পবিত্র রমজান মাসে ক্যানসারের কোনো কোনো রোগী রোজা পালন করতে চাইতে পারেন। তবে তাঁদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। কারণ, এ সময় খাদ্যাভ্যাস ও দৈনন্দিন রুটিনে পরিবর্তন আসে, যা তাঁদের শারীরিক অবস্থার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

রোজা রাখা নিরাপদ কি না

ক্যানসারের রোগীদের রোজা রাখা উচিত কি না, তা নির্ভর করে রোগীর শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসাপ্রক্রিয়ার ওপর। যেসব রোগী কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি নিচ্ছেন, এ সময় তাঁদের শরীর দুর্বল থাকে, বমিভাব, ডিহাইড্রেশন, রক্তস্বল্পতা ও অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে রোজা রাখা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

যদি রোগী রেমিশনে থাকেন বা চিকিৎসা শেষ হয়ে থাকে, তবে শরীর ভালো থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে রোজা রাখতে পারেন।

যদি রোগী মেটাস্ট্যাটিক (স্টেজ ফোর) বা জটিল অবস্থায় থাকেন, তবে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে শরীর আরও খারাপ হতে পারে।

আরও পড়ুনরোজা রেখেও কাদের ওজন কমে না০৫ মার্চ ২০২৫

খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টি ব্যবস্থাপনা

সাহ্‌রিতে সহজপাচ্য কার্বোহাইড্রেট (ভাত, গমের রুটি), প্রোটিন (ডিম, মাছ, মুরগি), স্বাস্থ্যকর চর্বি (বাদাম, অলিভ অয়েল) খাওয়া ও প্রচুর পানি পান করা উচিত।

ইফতারে প্রোটিনযুক্ত খাবার, পর্যাপ্ত শাকসবজি, ফলমূল ও পানীয় গ্রহণ করা জরুরি। অতিরিক্ত চিনি ও প্রসেসড ফুড এড়িয়ে চলতে হবে।

ডিহাইড্রেশন এড়াতে ইফতার থেকে সাহ্‌রি পর্যন্ত অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা দরকার।

ওষুধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা

রোগী কেমোথেরাপি বা অন্যান্য চিকিৎসা গ্রহণ করে থাকলে, ওষুধের সূচি ঠিক রাখতে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হবে।

কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার (বমি, ডায়রিয়া, মুখে ঘা) কারণে অনেক রোগীর জন্য দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা কষ্টকর হতে পারে।

ব্যথানাশক বা অন্যান্য নিয়মিত ওষুধ ইফতার ও সাহ্‌রির মধ্যে কীভাবে গ্রহণ করা যাবে, তা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঠিক করতে হবে।

আরও পড়ুনডায়াবেটিসে রোজা রাখা কাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিশ্রাম ও শারীরিক কার্যক্রম

ক্যানসারের রোগীদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া জরুরি, বিশেষ করে যদি তাঁরা দুর্বল থাকেন।

হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করা যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত পরিশ্রম এড়িয়ে চলা উচিত।

চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ

রোজা রাখার আগে অবশ্যই অনকোলজিস্ট বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।

চিকিৎসক যদি মনে করেন যে রোজা রাখা স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে, তবে ইসলামিক বিধান অনুযায়ী, অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.

) ডা. মো. কুদরত-ই-ইলাহী, প্রফেসর অব মেডিসিন ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট, মেডিকেল অনকোলজি, আহ্ছানিয়া মিশন ক্যানসার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল, উত্তরা

আরও পড়ুনরোজা রেখে পর্যাপ্ত না ঘুমালে কী হয়০৬ মার্চ ২০২৫

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরের চাবি তুলে দিলেন প্রধান উপদেষ্টা

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পে নির্মিত ঘরের চাবি তুলে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান উপদেষ্টা তেজগাঁওয়ের কার্যালয় থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

এ সময় চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলা থেকে উপকারভোগীদের হাতে চাবি হস্তান্তর করা হয়।  

প্রতিটি জেলা থেকে একজন করে উপকারভোগী তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন। তারা প্রধান উপদেষ্টার প্রতি ধন্যবাদ জানান।
উজানের তীব্র ঢল আর অতি ভারি বৃষ্টির কারণে গত বছরের ২০ অগাস্ট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। পরে দ্রুতই তা ছড়িয়ে যায় ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারে।

ওই সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানায়, বন্যায় ১১ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৫০ লাখ ২৪,২০২ জন। এসব জেলায় মারা যান ৭১ জন। এর মধ্যে ২৮ জনই ছিলেন ফেনীতে।

মৃতদের মধ্যে পুরুষ ছিলেন ৪৫ জন। এছাড়া, ১৯ শিশু এবং ৭ জন নারী মারা যান।

জেলাভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, ফেনীতে মারা যান সবচেয়ে বেশি ২৮ জন। এরপর কুমিল্লায় ১৯, চট্টগ্রামে ৬, নোয়াখালীতে ১১ জন, কক্সবাজারে ৩ এবং খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, লক্ষ্মীপুর এবং ও মৌলভীবাজারে ১ জন করে মারা যান। দুর্গত এলাকায় ৩,৬১২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়। 

৩৬ দিনের গণ-আন্দোলন আর সহিংতায় সরকার পতনের ধাক্কা সামলে দেশকে স্থিতিশীলতার দিকে নিতে মাত্র কজ শুরু করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। ঠিক তখনই এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে।

দুই সপ্তাহের মাথায় আসা এই দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার দ্রুতই তৎপরতা দেখিয়েছিলো। 

দেশের ১১ জেলায় বন্যা ছড়িয়ে পড়লে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, যার কেন্দ্র হয়ে ওঠে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র-টিএসসি।

ঢাকা/হাসান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