শরীয়তপুর সদর উপজেলার হুগলি এলাকায় সড়কের ওপর চালবোঝাই একটি ট্রাক বিকল হওয়ার ১০ ঘণ্টা পর শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। আজ সোমবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ট্রাকটি সরিয়ে নেওয়া হলে সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এর আগে সকাল আটটার দিকে ট্রাকটি বিকল হলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

শরীয়তপুরের সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর থেকে চালের বস্তাবোঝাই একটি ট্রাক সকালে কুমিল্লা যাচ্ছিল। শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়ক ধরে ট্রাকটি শরীয়তপুর সদর উপজেলার হুগলি এলাকায় পৌঁছালে সড়কের মাঝখানে বিকল হয়ে যায়। এতে সকাল আটটা থেকে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ খবর পেয়ে ট্রাকটি সরানোর জন্য মাদারীপুর থেকে একটি রেকার আনে। রেকারটি সদর উপজেলার মনোহর বাজার এলাকায় আনা হলে সেটিও বিকল হয়ে যায়।

শরীয়তপুরের সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাহামুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাকটি বেশি বোঝাই থাকার কারণে সড়ক থেকে সরানো যাচ্ছিল না। পরবর্তী সময়ে চালের বস্তাগুলো নামিয়ে স্থানীয় শ্রমিকদের সাহায্যে সড়ক থেকে ট্রাকটি সরিয়ে নেওয়া হলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

বিকল হওয়া ট্রাকের চালক কাজী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সড়কের মধ্যে গর্তের ভেতর চাকা পড়ার কারণে ট্রাকের একটি যন্ত্র বিকল হয়ে পড়ে। তখন ট্রাকটি আটকা পড়ে যায়।

শরীয়তপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সড়কের ওপর ট্রাক বিকল হওয়ার কারণে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। তখন বিকল্প পথে স্থানীয় যানবাহনগুলোকে শহরের দিকে পাঠানো হয়। সন্ধ্যার পর ওই সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

৮৮২ কোটি টাকার সড়ক মৃত্যুফাঁদ

বছর চারেক আগে ৮৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০৬ কিলোমিটার দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। দুই বছর না যেতেই বিভিন্ন স্থানে উঁচু-নিচু ঢেউ, গর্ত ও খানাখন্দ তৈরি হয়। দিনাজপুর জেলা সদর থেকে ফুলবাড়ী, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট হয়ে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের প্রায় ৬৬ কিলোমিটারে এই দশা। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে গাড়ি। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
সরেজমিন দেখা গেছে, ফুলবাড়ী ঢাকা মোড় থেকে দক্ষিণে আম্রবাটি মাদ্রাসা মোড়, লক্ষ্মীপুর বাজার থেকে জয়নগর বাজার, চণ্ডিপুর বাজার থেকে দুর্গাপুর ঢিবি, বিরামপুর পৌর শহরের ঢাকা মোড়, মির্জাপুরের ব্র্যাক চিলিং সেন্টার থেকে ঘোড়াঘাট রেলঘুমটি পর্যন্ত কোথাও কোথাও সড়ক উঁচু-নিচু হয়ে আছে। পিচঢালাই উঠে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে অনেক জায়গায়।
মহাসড়কটিতে নিয়মিত যাতায়াতকারী ব্যাংক কর্মকর্তা শামিম হোসেন ও ট্রাকচালক হৃদয় খান বলেন, সড়কের অনেক স্থান দেবে আলপথের মতো হয়ে গেছে। এ কারণে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। নিচু স্থানে চাকা পড়লে নালা থেকে যানবাহন সাইড দেওয়া-নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে।
একই অবস্থা ফুলবাড়ী ঢাকা মোড় থেকে পশ্চিম দিকে রাঙামাটি হয়ে বারাইহাটের কিছু অংশ এবং আমবাড়ী যাওয়ার আগে দিনাজপুর পর্যন্ত। মহাসড়কের এসব স্থান দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স, পণ্যবাহী পরিবহন, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যার পর মহাসড়কের এসব এলাকা দিয়ে চলাচল আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, যত্রতত্র উঁচু হয়ে থাকায় এসব অংশ দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে মোটরসাইকেল উল্টে দুর্ঘটনা ঘটে। 
কোতোয়ালিসহ ফুলবাড়ী, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট থানার সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে এই মহাসড়কে ১১৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৬৭ জন নিহত হয়েছেন। তার মধ্যে ঘটনাস্থলে মারা গেছেন ৪৫ জন। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধু ফুলবাড়ীতে ২২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৪ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছে শতাধিক। এ ছাড়া গত জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয়টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচজন নিহত হয়েছে।
দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে গোবিন্দগঞ্জ থেকে দিনাজপুর ১০৬ কিলোমিটার ৪২ ফুট প্রশস্তকরণে ৮৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। রাস্তাটি ৯টি গুচ্ছের মাধ্যমে আট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে নির্মাণকাজ শুরু করে সংস্কারসহ প্রশস্তকরণ কাজ ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ করে। প্রশস্ত ও সংস্কারের কাজ শেষ করার দুই বছরের মাথায় আবারও রাস্তাটি দেবে গিয়ে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলেছে, সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার পরবর্তী তিন বছর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ওই সড়কের সংস্কার করে দেওয়ার চুক্তি থাকে। এর মধ্যে মহাসড়কে যেখানে সমস্যা হয়েছিল, তারা সেসব জায়গা সংস্কার করেছেন। এখন চুক্তির সময় ২০২৪ সাল পার হয়েছে। তাই তাদের আর কাজ করার সুযোগ নেই। 
তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ বিদুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ২০১৭-১৮ সালে সেই সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী ও চেয়ারম্যানরা ঠিকাদারের কাছে কমিশন বাণিজ্য করেছেন। সড়কের শতকরা ৬০ ভাগ টাকা লুটপাট করে তাদের পকেট ভরেছেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিম্নমানের উপকরণ দ্বারা সংস্কার ও প্রশস্তকরণ করে বরাদ্দের অধিকাংশ 
টাকা লুটপাট করায় এখন রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। 
এ বিষয়ে দিনাজপুর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, অনেক সময় ওভারলোড গাড়ি চলাচলের কারণে যেসব জায়গা উঁচু-নিচু হয়েছে, তা আমরা কেটে ফেলব। সড়কে ৮টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পৃথকভাবে কাজ করেছে। অনেকেরই চুক্তি শেষে হয়েছে এবং কিছু জায়গায় চুক্তির সময় আছে। সরেজমিন দেখে ঠিকাদারের মাধ্যমে সেই জায়গাগুলো সংস্কার করা হবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারী গাড়ি উঠলেই শুরু হয় কাঁপাকাঁপি
  • ৮৮২ কোটি টাকার সড়ক মৃত্যুফাঁদ