রংপুরে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। চীনের বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান পাওয়ার চায়নার প্রস্তাবিত ‘তিস্তা নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের’ ওপর অংশীজনদের নিয়ে এই মতবিনিময় সভায় পক্ষে ও বিপক্ষে মত এসেছে।

আজ সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় স্বাগত বক্তব্যে পাউবোর উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান বলেন, তিস্তা পরিকল্পনায় আর যাতে কোনো ফাঁক না থাকে। সে জন্য মতামতের ভিত্তিতে যাতে এ প্রকল্প নেওয়া যায়, এই কারণে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে।

পাওয়ার চায়নার পরমর্শক ও পাউবোর সাবেক অতিরিক্ত প্রকৌশলী মকবুল হোসেন পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন। মকবুল হোসেন বলেন, এই প্রকল্পটি হলে গ্রোয়েন নির্মাণ ও তীর প্রতিরক্ষার কাজের মাধ্যমে নদীভাঙন রোধ হবে। বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতকাজের মাধ্যমে বন্যার ঝুঁকি হ্রাস হবে। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ ও নদী পুনরুদ্ধার হবে। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে শাখা নদীগুলোর নাব্যতা রক্ষা পাবে।

পাওয়ার চায়নার পক্ষে জানানো হয়, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১৭০ বর্গকিলোমিটার ভূমি পুনরুদ্ধার করা হবে। পুনরুদ্ধার করা জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল, আধুনিক স্যাটেলাইট শহর, পাওয়ার প্ল্যান্ট, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ব্যবস্থা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত হবে।

তবে তিস্তা নদী বিষয়ে পাওয়ার চায়নার কোম্পানির প্রস্তাবিত প্রকল্প সম্পর্কে আট প্রশ্ন তুলে ধরেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম। এই প্রকল্পের একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা (ফিজিবিলিটি স্টাডি) প্রকাশ না করায় প্রশ্ন তুলে ফরিদুল ইসলাম বলেন, তিস্তা প্রতিবছর প্রায় ৫ কোটি টন পলি প্রবাহিত করে। কিন্তু প্রকল্পে পলি ব্যবস্থাপনা নিয়ে কিছু উল্লেখ নেই। তিস্তা নদীর গড় প্রশস্ততা ৩ কিলোমিটার থেকে মাত্র ১ কিলোমিটারের মধ্যে আনলে পরিবেশত কী প্রতিক্রিয়া হবে, তা দেখতে হবে। নদীর মধ্যে চরে ও নদীর পাড়ে যে হাজার হাজার পরিবার বসবাস করছে, কৃষিকাজ করছে, তারা কোথায় যাবে? উদ্ধার করা জমি শিল্পপতি ও ক্ষমতাবানেরা পাবেন বলে আশঙ্কা আছে। তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ উপকৃত হবেন, তার নিশ্চয়তা কোথায়।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কনক রহমান বলেন, এই প্রকল্প তিস্তার শাখা নদী ও উপনদীগুলোকে ধ্বংস যাতে না করে, তা নিশ্চিত করতে হবে। তিস্তা একটি বিনুনী নদী। এই নদীর সঙ্গে এই প্রকল্পটি যায় কি না, এটা বৈজ্ঞানিকভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া নদীর প্রাণ পানি, পানির কথা নেই, এখানে ড্যাম তৈরি করে, নদী খনন করে পানি জমিয়ে কী লাভ হবে? শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভের পানির স্তর আরও নেমে গেলে কৃষকদের কী অবস্থা হবে, এটা নিশ্চিত করতে হবে।

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন সংগঠনের সমন্বয়কারী ও কাউনিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলের ওই প্রকল্পের নতুন করে আলোচনা ও জরিপ করা দরকার ছিল। এটা আমরা পেলাম না। আমরা চাই এ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের ভাগ্যের উন্নয়ন হোক। শিল্প প্রতিষ্ঠিত হোক, মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হোক।’

