Prothomalo:
2025-03-10@15:17:20 GMT

রাজশাহীর গ্রামে ভিন্ন ইফতার

Published: 10th, March 2025 GMT

ইফতার অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা হয়েছে ৬০০ জনকে। তাঁদের খাওয়ানো হবে আলুর ঘাঁটি দিয়ে সাদা ভাত। অবশ্য সাড়ে চার মণ আলুর সঙ্গে মেশানো হবে ৫২ কেজি মাছ। তাই সকাল ছয়টা থেকে শুরু হয়েছে আলু সেদ্ধ করা ও মাছ কাটার ব্যস্ততা। গ্রামের ১১০ বছর বয়সী খন্দকার সাইফুদ্দিন বসে দেখছেন সেদ্ধ আলু ভাঙার কাজ। তিনিই বললেন, ‘ইফতার অনুষ্ঠানে আলুঘাঁটি আর সাদা ভাত দেওয়া আমাদের চৌদ্দ পুরুষের চল। মাংস–বিরিয়ানি দিলেও মানুষ এতটা খুশি হয় না।’

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাড়ীগ্রামে ৬ মার্চ হয়ে গেল এমন ঐতিহ্যের একটি ইফতার অনুষ্ঠান।

গ্রামের শরিফুল ইসলাম এই অনুষ্ঠানের আয়োজক। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। প্রতিবছরই ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এতে নিজের আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসীকে দাওয়াত করেন। জানা গেল, ইফতারিতে খেজুর, শরবত, সালাদ দেওয়া হবে কিন্তু আলুঘাঁটি আর সাদা ভাত না দিলে এগুলো কিছুই না। শরিফুল বললেন, ‘৬০০ মানুষকে দাওয়াত করা হয়েছে, দেখবেন তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ চলে আসবে। আলুঘাঁটির ইফতারের কথা শুনলেই এলাকার মানুষ চলে আসেন। সেই আন্দাজে বেশি করে রান্না করা হয়।’

ইফতার শেষে তাঁর কথার সত্যতা মিলল। ছোট-বড় মিলে এসেছিলেন ১ হাজার ১০০ রোজাদার।

কথা বলে জানা গেল, বাগমারা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে আলুর ঘাঁটি দিয়ে সাদা ভাতের ইফতারের ঐতিহ্য শত বছরের পুরোনো। মূলত এলাকার অবস্থাপন্ন ব্যক্তিরাই এর আয়োজন করে থাকেন।

শরিফুলের বাড়ির রেওয়াজ অনুযায়ী, প্রতিবছর ভোরে পুকুরে মাছ ধরা হয়। এবার পুকুরে বড় মাছ না থাকায় রাজশাহী শহর থেকে ৫২ কেজি মাছ কিনে আনেন শরিফুল। ইফতার সফল করতে ভোর থেকে প্রায় ৭০ জন মানুষ কাজে লেগে পড়েন। বাবুর্চি থেকে শুরু করে তাঁদের কেউই এ জন্য পারিশ্রমিক নেন না। মনের আনন্দে তাঁরা ইফতারের এই আয়োজনকে উৎসবে পরিণত করেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের পৈতৃক বাড়ি সেখানে। বললেন, এই অঞ্চলের মানুষের পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য আলু আর মাছের ঘাঁটি দিয়ে ইফতার করা। এলাকার অবস্থাসম্পন্ন মানুষ রোজার মধ্যে ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। আলু-মাছের ঘাঁটি দিয়ে ভাত দেওয়া হয়। সঙ্গে একটু তেঁতুলের টক থাকে। তাই দিয়েই তাঁরা তৃপ্তি করে খান। তিনি একবার খাসির মাংস দিয়ে বিরিয়ানি করে বিপাকে পড়েছিলেন বলে জানালেন।

রাজশাহী শহরের ৪০ কিলোমিটার উত্তরে নিভৃত একটি পল্লির নাম বাড়ীগ্রাম। সকালে শরিফুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, মেয়েরা বাড়ির ভেতরে মাছ কাটাকুটি করছেন। আর একদল যুবক সাড়ে চার মণ আলু সেদ্ধ করে খোসা ছাড়াচ্ছিলেন। সকালে একটি চুলায় সাড়ে ৯ কেজি তেঁতুলের টক রান্না শুরু হয়েছে। বাবুর্চি আবদুল বারী মণ্ডল বললেন, ‘আলুঘাঁটির সঙ্গে এই টক নিলে রোজাদারদের মুখে রুচি আসে।’

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আলু প্রস্তুতের কাজ শেষ হলো। চারটি চুলায় তুলে দেওয়া হলো আলু ও মাছ। চুলায় জ্বালানি ঠেলার আলাদা লোক, চারটি চুলার দায়িত্বে চারজন। তাঁরা অনবরত খুন্তি দিয়ে নাড়তে থাকেন। বেলা একটার সময় লবণ ঠিক হয়েছে কি না, তা চাখার দায়িত্ব পালন করলেন একজন।

