রমজান মাস এলে দেখা যায়, ইফতার ও সাহ্‌রির সামগ্রীসহ বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অনেক গুণ বেড়ে যায়। অথচ রমজান মাস ছাড়া বছরের অন্য মাসগুলোতে এসব খাদ্যদ্রব্যের দাম অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে থাকে; ব্যতিক্রম ঘটে শুধু পবিত্র রমজান মাসে। অধিক মুনাফালোভী সুযোগসন্ধানীরা পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু খাদ্যদ্রব্য অনৈতিকভাবে মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে রমজানের কিছুদিন আগে বাজারের চাহিদা অনুপাতে অনেক কম পরিমাণে দ্রব্য বাজারে সরবরাহ করে এবং এর মূল্য বৃদ্ধি করে দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.

) বলেছেন, ‘সত্যবাদী আমজনতা ও বিশ্বাসী ব্যবসায়ী হাশরের দিন নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের কাতারে থাকবেন।’ (তিরমিজি)

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে করেছেন হারাম।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৭৫)। কোনো মুসলমান ব্যবসায়ী ভাই রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি ঘটিয়ে অন্য কোনো মুসলমানদের আল্লাহর স্মরণের পথে কি কখনো বাধার সৃষ্টি করতে পারে? বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য কমিয়ে দেওয়া হয় এবং মুসলমানরা প্রতিযোগিতা করে রোজাদারদের সেবা দিতে। যেখানে বিশ্বব্যাপী পবিত্র রমজান মাস এলে মানুষের প্রতি মানুষের সহানুভূতি বেড়ে যায়; ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে। 

ব্যবসায়ীরা যদি তাঁদের দায়িত্ব পালন করেন, তবে প্রত্যেক রোজাদার স্বস্তিতে ইফতার–সাহ্‌রির আয়োজন করতে পারবেন এবং সঠিকভাবে রোজা পালনে কষ্ট ও হয়রানির শিকার হবেন না। ব্যবসায়ীরা যদি তাঁদের ব্যবসায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, রোজাদারদের পাশে সহানুভূতির দায়িত্ব নিয়ে দাঁড়াতে পারেন; তবে নিশ্চয়ই তাঁদের জন্য থাকবে আল্লাহ তাআলার ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে দুনিয়ায় রহমত, বরকত এবং পরকালের মাগফিরাত, নাজাতসহ অনেক অনেক কল্যাণ। 

মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্যের প্রশিক্ষণের মাস রমজান। এ রহমত, মাগফিরাত, নাজাতের মাসেও আমাদের ভ্রাতৃঘাতী ও নির্মমতার চর্চা হতে দেখা যায়। মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী গুদামজাত করেন অতি মুনাফার লোভে; ফলে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জনগণের জীবিকা সংকীর্ণ করে যে ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করবে, সে বড় অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে।’ (মুসলিম ও তিরমিজি) প্রিয় নবী (সা.) আরও বলেন, ‘মুজরিম তথা অপরাধীর পক্ষেই সম্ভব পণ্য মজুত করে জনগণের সংকট সৃষ্টি করা।’ (মুসলিম) মুহাদ্দিসগণ বলেন, আলোচ্য হাদিসে মজুতদারকে অপরাধী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআনে অপরাধী শব্দটি ফেরাউন, হামান ও কারুনের মতো প্রতাপশালী এবং অহংকারী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে। (সুরা-২৮ কসাস, আয়াত: ৮) 

