নির্বাচন নিয়ে বেশ কঠোর অবস্থান প্রকাশ করে বিচার এবং সংস্কারের সুস্পষ্ট রোডম্যাপের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, আমরা কিন্তু কড়ায় গণ্ডায় জবাবদিহিতা নেবো আমাদের বিচার কতটুকু আদায় হলো, সংস্কার কতটুকু আদায় হলো। বিচার ও সংস্কারের দাবিতে দ্রুতই রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছেন নাহিদ।

সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শহীদ পরিবার এবং আহতদের নিয়ে এনসিপির ইফতার মাহফিলে নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন। সম্প্রতি উপদেষ্টা পদ ছেড়ে তিনি ছাত্রদের নতুন দলের আহ্বায়ক হয়েছেন।

নাহিদ বলেন, বাংলাদেশে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড.

ইউনূস। তাকে আমরা আমন্ত্রণ-আহ্বান জানিয়ে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করেছিলাম, অন্যান্য উপদেষ্টাবৃন্দ রয়েছেন, সেনাপ্রধান রয়েছেন। তারা প্রত্যেকে কিন্তু কমিটমেন্ট দিয়েছিলেন মানুষের জানমালের নিরাপত্তা এবং বিচারের দায়িত্ব তারা নিচ্ছেন। ফলে এই কমিটমেন্ট থেকে কিন্তু তারা দূরে সরে যেতে পারবেন না, জনগণের সামনে কিন্তু দাঁড়াতে হবে। ফলে আমরা কিন্তু ‘কড়ায় গণ্ডায়’ জবাবদিহিতা নেবো আমাদের বিচার কতটুকু আদায় হলো, সংস্কার কতটুকু আদায় হলো।  

বিচারের আগে নির্বাচনের বিষয় উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, আমাদের বলা হচ্ছে, আমরা নাকি নির্বাচন পেছানোর রাজনীতি করছি। খুব পরিষ্কারভাবে পাল্টা আপনাদের বলতে চাই, আপনারা বিচার ও সংস্কার পেছানোর রাজনীতি করবেন না। বিচার ও সংস্কারের প্রতি ঐক্যমত পোষণ করুন, নির্বাচন আমরা আপনাদের করে দিতে সহায়তা করব।

তিনি বলেন, ফলে সরকারকে বলবো দ্রুত বিচার ও সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। কতদিনের মধ্যে কোন প্রক্রিয়ায় আমরা দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম দেখতে পারবো এবং দৃশ্যমান সংস্কার আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো, সেটার সুস্পষ্ট রোডম্যাপ অবিলম্বে ঘোষণা করতে হবে।

নাহিদ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনের জন্যে এত তাড়াহুড়ো করে, ভোট চাইতে গেলে কিন্তু সেই জবাবদিহিতা তাদের দিতে হবে। আমরা বলবো, বাংলাদেশে যে ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আমরা সেই ঐক্যমত্য ধরে রাখতে চাই।

নির্বাচনের বিরুদ্ধে নয় মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, আমরা কেউ নির্বাচনের বিরুদ্ধে না। বরং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব বলেই নিজেরা একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছি। কিন্তু আমরা বলছি বিচার সংস্কার এবং নির্বাচনের ক্ষেত্রে বলেছি গণপরিষদ নির্বাচন কারণ এই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই সংবিধান অকার্যকর ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে।  

নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা আপনাদের কাতারে নেমে এসেছি। আমরা নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছি। কারণ আমরা মনে করি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা সে আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য আমরা কারো উপর নির্ভর করতে চাই না, আমরা নিজেরাই মাঠে নেমে দাবি বাস্তবায়ন করতে চাই।

তিনি বলেন, শহীদ পরিবার এবং আহতসহ আমাদের সবার এই মুহূর্তে জরুরি দাবি- আমরা সবাই বিচার এবং সংস্কারের কথা বলছি। পাঁচ আগস্ট পরবর্তী এই নতুন বাংলাদেশে যে সরকার গঠিত হয়েছে এবং সামনে যারা রাজনীতি করতে চাচ্ছে- সবার ন্যায্যতা হচ্ছে শহীদ পরিবার এবং আহত যোদ্ধারা। ফলে তাদের মনের আকাঙ্ক্ষা আমাদের বুঝতে হবে।

নাহিদ বলেন, শহীদ পরিবার শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের খুনিদের আসামি করে শত শত মামলা করেছে। যদি এর বিচার ছাড়া আরেকটি সরকার চলে আসে তাহলে কী নিশ্চয়তা আছে, আওয়ামী লীগকে আবার এই বাংলাদেশে পুনর্বাসিত করা হবে না? অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোকে এবং সরকারকে পরিষ্কার করতে হবে আওয়ামী লীগের ফয়সালা কী হবে।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি পাঁচ আগস্ট বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট রাজনীতির আর কোনো জায়গা হবে না, হবে না, হবে না।

