সিএমএইচে চিকিৎসাধীন শিশুটি লাইফ সাপোর্টে
Published: 10th, March 2025 GMT
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটি বর্তমানে লাইফ সাপোর্টে আছে। তার বর্তমান শারীরিক অবস্থা জানিয়ে সোমবার (১০ মার্চ) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিশুটিকে (৮) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকাকালে গত ৮ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় তাকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে ভর্তি করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ওই সময় শিশুটি সম্পূর্ণ অচেতন অবস্থায় ছিল। তখন তার রক্তচাপ ১২০/৭০ মি.
রোগীর যথাযথ অবস্থার নিরূপণ এবং সঠিক চিকিৎসা প্রদানের নিমিত্তে কমান্ড্যান্ট সিএমএইচ ঢাকা, চিফ সার্জন জেনারেল, উপদেষ্টা ও বিভাগীয় প্রধান শিশু বিভাগ, উপদেষ্টা ও বিভাগীয় প্রধান স্ত্রী ও ধাত্রী বিদ্যা বিভাগ, উপদেষ্টা ও বিভাগীয় প্রধান প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ, উপদেষ্টা ও বিভাগীয় প্রধান শিশু সার্জারি বিভাগ, সিনিয়র অ্যানেস্থিশিয়া বিশেষজ্ঞ, সিনিয়র শিশু নিউরোলজিস্টের সমন্বয়ে উচ্চ পর্যায়ের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিটি স্ক্যান অব অ্যাবডেমেন, চেস্ট অ্যান্ড ব্রেইন, ইউজিএস অব অ্যাবডোমেন, চেস্ট এক্সরে এবং রক্তের প্রয়োজনীয় পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষা করে যথাযথ চিকিৎসা শুরু করা হয়।
পরীক্ষায় শিশুটির Pneumothrox (RT) এবং ARDS এবং Diffuse Cerebral Edema ধরা পড়ে এবং একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করা হয়। প্রতিদিন স্ট্যান্ডার্ড আইসিইউ প্রটোকল অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং তদানুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে শিশুটি লাইফ সাপোর্টে আছে।
গত ৫ মার্চ শিশুটি মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়।
ঢাকা/হাসান/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট পর ক ষ অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
মাগুরার সেই শিশুটির মা বললেন, ‘ইশ্! ক্যান যে পাঠাইছিলাম’
মাগুরার সেই শিশুটির মা বলছিলেন, আগের দিন (মঙ্গলবার) তাঁর মেয়ে ফোনে কান্নাকাটি করে বোনের বাসা থেকে নিজের বাসায় চলে আসতে চেয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, আর দুইটা দিন থাকতে। তারপর নিয়ে আসবেন। এখন তাঁর একটাই আপসোস। বললেন, ‘ইশ্! ক্যান যে পাঠাইছিলাম!’
ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) শিশু বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (পিআইসিইউ) সামনে দাঁড়িয়ে হাহাকার নিয়ে এই প্রতিবেদককে কথাগুলো বলছিলেন মাগুরার সেই শিশুর মা। আজ রোববার কথা হচ্ছিল তাঁর সঙ্গে।
বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের ওই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন শিশুটির মা। মামলায় শিশুটির ভগ্নিপতি, বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়েছে।
আরও পড়ুনবোনের স্বামীর সহায়তায় শিশুটিকে ধর্ষণ করেন শ্বশুর, মামলার এজাহারে অভিযোগ২১ ঘণ্টা আগেঅচেতন অবস্থায় শিশুটিকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সংকটাপন্ন শিশুটিকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিআইসিইউ থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিএমএইচের পিআইসিইউর সামনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন স্বজন এসেছেন শিশুটিকে দেখতে। সঙ্গে শিশুটির মা–ও ছিলেন। সিএমএইচের একজন কর্মকর্তা স্বজনদের বুঝিয়ে বলছিলেন, ‘ওর ইনফেকশন অনেক বেশি। আপনারা দেখতে গেলে ওর ক্ষতিই হবে। আপনারা দোয়া করেন, আল্লাহ সুস্থ করে দিলে দেখতে পারবেন।’
স্বজনেরা চলে যাওয়ার পর শিশুটির মায়ের মুঠোফোনে একের পর এক ফোন আসছিল। মা উদ্বিগ্ন কণ্ঠে কথা বলছিলেন। হাঁটাহাঁটি করছিলেন।
প্রথম আলোকে শিশুটির মা বলেন, ‘মেয়ের কষ্ট আর সহ্য করতে পারছি না। আপনাকে ছবি তুইলা দেখাতে পারলে বুঝতে পারতেন কী কষ্ট পাচ্ছে! আল্লাহর কাছে মেয়ের দাবি ছাইড়া দিছি।’
আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা, বোনের স্বামী-শ্বশুরসহ গ্রেপ্তার ৪০৮ মার্চ ২০২৫শিশুটির মা আরও বলেন, তাঁর স্বামী কৃষক ছিলেন। ৯ মাস আগে গ্রামে একটা মারধরের ঘটনায় স্বামীর মাথায় লাঠির আঘাত লাগে। এর পর থেকে তিনি গুরুতর অসুস্থ। মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে।
শিশুটির মা আরও জানান, স্বামীর অসুস্থতা ও অনটনের কারণে বড় মেয়েকে গত নভেম্বর মাসে বিয়ে দেন। মেয়ের বয়স ১৪ বছর। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। এরপরের মেয়েটির বয়স ৯ বছর। সবচেয়ে ছোটটি ছেলে, বয়স আড়াই বছর। তিনি বলেন, ‘মেয়ে বোনের বাসায় যেতে চাইছিল না। জোর করে পাঠাইছিলাম। যদি না পাঠাইতাম তাহলে এই অবস্থা হতো না।’
বড় মেয়ে তাঁর শ্বশুরের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আগেও করেছিলেন বলে জানান এই মা। তিনি বলেন, ঘটনার আগের দিন মেয়ে ওর বড় বোনের কাছে বলেছিল, বোনের শ্বশুর তাকে খারাপভাবে স্পর্শ করেছে। এটা নিয়ে মেয়ে তাঁর স্বামীকে বলে উল্টো মারধরের শিকার হন।
মা বলেন, শ্বশুর-জামাতা দুজনের চরিত্রই খারাপ। এটা আগে জানলে তিনি বিয়ে দিতেন না। হাসপাতালে এখন মেয়ের সঙ্গে তিনিই থাকছেন। মেয়ের সুস্থতার জন্য তিনি সবার কাছে দোয়া চান। ধর্ষকদের যেন সর্বোচ্চ সাজা হয়, সেটা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশুটি এখনো অচেতন। তার অবস্থা অস্থিতিশীল ও সংকটাপন্ন। শিশুটিকে সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা চলছে।
আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক, শরীরে পাশবিক নির্যাতনের ক্ষত: চিকিৎসক০৮ মার্চ ২০২৫সিএমএইচের প্রধান সার্জনকে প্রধান করে আটজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়ে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডে রয়েছেন সার্জিক্যাল বিশেষজ্ঞ, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, প্লাস্টিক সার্জন, শিশু নিউরোলজি বিভাগ, অ্যানেসথেসিয়া, শিশু হৃদ্রোগ বিভাগ, শিশু বিভাগের সার্জন, ইউরোলজি বিভাগ, থোরাসিক সার্জন বিভাগের চিকিৎসকেরা।