মজুতদারের হীন মানসিকতা ও কদর্যপূর্ণ স্বার্থপরতাকে মহানবী (সা.) এভাবে ব্যক্ত করেছেন, ‘গুদামজাতকারী কতই না ঘৃণিত মানুষ। আল্লাহ তাআলা দ্রব্যমূল্য কমিয়ে দিলে সে চিন্তায় পড়ে যায়। আর বাড়িয়ে দিলে সে আনন্দিত হয়। (মিশকাত ও শুআবুল ইমান) রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করে রাখবে, মানুষকে কষ্ট দেবে, সে এ সম্পদ দান করে দিলেও তার গুনাহ মাফের জন্য যথেষ্ট হবে না।’ (মিশকাত) খাদ্যগুদামজাতকারী সম্পর্কে রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমদানি করে, সে রিজিকপ্রাপ্ত। আর যে গুদামজাত করবে, সে অভিশপ্ত হবে।’ (ইবনে মাজাহ ও দারেমি) 

মাহে রমজান উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা মজুতদারি থেকে নিজে বিরত থাকবেন, অন্যকেও এই ভয়াবহ গুনাহ থেকে বিরত রাখবেন। রোজাদারদের ঠকানোর গুনাহ থেকে আল্লাহ তাআলা আমাদের হেফাজত করুন। হালালভাবে ব্যবসা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং দুনিয়ার সুখ–শান্তি ও আখিরাতে মুক্তি লাভের পাশাপাশি নবী-সিদ্দিকদের সঙ্গে জান্নাতে যাওয়ার তাওফিক আমাদের দিন।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ ত আল ব যবস য় দ রব য বল ছ ন অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

এনসিপি জনগণের দল, তাদের টাকায় পরিচালিত হবে

নির্বাচনের জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মানসিক প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। আগের বক্তব্যের ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব নয়– এভাবে কথাটি বলিনি। নির্বাচন রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করবে। যদি রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারি, কাঙ্ক্ষিত সময়েই গণপরিষদ ও সংসদ নির্বাচন সম্ভব। নির্বাচনে যাওয়ার আগে দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম এবং সংস্কারে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন চাই। 

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাংলামটরে দলীয় কার্যালয়ে এনসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভার পর এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সরকারের উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দলের দায়িত্ব নেওয়া নাহিদ ইসলাম। 
বিভিন্ন স্থানে সমন্বয়ক পরিচয়ে অপকর্ম হচ্ছে– এই অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, সমন্বয়ক পদ এখন কার্যকর নয়। এ পরিচয় কেউ দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সূত্র জানিয়েছে, নারী নেতারা সভায় জানান, তারা বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াতসহ সব পক্ষের সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। শীর্ষ নেতারা জানান, এ ইস্যুতে নারী নেতাদের পাশে থাকবে দল। রোজার পর দেশজুড়ে সংগঠনের বিস্তারের কাজ শুরু হবে।

রয়টার্স আগের দিন জানিয়েছিল, ডিসেম্বরে নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মনে করেন নাহিদ ইসলাম। নাহিদ গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘এভাবে কথাটা বলিনি। বলেছিলাম, আইনশৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি, এমন নাজুক অবস্থায় নির্বাচন করা কঠিন হবে। পুলিশ প্রশাসনের সুষ্ঠু নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা দীর্ঘদিন নেই। অবশ্যই নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি করতে হবে।’ 
শেখ হাসিনার পতন ঘটনানো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে এক দফার ঘোষণা করা নাহিদ বলেন, রাজনৈতিক ঐকমত্যে সংস্কারের জুলাই সনদ সই হওয়ার কথা। জনগণ দেখতে পাবে কোন রাজনৈতিক দল সংস্কারের পক্ষে বা বিপক্ষে। ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হবে। তার আগে কীভাবে নির্বাচনের দিকে যাব? 
নারীর প্রতি নিপীড়নের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং এনসিপির নারী সদস্যদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, বুলিং চলছে। ফ্যাসিবাদীর কর্মীরা অনেক বেশি যুক্ত হচ্ছেন এর সঙ্গে। সরকারের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এনসিপির কার্যক্রম বিষয়ে নাহিদ বলেন, নিবন্ধনের শর্ত পূরণে মনোযোগী হচ্ছি। তৃণমূলে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছি। রোজার পর পুরোদমে শুরু করব। 

