বাংলাদেশে ঋণখেলাপির পরিমাণ বাড়ছে এবং সামগ্রিক বিবেচনায় প্রায় নব্বই দশকের আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। এই বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কেউ বাণিজ্যিক ব্যাংকের দুর্বল ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন, কেউ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যথাযথ নজরদারির অভাবকে, আবার কেউ বৃহৎ ঋণগ্রহীতা বা ঋণখেলাপিদের প্রতি রাজনৈতিক সরকারের আনুকূল্যকে। খেলাপি ঋণের দৈন্যদশায় ইতিমধ্যে সম্পাদিত আর্থিক খাতের সংস্কারগুলোর কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
ইতিমধ্যে বারবার বলা হয়েছে, আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ। এই খেলাপি ঋণ দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত একটি সমস্যা। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে ঋণগ্রহীতার কারণে যেমন কোনো ঋণ খেলাপি হয়, তেমনি ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে কোনো কোনো ঋণ খেলাপি হতে পারে। খেলাপি ঋণের এই বৃদ্ধিকে ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা একটি অশনিসংকেত হিসেবেই দেখছেন।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ আরও বেড়েছে। গভর্নর বলেছেন, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে লুকিয়ে রাখা খেলাপিগুলো বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। ২৬ ফেব্রুয়ারি গভর্নর এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে মোট ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, এই সময়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকে মোট বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের হার কিছুটা বেড়েছে। সেদিক থেকে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি অবশ্যই উদ্বেগজনক।
খেলাপি ঋণ একটি বড় সমস্যা, সন্দেহ নেই। ব্যাংকিং খাতের আরও বড় সমস্যার অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ। এটি এমন একটি সমস্যা, যা ধামাচাপা দিয়ে রাখার কোনো সুযোগ নেই। এত দিন এই সমস্যা আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে, যার ফলে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আবার ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা এবং ব্যাংকগুলোর কিছু পদস্থ কর্মকর্তা, মালিক আর দুষ্ট ঋণগ্রহীতার অনৈতিক যোগসাজশের কারণে ঋণের নিরাপত্তা চিন্তা না করেই অনেক ঋণ দেওয়া হয়েছে। ‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’র মতো অনেক ঘটনাও ঘটেছে।
দেশের আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা রক্ষার তাগিদে অবিলম্বে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির এই প্রবণতা রোধ করা প্রয়োজন। কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যেন পরিকল্পিতভাবেই ঋণখেলাপি হয়ে যাচ্ছে।
অনেকে ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের টাকা পুরোটাই লোপাট করতে চাইছেন কিংবা করেছেন। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি, দুর্নীতির মাধ্যমে গৃহীত ঋণখেলাপি, ঋণ জালিয়াতিসহ নানা ঘটনা, যা আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে গেছে। আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ছদ্মবেশী খেলাপি ঋণ একটি মারাত্মক সমস্যা। এখানে ভালো ঋণের অন্তরালে যে পরিমাণ খারাপ ঋণ ছদ্মবেশে আছে, তার পরিমাণ নেহাত কম নয়। এই ছদ্মবেশী খেলাপি ঋণ মূলত খেলাপি ঋণ। নানা রকম নিয়মের ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে, বিশেষ করে তথাকথিত পুনঃ তফসিলের সুযোগ নিয়ে এসব নিম্নমানের ঋণকে ভালো ঋণ হিসেবে দেখিয়ে বা ‘উইন্ডো ড্রেসিং’ করে দুই ধরনের ক্ষতি সাধন করা হয়ে থাকে।
৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর কৌশলে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণের তথ্য বের হয়ে আসছে। এ ছাড়া অবলোপন, পুনঃ তফসিল ও আদালতে চলমান মামলার ঋণের পরিমাণ যুক্ত হলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়বে। অনেকে বলছেন, এটি ৫ লাখ কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যেতে পারে; বিশেষ করে আগামী মাসের ১ তারিখ থেকে ঋণ শ্রেণীভুক্তকরণের নীতিমালা আরও কঠিন বা আন্তর্জাতিক নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হলে।
আমরা মনে করি, খেলাপি ঋণসংক্রান্ত অনিয়মগুলো বন্ধ করে দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ সন্তোষজনক পর্যায়ে কমিয়ে আনতে হলে দেশের ব্যাংকিং খাতে ঋণ প্রদান এবং ঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আমূল কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে। এগুলোকে আধুনিক এবং প্রযুক্তিনির্ভর করে তুলতে হবে। খেলাপি ঋণের সমস্যা সমাধানে সরকার ও সব অংশীজনের সমন্বয়ে বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনাও প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে একটি কথা জোরের সঙ্গে বলতে হয়—ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নিয়মানুবর্তিতা আনতে হলে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতে জবাবদিহি আনতে হবে। দুষ্ট ঋণগ্রহীতাদের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া উচিত নয়। অন্যদিকে ঋণ কেন এবং কার কারণে মন্দ হয়, তার গভীরে গিয়ে বিশ্লেষণ করার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
মামুন রশীদ ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঋণখ ল প র বর ত আম দ র সমস য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নারী নির্যাতন, বিচারহীনতা ও সরকারের অস্পষ্ট অবস্থান
মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণের বীভৎস ঘটনা যে কোনো বিবেকবান মানুষকে হতবুদ্ধি করে দেয়। বিকৃতির কোন পর্যায়ে আপন ঘরেই শিশু পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে পারে! দেশে ধর্ষণের ঘটনা নতুন নয়, সারাদেশ তোলপাড় করা বেশ ক’টি ধর্ষণের ঘটনার কথা এক নিঃশ্বাসে আমরা বলতে পারি। পূর্ণিমা, তনু, মুনিয়া... বিভিন্ন সময়ে আলোড়ন-জাগানিয়া এসব ধর্ষণকাণ্ডের একটিরও যথার্থ বিচার হয়নি। ধর্ষণের শিকার অগণিত নারী-শিশুর খবর পত্রিকার পাতা পর্যন্ত আসেও না।
অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির সমান্তরালে বেড়েছে নারী নির্যাতন। নারী ও শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন, দলবদ্ধভাবে হেনস্তা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বিদ্যালয় ও সড়ক-মহাসড়কে সজোর প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। রোববার মধ্যরাতে রোকেয়া হলের ছাত্রীরা রাজপথে বেরিয়ে এসে প্রতিবাদের ঝড় তোলে, গড়ে ওঠে ‘ধর্ষণবিরোধী প্রতিবাদ মঞ্চ’; দাবিদাওয়ার মুখে সরকারের উপদেষ্টাদের আপাত সরব দেখা যায়।
সোমবারের (১০ মার্চ, ২৫) সমকাল ও প্রথম আলোর কয়েকটি শিরোনাম: দিনের পর দিন ধর্ষণ, মুক্তি মেলেনি মায়ের মৃত্যুতেও; কেরানীগঞ্জে অন্তঃসত্ত্বাকে দলবদ্ধ ধর্ষণ; শেরপুর ও কুমিল্লায় ধর্ষণের শিকার শিশু, দুই বৃদ্ধ গ্রেপ্তার; সেই শিশুর বুকে বসানো হলো টিউব, জ্ঞান ফেরেনি চার দিনেও; ধর্ষণ থামছে না, ফেব্রুয়ারিতে দিনে গড়ে ১২টি মামলা; শিশুটি কান্নাকাটি করে বোনের বাসা থেকে চলে আসতে চেয়েছিল; ৩ শিশু ধর্ষণের শিকার, অন্তঃসত্ত্বা নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ। দেশের প্রধান দুটি দৈনিকের প্রথম পাতায় এক দিনের শিরোনাম দেখে মনে হয়, এই দেশে অন্ধকার যুগ চলছে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে যখন নারীরা রাস্তায় প্রতিবাদমুখর; তখন আনাচে-কানাচে নারী নিপীড়নের মাত্রা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
২.
