২৮ বলে ১৫ ছক্কায় ১০১—অস্ত্র জমা দিলেও ট্রেনিং জমা দেননি ডি ভিলিয়ার্স
Published: 10th, March 2025 GMT
অস্ত্র জমা দিয়েছি, ট্রেনিং তো জমা দিইনি—কথাটা এবি ডি ভিলিয়ার্সের খুনে মেজাজের ব্যাটিংয়ের সঙ্গেই যায়।
২০১৮ সালে আচমকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন ডি ভিলিয়ার্স। ২০২১ সালে সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেন। সেই ডি ভিলিয়ার্স কাল আবারও ব্যাট হাতে তুলে নিয়েছেন। চার বছর পর ফিরেই ২৮ বলে সেঞ্চুরি উপহার দিয়েছেন। মেরেছেন ১৫টি ছক্কা, নেই কোনো চার, ডট দিয়েছেন মাত্র দুটি।
প্রতিপক্ষ বোলারদের কচুকাটা করে ডি ভিলিয়ার্স বুঝিয়ে দিয়েছেন, ‘অস্ত্র’ হাতে পেলে এখনো আগের মতোই ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন। ব্যাট তো তাঁর কাছে অস্ত্রই!
মাঠের সব পাশে খেলতে পারেন বলে ডি ভিলিয়ার্সকে ডাকা হয় ‘মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রি’। কাকতালীয়ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তির অপরাজিত ১০১ রানে ইনিংসের স্ট্রাইক রেটও ৩৬০!
আরও পড়ুনকোহলি, ডি ভিলিয়ার্স, গেইল থাকার পরও বেঙ্গালুরু কেন শিরোপা জিততে পারেনি১৫ এপ্রিল ২০২৪গত জানুয়ারিতে ক্রিকেট সাংবাদিক মেলিন্ডা ফারেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডি ভিলিয়ার্স জানিয়েছিলেন, আবারও ক্রিকেটে ফিরতে চান। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক কোনো ম্যাচ নয়, খেলতে চান প্রদর্শনী ম্যাচে।
কাল সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে টাইটানস লিজেন্ডস ও বুলস লিজেন্ডস ম্যাচ দিয়েই ফিরেছেন ডি ভিলিয়ার্স। তিনি খেলেছেন তাঁর দীর্ঘদিনের ঘরোয়া দল টাইটানসের হয়ে।
টি–টোয়েন্টি সংস্করণের ম্যাচটিতে সপ্তম ওভারে ৫০ রানে ৩ উইকেট হারায় টাইটানস। এরপর ব্যাটিংয়ে নামেন ডি ভিলিয়ার্স।
মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই মারেন ছক্কা। সেঞ্চুরিও পূরণ করেন ছক্কা মেরে। তিন অঙ্ক ছোঁয়ার পরপরই তিনি ব্যাটিং থেকে অবসর নেন। তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ভর করেই টাইটানস ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে করে ২৭৮ রান।
লক্ষ্য তাড়ায় বুলস লিজেন্ডস ১৪ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১২৫ রান তোলার পর মুষলধারে বৃষ্টি নামে। আর খেলা সম্ভব হয়নি।
ওয়ানডে ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরির বিশ্ব রেকর্ডটা ডি ভিলিয়ার্সেরই। ২০১৫ সালে জোহানেসবার্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩১ বলে সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি।
গত বছর আইসিসির হল অব ফেমে জায়গা করে নিয়েছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারীকরণে দীর্ঘসূত্রতা!