দাতারা ক্ষতির শিকার হবে না, তার নিশ্চয়তা দিতে হবে
ধনীদের কাছ থেকে টাকা পাচ্ছে এনসিপি– নাহিদের সাক্ষাৎকারের এ তথ্য জানিয়েছিল রয়টার্স। নাহিদ ইসলাম এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, সচ্ছল ব্যক্তি, শুভাকাঙ্ক্ষীরা সহযোগিতা করে। আমরা ক্রাউড ফান্ডিংয়ের দিকে যাচ্ছি। এর মাধ্যমে দলের কার্যালয় এবং ইলেকশন তহবিল তৈরি করা হবে। আর্থিক সহায়তার জন্য রিকশাওয়ালা থেকে সমাজের সব শ্রেণির মানুষের কাছে যাব। এনসিপি জনগণের দল, জনগণের টাকায় পরিচালিত হবে। ফিন্যান্সিয়াল পলিসি টিম গঠন হয়েছে। ডায়াসপোরা টিম এবং দেশীয় বিভিন্ন অর্থনীতিবিদের সঙ্গে কথা বলছি।
রাজনৈতিক দলের আর্থিক সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, কারা সহযোগিতা করছে, নাম প্রকাশ করলে তারা ক্ষতির শিকার হবে না– এ নিশ্চয়তা সরকার থেকে দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে কারা আর্থিক সহায়তা করছে, কোন খাতে ব্যয় হচ্ছে, তা প্রকাশের সংস্কৃতি আসুক। এককভাবে এই সংস্কৃতি তৈরি এনসিপির পক্ষে সম্ভব নয়। 

নির্বাচন পেছানোর ভয় কেন করে: সারজিস আলম 
‘শেখ হাসিনার বিচারের আগে নির্বাচনের কথা কেউ যেন ভুলেও না তোলে’– এ বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেন, এখনও মা-বাবারা লাশ খুঁজে বেড়াচ্ছে। জানি না, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনকেন্দ্রিক কথা এলেই, কেন তারা নির্বাচন পেছানোর ভয় করে! একটা নির্বাচন হবে, আমরা দ্রুত ক্ষমতায় যাব– এই চিন্তা কেন কাজ করে। 
সারজিস বলেন, নির্বাচনে সবাইকে শহীদ পরিবার, আহত আন্দোলনের যোদ্ধাদের কাছে যেতে হবে। তখন যেন বলতে পারি, ঐক্যবদ্ধভাবে খুনি হাসিনার বিচার নিশ্চিত করে এসেছি। বাকিদের বিচার নিশ্চিত করা হবে। এর সঙ্গে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার যে সম্পর্ক দেখানো হচ্ছে, তা সেভাবে সম্পর্কিত নয়। 

দুটি কর্মসূচি ঘোষণা 
সংবাদ সম্মেলনে সদস্য আখতার হোসেন বলেন, প্রথম কর্মসূচি হিসেবে অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার এবং আহতদের সম্মানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামী সোমবার ইফতার মাহফিল হবে। পরদিন মঙ্গলবার এনসিপির ইফতার মাহফিল হবে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানে। 
সংবাদ সম্মেলনে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি ছাত্র ফ্রন্টের
  • ট্যাগিং রাজনীতি যে সর্বনাশ ডেকে আনবে
  • পুলিশের জবাবদিহির দাবিতে চট্টগ্রামে থানা ঘেরাও
  • ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে ঘুমন্ত স্কুলছাত্রের মৃত্যু
  • সিকদার গ্রুপের ৪২টি বিও হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ
  • মাগুরার ঘটনা গোটা মানবতার ওপর ছুরিকাঘাত: জামায়াতের আমির
  • চুয়াডাঙ্গায় টিসিবির পণ্য নিয়ে বিরোধে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১
  • রমজানের প্রথম ১০ দিনে করণীয়
  • এনসিপি জনগণের দল, তাদের টাকায় পরিচালিত হবে