নারীর সম–অধিকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় ১৯০৯ সাল থেকে। প্রথমে নিউজিল্যান্ড, পরে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপজুড়ে এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ ১৯৭৭ সালে বিশ্ব নারী দিবসের স্বীকৃতি দেয় এবং দিবসটি পালিত হতে থাকে বিশ্বজুড়ে। নারী দিবসের মূলমন্ত্রই হলো নারীর অধিকার ও সচেতনতা। কিন্তু এত বছর পরও আমরা দেখছি দেশে নারীর শরীর, স্বাস্থ্য ও প্রজননবিষয়ক অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি। নারীকে সন্তান ধারণ ও জন্ম দেওয়ার গুরুদায়িত্ব পালন করতে হয়। মানবজাতির টিকে থাকা ও বংশবৃদ্ধিতে যা সবচেয়ে জরুরি। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় নারীর অধিকার কতটুকু?

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ

প্রজননসংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত স্বামী ও স্ত্রী মিলে একত্রে নিতে হবে। সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত, অর্থাৎ কখন নেবেন, কয়টি নেবেন, কত বিরতিতে নেবেন, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কী হবে—এর কোনোটাই নারীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। এসব বিষয়ে নারীর সঠিক জ্ঞান, সচেতনতা ও অংশীদারত্ব দরকার। এখনো বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক মেয়ের ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে যায় এবং সন্তান জন্ম দেয়। এই বালিকাদের নিজের শরীর ও স্বাস্থ্য নিয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বা বয়স কোনোটাই হয়নি। তাই প্রজননস্বাস্থ্যে নারীর অধিকার পেতে চাইলে অবশ্যই বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে হবে।

আরও পড়ুনমিতা তঞ্চঙ্গ্যা যেভাবে দেশের প্রথম নারী ফরেস্টার০৮ মার্চ ২০২৫গর্ভধারণ–পূর্ববর্তী পরামর্শ

সন্তান ধারণের আগে প্রি–কনসেপশনাল পরামর্শ আমাদের দেশে খুব একটা প্রচলিত নেই। কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই যেকোনো সময় অপরিকল্পিতভাবে বেশির ভাগ দম্পতি সন্তান নেন। এতে যেসব জটিলতার সৃষ্টি হয়, তার মূল ভুক্তভোগী নারী। প্রি–কনসেপশন বা গর্ভধারণ–পূর্ববর্তী পরামর্শ ও রুটিন চেকআপ সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা দরকার। সন্তান নেওয়ার আগে একজন নারী যথেষ্ট ফিট ও সম্পূর্ণ সুস্থ কি না, তাঁর পুষ্টিমান, জীবনযাত্রার মান কেমন, তা নির্ণয় করতে হবে।

রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের সমস্যা, রক্তশূন্যতা ইত্যাদি নারীর গর্ভাবস্থা ও প্রসবের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে মা–শিশু উভয়েরই জীবন বিপন্ন হতে পারে। তাই আগেভাগেই এসব স্ক্রিনিং করে যথাযথ পরামর্শ নেওয়া জরুরি। প্রতিটি সন্তানকামী নারীকে অন্তত তিন মাস আগে থেকে ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট দিতে পারলে অনাগত শিশুর জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়। এসব প্রোগ্রাম জাতীয় ও সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসা উচিত।

গর্ভকালীন যত্ন ও পরিচর্যা

গর্ভাবস্থায় একজন নারীর সঠিক পরিচর্যার জন্য যথাসময়ে প্রসবপূর্ব চেকআপ, টিকা, প্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রসব বা ডেলিভারি যেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা হাসপাতালে হয়, তা নিশ্চিত করা এবং বাড়িতে প্রসবের হার কমানোও গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিষয় কেবল নারীস্বাস্থ্যের জন্যই যে জরুরি, তা নয়; এসব নারীর মৌলিক অধিকার।

মাতৃমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য হারে কমলেও দুঃখজনকভাবে এখনো বাংলাদেশে প্রসবকালীন জটিলতায় হাজার হাজার নারী মারা যাচ্ছেন এবং আরও অনেক নারী শিকার হচ্ছেন স্থায়ী জটিলতার। প্রসব–পরবর্তী রক্তক্ষরণ, ফিস্টুলা, প্রোল্যাপস ইত্যাদি সমস্যায় হাজারো নারীর জীবন চিরকালের জন্য অভিশপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রসবকালীন যত্ন ও পরিচর্যা নারীর অধিকার হিসেবে বিবেচ্য হতে হবে, আর এতে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকার সবারই কর্তব্য এবং দায় আছে।