দ্রুতই রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়ে নাহিদ বলেন, আমরা সম্মিলিতভাবে বিচার সংস্কার এবং গণপরিষদ নির্বাচন আদায়ে খুব দ্রুতই আবার রাজপথে নামবো। জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে একটি সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়ে একটি নতুন সংবিধান জাতিকে উপহার দিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ।

ইসলাম ধর্মকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে মন্তব্য করে নাহিদ বলেন, আমরা কেউ নিজেরা আইন হাতে তুলে নিবো না। মব তৈরির রাজনীতির যে অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমাদের ধর্ম ইসলামকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা-ষড়যন্ত্র অনেক গ্রুপ করছে। আমরা সেগুলো প্রতিহত করব।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম র জন ত ন হ দ বল ন র জন ত ক আম দ র ব র কতট ক উপদ ষ ট সরক র ইসল ম আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্যাসিস্টদের দোসর বন্দরের আলী হোসেন প্রকাশ্যে

অপারেশন ডেভিল হান্ট চলাকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের দোসররা অনেকেই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছে, আবার অনেকে গ্রেপ্তার এড়াতে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

এমন পরিস্থিতিতে মুছাপুর ইউনিয়নে উপনির্বাচনে সাবেক এমপি সেলিম ওসমান মনোনীত প্রার্থী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর আলী হোসেন এখনো মুছাপুর এলাকায় বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এমন কি তিনি বিএনপির নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে এখন বিএনপি নেতা বনে যাওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি সেলিম ওসমান ক্ষমতায় থাকাকালে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ব্যাপকভাবে হস্তক্ষেপ করতেন। সেই ধারাবাহিতকায় সব শেষ বন্দর উপজেলা নির্বাচনে নগ্ন ভাবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমেছিলেন।

জনগণ তাকে ভোটের মাধ্যমে ভুল প্রমানিত করেছিলেন। পরবর্তীতে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন নিয়েও তিনি একইপন্থা অবলম্বন করে ছিলেন। মুছাপুরবাসীর মতামতকে উপেক্ষা করে তিনি নির্বাচনে আলী হোসেনকে নিজের প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে অন্যান্য প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকি দিয়ে ছিলেন।

গত বছরের ২৭ জুলাই বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের উপ নির্বাচন হবার কথা ছিলো। সে নির্বাচনে সাবেক এমপি সেলিম ওসমান মুছাপুরের ব্যবসায়ী আলী হোসেনকে সমর্থন দেন এবং বন্দর ইউনিয়নের বালুচরে পার্কে ব্যাপক আয়োজনের মাধ্যমে আলী হোসেন প্রার্থীতা ঘোষণা করেন। পাশাপাশি অন্যান্য প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ার হুমকি পর্যন্ত প্রদর্শন করেন।

তার কিছুদিন পর মদনপুর ফুট ওভার ব্রিজের নিকটে একটি মতবিনিময় সভায় সেলিম ওসমান আলী হোসেনকে সহায়তা করতে বন্দরের সকল ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি ও জনগণকে অনুরোধ জানান। 

আরো জানা গেছে, গত ছাত্র আন্দোলনে মদনপুরে পুলিশের লেগুনা পোড়ানোর ঘটনায় এই আলী হোসেন তৎকালীন সরকারের দোসরদের সাথে মিলে বন্দর থানায় ২টি মামলা করেন। মামলা নং-৩১ ও ৩২। যেখানে তার ইন্ধনে মুছাপুরের অনেক নিরিহ ব্যক্তিদেরকে আসামি করা হয়। 

মামলায় আসামি হওয়া ভূক্তভোগীরা জানান, আমরা কোন অপরাধের সাথে জড়িত না হয়েও আলী হোসেনের ইন্ধনে আসামি হয়ে হয়রানীর শিকার হয়েছি। সে ওসমান পরিবারের আস্থাভাজন কর্মী এবং স্বৈরাচারের দোসর।

নানান অপকর্ম করে এখনো সে ধরাছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে। ডেভিল হান্টের অভিযানে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে। তাই আলী হোসেনকে আইনের আওতায় নেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

একটি বিশ্বস্ত সূত্রে নিশ্চিত করেছে, গত ৫ আগস্টের পর আলী হোসেন নিজের রঙ বদলে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের বাসায় গিয়েও মিটিং করেন।

কিন্তু সেখানে খুব বেশি সুবিধা করতে না পারায় তিনি বর্তমানে মহানগর বিএনপির নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে জানা গেছে।

মুছাপুর ইউনিয়ন এলাকাবাসীর দাবি ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর এবং সাবেক এমপি সেলিম ওসমানের আর্শীবাদ পুষ্ট এই আলী হোসেনকে অচীরেই ডেভিল হান্ট অপারেশনের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে আইনে আওতায় আনা জরুরি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