ওই বোর্ডের একজন চিকিৎসক সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটির যৌনাঙ্গে ক্ষত রয়েছে। গলায় বড় ক্ষত। ওড়নাজাতীয় কিছু দিয়ে শিশুকে ফাঁস দেওয়া হয়েছিল এবং বুকে প্রচণ্ড জোরে চাপ দেওয়া হয়েছিল। মস্তিষ্কে অক্সিজেন কমে গেছে। বুকের ওপর চাপ দেওয়ার কারণে ফুসফুসের যেসব জায়গায় বাতাস থাকার কথা না, সেসব জায়গায় বাতাস ঢুকে গেছে। আজ সকালে বুকে অস্ত্রোপচার করে অতিরিক্ত বাতাস বের করার জন্য টিউব বসানো হয়েছে। অক্সিজেন স্বল্পতাজনিত কারণে মস্তিষ্কে ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে খিঁচুনি হচ্ছিল।
ওই চিকিৎসক আরও বলেন, শিশুটি এখনো অচেতন। মস্তিষ্কের ক্ষতি কমাতে ওষুধ দেওয়া হয়েছে। এখন খিঁচুনি নেই। তবে রক্তে সংক্রমণ অনেক বেশি। শিশুটির রক্তচাপ ধরে রাখা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে শিশুটির অবস্থা অস্থিতিশীল ও সংকটাপন্ন।
পুলিশ ও শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে যান। ওই দিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শুক্রবার রাতে শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। পরদিন শনিবার সন্ধ্যায় সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়।
আরও পড়ুনঅচেতন অবস্থায় উদ্ধার শিশুটির বোন ঢাকা থেকে মাগুরায়, মামলা হয়নি০৮ মার্চ ২০২৫শিশুটির মা বাদী হয়ে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেছেন। মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(৪) এর ক/৩০ ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, চার মাস আগে মাগুরা পৌর এলাকার এক তরুণের সঙ্গে শিশুটির বড় বোনের বিয়ে হয়। ওই বাড়িতে বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুর থাকতেন। বিয়ের পর থেকে বড় মেয়েকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন তাঁর শ্বশুর। বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যরা জানতেন। এ নিয়ে ঝগড়াও হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ১ মার্চ বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায় আট বছরের শিশুটি।
এজাহারে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাদী উল্লেখ করেন, গত বুধবার (৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে খাবার খেয়ে বড় বোন ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে একই কক্ষে ঘুমায় শিশুটি। দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বড় বোন ঘুম থেকে জেগে দেখেন, ছোট বোন পাশে নেই, মেঝেতে পড়ে আছে। তখন শিশুটি বড় বোনকে জানায়, তার যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়া হচ্ছে। কিন্তু বড় বোন মনে করে, শিশুটি ঘুমের মধ্যে আবোলতাবোল বকছে। এরপর সকাল ছয়টার দিকে শিশুটি আবার বোনকে যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়ার কথা বলে। কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে বোনকে জানায়, রাতে দুলাভাই (বোনের স্বামী) দরজা খুলে দিলে তাঁর বাবা (শ্বশুর) তার মুখ চেপে ধরে তাঁর কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করেন। সে চিৎকার করতে গেলে তার গলা চেপে ধরা হয়। পরে তাকে আবার বোনের কক্ষের মেঝেতে ফেলে রেখে যায়।
আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুটি এখন লাইফ সাপোর্টে ০৭ মার্চ ২০২৫এজাহারে আরও বলা হয়, ঘটনা জানার পর শিশুটির বড় বোন তাঁর মাকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানাতে গেলে তাঁর স্বামী মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে তাঁকে মারধর করেন। এ কথা কাউকে বললে শিশুটিকে হত্যার হুমকি দেন এবং তাদের দুই বোনকে আলাদা দুটি কক্ষে আটকে রাখেন। সকালে এক নারী প্রতিবেশী বাড়িতে এলে বোনের ভাশুর দরজা খুলে দেন। তখন শিশুটির মাথায় পানি দিয়ে সুস্থ করানোর চেষ্টা করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিশুটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে বোনের শাশুড়ি অন্য প্রতিবেশীদের সহায়তায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে মেয়েটিকে জিনে ধরেছে বলে চিকিৎসকদের জানান। তবে চিকিৎসক ও অন্যরা বিষয়টি টের পেলে শাশুড়ি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। পরে বাদী হাসপাতালে যান।