সাম্প্রতিক দুটি নারী নির্যাতনের ঘটনা মনে করা যাক। লালমাটিয়ায় চায়ের দোকানে দুই নারীকে সিগারেট খাওয়ার ‘অপরাধে’ মারধর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ওড়না না পরার কারণে কর্মচারীর ‘সবক’। দুই ক্ষেত্রেই ‘তৌহিদি জনতা’ দৃশ্যপটে হাজির। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ‘সবকদাতা’ কর্মচারীর মুক্তির দাবিতে ‘তৌহিদি জনতা’ শাহবাগ থানাও ঘেরাও করে। পরদিন জামিনপ্রাপ্ত নারী উত্ত্যক্তকারীকে ফুলের মালা ও পাগড়ি পরানো হয়।
নারীর পোশাক নিয়ে সমালোচনার অন্ত নেই। এমনকি নারী টিপ দিল কেন, ঘোমটা নেই কেন– এসব নিয়েও সমালোচনামুখর অনেকে। এসব আচরণ আমাদের সমাজে নারী নির্যাতনের অন্তর্ভুক্ত নয়। অথচ পোশাক বা সাজসজ্জার জন্য প্রতিবন্ধকতায় পড়াই তো বড় নারী নির্যাতন! এই নির্যাতন লাগাতার চলেছে; ওয়াজ মাহফিলে, সামাজিক মাধ্যমে, উগ্রবাদী দলের সভায় নারীর চলন-পোশাক ‘ঠিক’, ‘বেঠিক’ রায় দেওয়া হচ্ছে। এমন ভাষা ও ভঙ্গিমায় বর্ণনা করা হচ্ছে, যেন নারী পণ্যমাত্র, তাঁকে ‘সঠিকভাবে পরিবেশন’ করতে হবে! এই দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিবেশনা নারীর স্বাভাবিক বিকাশের অন্তরায় কেবল নয়, নারীর প্রতি সহিংস সমাজ ও প্রতিবেশ গড়ে তোলায় ভূমিকা রাখছে।
৩.
৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে দুঃশাসক আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিষ্ঠার পর সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতি সংবেদনশীল আচরণ ন্যূনতম প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে আমরা দেখি মাজার ভাঙা, মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনা ভাঙা, ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর চূর্ণ-বিচূর্ণ করা, স্থাপত্য-ভাস্কর্য ভাঙা– সবকিছুতেই নির্বিকার ও নির্লিপ্ত সরকার। তারপর নারীর প্রতি একের পর এক রুচিহীন আক্রমণ। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর হোসেন লালমাটিয়ায় দুই নারীকে প্রহারের পর বলেন, ‘উন্মুক্ত স্থানে নারী বা পুরুষ যে কারও জন্য সিগারেট খাওয়া অপরাধ।’ হা হতোস্মি! যে দেশে উন্মুক্ত স্থানে প্রকাশ্যে যত্রতত্র পুরুষ মূত্রত্যাগ করে, সে দেশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলছেন এই কথা? পুরুষ তো পারলে অন্যের ঘাড়ের ওপরে দাঁড়িয়ে সিগারেট খায় এ দেশে। কী বলছেন তিনি? বুঝে বলছেন!
রাজধানীর গুলশানে বা যে কোনো শহরের অলিগলিতে কয়েকজন মিলে স্লোগান দিতে শুরু করে– ‘স্বৈরাচারের দোসরেরা/ হুঁশিয়ার সাবধান।’ তারপর ঢুকে যায় কারও তালাবদ্ধ বাড়িতে। তছনছ, ভাঙচুর, লুটপাট করে। তখন প্রশ্ন জাগে, দেশে সরকার বলতে কিছু আছে কিনা?
মব সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে অবস্থান স্পষ্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। মব সন্ত্রাসীরা নিতান্ত ছোট গোষ্ঠী, তারা এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও সাংস্কৃতিক চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে না। সরকারের কি ধারণা, মবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তাদের বৈধতা কমে আসবে? আশ্চর্যের বিষয়, সরকার তার শক্তি সম্পর্কেই জ্ঞাত নয়!
সরকারপ্রধান বারবার বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা কালো টাকা ব্যবহার করে সরকারের বিরুদ্ধে অস্থিরতায় ইন্ধন জোগাচ্ছে। না, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা। অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর সুযোগ নেই। ক্ষমতাচ্যুতরা সরকারের চেয়েও শক্তিশালী– একথা আপনি বললেও আমরা মানতে পারি না। দেশের ছাত্র-জনতার সমর্থনে আপনি দায়িত্ব নিয়ে কেন পতিত গোষ্ঠীকে এত সমীহ করবেন? ধর্মীয়, লিঙ্গীয় বা রাজনৈতিক পরিচয়ে এ দেশে মানুষে মানুষে নানা পার্থক্য থাকতে পারে। কেউ কারও সঙ্গে একমত না হতেই পারেন, কিন্তু কারও ওপর কেউ আক্রমণ করতে পারবে না। এই ন্যূনতম গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পক্ষে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেনি। তাদের দু-একজন উপদেষ্টা বরং দেশের ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে আপন আপন মতামত দিতে শুরু করেছেন। দেশের মুক্তিযুদ্ধকে কোথাও কোথাও তাতে খর্ব করার উৎসাহও আমাদের চোখে পড়ে। এসবই উগ্র ডানপন্থিদের সবল করার কসরত বলে মনে হয়।
রোববার রাতে প্রেস ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা সাম্প্রতিক নানা ঘটনা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, এখন থেকে তারা আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় জোর দেবেন। সাত মাস পর এ ধরনের মিনতি শঙ্কাজাগানিয়া। এতদিন তারা আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় কেন আরও উদ্যোগী হলেন না? আইন উপদেষ্টা ধর্ষণ মামলায় জামিন পাওয়ার অধিকার রাখবেন না জানিয়ে বলেছেন, এ মামলায় ৯০ দিনের মধ্যে বিচার হবে। তবে জামিন অযোগ্য মামলা হওয়ায় অপ্রয়োজনীয় মামলা বাড়বে কিনা, এদিকে জোর যেমন দেওয়া উচিত; তেমনি আইনি কাঠামো আরও সম্প্রসারণ ও জোরদার করবার প্রসঙ্গটিকেও তিনি গুরুত্ব দেবেন বলে প্রত্যাশা। তথ্য উপদেষ্টা একই ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘জনগণকে জানাতে চাই, যেখানেই মব জাস্টিস পরিস্থিতি হবে, সে যে-ই হোক না কেন, যে ধর্মের, লিঙ্গের, বর্ণের, জাতের হোন না কেন, আমরা এখন থেকে কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবো।’
তথ্য উপদেষ্টার কথাতেই পরিষ্কার, মব সন্ত্রাস নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের এতদিনকার অবস্থান স্পষ্ট ও দৃঢ় ছিল না। সরকারের অবস্থান সুস্পষ্ট থাকলে নারীর প্রতি সহিংসতাও বাড়ত না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখাতে হবে সরকারকে। যেহেতু নির্বাচনে দাঁড়ানোর প্রশ্ন নেই; তাই কারও মন জয় করবার বাড়তি তাগিদও থাকা উচিত নয় সরকারের। সে কারণে তার স্বজনপ্রীতিও থাকবার কথা নয়। আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় কঠোর হাতে সরকারের জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।
মাহবুব আজীজ: উপসম্পাদক, সমকাল ও সাহিত্যিক
mahbubaziz01@gmail.com