আজ খতমে তারাবিহতে কোরআনের সুরা ইউসুফের ৫৩ নম্বর আয়াত থেকে সুরা ইবরাহিম পুরোটা তিলাওয়াত করা হবে। ১৩তম পারা পড়া হবে।
আজকের তিলাওয়াতে হজরত ইউসুফ (আ.)-এর জীবনের চমকপ্রদ ঘটনার শেষাংশ, একাত্ববাদ, স্তম্ভহীন আকাশে আল্লাহর নিদর্শন, কোরআনের মাহাত্ম্য, আল্লাহর জিকিরে অন্তরে প্রশান্তি লাভ, আল্লাহ সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, জীবন-মরণ তাঁর হাতে, বিশ্বাসীদের বৈশিষ্ট্য, কিয়ামত, জাহান্নামের শাস্তি, নবী-রাসুলদের সঙ্গে অবিশ্বাসীদের আচরণ ও পরিণতি এবং হক-বাতিলের পরিচয় ইত্যাদি বিষয়ের কথা রয়েছে।
কারাবন্দী থেকে অর্থমন্ত্রী
সুরা ইউসুফে হজরত ইউসুফ (আ.
সে সময় মিসর ও এর আশপাশে দুর্ভিক্ষ চলছিল। অভাবে পড়ে তাঁর ভাইয়েরা বিশেষ দান পেতে মিসরে আসেন। ইউসুফ ভাইদের চিনতে পেরেও নিজের পরিচয় গোপন রাখেন। ভাইয়েরা অবশ্য কয়েকবার সাক্ষাতের পরও তাঁকে চিনতে পারেননি।
হজরত ইউসুফ (আ.) একবার শর্ত দিয়ে বললেন, ত্রাণ পেতে হলে তোমাদের ছোট ভাইকে আনতে হবে। ছোট ভাইয়ের নাম বেনিয়ামিন। বেনিয়ামিন ইউসুফ (আ.)-এর সহোদর ভাই। বাবা ইয়াকুব (আ.) এ কথা জেনে বেঁকে বসেন। কিন্তু অভাবের সংসার আর ছেলেদের অনুনয়ে শেষে দিলেন। পরে ভাইয়েরা বেনিয়ামিনকে সঙ্গে করে মিসর আসেন।
আরও পড়ুনতারাবির নামাজে কোন দিন কোন সুরা পড়া হবে২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ইউসুফ (আ.) ছোট ভাইকে দেখে আত্মতৃপ্ত হন। কৌশলে নিজের কাছে রেখে দেন। ভাইদের কাছে বাবা ইয়াকুবের জন্য নিজের পরনের জামা দিয়ে বলেন, ‘এটা আমার আব্বার চেহারার ওপর রেখো।’ পুত্রশোকে অন্ধ হওয়া ইয়াকুব (আ.) পুত্রের জামার বদৌলতে দৃষ্টি ফিরে পান। পরে সপরিবার মিসরে চলে এসে এখানেই বসতি স্থাপন করেন।
জুলেখার সঙ্গে ইউসুফ (আ.)-এর প্রেম বিষয়ে নানা কথাবার্তা সমাজে চালু রয়েছে। জুলেখার একপক্ষীয় প্রেম ছিল। ইউসুফ তাঁকে কখনো সেভাবে দেখেননি। তবে মুফাসসিররা বিচ্ছিন্ন সনদে উল্লেখ করেছেন, জুলেখার স্বামী কিতফিরের মৃত্যুর পর এবং তওবা করার পর ইউসুফ (আ.)-এর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। দুটি ছেলে সন্তানও হয়েছিল তাঁদের (তাফসিরে ইবনে আবি হাতিম: ৮/৩৯০; তাফসিরে তবারি: ১৬/১৫১)। তবে এ বিষয়ে কোরআন-হাদিস থেকে স্পষ্ট কিছুই জানা যায় না।
আরও পড়ুননারীর মর্যাদা ও অধিকার এবং অলৌকিক তিন ঘটনা১২ মার্চ ২০২৪বজ্রের নামে সুরার নামকোরআনের ১৩ নম্বর সুরা রাদ। ৪৩টি আয়াতবিশিষ্ট সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। রাদ অর্থ বজ্র। বজ্রও আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করে, এ সুরায় বজ্রের আলোচনা থাকায় এর নাম রাখা হয়েছে সুরা রাদ। এ সুরার শুরুতে তিনটি মৌলিক আকিদা তথা তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতের কথা এসেছে।
সত্য-অসত্যের উদাহরণ
সুরা রাদের ১৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা সত্য-মিথ্যার তুলনা বোঝাতে চমৎকার একটি উদাহরণ দিয়েছেন। মিথ্যা ও বাতিল জিনিসের উপমা হলো, ঢেউয়ের ওই বুদ্বুদের মতো, যা সাময়িকভাবে সবকিছু ঢেকে দেয়। কিন্তু অবশেষে বিলুপ্ত যায়। সত্যপন্থীদের উপমা হলো, সেই সোনা-রুপার মতো, যা ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে যায় না; বরং জমিনে থেকে যায়। আগুনের সুষম তাপে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়।
আরও পড়ুনইসলাম যাদেরকে বিয়ে করতে নিষেধ করেছে১৩ মার্চ ২০২৪বুদ্ধিমানের ৮ গুণআল্লাহ তাআলা সুরা রাদের ২০ থেকে ২৪ নম্বর আয়াতে সত্যিকারের বুদ্ধিমান ও বিশ্বাসীদের ৮টি গুণের কথা বলেছেন। এ গুণের অধিকারীদের জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। গুণগুলো হলো:
১. তারা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন।
২. আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন।
৩. আল্লাহকে ভয় করেন।
৪. পরকালের হিসাব ভয় করেন।
৫. ধৈর্যধারণ করেন।
৬. নামাজ প্রতিষ্ঠা করেন।
৭. গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করেন।
৮. উত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে দুর্ব্যবহারের জবাব দেন।
আরও পড়ুনকোরআনের আয়াত ও দাম্পত্য সম্পর্কে সমঝোতা১৪ মার্চ ২০২৪দুর্ভাগাদের ৩ চিহ্নএ সুরার ২৫ নম্বর আয়াতে দুর্ভাগা ও আল্লাহর অভিসম্পাতের অন্তর্ভুক্ত তিন শ্রেণির লোকের কথা এসেছে। ১. তারা আল্লাহকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে। ২. আল্লাহ যে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার কথা বলেছেন, তা ছিন্ন করে। ৩. পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে।
সুরা ইবরাহিমে ইবরাহিম (আ.)-এর কথা
৫২ আয়াতবিশিষ্ট সুরা ইবরাহিম মক্কায় অবতীর্ণ। কোরআনের ১৪তম সুরা এটি। এ সুরা নাজিল হওয়ার কিছুদিন পরই রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরত করেন। এতে ইবরাহিম (আ.)-এর সম্পর্কে বিশদ আলোচনা থাকায় এর নাম রাখা হয়েছে সুরা ইবরাহিম।
আরও পড়ুনহালাল খাবার গ্রহণ ও অসিয়তের গুরুত্ব১৫ মার্চ ২০২৪পবিত্র বাক্য পবিত্র বৃক্ষের মতোসুরা ইবরাহিমের ২৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা কালেমা তাইয়েবায় বিশ্বাসী মানুষ ও তার কাজের উদাহরণ একটি গাছের সঙ্গে দিয়েছেন, যার কাণ্ড মজবুত, সুউচ্চ এবং শিকড় মাটির গভীরে প্রোথিত। গাছটি এত শক্ত যে দমকা বাতাসে ভূমিসাৎ হয় না। এর ফল ময়লা ও আবর্জনা থেকে মুক্ত। এর শাখা উচ্চতায় আকাশপানে ধাবমান, ফল সব সময় খাওয়া যায়।
তাফসিরবিশারদেরা বলেন, এটি খেজুরগাছ। এ বৃক্ষের উপমায় মুমিনের উদাহরণ দেওয়ার কারণ হলো, কালিমায়ে তাইয়েবার মধ্যে ইমান হচ্ছে মজবুত ও অনড় শিকড় বিশিষ্ট, দুনিয়ার বিপদ একে টলাতে পারে না।
সব যুগেই খাঁটি মুসলমানরা ইমানের মোকাবিলায় জীবন-সম্পদ ও কোনো কিছুর পরোয়া করেনি। মুমিনরা দুনিয়ার নোংরামি থেকে সব সময় দূরে থাকেন। মুমিনের সৎকর্ম আকাশের দিকে উত্থিত হয়। তাদের আমল সব ঋতুতে অব্যাহত রয়েছে। তাদের কথাবার্তা, ওঠাবসা সমগ্র বিশ্বের জন্য ফলদায়ক। (তাফসিরে মারেফুল কোরআন, পৃষ্ঠা: ৭১৬-৭১৭)
ইবরাহিম (আ.)-এর প্রার্থনায় মানুষ
