বছর কয়েক আগেও দেশীয় ওটিটি কনটেন্ট মানেই যেন অভিনেতা শ্যামল মাওলার উপস্থিতি। বলতে গেলে ওটিটি কনটেন্ট হলেই নির্মাতারা ভরসা করতেন শ্যামল মাওলাতে। এখন তো প্রত্যেক শিল্পীই ওটিটির কাজের প্রতি মনোযোগী। ওটিটির কাজের আগে নাটকেও নিয়মিত ছিলেন শ্যামল মাওলা। অথচ অভিনেত্রী সাবিলা নূরের সঙ্গে এই অভিনেতার কখনও কাজ করা হয়নি। তথ্যটি সাবিলার মুখ থেকেই জানা গেল।
সাবিলা নূরও সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তাঁর ওপরও নির্মাতারা চোখ বন্ধ করে ভরসা রাখতে পারেন। তারপরও তাদের একসঙ্গে কাজ হয়নি। এবার হয়েছে। তারা ‘মাকড়শা’ নামের একটি নাটকের মাধ্যমে জুটি হয়ে প্রথমবার কোনো কাজ করলেন। রেবেকা সুলতানা কেয়ার গল্পে নাটকটি পরিচালনা করেছেন রাগিব রায়হান পিয়াল।
নাটকটি নিয়ে সাবিলা বললেন, “মাকড়শা” নাটকটির শুটিং বেশ আগেই করা। আমাকে যখন নির্মাতা পিয়াল গল্পটা পাঠিয়েছেন তখনই আমার মনে হয়েছে এই কাজটির সঙ্গে আমার যুক্ত হওয়া উচিত। এরপর যখন আমাকে জানানো হয় এতে আমার বিপরীতে শ্যামল ভাইয়া কাজ করবেন। সেটা নিয়েও আমি বেশ এক্সাইটেড ছিলাম। কারণ ওনার সঙ্গে আগে কখনও আমার কাজ হয়নি। ওনার কাজ আমি দেখেছি। তাঁর অভিনয় আমার দারুণ পছন্দ। অবশেষে কাজটি শেষ হয়েছে। এতে আমি একজন হাউজওয়াইফের চরিত্র করেছি। যে চরিত্রটিতে নানা ভেরিয়েশন আছে।”
নামের মতোই নাটকটির গল্পেও সাসপেন্স আর থ্রিলারে ভরপুর বলে মন্তব্য করলেন নির্মাতা পিয়াল। এই ঈদুল ফিতরে নাটকটি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত হবে জানান নির্মাতা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন টকট
এছাড়াও পড়ুন:
স্বপ্ন ওড়ানো তরুণ জুলহাস
জুলহাস মোল্লা। গত ৪ মার্চ মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার যমুনার চরে হাজারো মানুষের সামনে নিজের হাতে তৈরি উড়োজাহাজ আকাশে উড়িয়ে তাক লাগিয়ে দেন এই তরুণ। পেশায় ইলেক্ট্রিক মেস্ত্রি জুলহাস কেমন করে তার এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করলেন সেই গল্প শুনেছেন বিপ্লব চক্রবর্তী
নিজের বানানো উড়োজাহাজ নিয়ে আকাশে উড়লেন মানিকগঞ্জের স্বপ্নবাজ তরুণ জুলহাস মোল্লা। স্থানীয় জাফরগঞ্জ এলাকায় যমুনা নদীর চরে নিজের তৈরি উড়োজাহাজে উড়ে বেড়াচ্ছেন এই তরুণ। তা দেখতে নিচে ভিড় জমিয়েছেন জেলা প্রশাসকসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ স্থানীয় হাজারো মানুষ। জাফরগঞ্জের এক গৃহবধূ রুখসানা বেগম। তাঁর কাছে অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সামনে থেকে কখনও উড়োজাহাজ দেখিনি। এলাকার ছেলে উড়োজাহাজ তৈরি করেছে তাই দেখতে এসেছি। এসে দেখলাম জুলহাসের উড়োজাহাজ আকাশে উড়ছে।’ জুলহাসের বাবা জলিল মোল্লা বলেন, ‘ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের নানান জিনিস কুড়িয়ে জমিয়ে রাখত। সুযোগ পেলে এসব নিয়ে খুটুর-খাটুর করত। বানাতো নানান জিনিস। পড়াশোনা বাদ দিয়ে এসব করার কারণ জানতে চাইলে বলত, দেখবে, কোনো একদিন এমন একটা জিনিস বানাব, যা দেখে সবাই চমকে উঠবে। আজ ছেলে সবার সঙ্গে আমাকেও চমকে দিয়েছে। আমার ছেলের বানানো উড়োজাহাজ আজ সত্যিই আকাশে উড়েছে। আমি যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না!’