কলেজ ও মাধ্যমিক স্কুল মিলে ২০১৬ সাল থেকে উপজেলা স্তরের অন্তত সাড়ে ৬০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারীকরণ প্রক্রিয়ায় আনা হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান ‘কাঠখড় পুড়িয়ে’ দীর্ঘদিনে শিক্ষক-কর্মচারীদের পদায়নসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হলেও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নানা কারণ ও অজুহাতে এখনও অনেক পিছে পড়ে রয়েছে।
মন্ত্রণালয়-দপ্তর-বিভাগ; এ টেবিল-ও টেবিল; বড় কর্তা-মাঝারি কর্তা-ছোট কর্তা– সবার মন রক্ষা করা কঠিন হলেও তা করার জন্য সাধ্যানুসারে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
২০১৬ সালে শুরু হওয়া প্রক্রিয়াটি ৮-৯ বছরেও সম্পন্ন করা গেল না! তাহলে কী লাভ হলো এমন সরকারীকরণে? এ দীর্ঘ সময়ে সরকারীকরণের কোনো সুবিধা না পেয়েই অনেকে অবসরে চলে গেছেন। মৃত্যুও হয়েছে অনেকের।
অনেক প্রতিষ্ঠানে এক বা দেড়-দুই বছর আগে অর্ধেক সংখ্যক (প্রতিষ্ঠানভেদে কম-বেশি হতে পারে) শিক্ষক-কর্মচারীর পদায়ন হয়েছে, বাকিগুলো ঝুলন্ত।
না সরকারি-না বেসরকারি অবস্থায় তাদের রীতিমতো গলদ্ঘর্ম হতে হচ্ছে।
পদায়নকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্টদের মাঝে ভিন্ন রকমের বৈষম্য তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ নেই। জীবনপ্রদীপ নিভে যাওয়া কিংবা অবসরে গিয়েও শিক্ষক-কর্মচারীরা ‘ম্যানেজ সংস্কৃতি’ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। এ যেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সঙ্গে বসবাস! তা ছাড়া এটি যে কতটা মানসিক পীড়ার কারণ, তা ভুক্তভোগী ছাড়া অন্য কারও পক্ষে অনুমান করা কঠিন।
সেই ২০১৬ সাল থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজে কতবার যে মূল সনদপত্র এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ ও নথিপত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এর কোনো হিসাব নেই। শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত; আমার মতো অনেকে অবসরে গেছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কারও রেহাই নেই। ফটোকপি আর ফটোকপি। চরম অস্বস্তিকর এক ব্যাপার।
একটি দপ্তরে (তা না হলে দুই জায়গায়) মূল সনদ ও নথিপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হলে বাকিগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী কিংবা প্রতিষ্ঠানকে না ডেকে ‘আন্তঃদাপ্তরিক যোগাযোগ’-এর মাধ্যমে তা সম্পন্ন করা উচিত ছিল।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যে বলতে গেলে ভেঙে পড়ার উপক্রম, এর একটি বড় কারণ অপরিকল্পিতভাবে এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় বিপুলসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের সরকারীকরণ।
সরকারি হওয়া তিন-সাড়ে তিনশ কলেজের মধ্যে কমপক্ষে দুইশ কলেজে নিয়মিত অধ্যক্ষ নেই। কোনোটি তিন বছর, কোনোটি আবার পাঁচ-সাত বছর, এমনকি আট-দশ বছর ধরে অধ্যক্ষশূন্য। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ভারে কলেজগুলো বলতে গেলে ন্যুব্জ। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে কলেজগুলোয় চলা ভিন্ন রকমের খেলা এখনও শেষ হয়নি। অবসরে গেছেন কিংবা মৃত্যু হয়েছে, এমন শিক্ষকের স্থলে গত সাত-আট বছরে বিষয়ভিত্তিক কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
দীর্ঘদিন অধ্যক্ষহীন সরকারি হওয়া কোনো কোনো কলেজে শিক্ষা ক্যাডার থেকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দিলেও মাত্র দুই-চার মাস কিংবা বড়জোর এক বছরের মধ্যেই তিনি বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন– এমন উদাহরণ এক-দুটি নয়, অনেক। এক কথায়, প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা লাটে উঠতে বড় বেশি বাকি বলে মনে হয় না।
সবচেয়ে ভয়াবহ ও দুর্ভাবনার বিষয় হলো, সংশ্লিষ্টদের উপেক্ষা ও অবহেলা। এভাবেই পার হয়েছে অন্তত আটটি বছর। এ নিয়ে ভালো কোনো আলোচনা নেই। দেশে এখন রাজনীতি, নির্বাচন আর গদি ছাড়া যেন আর কোনো বিষয়ই নেই আলোচনার।
মেঘে মেঘে বেলা অনেক হয়ে গেছে। শুধু হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী নন, তাদের পরিবার ও নিকটজনও এ নিয়ে স্বস্তিতে নেই। দীর্ঘমেয়াদি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও বিড়ম্বনার নিরসন না হলে এমন সরকারীকরণের সার্থকতা কোথায়?
বিমল সরকার: কলাম লেখক, অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক