ধর্ষণ মামলায় আসামিপক্ষে আইনজীবী দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে জামালপুরে ‘ছাত্র–জনতার’ সঙ্গে আইনজীবী ও তাঁদের সহকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় ছাত্র, আইনজীবীসহ চারজন আহত হয়েছেন। আজ সোমবার দুপুরে জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন আইনজীবী খলিলুর রহমান, ছাত্র মো. হৃদয় (২২), মো. তারেক (২২) ও মোহাম্মদ মোয়াজ (১৯)। তাঁদের মধ্যে খলিলুর রহমান জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে চলে যান। তবে ওই তিন ছাত্র হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। আহতরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা জানিয়েছেন।

আইনজীবী, পুলিশ ও ছাত্র সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ধর্ষণকারীর পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াতে পারবেন না—এমন দাবিতে আজ দুপুর ১২টা থেকে জামালপুর আদালত প্রাঙ্গণে ‘সচেতন ছাত্র–জনতার’ ব্যানারে বিক্ষোভ শুরু করেন ২০–৩০ জন ছাত্র। দীর্ঘ সময় ধরে আদালত প্রাঙ্গণে তাঁরা ওই কর্মসূচি পালন করছিলেন। দুপুর দেড়টার দিকে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তাঁদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে কথা বলার জন্য যান। এ নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে তাঁদের কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে চারজন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোহাম্মদ মোয়াজ বলেন, ‘আমরা সবাই জুলাইয়ের আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম। অনেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা শাখার সঙ্গে আছি আবার অনেকের পদ নেই। তবে সবাই একসঙ্গে যেকোনো আন্দোলন করি। একজন ধর্ষণের শিকার নারীর পক্ষে আমরা দাঁড়িয়েছি। বাক্‌ ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ওই মামলার আসামিকে বাঁচাতে একজন আইনজীবী জাল-জালিয়াতিও করছেন। আমরা গিয়েছিলাম যাতে ধর্ষণের শিকার নারীরা সঠিক বিচার পান। কিন্তু আইনজীবী ও তাঁদের সহকারীরা আমাদের বেধড়ক পিটিয়েছেন। আমার সারা শরীরে লাঠির আঘাত।’

এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রিশাদ রেজওয়ান বলেন, আন্দোলনকারীদের কথা শোনার জন্য আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে আসার অনুরোধ করা হয়েছিল। সেখানে বসে সবকিছুর সমাধান করার কথা ছিল। কিন্তু এই সময়টুকু তাঁরা দেননি। এর মধ্যেই জ্যেষ্ঠ একজন আইনজীবীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। আরও একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। অন্য আরেকজন আইনজীবীকে তাঁরা অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে আদালত প্রাঙ্গণে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যায়। একজন আইনজীবী যেকোনো মামলা পরিচালনা করতে পারেন। এ ঘটনায় আলোচনার মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক মীর ইসহাক হাসান বলেন, ‘ছাত্র–জনতার ব্যানারে ওই আন্দোলন চলছিল। তাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিতে না থাকলেও জুলাই আন্দোলনে তাঁরা অংশ নিয়েছিলেন। তাঁরা আদালতে গিয়েছিলেন ধর্ষণের শিকার নারীরা যাতে সহজেই আইনি সহায়তা পান এবং আসামিরা যাতে আইনজীবীদের সহায়তা না পান। ওই বিষয়টি নিয়ে আন্দোলন করার সময় আইনজীবী ও তাঁদের সহকারী এবং বহিরাগত ব্যক্তিরা ছাত্র–জনতার ওপর ন্যক্কারজনক হামলা করেন এবং ব্যাপক মারধর করেন।’

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও আইনজীবী শাহ্ মো.

ওয়ারেছ আলী মামুন বলেন, ওই ধরনের ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে উপস্থিত হন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থার দিকেই আগানো হবে।

জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াহিয়া আল মামুন বলেন, আজকে আদালত প্রাঙ্গণের ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। ঘটনাটি তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত র জনত র আইনজ ব দ র ন আইনজ ব ন বল ন র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিশেষ নিরাপত্তা প্ররক্ষা নির্দেশিকা বাতিল

গুরুত্বপূর্ণ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিশেষ নিরাপত্তা প্রদানবিষয়ক ‘প্ররক্ষা নির্দেশিকা ২০২৫’ বাতিল করেছে সরকার। 

রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জারি করা আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই প্ররক্ষা নির্দেশিকার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনিকে তলব করেন হাইকোর্ট। তাঁকে ১৮ মার্চ আদালতে হাজির হতে বলা হয়। বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন।

নির্দেশিকার বিষয়টি আদালতের নজরে এনে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো. আব্দুল ওয়াহাব এবং সৈয়দা সাজিয়া শারমিন। 

শুনানি নিয়ে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত রুল দিয়ে ওই নির্দেশিকার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। পরে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, প্ররক্ষা নির্দেশিকায় প্রধান বিচারপতিকে রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ অন্যদের সঙ্গে একই রকমভাবে তুলনা করা হয়েছে। হাইকোর্টের বিচারকদের সিনিয়র সচিব ও সচিবদের সঙ্গে রাখা হয়েছে। 

এর আগের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স লঙ্ঘন করে এটি জারি করা হয়েছে। এ জন্য ওই নির্দেশিকাটি আদালতের নজরে আনেন বলে জানান তিনি।

আদালতে তিনি ২০২০ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স দেখান এবং আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হওয়া একটি মামলার রায়ের কথা উল্লেখ করেছেন। সেই মামলার রিভিউ আবেদন ২৭ এপ্রিল শুনানির জন্য রয়েছে। 

তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের নিরাপত্তা প্ররক্ষা নীতিমালা জারি করা বিস্ময়কর। শুনানি নিয়ে আদালত কেন এই নির্দেশিকাকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না জানতে চেয়ে সুয়োমোটো রুল জারি করেছেন। সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনিকে ১৮ মার্চ আদালতে সশরীর হাজির হয়ে কী কারণে পত্রজারি করেছেন তা ব্যাখ্যা করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে অগ্নিকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির
  • বছরের প্রথম দুই মাসে দেশে ধর্ষণের শিকার ৯৭ নারী-শিশু
  • তারেক রহমানের নির্দেশে ‘চালক দলের’ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
  • নারী ও কন্যা নির্যাতন জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে: মহিলা পরিষদ
  • আদালত প্রাঙ্গণে ইনু বললেন, আমি ঠিক আছি, চিন্তা করবেন না
  • ইনু বললেন, আমি ঠিক আছি, আপনারা চিন্তা করবেন না
  • গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিশেষ নিরাপত্তা প্ররক্ষা নির্দেশিকা বাতিল
  • অন্তর্বর্তী পরিষদ পুনর্গঠন প্রশ্নে রুল, দুজন সদস্যের কার্যক্রম পরিচালনা স্থগিত
  • রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন কেন অবৈধ নয়— রুল জারি