মতবিনিময় সভায় রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্যসচিব আনিসুর রহমান ও জেলা মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহেদা হাসান বক্তব্য দেন।

তিস্তা পরিকল্পনার আগেই বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো তিস্তার হাজার হাজার একর চরের ভূমি দখল করছে বলেও উদ্বেগ জানান কয়েকজন আলোচক। তাঁরা প্রশাসনের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, অনেক স্থানে জেলা প্রশাসক, ইউএনও এসব জমি কিনতে বা ব্যবহার করতে বড় শিল্প গ্রুপগুলোকে অনুমোদন দিয়েছে।

সভায় আরও বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহম্মদ, জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রিভারাইন ক্লাবের শামসুর রহমান, গ্রিন ভয়েসের সোহানুর রহমান প্রমুখ।

সমাপনী বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান, তিস্তা নিয়ে সম্ভাব্য সমীক্ষাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। সেখান থেকে যে কেউ পক্ষে ও বিপক্ষে মতামত দিতে পারবেন। তিস্তাপারের মানুষ কীভাবে উপকার পেতে পারেন, সে জন্য এই মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়েছে। বিদেশি ঋণ অথবা দেশি বিনিয়োগ যাই–হোক, তিস্তা নিয়ে কাজ করা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প র ব যবস থ র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

তদন্ত ও বিচারের সময় কমালেই কি ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে

মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ ও মামলার ঘটনায় সমাজের নানা পেশার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশজুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল গতকাল রোববার বলেছেন, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মামলার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন পরিবর্তন করে তদন্তের সময় ৩০ দিন থেকে কমিয়ে ১৫ দিন করা হচ্ছে। আর ধর্ষণের মামলায় ৯০ দিনের মধ্যে বিচার করতে হবে।

পাঁচ বছর আগে (২০২১) নোয়াখালীর হাতিয়ায় এক গৃহবধূকে ধর্ষণচেষ্টার পর বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর একইভাবে সমাজের নানা পেশার মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল। তখন মানবাধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ‘মৃত্যুদণ্ড’ রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন পাস হয়। এখন ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, গত বছর সারা দেশে বিভিন্ন ফৌজদারি অপরাধের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৫টি। এর মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতনসংক্রান্ত মামলার সংখ্যা ১৭ হাজার ৫৭১টি। শতকরা হিসাবে দেশের ফৌজদারি অপরাধের মামলার ১০ শতাংশ হচ্ছে নারী ও শিশু নির্যাতনসংক্রান্ত। এর আগের বছরও (২০২৩) নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় সারা দেশে ১৮ হাজার ৯৪১টি মামলা হয়।

অর্থাৎ দেশে প্রতিনিয়ত নারী ও শিশুদের নানাভাবে যৌন নির্যাতন, শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের পর খুনের শিকার হওয়ার অভিযাগে মামলা হচ্ছে। ধর্ষণসহ অন্যান্য অপরাধের ঘটনায় এসব মামলা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপরাধীদের শাস্তি হচ্ছে না। এর পেছনে একটি বড় কারণ রাষ্ট্রপক্ষের ব্যর্থতা।

‘সাজা মাত্র ৩ শতাংশ মামলায়’

নারী ও শিশু নির্যাতনে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের বিশেষ আইনটি পাস হয় ২০০০ সালে। এর আগেও ১৯৯৫ সালে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিশেষ আইন ছিল। আইন থাকলেও নারী ও শিশু নির্যাতন কমছে না। ধর্ষণের মতো অপরাধ করার পরও যদি কারও শাস্তি না হয়, মামলা থেকে খালাস হয়ে যায়, তখন সেই অপরাধী আবার নতুন নতুন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে ভুক্তভোগী নারী ন্যায়বিচার না পেয়ে মনঃকষ্ট নিয়ে দিনের পর দিন দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়।

