বিচার ও সংস্কার পেছানোর রাজনীতি করবেন না: নাহিদ ইসলাম
Published: 10th, March 2025 GMT
বিচার ও সংস্কার পেছানোর রাজনীতি না করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের বলা হচ্ছে, আমরা নাকি নির্বাচন পেছানোর রাজনীতি করছি। খুব পরিষ্কারভাবে আপনাদের বলতে চাই, আপনারা বিচার ও সংস্কার পেছানোর রাজনীতি করবেন না। বিচার ও সংস্কারের প্রতি ঐকমত্য পোষণ করুন, নির্বাচন আমরা আপনাদের করে দিতে সহায়তা করব।’
গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের নিয়ে আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে এনসিপি। ইফতারের আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, দ্রুত বিচার ও সংস্কারের রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণা করতে হবে। কত দিনের মধ্যে কোন প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম দেখা যাবে এবং সংস্কার বাস্তবায়ন করা যাবে, তার সুস্পষ্ট রোডম্যাপ অবিলম্বে ঘোষণা করতে হবে।
বিএনপিসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে আসছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক জরুরি সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচন চাইছে বিভিন্ন দল। কোনো কোনো দল এনসিপিকে ইঙ্গিত করে বলছে, দলটি নানা ধরনের কথা বলে নির্বাচন পেছাতে চাইছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ ছেড়ে এনসিপির আহ্বায়কের দায়িত্ব নেওয়া নাহিদ ইসলাম ইফতার অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের বিরুদ্ধে নই, বরং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব বলেই আমরা নিজেরাও একটা রাজনৈতিক দল গঠন করেছি।.
সরকার গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে নাহিদ বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে আহ্বান ও আমন্ত্রণ জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। অন্যান্য উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধান প্রত্যেকেই কমিটমেন্ট (অঙ্গীকার) দিয়েছিলেন মানুষের জানমালের নিরাপত্তা এবং বিচারের দায়িত্ব তাঁরা নিচ্ছেন। এই কমিটমেন্ট থেকে তাঁরা দূরে সরে যেতে পারবেন না, জনগণের সামনে তাঁদের দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা কিন্তু কড়ায়-গন্ডায় জবাবদিহি নেব যে আমাদের বিচার ও সংস্কার কতটুকু আদায় হলো। রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনের জন্য এতোই তাড়াহুড়া করে, ভোট চাইতে গেলে কিন্তু সেই জবাবদিহি তাঁদের দিতে হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য আমরা কারও ওপর নির্ভর করতে চাই না।’
আ.লীগের ফয়সালা দাবিজুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতনের প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, বিচার ছাড়াই যদি আরেকটি সরকার চলে আসে, তাহলে কী নিশ্চয়তা আছে যে আওয়ামী লীগকে আবার পুনর্বাসিত করা হবে না এই বাংলাদেশে। ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ও সরকারকে পরিষ্কার করতে হবে আওয়ামী লীগের ফয়সালা কী হবে। ৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের এই ফ্যাসিস্ট রাজনীতির আর কোনো জায়গা হবে না, হবে না, হবে না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান নাহিদ। তিনি বলেন, কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না। মব (দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা) তৈরির রাজনীতির অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশ ও ইসলামকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা ও ষড়যন্ত্র অনেক গোষ্ঠী করছে। সেগুলো প্রতিহত করা হবে।
‘বিচারের আগে কোনো নির্বাচন নয়’অভ্যুত্থানে আহতদের কেউ ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন ক্রাচে ভর দিয়ে, কেউ এসেছিলেন হুইলচেয়ারে করে। ছিলেন শহীদ পরিবারগুলোর সদস্যরাও। তাঁদের কয়েকজন বক্তব্য দেন।
ঢাকার আশুলিয়ায় শহীদ হওয়া (৫ আগস্ট) সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার সন্তানকে কেন মারা হলো? ...এর উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।’
জুলাই অভ্যুত্থানে উত্তরায় শহীদ হওয়া শিশু জাবির ইব্রাহিমের বাবা নওশের আলী বলেন, হত্যা ও হামলার বিচার অবশ্যই সবার আগে হতে হবে। বিচারের আগে কোনো নির্বাচন নয়। আগে বিচার হবে, তারপর সংস্কার হবে। সংস্কার না হলে সামনে আরেকটা চব্বিশ হয়তো অপেক্ষা করছে।