স্বপ্নের পেছনে আছে কষ্টের ইতিহাস
নিজের স্বপ্ন ওড়ানোর কথা জানতে চাইলে জুলহাস মোল্লা বলেন, ‘আমি কখনও উড়োজাহাজ বা বিমানে উঠিনি। এই উড়োজাহাজ তৈরি করে আকাশে উড়তে পেরে নিজের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বলতে পারেন। আসলে আমি আমার স্বপ্নটাকেই যেন আকাশে উড়িয়েছি। এই স্বপ্নের পেছনে আছে অনেক কষ্টের ইতিহাস। কেবল তাই নয়; শুরুর দিকে পরিবার থেকে শুরু করে বাড়ির আশপাশের মানুষ আমার কাজ দেখে বলতেন, সে তো পাগল হয়ে গেছে! মানে আমাকে পাগল বলতেন অনেকেই। আজ সেই মানুষগুলোই আমাকে উৎসাহ দিচ্ছেন। পিঠ চাপড়ে বাহবা দিচ্ছেন। এরচেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে? আমি অনেক কষ্ট করেছি। খেয়ে না খেয়ে এই কাজ করেছি। তিন বছর গবেষণা এবং এক বছর সময় লেগেছে উড়োজাহাজটি তৈরি করতে। সব মিলিয়ে প্রায় আট লাখ টাকা খরচ হয়েছে এটি তৈরিতে। এই উড়োজাহাজটি তৈরির আগে আরেকটি উড়োজাহাজ তৈরি করেছি, সেটি ওড়ানো সম্ভব হয়নি। এছাড়া গবেষণা কাজের জন্য ১৫০টি ৫ ফুট সাইজের রিমোট কন্ট্রোল উড়োজাহাজও তৈরি করেছি। এতেও খরচ হয়েছে অনেক টাকা। তবে আমি খেয়ে না খেয়ে এসব টাকা জোগাড় করেছি। ধারদেনাও আছে। তাই বলে দমে যাইনি। এতো কিছুর পরও আমি বলতে পারি, আমার আগে কেউ বাংলাদেশে নিজ উদ্যোগে বিমান তৈরি করে আকাশে ওড়াতে পারেনি। অনেকেই চেষ্টা করেছিলেন, সফল হননি। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা না থাকলেও শুধু ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম দিয়েই আমি সফলতার মুখ দেখেছি।’
জন্ম ও বেড়ে ওঠা
জুলহাস মোল্লার বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া গ্রামে। স্থানীয় জিয়নপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি পাস করেন এই তরুণ। এরপর কলেজে ভর্তি হলেও আর্থিক টানাপোড়েনে একাডেমিক পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। জুলহাসের ছোটবেলা কেটেছে দৌলতপুর উপজেলার যমুনার চরে বাঘুটিয়া গ্রামে। ওই গ্রামের আলো হাওয়ায় বেড়ে ওঠা এই তরুণ ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি প্লাস্টিকের বোতল, কাগজ, সংসারের ফেলে দেওয়া নানান উপকরণ দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করতেন। জুলহাসের বাবা জলিল মোল্লা জড়িত কৃষিকাজের সঙ্গে। ৬ ছেলে আর এক মেয়ের সংসার জলিল মোল্লার। বড় ছেলে মেহের আলী সৌদিপ্রবাসী। মেজ ছেলে জেহের আলী জড়িত ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গে। সেজ ছেলে মনোয়ার হোসেন ড্রাইভার। চতুর্থ ছেলে ছানোয়ার হোসেন ঢাকায় বুকবাইন্ডিং পেশায় জড়িত। ছোট ছেলে নয়ন মিয়া জুলহাসের সঙ্গে ইলেকট্রিক কাজ করেন। এক মাত্র মেয়ে জোছনাকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন অনেক আগেই।
যেভাবে এলো উড়োজাহাজের ভাবনা
উড়োজাহাজের ভাবনা কেমন করে এলো মাথায়, এই প্রশ্নের উত্তরে জুলহাস বলেন, ‘চার বছর আগে হঠাৎ মাথায় আসে ছোট ছোট রিমোট কন্ট্রোল বিমান তৈরি করার। এর কিছুদিন পর আল্টালাইট উড়োজাহাজ তৈরির কথা মাথায় আসে। সেটি তৈরি করে তেমন সাফল্য পাইনি। পরে তিন বছর গবেষণা করে এবং এক বছরের প্রচেষ্টায় এই উড়োজাহাজ তৈরি করি। এর সঙ্গে আমার ছোটভাই নয়ন মিয়াও জড়িত। মূলত টাকার জোগান না থাকায় পাম্প ইঞ্জিন, অ্যালুমিনিয়াম, এসএস দিয়ে
উড়োজাহাজটি তৈরি করেছি। উড়োজাহাজটির ওজন প্রায় একশ কেজি। গতি পরিমাপের জন্য যুক্ত করেছি ডিজিটাল মিটার, অ্যালুমিনিয়াম ও উন্নত কাপড় দিয়ে পাখা তৈরি করেছি। এর সেভেন হর্স ইঞ্জিন চলে অকটেন অথবা পেট্রোল দিয়ে। ঘণ্টায় গতি সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার। চাইলে এর সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব। পরিবর্তন আনা যাবে গঠনেও।’
আগামীর স্বপ্ন
উড়োজাহাজই এখন জুলহাসের ধ্যানজ্ঞান! এই
উড়োজাহাজকে ঘিরে জুলহাসের কাছে তাঁর স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে আমার উড়োজাহাজ কেন্দ্রিক একাডেমিক পড়াশোনা তেমন নেই। যদিও আমি এর পেছনে প্রচুর সময় ব্যয় করেছি এবং সাফল্যও পেয়েছি। তবে আমার আরও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। আমার তৈরি উড়োজাহাজ একজন চালক বা পাইলট ওড়াতে পারে। যদি ৫ লাখ টাকার ইঞ্জিন লাগানো যায় তবে তা দিয়ে যাত্রী ওড়ানো সম্ভব। তবে দেশের আইন অনুযায়ী এ ধরনের উড়োজাহাজ তৈরি করা গেলেও ওড়ানোর বৈধতা নেই। সরকারি নীতিমালা মেনেই খোলা জায়গায় চর এলাকায় মাত্র ৫০ ফুট উচ্চতায় উড়োজাহাজটি উড্ডয়ন করেছি। অনুমোদন পেলে এই উড়োজাহাজটি ১ হাজার ফুট উচ্চতায় উড্ডয়ন করানো সম্ভব।
আগামীতে আশা করি এসব বাধা কেটে যাবে
এবং এই উড়োজাহাজকে ঘিরে স্বপ্ন দেখবে
নতুন বাংলাদেশ!’