তারেক রহমানের নির্দেশে ‘চালক দলের’ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
Published: 10th, March 2025 GMT
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমামের ছেলে তানভীর ইমামের সাবেক স্ত্রীর গুলশানের বাসায় তল্লাশির নামে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে জাতীয়তাবাদী চালক দল কেন্দ্রীয় কমিটির স্বঘোষিত সভাপতি জুয়েল খন্দকারসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও হামলা-লুটপাটের অভিযোগে মামলা হয়েছে।
সোমবার (১০ মার্চ) ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ছানাউল্ল্যাহর আদালতে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক ইলতুৎমিস সওদাগর অ্যানি মামলার আবেদন করেন।
আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে গুলশান থানার ওসিকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।
জুয়েল খন্দকারের পাশাপাশি তার সহযোগী শাকিল খন্দকার ও জসিম উদ্দিনকে এ মামলার আসামি করা হয়েছে। তারা তিনজনই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী মো.
এ বিষয়ে মামলার বাদী ইলতুৎমিশ সওদাগর এ্যানি বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নির্দেশে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সুনাম ক্ষুণ্ন করতে কথিত জাতীয়তাবাদী দলের নামে বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছিল অভিযুক্তরা। এ বিষয়ে অবগত হওয়ার পর দলীয় সিদ্ধান্তে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, জাতীয়তাবাদী চালক দল নামে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কোনো অঙ্গসংগঠন নেই। আসামিরা গত ৪ মার্চ তাদের মনগড়া কাহিনী তৈরি করে প্রয়াত এইচ টি ইমামের ছেলে তানভীর ইমামের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর বাসায় অনধিকার ও বেআইনি অনুপ্রবেশ করে ব্যাপক লুটপাট চালায়। এ খবর দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
আসামিরা একটি ভুয়া সংগঠন জাতীয়তাবাদী চালক দল জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজন করে এই ব্যানারে তারা বিভিন্ন জায়গায় বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও লুটপাট চালাতে থাকে। প্রতারণামূলকভাবে ভুয়া দল সৃষ্টি করে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে তৎপর এই স্বঘোষিত ভুয়া দল। বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের পরামর্শে এই মামলা দায়ের করা হল।
এর আগে গত ৪ মার্চ রাতে এইচ টি ইমামের ছেলে তানভীর ইমামের সাবেক স্ত্রীর গুলশানের বাসায় ১৫ জন আকস্মিকভাবে বে-আইনি জনতাবদ্ধভাবে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর ও তছনছ করে। এ সময় আসামিরা আলমারি ভেঙে ২টি স্বর্ণের চেইন ও ১টি স্বর্ণের পায়েল, ১টি হাতের আংটিসহ মোট ২ ভরি আট আনা স্বর্ণ নেন। যার মূল্য ৩ লাখ টাকা। ওই ঘটনায় ওই বাসার কেয়ারটেকার আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন।
ঢাকা/মামুন/এনএইচ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ধর্ষণ মামলায় আসামিপক্ষে দাঁড়ানো নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে ‘ছাত্র–জনতার সংঘর্ষ’, আহত ৪
ধর্ষণ মামলায় আসামিপক্ষে আইনজীবী দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে জামালপুরে ‘ছাত্র–জনতার’ সঙ্গে আইনজীবী ও তাঁদের সহকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় ছাত্র, আইনজীবীসহ চারজন আহত হয়েছেন। আজ সোমবার দুপুরে জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে।
আহত ব্যক্তিরা হলেন আইনজীবী খলিলুর রহমান, ছাত্র মো. হৃদয় (২২), মো. তারেক (২২) ও মোহাম্মদ মোয়াজ (১৯)। তাঁদের মধ্যে খলিলুর রহমান জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে চলে যান। তবে ওই তিন ছাত্র হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। আহতরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা জানিয়েছেন।
আইনজীবী, পুলিশ ও ছাত্র সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ধর্ষণকারীর পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াতে পারবেন না—এমন দাবিতে আজ দুপুর ১২টা থেকে জামালপুর আদালত প্রাঙ্গণে ‘সচেতন ছাত্র–জনতার’ ব্যানারে বিক্ষোভ শুরু করেন ২০–৩০ জন ছাত্র। দীর্ঘ সময় ধরে আদালত প্রাঙ্গণে তাঁরা ওই কর্মসূচি পালন করছিলেন। দুপুর দেড়টার দিকে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তাঁদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে কথা বলার জন্য যান। এ নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে তাঁদের কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে চারজন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোহাম্মদ মোয়াজ বলেন, ‘আমরা সবাই জুলাইয়ের আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম। অনেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা শাখার সঙ্গে আছি আবার অনেকের পদ নেই। তবে সবাই একসঙ্গে যেকোনো আন্দোলন করি। একজন ধর্ষণের শিকার নারীর পক্ষে আমরা দাঁড়িয়েছি। বাক্ ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ওই মামলার আসামিকে বাঁচাতে একজন আইনজীবী জাল-জালিয়াতিও করছেন। আমরা গিয়েছিলাম যাতে ধর্ষণের শিকার নারীরা সঠিক বিচার পান। কিন্তু আইনজীবী ও তাঁদের সহকারীরা আমাদের বেধড়ক পিটিয়েছেন। আমার সারা শরীরে লাঠির আঘাত।’
এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রিশাদ রেজওয়ান বলেন, আন্দোলনকারীদের কথা শোনার জন্য আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে আসার অনুরোধ করা হয়েছিল। সেখানে বসে সবকিছুর সমাধান করার কথা ছিল। কিন্তু এই সময়টুকু তাঁরা দেননি। এর মধ্যেই জ্যেষ্ঠ একজন আইনজীবীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। আরও একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। অন্য আরেকজন আইনজীবীকে তাঁরা অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে আদালত প্রাঙ্গণে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যায়। একজন আইনজীবী যেকোনো মামলা পরিচালনা করতে পারেন। এ ঘটনায় আলোচনার মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক মীর ইসহাক হাসান বলেন, ‘ছাত্র–জনতার ব্যানারে ওই আন্দোলন চলছিল। তাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিতে না থাকলেও জুলাই আন্দোলনে তাঁরা অংশ নিয়েছিলেন। তাঁরা আদালতে গিয়েছিলেন ধর্ষণের শিকার নারীরা যাতে সহজেই আইনি সহায়তা পান এবং আসামিরা যাতে আইনজীবীদের সহায়তা না পান। ওই বিষয়টি নিয়ে আন্দোলন করার সময় আইনজীবী ও তাঁদের সহকারী এবং বহিরাগত ব্যক্তিরা ছাত্র–জনতার ওপর ন্যক্কারজনক হামলা করেন এবং ব্যাপক মারধর করেন।’
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও আইনজীবী শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন বলেন, ওই ধরনের ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে উপস্থিত হন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থার দিকেই আগানো হবে।
জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াহিয়া আল মামুন বলেন, আজকে আদালত প্রাঙ্গণের ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। ঘটনাটি তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।