রংপুরে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে মতবিনিময়, পক্ষে-বিপক্ষে মত
Published: 10th, March 2025 GMT
রংপুরে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। চীনের বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান পাওয়ার চায়নার প্রস্তাবিত ‘তিস্তা নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের’ ওপর অংশীজনদের নিয়ে এই মতবিনিময় সভায় পক্ষে ও বিপক্ষে মত এসেছে।
আজ সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় স্বাগত বক্তব্যে পাউবোর উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান বলেন, তিস্তা পরিকল্পনায় আর যাতে কোনো ফাঁক না থাকে। সে জন্য মতামতের ভিত্তিতে যাতে এ প্রকল্প নেওয়া যায়, এই কারণে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে।
পাওয়ার চায়নার পরমর্শক ও পাউবোর সাবেক অতিরিক্ত প্রকৌশলী মকবুল হোসেন পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন। মকবুল হোসেন বলেন, এই প্রকল্পটি হলে গ্রোয়েন নির্মাণ ও তীর প্রতিরক্ষার কাজের মাধ্যমে নদীভাঙন রোধ হবে। বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতকাজের মাধ্যমে বন্যার ঝুঁকি হ্রাস হবে। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ ও নদী পুনরুদ্ধার হবে। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে শাখা নদীগুলোর নাব্যতা রক্ষা পাবে।
পাওয়ার চায়নার পক্ষে জানানো হয়, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১৭০ বর্গকিলোমিটার ভূমি পুনরুদ্ধার করা হবে। পুনরুদ্ধার করা জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল, আধুনিক স্যাটেলাইট শহর, পাওয়ার প্ল্যান্ট, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ব্যবস্থা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত হবে।
তবে তিস্তা নদী বিষয়ে পাওয়ার চায়নার কোম্পানির প্রস্তাবিত প্রকল্প সম্পর্কে আট প্রশ্ন তুলে ধরেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম। এই প্রকল্পের একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা (ফিজিবিলিটি স্টাডি) প্রকাশ না করায় প্রশ্ন তুলে ফরিদুল ইসলাম বলেন, তিস্তা প্রতিবছর প্রায় ৫ কোটি টন পলি প্রবাহিত করে। কিন্তু প্রকল্পে পলি ব্যবস্থাপনা নিয়ে কিছু উল্লেখ নেই। তিস্তা নদীর গড় প্রশস্ততা ৩ কিলোমিটার থেকে মাত্র ১ কিলোমিটারের মধ্যে আনলে পরিবেশত কী প্রতিক্রিয়া হবে, তা দেখতে হবে। নদীর মধ্যে চরে ও নদীর পাড়ে যে হাজার হাজার পরিবার বসবাস করছে, কৃষিকাজ করছে, তারা কোথায় যাবে? উদ্ধার করা জমি শিল্পপতি ও ক্ষমতাবানেরা পাবেন বলে আশঙ্কা আছে। তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ উপকৃত হবেন, তার নিশ্চয়তা কোথায়।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কনক রহমান বলেন, এই প্রকল্প তিস্তার শাখা নদী ও উপনদীগুলোকে ধ্বংস যাতে না করে, তা নিশ্চিত করতে হবে। তিস্তা একটি বিনুনী নদী। এই নদীর সঙ্গে এই প্রকল্পটি যায় কি না, এটা বৈজ্ঞানিকভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া নদীর প্রাণ পানি, পানির কথা নেই, এখানে ড্যাম তৈরি করে, নদী খনন করে পানি জমিয়ে কী লাভ হবে? শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভের পানির স্তর আরও নেমে গেলে কৃষকদের কী অবস্থা হবে, এটা নিশ্চিত করতে হবে।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন সংগঠনের সমন্বয়কারী ও কাউনিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলের ওই প্রকল্পের নতুন করে আলোচনা ও জরিপ করা দরকার ছিল। এটা আমরা পেলাম না। আমরা চাই এ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের ভাগ্যের উন্নয়ন হোক। শিল্প প্রতিষ্ঠিত হোক, মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হোক।’
মতবিনিময় সভায় রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্যসচিব আনিসুর রহমান ও জেলা মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহেদা হাসান বক্তব্য দেন।
তিস্তা পরিকল্পনার আগেই বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো তিস্তার হাজার হাজার একর চরের ভূমি দখল করছে বলেও উদ্বেগ জানান কয়েকজন আলোচক। তাঁরা প্রশাসনের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, অনেক স্থানে জেলা প্রশাসক, ইউএনও এসব জমি কিনতে বা ব্যবহার করতে বড় শিল্প গ্রুপগুলোকে অনুমোদন দিয়েছে।
সভায় আরও বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহম্মদ, জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রিভারাইন ক্লাবের শামসুর রহমান, গ্রিন ভয়েসের সোহানুর রহমান প্রমুখ।
সমাপনী বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান, তিস্তা নিয়ে সম্ভাব্য সমীক্ষাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। সেখান থেকে যে কেউ পক্ষে ও বিপক্ষে মতামত দিতে পারবেন। তিস্তাপারের মানুষ কীভাবে উপকার পেতে পারেন, সে জন্য এই মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়েছে। বিদেশি ঋণ অথবা দেশি বিনিয়োগ যাই–হোক, তিস্তা নিয়ে কাজ করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প র ব যবস থ র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম পরীক্ষার্থী এবার
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হচ্ছে। প্রথম দিন বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা। ১১ শিক্ষা বোর্ডের অধীন ৩০ হাজার ৪৫টি স্কুল ও মাদ্রাসার ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় বসবে। এ বছর দেশের ৩ হাজার ৭১৫ কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। চলবে ১৩ মে পর্যন্ত।
সাধারণ ৯ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার পরীক্ষার্থী ১৪ লাখ ৯০ হাজার ৯৩১ জন। এর মধ্যে ৭ লাখ ১ হাজার ৯৫৩ জন ছাত্র এবং ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯৭৮ ছাত্রী। আর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী এ বছর ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩ জন ছাত্র এবং ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৩ ছাত্রী। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী রয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮৫ এবং ৩৪ হাজার ৯২৮ জন ছাত্রী।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের চেয়ে এবার পরীক্ষার্থী কমেছে প্রায় ১ লাখ। সংখ্যায় তা ৯৫ হাজার ২২২ জন। শুধু তাই নয়, বিগত পাঁচ বছরে এবারই সবচেয়ে কম শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। জানা গেছে, ২০২৪ সালে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন। ২০২৩ সালে ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন, ২০২২ সালে ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৭ এবং ২০২১ সালে ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।
এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম-বেশি হওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কোনো বছরই রেজিস্ট্রেশন করা সব শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসে না। এটাকে ঝরে পড়াও বলা যায় না। সাধারণত কমপক্ষে তিন বছরের মধ্যে শিক্ষাজীবনে ফিরে না এলে তাকে ঝরে পড়া বলে। দারিদ্র্যের কারণে অনেকে এক বছর পরীক্ষা দিতে না পারলে পরের বছর অংশ নেয়।
রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মাদ ফেরদাউস সমকালকে বলেন, নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করা সব শিক্ষার্থীই বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নেবে, এমনটা কখনও হয় না। দুই বছরে দারিদ্র্য, বাল্যবিয়ে, অসুস্থতা অথবা টেস্ট পরীক্ষায় ভালো করতে না পারা অনেক পরীক্ষার্থীই শেষ পর্যন্ত বোর্ড পরীক্ষায় বসে না। তারা অনিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে পরে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম বলেন, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কম বা বেশি বছরভেদে হতেই পারে, এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের কেউ কেউ মনে করেন, এখনও শিক্ষার্থী ঝরে পড়া বন্ধ হয়নি। উপবৃত্তি চালু করায় একসময় শিক্ষার্থী বেড়ে ছিল। উপবৃত্তির পরিমাণটা এখন এমন যে, তা দিয়ে আর অভিভাবক-শিক্ষার্থীকে স্কুলমুখী করা যাচ্ছে না। আর করোনার পর থেকে অনেক শিক্ষার্থী সাধারণ ধারার পড়াশোনা ছেড়েছে। একই সঙ্গে ইবতেদায়ি তথা আলিয়া ধারার মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী কম ভর্তি হচ্ছে। অনেকে হাফেজি পড়ছে, কওমি ঘরানার মাদ্রাসায় ভর্তি হচ্ছে। ফলে সাধারণ ধারার পড়ালেখায় শিক্ষার্থী কমছে।
এবার প্রশ্ন ফাঁসমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গ্রীষ্মকাল হওয়ায় পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে ২০০ গজের মধ্যে শুধু পরীক্ষার তিন ঘণ্টা ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। তবে কেন্দ্রভেদে এ দূরত্ব কমবেশি হতে পারে।’
কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে প্রবেশ নিষিদ্ধ
ঢাকা মহানগরী এলাকায় এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী এবং পরীক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া জনসাধারণের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সই করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।