ছয় বছর আগে (২০১৮) প্রথম আলো ঢাকা মহানগরসহ ঢাকা জেলার বিগত ১৫ বছরে ছয় ধরনের অপরাধ (ধর্ষণ, ধর্ষণজনিত মৃত্যু ও হত্যা, দলবদ্ধ ধর্ষণ, সম্ভ্রমহানি করে আত্মহত্যায় প্ররোচনা, যৌনপীড়ন ও যৌতুকের জন্য হত্যা বা হত্যাচেষ্টা) নিয়ে অনুসন্ধান করে। তার ভিত্তিতে ২০১৮ সালে প্রথম আলোর অনুসন্ধান, ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, ‘সাজা মাত্র ৩ শতাংশ’ শীর্ষক বই প্রকাশ করে প্রথমা প্রকাশন।

প্রথম আলোর সেই অনুসন্ধান অনুযায়ী, ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ২০০২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে নিষ্পত্তি হওয়া মামলার সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ২৭৭টি। চলমান মামলার সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৫৮৭টি। নিষ্পন্ন হওয়া মামলার মধ্যে সাজা হয়েছিল ১০৯টি মামলায়। শতকরা হিসাবে সাজা মাত্র ৩ শতাংশ। বাকি ৯৭ শতাংশ মামলার ক্ষেত্রে আসামিরা হয় অব্যাহতি পেয়েছেন (অর্থাৎ মামলা পর্যন্ত যায়নি), নয়তো তাঁরা বিচারে খালাস পেয়েছেন।

খালাসের পেছনের অন্যতম কারণ হচ্ছে যথাসময়ে সাক্ষীদের হাজির করতে ব্যর্থ হয়েছেন পুলিশ ও সরকারি কৌঁসুলিরা (পিপি)। তখন ১৫ বছর ধরে ঝুলে থাকা ধর্ষণ মামলার সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৬০৪টি। কেন এমনটি হয়, তার ব্যাখ্যায় ফৌজদারি আইনবিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, দেশে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিসের ব্যবস্থা না থাকায় দলীয় ভিত্তিতে পিপি নিয়োগ দেওয়া হয়। আবার যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয় তাঁদের সম্মানীও অনেক কম। যত দিন পর্যন্ত স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস চালু না হবে, তত দিন ফৌজদারি মামলায় দোষীদের সাজার হার বাড়বে না। মামলা হবে, তদন্তও হবে, দিনের পর দিন মামলা আদালতে ঝুলতে থাকবে, সাক্ষী আসবেন না, বহু বছর পর আদালত থেকে আসামি খালাস পেয়ে যাবেন। আবার নতুন করে ধর্ষণের ঘটনা ঘটবে। তখন সমাজের নানা পেশার মানুষ তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাবেন। বেশ কয়েক দিন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হতে থাকবে। আবার নতুন কোনো ঘটনা আসার পর ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণের মতো অপরাধের ঘটনাগুলো অনেকটা আড়ালে চলে যাবে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরাও তলিয়ে দেখেন না, কেন বছরের পর বছর ফৌজদারি মামলা ঝুলে থাকে? কেন খুন, ধর্ষণ, ডাকাতির ঘটনায় দোষীদের সাজা হয় না? দেশে তৈরি হয়েছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি।

‘প্রয়োজন স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস’

আইনজ্ঞরা মনে করেন, সরকার যদি স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গড়ে তোলে, অভিজ্ঞ আইনজীবীদের ভালো সম্মানী দিয়ে পিপি হিসেবে নিয়োগ দেয়, তাঁদের প্রত্যেককে জবাবদিহির আওতায় আনে, তাহলে ধর্ষণসহ ফৌজদারি মামলায় দোষীদের সাজার হার বিচারিক আদালতে বাড়বে। ধর্ষণসহ প্রতিটি ফৌজদারি মামলার বিচারসংক্রান্ত তথ্যের হালনাগাদ আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে রাখতে হবে।