নারী ও শিশুবান্ধব পরিবেশ

প্রসবের পর স্তন্যদানে সহায়তা, প্রসব–পরবর্তী চেকআপ, পরবর্তী সন্তান নেওয়ার বিষয়ে পরামর্শ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বিষয়ে নারীকে জ্ঞান দিতে হবে। সন্তান ধারণ ও জন্মদানের বিষয়ে জনকল্যাণমুখী সরকারের দায়িত্ব থাকতে হবে। একজন মা শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক যত্ন পেলেই কেবল একটি সুস্থ–সবল সন্তান জন্ম দিতে পারবেন।

কর্মজীবী নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ও কর্মক্ষেত্রে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার, শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র ইত্যাদি বিষয়ে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। এখানে সন্তান জন্ম দেওয়া ও তাকে বড় করার দায়িত্ব মায়ের ওপরই চাপিয়ে দেওয়া হয়। পরিবার, অফিস, সমাজ বা রাষ্ট্র কোনো সহযোগিতা করতে নারাজ। যেহেতু এখন বিপুলসংখ্যক নারী বাইরে কাজ করেন, তাই নারী ও শিশুবান্ধব কর্মক্ষেত্র এখন সময়ের দাবি।

পরিবেশদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

আমাদের দেশে ৩০ শতাংশ কৃষিখাদ্য উৎপাদন করেন নারীরা। কিন্তু তাঁদের ২০ শতাংশের বেশি উদ্যোক্তারই নিজস্ব জমি নেই। আমাদের মাঠেঘাটে খেটে খাওয়া নারীদের মধ্যে ৬০ শতাংশই বিধবা অথবা তাঁদের স্বামী নেই। অনেকেই গার্মেন্টস, অন্যান্য কারখানা ও বাইরে কাজ করেন। তাঁরা প্রকৃতি, জলবায়ুর পরিবর্তন ও দূষণের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকেন অথবা হারিয়ে যান। পরিবেশদূষণ, দূষিত পানি, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদির সবচেয়ে বড় শিকার নারীরা। নারীর প্রজননস্বাস্থ্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এসবের মাধ্যমে। তাই এদিকে নজর দিতে হবে।

আরও পড়ুন‘আমি কমেন্ট পড়েও দেখি না’, বললেন কারিনা০৮ মার্চ ২০২৫নারীস্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক কিশোরী মাসিকের সময় সঠিক যত্ন ও স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের নিয়ম জানে না। অনেকের আর্থিক সচ্ছলতা নেই। স্যানিটারি ন্যাপকিন সব শ্রেণির নারীর জন্য সহজলভ্য করতে হবে। পিরিয়ড হাইজিন সম্পর্কে সবার জানা থাকা জরুরি, এ নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কথা বলা যেতে পারে।

বয়ঃসন্ধিকালের মতোই মধ্যবয়সে মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তি নারীদের জন্য একটি ট্রানজিশনাল পিরিয়ড। এ সময় নানা রকম শারীরিক ও মানসিক জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়, যা নিয়ে কথা বলতে নারীরা সংকোচে থাকেন। সংকোচ ও দ্বিধা ভুলে নিজের শরীর, স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলার, সাহায্য চাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি।

নারী নির্যাতনের চিত্র

নিজের বাড়িতে, স্বামী, আত্মীয়স্বজন, মা-বাবার সঙ্গে থেকেও সহিংসতা, মারামরি, শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ, বাল্যবিবাহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়া, পথেঘাটে হয়রানি ও লিঙ্গবৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে। সম্প্রতি নারী হয়রানি ও সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে। এসব শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে এবং নীতিনির্ধারণ ও অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে নারীসমাজকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

