রমজানে হালাল খাবার ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ
Published: 10th, March 2025 GMT
রমজান মাস এলে দেখা যায়, ইফতার ও সাহ্রির সামগ্রীসহ বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অনেক গুণ বেড়ে যায়। অথচ রমজান মাস ছাড়া বছরের অন্য মাসগুলোতে এসব খাদ্যদ্রব্যের দাম অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে থাকে; ব্যতিক্রম ঘটে শুধু পবিত্র রমজান মাসে। অধিক মুনাফালোভী সুযোগসন্ধানীরা পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু খাদ্যদ্রব্য অনৈতিকভাবে মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে রমজানের কিছুদিন আগে বাজারের চাহিদা অনুপাতে অনেক কম পরিমাণে দ্রব্য বাজারে সরবরাহ করে এবং এর মূল্য বৃদ্ধি করে দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে করেছেন হারাম।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৭৫)। কোনো মুসলমান ব্যবসায়ী ভাই রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি ঘটিয়ে অন্য কোনো মুসলমানদের আল্লাহর স্মরণের পথে কি কখনো বাধার সৃষ্টি করতে পারে? বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য কমিয়ে দেওয়া হয় এবং মুসলমানরা প্রতিযোগিতা করে রোজাদারদের সেবা দিতে। যেখানে বিশ্বব্যাপী পবিত্র রমজান মাস এলে মানুষের প্রতি মানুষের সহানুভূতি বেড়ে যায়; ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে।
ব্যবসায়ীরা যদি তাঁদের দায়িত্ব পালন করেন, তবে প্রত্যেক রোজাদার স্বস্তিতে ইফতার–সাহ্রির আয়োজন করতে পারবেন এবং সঠিকভাবে রোজা পালনে কষ্ট ও হয়রানির শিকার হবেন না। ব্যবসায়ীরা যদি তাঁদের ব্যবসায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, রোজাদারদের পাশে সহানুভূতির দায়িত্ব নিয়ে দাঁড়াতে পারেন; তবে নিশ্চয়ই তাঁদের জন্য থাকবে আল্লাহ তাআলার ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে দুনিয়ায় রহমত, বরকত এবং পরকালের মাগফিরাত, নাজাতসহ অনেক অনেক কল্যাণ।
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্যের প্রশিক্ষণের মাস রমজান। এ রহমত, মাগফিরাত, নাজাতের মাসেও আমাদের ভ্রাতৃঘাতী ও নির্মমতার চর্চা হতে দেখা যায়। মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী গুদামজাত করেন অতি মুনাফার লোভে; ফলে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জনগণের জীবিকা সংকীর্ণ করে যে ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করবে, সে বড় অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে।’ (মুসলিম ও তিরমিজি) প্রিয় নবী (সা.) আরও বলেন, ‘মুজরিম তথা অপরাধীর পক্ষেই সম্ভব পণ্য মজুত করে জনগণের সংকট সৃষ্টি করা।’ (মুসলিম) মুহাদ্দিসগণ বলেন, আলোচ্য হাদিসে মজুতদারকে অপরাধী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআনে অপরাধী শব্দটি ফেরাউন, হামান ও কারুনের মতো প্রতাপশালী এবং অহংকারী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে। (সুরা-২৮ কসাস, আয়াত: ৮)
মজুতদারের হীন মানসিকতা ও কদর্যপূর্ণ স্বার্থপরতাকে মহানবী (সা.) এভাবে ব্যক্ত করেছেন, ‘গুদামজাতকারী কতই না ঘৃণিত মানুষ। আল্লাহ তাআলা দ্রব্যমূল্য কমিয়ে দিলে সে চিন্তায় পড়ে যায়। আর বাড়িয়ে দিলে সে আনন্দিত হয়। (মিশকাত ও শুআবুল ইমান) রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করে রাখবে, মানুষকে কষ্ট দেবে, সে এ সম্পদ দান করে দিলেও তার গুনাহ মাফের জন্য যথেষ্ট হবে না।’ (মিশকাত) খাদ্যগুদামজাতকারী সম্পর্কে রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমদানি করে, সে রিজিকপ্রাপ্ত। আর যে গুদামজাত করবে, সে অভিশপ্ত হবে।’ (ইবনে মাজাহ ও দারেমি)
মাহে রমজান উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা মজুতদারি থেকে নিজে বিরত থাকবেন, অন্যকেও এই ভয়াবহ গুনাহ থেকে বিরত রাখবেন। রোজাদারদের ঠকানোর গুনাহ থেকে আল্লাহ তাআলা আমাদের হেফাজত করুন। হালালভাবে ব্যবসা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং দুনিয়ার সুখ–শান্তি ও আখিরাতে মুক্তি লাভের পাশাপাশি নবী-সিদ্দিকদের সঙ্গে জান্নাতে যাওয়ার তাওফিক আমাদের দিন।
● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ল হ ত আল ব যবস য় দ রব য বল ছ ন অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
স্বচ্ছতার জন্য ডিএনসিসির প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে:
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) ডিএনসিসির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত পশ্চিম শেওড়াপাড়া, পশ্চিম কাজীপাড়া ও সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা, ৫ কিলোমিটার নর্দমা ও দেড় কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণকাজের উদ্বোধন ও গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা জানান।
ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, ডিএনসিসির সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। প্রকল্পটি কবে শুরু হবে, কবে শেষ হবে, কতা টাকা বরাদ্দ আছে—এসব তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। এছাড়া, রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ হলে নির্মাণ সামগ্রী কী, সেটা জনগণের জানা দরকার। যখন জনগণ জানবে, তখন তারা জবাবদিহি করতে পারবে।
তিনি বলেন, “আমি গত সপ্তাহে কাউকে না জানিয়ে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে চলমান কাজ পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম, রাস্তাকে ধরে রাখার জন্য যে ওয়াল (বিশেষ দেয়াল) দেওয়া হয়েছে, সেটার পিলার বানানোর কথা ছিল স্টোন দিয়ে; কিন্তু বানিয়ে রেখেছে ব্রিক দিয়ে। এটা বড় দুর্নীতি। স্থানীয় মানুষ যদি না জানে, কী নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হবে, তাহলে দুর্নীতি করাটা সহজ। তথ্যের যত বেশি আদান-প্রদান হবে, তথ্য যত বেশি পাবলিক করা হবে, জনগণ তত বেশি জবাবদিহি করতে পারবে। আমি ঠিকাদারকে জানিয়ে দিয়েছি, সঠিক নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার না করলে বিল দেব না। তারা বলেছে, এটা ঠিক করে দেবে।”
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, যার যার এলাকার কাজ তারা বুঝে নেবেন। বুঝে নেওয়ার জন্য যত তথ্য ও সহযোগিতা লাগবে, সেটা আমরা দেব। ডিএনসিসির ওয়েবসাইটে প্রকল্পের সব তথ্য ও ঠিকাদারের ফোন নম্বরসহ দেওয়া থাকবে। স্থানীয় জনগণ স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ বুঝে নেবেন। আমরা চাই, সকলের অংশগ্রহণে উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হবে। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় সোসাইটি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতা পাচ্ছি। সবার অংশগ্রহণ বাড়াতে আমি বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিয়ে গণশুনানি করছি। প্রতি মাসে ফেসবুক লাইভে দেশে-বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সাথে যুক্ত হচ্ছি। ডিএনসিসির সবার ঢাকা অ্যাপ আছে, সেটির পাসওয়ার্ড পর্যন্ত আমাদের দিচ্ছে না। আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা ৪ কোটি টাকা খরচ করে এই অ্যাপ বানিয়েছে। পাসওয়ার্ড না দিলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।”
ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় হকারদের জন্য হাটা যায় না। মানুষের অবাধ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। ঢাকা শহরে মানুষের চলাচলের অধিকার সবার আগে, সেই অধিকার আমরা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। মিরপুর-১০ এর প্রধান সড়কের যত হকার ও অটোরিকশা আছে, সেগুলো আমরা বন্ধ করে দেব। যারা এ ধরনের ইনফরমাল পেশায় যুক্ত আছেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্যও আমরা প্ল্যাটফর্ম করব। তাদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা আমরা তৈরি করব। এই শহরটা সবার, সবাই একসাথে বসবাস করব; কিন্তু অন্যদের কষ্ট না দিয়ে, অন্যের অধিকার নষ্ট না করে।
বক্তৃতা শেষে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, অঞ্চল-৪ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহাবুব আলম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
ঢাকা/এএএম/রফিক