বিশ্বের প্রতিটি আধুনিক রাষ্ট্রে ফৌজদারি অপরাধসংক্রান্ত প্রতিটি তথ্য, মামলা, তদন্ত ও বিচারের সাজার হার–সংক্রান্ত যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহের আলাদা দপ্তর বা ব্যুরো রয়েছে। এই দপ্তর ধর্ষণ, খুন, ছিনতাই, ডাকাতি, মানি লন্ডারিংসহ প্রতিটি ফৌজদারি মামলায় কত শতাংশ মামলায় অভিযোগপত্র জমা হয়, কত শতাংশ মামলায় সাজা হয়, সেটির বাৎসরিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশেই এর ব্যতিক্রম। সংশ্লিষ্ট আইনজ্ঞরা মনে করেন, সরকার যত দিন পর্যন্ত প্রতিটি ফৌজদারি মামলার বিচারের তথ্য সংগ্রহের আলাদা দপ্তর না করছে, যত দিন না ফৌজদারি অপরাধের সাজার হারের তথ্য প্রকাশ করছে, তত দিন পুলিশ কিংবা পিপিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কেউ জবাবদিহির আওতায় আসবেন না। সে কারণে যত দ্রুত সম্ভব ফৌজদারি মামলার তথ্য সংগ্রহের জন্য আলাদা একটি দপ্তর করা প্রয়োজন।

বিদ্যমান ব্যবস্থায় বিচারের জন্য কীভাবে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়, তার একটি উদাহরণ হিসেবে ২০০৭ সালের একটি মামলার কথা উল্লেখ করা যায়। ওই বছর এক সন্ধ্যায় ঢাকার প্রান্তে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে শহরের মধ্যে বাসায় ফিরছিল ১৩ বছরের একটি মেয়ে। পরিচিত দুই তরুণ তাকে ডেকে নিয়ে সারা রাত আটকে রেখে ধর্ষণ করেন। এই অভিযোগে তার মা মামলা করেন। মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পেয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু পুলিশ এক আসামির হদিস বের করতে না পারায় তিনি অব্যাহতি পান। অন্যজন প্রায় আট বছর বিচার চলার পর সাক্ষীর অভাবে খালাস পান। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ১৩ জন সাক্ষী ছিলেন। কিন্তু মামলার বাদী মেয়েটির মা ও মেয়েটি ছাড়া আর কোনো সাক্ষীকে আদালতে হাজির করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। একটি বড় সময়জুড়ে পিপিরা সাক্ষী হাজির করার জন্য সময় চেয়ে আবেদন করে গেছেন। একপর্যায়ে ঢাকার একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল থেকে আসামিরা খালাস পান।

আমাদের সমাজে খুন, ধর্ষণ, ডাকাতির মতো নৃশংস ঘটনা ঘটতে থাকে, বেশির ভাগ ঘটনায় মামলা হয়, তদন্ত হয়, বিচারের জন্য আদালতে বারবার তারিখ পড়তে থাকে, সাক্ষী আসে না, রাষ্ট্রপক্ষ দরখাস্ত দিয়ে যেতেই থাকে। এভাবে কেটে যায় বছরের পর বছর। ধুলা জমতে থাকে মামলার নথিতে। তবে এর ব্যতিক্রম রয়েছে। যেসব মামলার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষ তৎপর থাকে, বিশেষ করে ভুক্তভোগীর পরিবার বিচারের জন্য উদ্‌গ্রীব থাকে, দিনের পর দিন আদালতের বারান্দায় ঘোরে, সাক্ষীদের হাজির করা হয়, সেসব ক্ষেত্রে বিচারের ফলাফল আসে রাষ্ট্রপক্ষে। অপরাধীর সাজা হয়। সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয় ন্যায়বিচার।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ পাসের পর বিগত ২৫ বছরে কত নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন? কতজন অপরাধীর সাজা হয়েছে? সেসব পরিসংখ্যান প্রকাশ করা জরুরি। তাহলে বিচারহীনতার যে অভিযোগ জনমনে দানা বেঁধেছে, তা পরিষ্কার হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