সোনারগাঁয়ে মসজিদ কমিটির সহ-সেক্রেটারিকে কুপিয়ে যখম
Published: 10th, March 2025 GMT
সোনারগাঁয়ে মোফাজ্জল হোসেন (৪৮) নামের একজন মসজিদ কমিটিকে কুপিয়ে যখম করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। মারাক্তক আহত অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়েছে। রবিবার রাতে উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের চোত্রাপাশা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানাযায়, উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়ন চোত্রাপাশা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের কমিটি ১৫ বছর পর পরিবর্তন করার ক্ষোপে নতুন কমিটির সহ-সেক্রেটারি মোফাজ্জলের উপর হামলা করেছেন ফ্যাসিবাদ আওয়ামীলীগের দোসর আজমাঈল খন্দকারের নেতৃত্বে পূর্বে পরিকল্পিত ভাবে ছাত্রলীগ নেতা শফিকুল খন্দকার, সাদিকুর খন্দকারসহ ৪/৫ জনের একটি সন্ত্রাসী দল দেশীয় অস্ত্র সজ্জা সজ্জিত হয়ে মোফাজ্জলের উপর হামলা করে পিটিয়ে ও কুপিয়ে মারাক্তক জখম করেন। এসময় তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করেন।
আহত মোফাজ্জল হোসেন জানান, রবিবার সন্ধ্যায় মাগরিব নামাজ শেষে চোত্রাপাশা খেজুর তলা দোকানে গেলে আমার উপর হামলা করেন তারা। আমি হামলার ন্যায় বিচার দাবি করেন তিনি।
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বারী জানান, হামলার ঘটনায় অভিযোগ নেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স ন রগ ও ন র য়ণগঞ জ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ছড়া লিখে কড়া শাস্তির মুখে ওয়াসা কর্মকর্তা
ছড়া লিখে কড়া শাস্তির মুখে পড়েছেন ঢাকা ওয়াসার কমন সার্ভিস বিভাগের উপসচিব শহিদুল ইসলাম। গত মঙ্গলবার তাঁকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে এবং উপব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার (প্রশাসন) দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও হয়েছে।
শহিদুল ইসলাম নিজের লেখা একটি ছড়া তাঁর ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন। ছড়ার বিষয় ছিল রাজধানীর আলোচিত সেই ঈদ শোভাযাত্রার নাসিরুদ্দিন হোজ্জা, যিনি গাধার পিঠে উল্টো দিকে ফিরে বসেছিলেন। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এই শোভাযাত্রা আয়োজন করে। হোজ্জারূপী ওই চরিত্রটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা হয়।
শহিদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘লেখালেখি পুরোনো অভ্যাস। এর দু-একটি ফেসবুকে শেয়ারও করি। ঈদের পর একটি ছড়া লিখে ফেসবুকে দিয়েছিলাম। হঠাৎ মঙ্গলবার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমাকে তাঁর কক্ষে ডেকে পাঠান। সেখানে গেলে জিজ্ঞেস করেন, ছড়াটি আমার লেখা কিনা? হ্যাঁ-সূচক জবাব দিলে, কেন লিখেছি জানতে চান তিনি। আমি স্যারকে বলি, অভ্যাস থেকে মাঝেমধ্যে একটু-আধটু লেখালেখি করি। ছড়াটি বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে লিখিনি।’
শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এর পর এমডি স্যার বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নিয়ে নির্দেশনা রয়েছে। সেখানে কী লেখা যাবে, আর যাবে না– তা উল্লেখ রয়েছে। আমি বলি, স্যার, আমি তো কাউকে উদ্দেশ করে লিখিনি। ছড়াতে অপরাধ কী হয়েছে, তাও বুঝতে পারছি না।’
শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিকেলে অফিস ছাড়ার সময় একটি অফিস আদেশ আমাকে দেওয়া হয়। সেখানে দেখি, আমাকে ওএসডি করা হয়েছে।’
ছড়া লেখায় কর্মকর্তাকে ওএসডি করার খবরে ঢাকা ওয়াসায় নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে তা গণমাধ্যমের নজরে আসে। কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি চাকরি করে অনেকেই সাহিত্যচর্চা করছেন। অতীতে অনেক কবি-সাহিত্যিক সরকারি চাকরিজীবী হয়েও ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে কবিতা, গল্প ও গান লিখেছেন। কিন্তু শহিদুল ইসলামের নিছক রসাত্মক ছড়াকে পুঁজি করে এমন শাস্তি দেওয়া ঠিক হয়নি।
জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফজলুর রহমান সমকালকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবী কী লিখতে পারবেন, কী পারবেন না, সে নিয়ে নির্দেশনা রয়েছে। তাঁর লেখা ছড়ায় সে নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটেছে বলে মনে হয়েছে। ওয়াসা সচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। দেখা যাক, কমিটি কী প্রতিবেদন দেয়।
ছড়ায় যা আছে
নাসিরুদ্দিন হোজ্জা
পেয়ো নাকো লজ্জা
ঘোড়ায় চড়িয়া তুমি হাঁটিয়া চলো
রসিকতায় শত কথা সত্যি বলো
গাঁধা নাকি ঘোড়া সে
কি করে কে বলে যে
গাঁধা হাঁটে চার পায়ে টগবগ
তোমার মত নয় সে অযথাই বকবক
কেউ বলে তুর্কি কেউ বলে ইরানী
কখনও কি স্বাদ পেলে সুলতানী বিরানী
ঈদ এলে হেঁটেছ কি মুঘলের ঢাকাতে
কাণ্ড কি ঘটিয়েছ অযথাই হাসাতে
বহুকাল বাদে আজ তুমি দেখা দিলে
ঢাক ঢোলের তালে তালে
গাঁধার পশ্চাতে মুখ করে চলিলে উল্টো
আজব এক ঈদ গেলো ঘটনাটি ভুল তো?
যাই হোক জানি কম নাসিরুদ্দিন হোজ্জা
এতে তুমি পেয়ো না গো এতটুকু লজ্জা।
শহিদুলের ছড়াটি পড়ার পর কবি মোহন রায়হান সমকালকে বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি বাকস্বাধীনতা ও স্বাধীনভাবে লেখালেখি করার জন্য। বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতায় এসেছে, সমালোচনা সহ্য করতে পারেনি। ছড়াটিতে সরকারের সমালোচনা আছে বলে মনে হয়নি। বরং গাধার পিঠে নাসিরুদ্দিন হোজ্জাকে যে অবয়বে তুলে ধরা হয়েছে, তা জামায়াতের এক নেতার প্রতিকৃতি মনে হতে পারে।’
একসময় আবু করিম নামে এক কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক লেখা লিখেছিলেন। পরে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের পিএস হয়েছিলেন। যদিও শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হলে আবু করিমকে চাকরিচ্যুত করেন।
মোহন রায়হান বলেন, ‘আমি মনে করি না শহিদুলের এ ছড়ার মধ্যে এমন কিছু আছে, যার জন্য তাঁর পেশাগত জীবনে কোনো শাস্তি আরোপ হতে পারে। বরং শাস্তি দিলে তাঁর সৃষ্টিশীলতা বাধাগ্রস্ত হবে।’