অনুষ্ঠানে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে সব খুনের নির্দেশদাতা শেখ হাসিনা এখনো ভারতে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। অতি দ্রুত তাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা না গেলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে হলেও শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সম্পন্ন করতে হবে।
বিচার ও সংস্কারের প্রশ্নে বাংলাদেশের সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, সবার ঐকমত্যের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকেও অতি সত্বর বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে আসতে হবে।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনিম জারা বলেন, এত ত্যাগ-তিতিক্ষা শুধু এক শাসক থেকে আরেক শাসকের জন্য নয়, বরং শাসনব্যবস্থা যাতে বদলায়, পুরো ব্যবস্থা যাতে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে, সে জন্য। এনসিপির বিশেষ টিম সব সময় শহীদ পরিবার ও আহতদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে বলে জানান তিনি।
আয়োজনটি সঞ্চালনা করেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। আলোচনা শুরুর আগে নাহিদ ইসলামের সঙ্গে কথা বলেন শহীদ পরিবারের কয়েকজন সদস্য। কথা বলার এক পর্যায়ে তাঁদের কেউ কেউ কাঁদতে থাকেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ছ ন র র জন ত ন হ দ ইসল ম এনস প র সরক র র র জন য পর ব র আওয় ম ইফত র
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশকে দেওয়া ২ স্থলবন্দরের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল ভারতের
পেট্রাপোল ও গেদে স্থলবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে রপ্তানি পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারত। এ সুবিধা বাতিল হলেও ভারতের ভূখণ্ড হয়ে ভুটান ও নেপালে বাংলাদেশি পণ্য পরিবহনে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছে দিল্লি। তবে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করার পর গতকাল বুধবারই বেনাপোল বন্দর থেকে চারটি পণ্যবাহী ট্রাক ফেরত পাঠিয়েছে দেশটি।
এদিকে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে যাওয়ার ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলে গতকাল রাতেই জরুরি বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) কার্যালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। অনলাইনে যুক্ত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
বৈঠক শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, নেপাল ও ভুটানে রপ্তানির যে প্রক্রিয়া তাতে এ সিদ্ধান্তে কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে সরকার তৈরি পোশাক রপ্তানিসহ সার্বিক বাণিজ্য স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। ঢাকা ও সিলেট বিমানবন্দরের নিজস্ব সক্ষমতা ব্যবহার করে এ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখা হবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হবে। সেখানে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গত মঙ্গলবার ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। পরে এক বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশের জন্য যে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, তাতে ভারতের বিমান ও সমুদ্রবন্দরে উল্লেখযোগ্য জট হতো। ফলে পণ্য নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি ও রপ্তানিকারকদের খরচ বেড়ে যেত। তবে এটিও পরিষ্কার– এ সুবিধা বাতিলে নেপাল ও ভুটানে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য ট্রানজিটে কোনো প্রভাব পড়বে না।
সিবিআইসির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০২০ সালের ২৯ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে পেট্রাপোল স্থলবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশি পণ্যকে কলকাতা স্থল ও বিমানবন্দর এবং মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে নাভা শিভাবন্দরে পরিবহনের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া একই সময় রেল সুবিধা ব্যবহার করে পেট্রাপোল ও গেদে বা রানাঘাট স্থলবন্দর ব্যবহার করে নাভা শিভাবন্দরে পণ্য পরিবহনের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, যা বাতিল করা হলো। তবে ২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আগের বিজ্ঞপ্তিটি সংশোধন করে শুধু কলকাতা বিমানবন্দরের সঙ্গে দিল্লি বিমানবন্দরের এয়ার কার্গোকেও সংযুক্ত করে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান সমকালকে বলেন, ইতোমধ্যে ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্ক ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছে। একই