নেত্রকোণার ধনু নদ থেকে ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার
Published: 10th, March 2025 GMT
নেত্রকোণার খালিয়াজুরীতে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনার দুইদিন পর ধনু নদী থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
সোমবার (১০ মার্চ) দুপুরে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয় বলে জানান নেত্রকোণার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহেব আলী পাঠান।
মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- জেলার আটপাড়া উপজেলার রূপচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর ছেলে শহিদ মিয়া (৪৮), মদন উপজেলার বাগজান গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে রুকন মিয়া (৪৫) ও কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে হৃদয় মিয়া (৩২)।
আরো পড়ুন:
ট্যাপ থেকে বের হচ্ছিল রক্তযুক্ত পানি, ট্যাংকে পাওয়া গেল লাশ
ঘরে বৌ-শ্যালিকার লাশ, যুবক লাপাত্তা
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা ও পুলিশ জানায়, কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন স্থান থেকে মাছ শিকারিরা সংঘবদ্ধ হয়ে খালিয়াজুরি উপজেলার বিভিন্ন জলমহালে পলো দিয়ে মাছ শিকার করছিলেন। গত শনিবার সকালে জেলার বিভিন্ন উপজেলার সহস্রাধিক মাছ শিকারি পলো ও লাঠি নিয়ে একটি জলমহালের মাছ শিকার করতে যান। ধনু নদের রসুলপুর ঘাটে ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও পিকআপ রেখে নদ পার হতে ফেরি নৌকায় যেতে চাইলে রসুলপুর গ্রামের লোকজন মাছ শিকারিদের বাধা দেন। এরই জেরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এসময় দুই পক্ষের অনেকে আহত হন। কিছু দোকান, ঘর, যানবাহন ভাঙচুরসহ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সংঘর্ষ চলাকালে প্রতিপক্ষের ধাওয়ায় কয়েকজন মাছ শিকারি প্রাণ বাঁচাতে ধনু নদে ঝাঁপ দেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন নিখোঁজ হন। আজ সোমবার তিনজনের মরদেহ উদ্ধার হয়।
নেত্রকোণার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহেব আলী পাঠান বলেন, “আজ ধনু নদী থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।”
ঢাকা/মিলন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মরদ হ নদ উদ ধ র উপজ ল র
এছাড়াও পড়ুন:
কৃষক উদ্বেগে, লাভ প্রভাবশালীর
নেত্রকোনার মদনের বাইনবিল। এ জলমহালের পানি দিয়ে আশপাশের প্রায় ৩০ একর বোরো ধানের ক্ষেতে সেচ দেন কৃষক। কিন্তু মাছ ধরার জন্য বিলের পানি সেচযন্ত্র দিয়ে শুকিয়ে ফেলছেন ইজারাদারসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে তারা লাভবান হলেও আশপাশের জমিতে সেচের পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ফসলহানির শঙ্কায় ভুগছেন অর্ধশত কৃষক। তাদের অভিযোগ, কৃষকরা প্রশাসনের কাছে ঘুরেও প্রতিকার পাননি। কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ভূমি অফিস থেকে জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের মদন গ্রামের পাশে প্রায় ১৫ একর জমি নিয়ে বাইনবিল নামে জলমহালটির অবস্থান। সরকারিভাবে তিন বছরের জন্য ইজারা নিয়েছে হাওর বাংলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। এর সভাপতি উলাদ মিয়া নামে এক ব্যক্তি। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জলমহালটি এখন নিয়ন্ত্রণ করছেন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির।
নিয়মনীতি উপেক্ষা করে এ জলমহাল শুকিয়ে মাছ ধরার অভিযোগ পাওয়া গেছে ইজারাদার ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। পানি শুকিয়ে যাওয়ায় অন্তত ৩০ একর বোরো জমিতে সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষকরা বারবার প্রশাসন ও পুলিশকে জানালেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তাদের।
আজিম উদ্দিন ও সুলতানসহ স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের ভাষ্য, বাইনবিল যারা ইজারা নেন, তারা প্রতি বছরই শুকিয়ে মাছ ধরেন। এতে সেচের পানির ঘাটতি দেখা দেয়। খরার সময় তীব্র পানি সংকট দেখা দেয়। ফসল উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। এ বছরও পানি শুকিয়ে ফেলায় বোরো জমিতে সেচ সংকট দেখা দিয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি-২০০৯ অনুযায়ী, যেসব জলমহাল থেকে (নদী, হাওর, খাল ইত্যাদি) জমি সেচের সুযোগ রয়েছে, সেখান থেকে মৌসুমে সেচ দেওয়া বিঘ্নিত করা যাবে না। বাইনবিল জলমহালের ইজারাদাররা এ নীতিমালার কোনো তোয়াক্কা করেনি বলে অভিযোগ কৃষকের। সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, বাইনবিল প্রায় শুকিয়ে গেছে। দু-এক জায়গায় সামান্য পানি থাকলেও তা সেচ দেওয়ার উপযোগী নয়।
গত ৯ মার্চ মদন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির বাইনবিল শুকিয়ে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে সেচযন্ত্র চালু করে বলে অভিযোগ কৃষক রহিছ উদ্দিনের। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি মদন থানার ওসিকে জানিয়েছি। তাঁর পরামর্শে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কাজ হয়নি। এমনকি ইউএনওকে বিষয়টি জানালেও ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিল শুকিয়ে মাছ ধরার সুযোগ পান আব্দুল কাদির। এতে বিল পারের জমি সেচ সংকটে পড়ছে, দেশীয় মাছের প্রজনন বৃদ্ধি হুমকিতে। আদালতের দ্বারস্থ হয়েও সেচ বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।’
পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির বলেন, ‘উলাদ মিয়ার কাছে চাঁদা দাবি করছিল রহিছ উদ্দিন। চাঁদা না পেয়ে তিনি এমন করছেন। বিলের পানি শুকিয়েছে কৃষক। আমার তো এখানে কোনো ভূমিকা নেই।’ ইজারাদার উলাদ মিয়া আওয়ামী লীগের রাজনীতি করায় গাঢাকা দিয়ে থাকেন বলে জানা গেছে। চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
বাইনবিলে সেচের বিষয়ে যতবার জানিয়েছে, ততবার পুলিশ পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন
মদন থানার ওসি নাঈম মুহাম্মদ নাহিদ হাসান।
তাঁর ভাষ্য, ‘আমি নিজেও একাধিকবার
গিয়েছি। তারপরও যদি পুলিশকে দোষ দেয়, কিছু বলার নেই।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অহনা জিন্নাত বলেন, বিষয়টি জানার পর ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছিল। সেচ বন্ধ করাও হয়। বিষয়টি আদালতে যাওয়ায় মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।