চিকিৎসকের ভূমিকা

ধাত্রীবিদ্যার কিছু নৈতিক চ্যালেঞ্জ আছে। স্ত্রীরোগ চিকিৎসকদেরও এ বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত। যেমন রোগী ও তাঁর সঙ্গী বা অভিভাবকদের সহজ ভাষায় বোঝানো—রোগটা কী, কেন হলো, এর চিকিৎসা কী। ভবিষ্যৎতে কী কী হওয়ার আশঙ্কা আছে। বিকল্প চিকিৎসা আছে কি না। সঠিক জ্ঞান দিয়ে চিকিৎসক, রোগীসহ সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নেওয়াকে বলে ‘শেয়ারড ডিসিশন’। বর্তমানে চিকিৎসাবিদ্যায় এই শেয়ারড ডিসিশনের গুরুত্ব বেশি।

তবে অনেকে নিজের পছন্দমতো বা বিকল্প পথ বেছে নেন। তা নেওয়ার অধিকার তাঁদের অবশ্যই আছে। সে ক্ষেত্রেও চিকিৎসক তাঁদের পাশে থাকবেন এবং দরকারমতো সব ধরনের সাহায্য করবেন। তাঁদের ক্ষতি হয়, এমন কিছু করবেন না।

নীতিমালা ও কিছু সিদ্ধান্ত

অনেক সময় সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে নৈতিক দ্বিধা হয় বা উভয়সংকট দেখা দেয়। যেমন—

একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর জীবন বাঁচাতে গিয়ে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি বা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

অনেক সময় ধর্ষণ, অবাঞ্ছিত সন্তানের ক্ষেত্রে গর্ভপাতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সন্তানের জন্মগত মারাত্মক ত্রুটি থাকলেও অনেক সময় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।

সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান নেওয়ার বিষয়টি সব দেশেই নীতিশাস্ত্র সংশ্লিষ্ট ও সামাজিক ও আইনগত সমস্যা দেখা দেয়।

এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট জাতীয় নীতিমালা নেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে। এসব ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ প্যানেল তৈরি করে এবং দরকার হলে মানবাধিকারকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হতে পারে। কিন্তু আগে অসহায় ও বিপদগ্রস্ত নারীটির পাশে দাঁড়াতে হবে, দায়িত্ব এড়ালে চলবে না।

স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসক, নার্সসহ বেশির ভাগই নারী। অথচ এই নারীদেরই অনেক সময় কর্মক্ষেত্রে প্রজননস্বাস্থ্য রক্ষা ও চর্চার অধিকার নেই। করোনা মোকাবিলায় সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে যাঁরা লড়াই করেছেন, তাঁদের সিংহভাগ ছিলেন নারী। নার্সদের ৯৪ শতাংশই নারী এবং করোনা স্বাস্থ্যকর্মীদের ৯০ শতাংশ ছিলেন নারী। যাঁরা স্বাস্থ্যসেবা দেন, তাঁদের স্বাস্থ্য রক্ষাও জরুরি।

শেষকথা

মানবাধিকার এবং সমতার বিষয়টি অনুধাবন, অনুকরণ, অনুশীলন করা কোনো স্বপ্ন নয়; এটি নিশ্চিত করা সরকার, সমাজ বা প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য। নারীর অধিকার, ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গসমতার জন্য কাজ করা কেবল নারীর বিষয় নয়; এসব অর্জন করতে নারী, পুরুষ, সরকার, রাষ্ট্র, রাজনৈতিক দল—সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

শাহ্‌লা খাতুন, জাতীয় অধ্যাপক, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ

আরও পড়ুনউদ্যোক্তা থেকে যেভাবে দেশের প্রথম সফল নারী অ্যাগ্রো–ইনফ্লুয়েন্সার হলেন পপি০৮ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক ন ক সময় র জন য পর ব শ ক জ কর জন ম দ সরক র সবচ য় প রসব দরক র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারী ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছেন মার্কিন অভিবাসন কর্মকর্তারা। এই শিক্ষার্থী গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। স্টুডেন্ট ওয়ার্কার্স অব কলাম্বিয়া ইউনিয়ন গতকাল রোববার এই তথ্য দিয়েছে।

ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে বলেছে, গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীর নাম মাহমুদ খলিল। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের শিক্ষার্থী। তাঁকে গত শনিবার তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসভবন থেকে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সদস্যরা গ্রেপ্তার করেন।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাহমুদ খলিলের স্ত্রী আছে। তিনি মার্কিন নাগরিক এবং আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

আরও পড়ুনইহুদি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল প্রত্যাহার ট্রাম্পের০৭ মার্চ ২০২৫

মাহমুদ খলিলের যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসের গ্রিন কার্ড রয়েছে বলে ইউনিয়ন জানিয়েছে।

