‘এক টাকা কমে হবে না, বলা যাবে না কাউকে’, ঘুষ দাবির অডিও ভাইরাল
Published: 10th, March 2025 GMT
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক সহকারী শিক্ষকের কাছে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সংক্রান্ত একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভুক্তভোগী সহকারী শিক্ষক মো. বেনজির ইসলাম প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি একটি লিখিত অভিযোগ দেন। ওই শিক্ষক উপজেলার ৯৩ নম্বর উত্তর পূর্ব বানিয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত।
ছড়িয়ে পড়া অডিওতে শিক্ষক বেনজির ইসলামকে বলতে শোনা যায়, ‘আসসালামু আলাইকুম ম্যাডাম। কেমন আছেন? আগামী রোববার আপনার সঙ্গে একটু দেখা করতে চাইছিলাম।’ এর উত্তরে শিক্ষা কর্মকর্তা হেনায়ারা বেগম বলেন, ‘রোববার না সোমবার আসেন।’ এ সময় ওই শিক্ষক বলেন, ‘আমি তো আসলে কিভাবে এইটা ম্যানেজ করব, আপনি যদি বলে দিতেন। কয় টাকা আর বেতন পাই। কয় টাকা হলে আপনার হয়? আমি তো সৎভাবে জীবনযাপন করি।’ এ সময় শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘১০ টাকা (১০ হাজার), আর ১ টাকাও কম হলেও হবে না। আর কাউকে বলা যাবে না।’ জবাবে বেনজির বলেন, ‘৪-৫ হাজার হলে হয় না? এই টাকা আমার জোগাড় করতে হবে।’ শিক্ষা কর্মকর্তা তখন বলেন, ‘কম হলে হবে না। আর কাউকে এই কথা বলা যাবে না।’ এ সময় তিনি ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বরে টাকা দেওয়া কথা বলেন। সেই সঙ্গে কাউকে বিষয়টি না জানানোর শর্ত দেন।
সহকারী শিক্ষক বেনজির ইসলামের ভাষ্য, তিনি ছুটিতে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষা কর্মকর্তা অনৈতিকভাবে ওই টাকা ঘুষ হিসেবে দাবি করেছিলেন। টাকা না দিলে তাঁর ক্ষতি করার হুমকি দেন। পরে শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশ অনুযায়ী বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা দেন।
৯৩ নম্বর উত্তর পূর্ব বানিয়ারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.
অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মোসা. হেনায়ারা বেগমের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বক্তব্য দিতে রাজি হননি। একপর্যায়ে তিনি দাবি করেন, অভিযোগটি মিথ্যা।
পিরোজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোস্তাফা কামাল বলেন, নাজিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছেন। সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ক ষ কর মকর ত কর মকর ত উপজ ল সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
টাকা আত্মসাৎকারীকে জামিন দেওয়ায় গ্রাহকদের ক্ষোভ
উপজেলার রামশালা গ্রামের মিতু আক্তারের প্রবাসী স্বামী আক্কেলপুর ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট শাখায় পাঠান। সে টাকা কৌশলে আত্মসাৎ করে জমি-বাড়ি করেছে ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা। টাকার জন্য মিতুর সংসারে অশান্তি শুরু হয়েছে। টাকা না পেলে সংসার ভেঙে যাবে তাঁর।
একই ব্যাংকে আমানতকারী জামাল উদ্দীনের প্রবাসী তিন ছেলে নিয়মিত টাকা পাঠান। ওই ব্যাংকের ক্যাশিয়ার তাদের কষ্টার্জিত ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গোপীনাথপুরের লিপি বেগম এ শাখায় স্থায়ী আমানত রেখেছিলেন। তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ১১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় মিতু আক্তার, জামাল উদ্দিন, লিপি বেগমসহ অসংখ্য গ্রাহক বুধবার সকাল থেকে ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট শাখা ও উপজেলা পরিষদের সামনে সড়কে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন করেছেন। ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচিতে প্রতারিত গ্রাহক ছাড়াও দারুল কোরআন মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এর আগে তারা প্রতারকদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। কর্মসূচি থেকে ১৩ এপ্রিল একই দাবিতে ইসলামী ব্যাংক জয়পুরহাট শাখার সামনে মানববন্ধন করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা জানান, ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট শাখার ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা কৌশলে গ্রাহকদের আঙুলের ছাপ নিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিতেন। তিনি বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদসহ ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে দেড় কোটি টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন। ২৩ মার্চ ঘটনাটি জানাজানি হলে গ্রাহকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে মাসুদ রানাকে অবরুদ্ধ করেন। তিনি সাংবাদিকসহ সবার সামনে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করেন। ওইদিনই আক্কেলপুর দারুল কোরআন মাদ্রাসার মুহতামিম (প্রধান শিক্ষক) ফিরোজ আহম্মেদ বাদী হয়ে থানায় মামলা করলে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এক দিন পর আদালত থেকে তারা জামিনে ছাড়া পান। তিনি বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে গ্রাহকরা আমানতের টাকা পাওয়া ও জড়িতদের শাস্তির বিষয়টি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। তারা জামিন বাতিল করে আসামিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
মানববন্ধনে আক্কেলপুর দারুল কোরআন মাদ্রাসার মুহতামিম ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট শাখায় মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য এতিম ছাত্রদের দান-খয়রাতের টাকা রাখা ছিল। ডিজিটাল প্রতারণার মাধ্যমে কর্মকর্তারা মাদ্রাসার সাড়ে ৩৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এখন মাদ্রাসা পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এতিমদের টাকা দ্রুত ফেরত চাই।
ইসলামী ব্যাংক জয়পুরহাট শাখার ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত দেড় কোটি টাকারও বেশি আত্মসাতের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এ ঘটনায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত করা হচ্ছে। আপাতত ওই শাখায় লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছে।