বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত: পতাকা বৈঠকে বিজিরির প্রতিবাদ
Published: 10th, March 2025 GMT
পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার ভিতরগড় সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক আল আমিন (৩৮) নিহতের প্রতিবাদে জানিয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিজিবি। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠকে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।
সোমবার (১০ মার্চ) বিকেলে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেন ঠাকুরগাঁও সেক্টর কমান্ডার কর্নেল গোলাম রব্বানী এবং বিএসএফের পক্ষে নেতৃত্ব দেন শিলিগুড়ি সেক্টর কমান্ডার শ্রী পি কে শিং।
বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিং করেন কর্নেল গোলাম রব্বানী। তিনি বলেন, ‘‘বিএসএফ সীমান্ডে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, যা অপ্রত্যাশিত এবং কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বৈঠকে বিএসএফ-কে হত্যার জন্য কঠোরভাবে প্রতিবাদ, নিন্দা ও ক্ষোভ জানানো হয়েছে।’’
আরো পড়ুন:
সাতক্ষীরায় ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার স্বর্ণের বার জব্দ
৩ বাংলাদেশিকে আটক করে বিএসএফ, বিজিবির চেষ্টায় ফেরত
কর্নেল গোলাম রব্বানী বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে বিএসএফ তাদের বক্তব্যে জানিয়েছে, ১০-১৫ জনের একটি দল রাতের অন্ধকারে বিএসএফ জোয়ানকে আক্রমণ করলে তাদের জোয়ান আত্মরক্ষার্থে ফায়ার করে, যা অনাকাঙ্খিত এবং এই জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করেছে। ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে বিএসএফ সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেবে এবং এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না বলে আশ্বস্ত করেছে।’’
বিজিবির এই সেক্টর কমান্ডার আরো বলেন, ‘‘আমরা বিএসএফকে স্পষ্ট করে বলেছি, বিনাবিচারে বাংলাদেশি কাউকে গুলি করে হত্যা করা নির্দয়, অমানবিক এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্রের পরিবর্তে অপ্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা যেত, তাকে পাকড়াও করা যেত এবং আইনের আওতায় সোপর্দ করা যেত। প্রয়োজনে বিজিবিকে অবহিত করা যেত, এতে বিজিবি তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে পারতো।’’
গত শনিবার (৮ মার্চ) ভোরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নে ভিতরগড় বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার বিপরীতে ভারতের অভ্যন্তরে ভাটপাড়ায় বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি নিহত হয়। নিহত আল আমিন পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের জিন্নাত পাড়া এলাকার সুরুজ আলীর ছেলে।
ঢাকা/নাঈম/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসএফ ব এসএফ র উপজ ল র
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে বাংলাদেশি যুবককে পিটিয়ে হত্যা, অভিযোগ বিএসএফের বিরুদ্ধে
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর সীমান্তে ভারতের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিএসএফের সদস্যদের পিটুনিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আহত অবস্থায় ওই যুবককে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত মুরাদুল ইসলাম ওরফে মুন্না (৪০) বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের সেজামুড়া সীমান্তের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে। সেজামুড়া গ্রামটি ভারতের সীমান্তঘেঁষা। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, ভারতের বিএসএফ সদস্যরা মুরাদুলকে ডেকে ভারতের সীমান্তের ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে মারধরসহ নির্যাতন করা হয়। পরে তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়।
তবে নিহত মুরাদুলের পরিবারের অভিযোগ সঠিক নয় বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ সম্পর্কে গতকাল রাতে ২৫ বিজিবির সরাইল ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারাহ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিহতের পরিবার ও স্বজনেরা নানা কথা বলতেই পারেন। আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে, সেটি হলো ওই ব্যক্তি (মুরাদুল) দুই দেশের সীমান্তের কাঁটাতার অতিক্রম করে অবৈধভাবে ভারতের সীমানায় প্রবেশ করেন এবং সুস্থভাবেই বাংলাদেশে ফেরত আসেন। সীমান্তের বিজিবির টহল দলের সদস্যরা তাঁকে দেখতে পান। জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেন। তবে ভারতের অভ্যন্তরে গিয়েছেন বলে স্বীকার করেননি। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। তিনি আহত হয়েছিলেন কি না বা কোনো চোরাকারবারির সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে কি না জানা যায়নি।’
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীমান্তের কাঁটাতার থেকে ১৫০ থেকে ৩০০ গজের ভেতরে বিজয়নগর উপজেলার সেজামুড়ায় মুরাদুলের পরিবারের ফসলি জমি রয়েছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মুরাদুল সেখানেই বসবাস করেন। গতকাল দিনভর মুরাদুল নিজের লিচুগাছে পানি দেন। দুপুরে ঘরে ভাত খেয়ে জমি দেখতে যান মুরাদুল। বিকেল পাঁচটা পরও তিনি বাড়িতে ফেরেননি। স্ত্রী রত্না আক্তার বাড়ি থেকে বের হয়ে সীমান্তে খোঁজাখুঁজি করেও স্বামীর সন্ধান পাননি। একজন ফোন দিয়ে তাঁকে জানিয়েছিলেন, মুরাদুলকে বিএসএফের সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছেন। সন্ধ্যার দিকে ফসলি জমিতে মুরাদুল পড়ে ছিলেন। তাঁকে উদ্ধার করে চম্পকনগর এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনেরা। অবস্থার অবনতি হলে রাতে তাঁকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখন জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
রত্না বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতালে নেওয়ার সময় আমার স্বামী জানিয়েছেন, তাঁকে বিএসএফের সদস্যরা ডেকে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে ক্যাম্পে নিয়ে মারধর করা হয়। বিএসএফ তাঁকে ফেরত দেওয়ার পর বিজিবির সদস্যরা তাঁকে ধানের জমিতে ফেলে রেখে চলে যান। আমার স্বামী কোনো দিন কোনো খারাপ কাজ করেনি। আমি হত্যার বিচার চাই।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক সফিউল্লাহ আরাফাত বলেন, গতকাল রাতে অজ্ঞান অবস্থায় তাঁকে (মুরাদুল) হাসপাতালে আনা হয়েছিল। ১০টা ২১ মিনিট সময়ে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হবে। ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা যাবে।
২৫ বিজিবির সরাইল ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারাহ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, ‘নিহত মুরাদুল ভারতের অভ্যন্তরে কীভাবে গিয়েছেন, কেন গিয়েছেন বা কী উদ্দেশ্যে গিয়েছেন, তাঁকে কে মারধর করেছে কিংবা চোরাকারবারির সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এসব আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত করে বিস্তারিত জানানো হবে।’