বেলা ১টা ৫ মিনিটে বাবুর্চি আবদুল বারী মন্ডল ঘোষণা দিলেন মোজাম্মেলের হাঁড়ি নামবে। সঙ্গে সঙ্গে দড়ি–লাঠি নিয়ে ছুটলেন দুজন। হাঁড়ির গলায় দড়ি পেঁচিয়ে তার ভেতরে লাঠি ভরে চুলা থেকে নামালেন। বেলা ১টা ১০ মিনিটে ইমরানের হাঁড়ি নামল। এর পরপরই নামল আনোয়ার ও মিনারের হাঁড়ি। এরপর চুলায় চাপানো হলো ভাত। একইভাবে চলল রান্না।

এদিকে কামরুজ্জামানের আমবাগানে সকালেই পানি ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে ধুলা না ওড়ে। বিকেলে তাতে চট বিছিয়ে দেওয়া হলো। ইফতারের কিছু আগে দলে দলে রোজাদারেরা আসতে লাগলেন। দেখার মতো বিষয় ছিল, একেকজনের পাতে যতটা ভাত, ততটা আলুর ঘাঁটি।

খাওয়া চলছে, এরই মধ্যে চারদিক থেকে ‘খাটা, খাটা, খাটা’ বলে একটা রব উঠল। তখন দেখা গেল, একদল লোক তেঁতুলের টক নিয়ে দৌড়াচ্ছেন। বোঝা গেল, তেঁতুলের টকই সেখানে ‘খাটা’ নামে পরিচিত।

ইফতারের আগে দোয়া পরিচালনা করলেন মাওলানা আবদুস সোবহান। পরে খেতে খেতে বললেন, ‘বাগমারার ঐতিহ্যবাহী এই আলুঘাঁটি-সাদা ভাত আলহামদুলিল্লাহ আমরা তৃপ্তিসহকারে খেলাম।’

বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি হালিমুজ্জামানের পৈতৃক নিবাস ওই গ্রামে। তিনিও ছিলেন ইফতার অনুষ্ঠানে। খেতে খেতে বললেন, ‘আমি অনেক মানুষকে আমাদের এই অনুষ্ঠানে নিয়ে এসেছি। যে একবার বাগমারার এই আলুঘাঁটি খেয়েছে, সে বলে কবে আবার হবে এই অনুষ্ঠান।’ তিনি বললেন, ‘আমাদের বাপ-দাদার এই ঐতিহ্য বংশপরম্পরায় ধরে রাখতে চাই। ১৫ মার্চ এই গ্রামে আমি আলুঘাঁটি-সাদা ভাত দিয়ে ইফতারির আয়োজন করব। দেড় হাজার মানুষকে দাওয়াত করেছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত ল র টক ইফত র র ব গম র বলল ন

এছাড়াও পড়ুন:

নারায়ণগঞ্জে এনসিডি ব্যবস্থাপনা ও ডিজিটালাইজেশন প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ব্র্যাক  ৩৬০ ডিগ্রি এনসিডি কেয়ার প্রজেক্টের আওতায় নারায়ণগঞ্জে এনসিডি ব্যবস্থাপনা ও ডিজিটালাইজেশন বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (১০ মার্চ) দুপুরে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সভাকক্ষে নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং ব্র্যাকের যৌথ আয়োজনে নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ বা অসংক্রামক রোগ (এনসিডি) ব্যবস্থাপনা এবং এনসিডি কর্নারের ডিজিটালাইজেশন বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। 


এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর্মীদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে তোলা, ডিজিটাল ডকুমেন্টেশন বৃদ্ধি এবং স্পাইস (ঝচওঈঊ) অ্যাপের মাধ্যমে রোগীদের পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হবে। প্রশিক্ষণে রিসোর্স পারসন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মুহাম্মদ মুশিউর রহমান। 

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন জেলার সকল উপজেলার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাগন, মেডিকেল অফিসার, নার্স, পরিসংখ্যানবিদ, ক্লার্ক,স্বাস্থ্য পরিদর্শকসহ অনেকে। ব্র্যাকের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ডা. মাহমুদুল হাসান, ডা. রেজওয়ানা বিশ্বাস, টেলিকাউন্সেলর, মো. তৌহিদুল ইসলাম, টেকনিক্যাল প্রোগ্রাম লিড, মেডট্রোনিক ল্যাবস।

সুমন চৌধুরী, ব্র্যাক জেলা সমন্বয়ক।ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মসুচির সোনারগাঁও ও বন্দর উপজেলার এলাকা ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম, এবং পবিত্র কুমার দেবনাথসহ হেল্থ এডুকেটর, কর্মসুচি সংগঠকগণ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