খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: উদ্বোধন হলো ‘শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণ’
Published: 10th, March 2025 GMT
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের প্রথম নামকরণ করা হয়েছিল ‘বিজয় তোরণ’। গত বছরের ৩০ জুন ওই নামে নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনও করা হয়। ৫ আগস্টের পর নির্মাণাধীন ওই ফটকের নাম ‘শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণ’ রাখেন শিক্ষার্থীরা। লাল রং দিয়ে দেয়ালে তাঁরা নামটি লিখেও রাখেন। সেই নামেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক গতকাল রোববার দুপুরে উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় নিহত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমানের (মুগ্ধ) স্মৃতি রক্ষার্থে ‘শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণ’ নামকরণ করা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে আয়োজিত তাঁর স্মরণসভায় শিক্ষার্থীরা ওই দাবি করেছিলেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ডিসিপ্লিনের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন মীর মাহফুজুর রহমান (মুগ্ধ)। গত বছরের মার্চে স্নাতক শেষ করে তিনি খুলনা ছেড়ে ঢাকায় চলে যান। ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত তিনি আন্দোলনরত ক্লান্ত-শ্রান্ত শিক্ষার্থী-জনতাকে ‘ভাই, পানি লাগবে? পানি?’ বলছিলেন। এ সময় তাঁর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা সবাইকে নাড়া দেয় প্রবলভাবে।
ফটক উদ্বোধন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে আলোচনা সভা হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, ‘শহীদ মীর মুগ্ধদের আত্মত্যাগে নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। তরুণেরা জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে দেশের প্রয়োজনে তাঁরা যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। এই বীর শহীদদের স্মৃতি রক্ষার দায়িত্ব আমাদের।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো.
জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে আলোচনা সভা শুরু হয়। পরে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের কথা রাখল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, প্রধান ফটকের নাম হচ্ছে শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণ
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। গত বছরের ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মারা যান। মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত তিনি আন্দোলনরত ক্লান্ত–শ্রান্ত শিক্ষার্থী ও জনতাকে পানি পান করাচ্ছিলেন। ‘ভাই, পানি লাগবে পানি’ বলে মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে তাঁর গুলিবিদ্ধ হওয়ার দৃশ্য দেশবাসীর হৃদয় নাড়িয়ে দেয়। সেই মুগ্ধর স্মরণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের নামকরণ করা হয়েছে ‘শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণ’।
আগামীকাল রোববার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণ উদ্বোধন করবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। এর আগে গত ৫ আগস্টের পরপরই নির্মাণাধীন ওই ফটকের সামনে শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণ লিখে দেন শিক্ষার্থীরা। সেটিই ফটকের নামকরণ করার জন্য দাবি তুলেছিলেন তাঁরা। ‘বিজয় তোরণ’ হিসেবে ফটকটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়েছিল।
আগামীকালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবদুল মজিদ, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নাজমুল আহসান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. হারুনর রশীদ খান, ট্রেজারার অধ্যাপক মো. নূরুন্নবী এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ও মুগ্ধের জমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান (স্নিগ্ধ)। সভাপতিত্ব করবেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো মীর মুগ্ধর স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ও বর্তমান উপাচার্য মো. রেজাউল করিম। ওই সভায় উপস্থিত থেকে মীর মুগ্ধর বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান (দীপ্ত) ও জমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান (স্নিগ্ধ) এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা স্মৃতিচারণ করেন।
সভায় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরা হয়। ওই দাবিগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় দাবি ছিল প্রধান ফটকের নাম শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণ হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া। অন্যান্য দাবির মধ্যে ছিল ১৮ জুলাই শহীদ মীর মুগ্ধ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান ও যথাযথ মর্যাদায় তা পালন করা, টিএসসির সামনে শহীদ মীর মুগ্ধর স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মৃতিফলক নির্মাণ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে রাষ্ট্রের কাছে মীর মুগ্ধ হত্যার বিচার চেয়ে আবেদন এবং এই আন্দোলনে সব শহীদের স্মরণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরে জুলাই গণহত্যা নামে একটি স্মৃতি কর্নার করা।
পরবর্তী সময়ে মো. রেজাউল করিম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো পূরণের উদ্যোগ নেন। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবেই ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২৩০তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের নাম শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণ করা হয়।