এ সুরার ৩৫ থেকে ৪১ নম্বর আয়াতে আল্লাহর কাছে ইবরাহিম (আ.)-এর বিশেষ দোয়ার কথা আছে। যে দোয়া ইবরাহিম (আ.) করেছেন দেশ, নিজের সন্তানসন্ততি, পরবর্তী বংশধরদের জন্য সুকল্যাণ, তাদের মধ্যে বিশ্বাসী মুসলমান ও নামাজি সন্তানের জন্য। সন্তানদের জন্য চেয়েছেন উত্তম রিজিক, আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। নিজ ও সন্তান যেন ইবাদতকারী হয়, সে কথার প্রার্থনা করেছেন। ক্ষমা চেয়েছেন নিজের জন্য, পিতার জন্য ও সব মুমিন-মুসলমানের জন্য। এ সুরার শেষ দিকে কিয়ামত দিবসের ভয়াবহতা এবং জাহান্নামের ভয়ংকর শাস্তির বর্ণনা রয়েছে।
আরও পড়ুনপ্রাচীন ৬ জাতি ধ্বংসের কাহিনি১৬ মার্চ ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক রআন র র আয় ত কর ছ ন র জন য আল ল হ ইউস ফ
এছাড়াও পড়ুন:
জিভের জড়তা কাটাতে মুসা (আ.) যে প্রার্থনা করেছিলেন
মুসা (আ.) তার শৈশবকাল তৎকালীন মিশরের রাজা ফেরাউনের বাড়িতে কাটিয়েছিলেন। শৈশবে তার সামনে খেজুর ও আগুনের অঙ্গার রাখা হয়েছিল। তিনি অঙ্গার উঠিয়ে নিয়ে মুখে পুরে দেন। ফলে তাঁর জিহ্বায় আড়ষ্ট হয়ে যায়।
কিন্তু ফেরাউনের কাছে আল্লাহর বাণী নিয়ে যাবার নির্দেশ যখন মুসাকে (আ.) আল্লাহ দিলেন, তখন তিনি তাঁর কাছে প্রার্থনা জানালেন, ‘রাব্বিশ রাহলি সাদরি ওয়া ইয়াসসিরলি আমরি..’ অর্থাৎ. ‘হে আমার প্রতিপালক আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দাও, আর আমার কাজ সহজ করে দাও। আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দাও। যাতে ওরা আমার কথা বুঝতে পারে। আর আমার আত্মীয়দের মধ্য থেকে আমার জন্য একজন সাহায্যকারী দাও।’ (সুরা তাহা, আয়াত: ২৫-২৯)
যেমন ফেরাউন বলেছিল আমি উত্তম, না এই ব্যক্তি? সে তো গরিব ও তুচ্ছ। সে তো স্পষ্টভাবে কথাও বলতে পারে না।
আরও পড়ুনইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরামের ফজিলত১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫হাসান বসরি (র.) বলেন যে, হজরত মুসা (আ.) জিহ্বার জড়তা কাটানোর জন্য প্রার্থনা করেছিলেন, তা কবুল হয়েছিল। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হজরত মুসার (আ.) এই ভয় ছিল যে, না জানি হয়তো ফেরাউন তার ওপর হত্যার অভিযোগ এনে তাকে হত্যা করে ফেলে। তার জিহ্বায় জড়তা ছিল তা তিনি জড়তা পরিষ্কার করে দেওয়ার জন্য প্রার্থনা করেন যাতে লোকেরা তার কথা বুঝতে পারে। তার দোয়া কবুল হয়।
তারপর তিনি দোয়া করেন যে, তার ভাই হারুন (আ.)-কে যেন নবী করে দেওয়া হয়। তাঁর এই দোয়া আল্লাহ মঞ্জুর করেন। উরওয়া (রা.) থেকে জানা যায় যে, একবার আয়েশা (রা.) ওমরাহ করতে যান। তিনি একজন বেদুঈনের বাড়িতে অবস্থান করেছিলেন। শুনতে পান যে, একজন লোক প্রশ্ন করল দুনিয়ায় কোন ভাই তার নিজের ভাইকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত করেছিলেন? তার এই প্রশ্ন শুনে সবাই নীরব হয়ে যায় এবং বলে আমাদের এটা জানা নেই। ওই লোকটি তখন বলে আল্লাহর শপথ, আমি ওটা জানি, তিনি হলেন হারুন (আ.), যিনি নবুয়তের প্রচারে তার ভাই মুসার (আ.) সহযোগী ছিলেন।
আরও পড়ুনসুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের বিশেষ ফজিলত০৭ মার্চ ২০২৫