মাহমুদ খলিলের গ্রেপ্তারের বিষয়টি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি প্রতিশ্রুতি পূরণের প্রথম প্রচেষ্টার একটা বলে মনে হচ্ছে।

রিপাবলিকান ট্রাম্প গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে ফেরেন। ট্রাম্প অঙ্গীকার করেছিলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ফিলিস্তিনিপন্থী প্রতিবাদী আন্দোলনে জড়িত কিছু বিদেশি শিক্ষার্থীকে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেবেন। এই আন্দোলনকে তিনি ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে অভিহিত করেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের গাজাভিত্তিক সংগঠন হামাস। জবাবে গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সমর্থন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর জেরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ফিলিস্তিনিপন্থী ও ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। কয়েক মাস ধরে এই বিক্ষোভ চলে।

মাহমুদ খলিল তাঁর আন্দোলনকে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন বলে অভিহিত করছেন। এই আন্দোলনে ইহুদি ছাত্র ও গোষ্ঠীগুলোও অন্তর্ভুক্ত।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় ফিলিস্তিনিপন্থী শিক্ষার্থী বিক্ষোভকারীদের পক্ষের প্রধান আলোচকদের একজন ছিলেন মাহমুদ খলিল।

আরও পড়ুনফিলিস্তিনের জন্য বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করছে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়৩০ এপ্রিল ২০২৪

শিক্ষার্থী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কেউ কেউ গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় তাঁবু স্থাপন করেছিলেন। তাঁরা কয়েক ঘণ্টার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি একাডেমিক ভবনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের গ্রেপ্তারের জন্য ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে এনেছিল।

ভবনটি দখল করা শিক্ষার্থীদের দলে ছিলেন না মাহমুদ খলিল। তিনি বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস প্রভোস্ট ও বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যস্থতাকারী ছিলেন।

শনিবার গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টা আগে মাহমুদ খলিল বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। তিনি শিক্ষার্থী বিক্ষোভকারীদের নিয়ে ট্রাম্পের সমালোচনা সম্পর্কে কথা বলেন। মাহমুদ খলিল বলেন, তিনি এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন যে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার জন্য সরকার তাঁকে লক্ষ্যবস্তু করেছে।

অনলাইনে পাওয়া জীবনবৃত্তান্ত অনুসারে, মাহমুদ খলিল সিরিয়ার একটি ফিলিস্তিনি শরণার্থীশিবিরে বেড়ে ওঠেন। তিনি বৈরুতে ব্রিটিশ দূতাবাসে কাজ করেছেন।

মাহমুদ খলিলের গ্রেপ্তার বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি তাঁর আইনজীবী অ্যামি গ্রিয়ার। মাহমুদ খলিলের স্ত্রী তাঁর (মাহমুদ খলিল) এক সহপাঠীর মাধ্যমে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

আরও পড়ুনইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সমাপনীর মূল অনুষ্ঠান বাতিল০৭ মে ২০২৪

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কোনো স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে না। তবে এক বিবৃতিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা তাদের শিক্ষার্থীদের আইনি অধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ট্রাম্প ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মুখপাত্ররা এ বিষয়ে করা প্রশ্নের উত্তর দেননি।

আরও পড়ুনক্ষমা চাইলেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভকারী২৭ এপ্রিল ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৩ লাশ উদ্ধারের পর নেত্রকোনায় ধনু নদের তীরে কান্নার রোল
  • কানাডার হবু প্রধানমন্ত্রী কে এই মার্ক কার্নি, ট্রাম্পকে কি সামলাতে পারবেন তিনি
  • নড়াইলে ‘বিনা লাভের দোকান’ চালু করেছে শিক্ষার্থীরা
  • মহাসড়কের পাশে হাত-পা বাঁধা মরদেহটি পুরুষ নাকি নারীর, জানেনা পুলিশ
  • সাংহাইয়ের জলাভূমিতে বিরল ডালমেশিয়ান পেলিকানের ফিরে আসা
  • অভিষেকের অপেক্ষায় ডেবিড
  • দুই ট্রাকের সংঘর্ষে এক চালক নিহত
  • যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারী ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার
  • নারীর ভূমিকা মূল্যায়নে সোনারগাঁয়ে ব্যতিক্রমী প্রচারাভিযান