নগদে পরিশোধ করা হয়নি। পাওনার পুরো অর্থ হয়, মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বা এমএফএস হিসাবে বা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে।

এদিকে গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক কৃপা সিন্দু বালা প্রথম আলোকে বলেন, কারখানার শ্রমিক–কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সে জন্য নিরাপত্তার স্বার্থে বেক্সিমকো শিল্পপার্ক এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বেক্সিমকো গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গ্রেপ্তার হন সালমান এফ রহমান। ১৩ আগস্ট থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। ২৯ আগস্ট সালমান এফ রহমান, তাঁর ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, পুত্রবধূ শাজরেহ রহমানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এ ছাড়া খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলো প্রতিষ্ঠানটির ঋণপত্র বা এলসি–সুবিধাও বন্ধ করে দেয়। এতে বিপাকে পড়ে বেক্সিমকো শিল্পপার্কের প্রতিষ্ঠানগুলো। কাঁচামালের সংকটে কারখানাগুলোর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর এসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এমন পটভূমিতে সরকারের পক্ষ থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির সিদ্ধান্তে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া অর্থে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ১৬ হ জ র রহম ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

হারানো, চুরি ও ছিনতাই হওয়া ১০৬ মুঠোফোন মালিকদের ফিরিয়ে দিল ডিএমপি

হারানো, চুরি ও ছিনতাই হওয়া ১০৬টি মুঠোফোন উদ্ধার করে মালিকদের বুঝিয়ে দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

আজ বৃহস্পতিবার ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মুঠোফোন হারানো, চুরি ও ছিনতাই হওয়ার বিভিন্ন ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মালিকদের করা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ধানমন্ডি থানার পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গত এক মাসে ২৮টি মুঠোফোন উদ্ধার করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, একই সময় হাজারীবাগ থানার পুলিশ হারিয়ে যাওয়া, চুরি ও ছিনতাই হওয়া ৭৮টি মুঠোফোন উদ্ধার করে মালিকদের ফিরিয়ে দেয়।

হারিয়ে যাওয়া মুঠোফোনগুলো দ্রুততম সময়ে ফিরে পেয়ে আনন্দিত মালিকেরা পুলিশের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। মুঠোফোন ফিরে পেয়ে অনেকে এ সময় আবেগপ্রবণও হয়ে পড়েন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