দিন ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করল, যা উদ্বেগের। এ সিদ্ধান্তের ফলে ভারতের স্থল ও বিমানবন্দরগুলো দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে। বিঘ্নিত হতে পারে বাংলাদেশের রপ্তানি কার্যক্রম। কারণ, সুবিধাটি বাণিজ্য সহজ ও খরচ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছিল। এখন বাংলাদেশের জন্য লজিস্টিক্যাল চাপ বাড়তে পারে, যা আঞ্চলিক বাজারে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে গত ৪ এপ্রিল বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই বৈঠকের এক সপ্তাহ না পেরোতেই এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিল ভারত।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে সমকালকে বলেছেন, ভারত সমুদ্রবন্দরগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার পর সিঙ্গাপুরের পরিবর্তে সেগুলো ব্যবহারের জন্য আমাদের একাধিকবার বলেছে। কিন্তু রুটটি পশ্চিমা বিশ্বে বাংলাদেশি পণ্য পরিবহনের জন্য খুব বেশি সুবিধাজনক না হওয়ায় তেমন ব্যবহার করা হয়নি। এ বন্দরগুলো হয়ে নগণ্য পরিমাণ পণ্য যেত। ফলে সুবিধা বাতিলে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না। তবে এ মুহূর্তে দুই দেশের সম্পর্কে যে শীতলতা বিরাজ করছে, সে বিবেচনায় সিদ্ধান্তটির যথেষ্ট রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
জানতে চাইলে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) আনোয়ার হোসেন জানান, বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিজিএমইএসহ অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এর প্রভাব কী হতে পারে, তা পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরে তেমন পড়বে না বাণিজ্যিক প্রভাব
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় দু’দেশের মধ্যকার বাণিজ্যিক সর্ম্পকে কিছুটা প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে ট্রানজিটের মাধ্যমে গত পাঁচ বছরে যে পরিমাণ পণ্য আনা- নেওয়া হয়েছে তাতে সরাসরি বাণিজ্যিক প্রভাব তেমন বেশি হবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত পাঁচ বছরে খুব অল্প পরিমাণ ট্রানজিট পণ্য আনা-নেওয়া করেছে ভারত। এসব পণ্য থেকে বাংলাদেশ খুব বেশি রাজস্বও পায়নি। ভারত হুট করে এমন সিদ্ধান্ত নিলেও বাংলাদেশ খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আমি মনে করি না। তবে তাৎক্ষণিক এ বিষয়ে বাংলাদেশের পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখানো ঠিক হবে না।
ভারত হয়ে নেপাল ও ভুটানে কিছু গার্মেন্ট পণ্য যায়। এটিও রপ্তানি হারের তুলনায় অনেক কম বলে মন্তব্য করেন বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, আমার ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তিত শুল্কনীতি ভারতকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করেছে। তারা হয়তো ভেবেছে, এই সুযোগ অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের পণ্য সেখানে নিয়ে ‘মেড ইন ভারত’ লিখে রপ্তানি করার সুযোগ নিতে পারে অসাধু ব্যবসায়ীরা। হয়তো এ কারণে সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এটিকে কূটনৈতিক চ্যানেলে মোকাবিলা করতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল ম্যানেজার এনামুল করিম বলেন, ট্রানজিটের আওতায় চার-পাঁচটি চালানে পণ্য এসেছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। মাত্র আট টন চা পাতা এই বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়ছে ভারতে। বন্দরের মোট হ্যান্ডলিংয়ের তুলনায় এটি খুবই সামান্য।
চার মালবাহী ট্রাক ফেরত পাঠিয়েছে ভারত
বেনাপোল প্রতিনিধি জানান, ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করায় গতকাল বেনাপোল বন্দর থেকে চারটি মালবাহী ট্রাক ফেরত পাঠিয়েছে ভারত। পরে রপ্তানি পণ্যবোঝাই চারটি ট্রাক ঢাকায় ফেরত আসে।
এ বিষয়ে ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী সমকালকে বলেন, স্থলবন্দর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা বন্ধের জন্য ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় একটি চিঠি ইস্যু করেছে কাস্টমসে। এ চিঠির আলোকে ট্রানজিট সুবিধার পণ্য বেনাপোল থেকে পেট্রাপোল বন্দরে প্রবেশ বন্ধ রয়েছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুজিবর রহমান বলেন, ভারত সরকার ট্রানজিট সুবিধা বাতিল করায় আজ (বুধবার) বেনাপোল থেকে চারটি রপ্তানি পণ্যবোঝাই ট্রাক ফেরত গেছে। ঢাকার রপ্তানিকারক ডিএসভি এয়ার অ্যান্ড সি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠানের ছিল ট্রাকগুলো।