যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ
Published: 10th, March 2025 GMT
ওয়ান-ইলেভেনে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যুক্তরাষ্ট্রের ভুল ভূমিকার কথা স্বীকার করে সাবেক উপরাষ্ট্রদূত জন এফ ড্যানিলোভিচের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ।
তবে দলটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ভুল ভূমিকার স্বীকৃতি শুধু কথায় না, তাদের নীতির ফলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করে জনগণকে যে নির্যাতন নিপীড়ন করেছে তার দায়ও নেওয়া উচিত। বিশেষ করে মজলুমদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনে যুক্তরাষ্ট্রের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
এছাড়া আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানো ও পরবর্তী ১৬ বছর ফ্যাসিবাদ কায়েমে নানা নির্যাতন নিপীড়নে সরাসরি জড়িত থাকায় ভারতের ভূমিকা মূল্যায়নের জন্য কমিশন গঠনেরও দাবি জানিয়েছে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ।
রবিবার (৯ মার্চ) রাতে এক যৌথ বিবৃতিতে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের রাজনৈতিক প্রধান আনিছুর রহমান ও সদস্য সচিব হাসান মোহাম্মদ আরিফ এ দাবি জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শনিবার ঢাকায় এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপরাষ্ট্রদূত জন এফ ড্যানিলোভিচের দেওয়া বক্তব্যে স্পষ্ট যে, সেনাবাহিনীর জেনারেল ও ব্রিগেডিয়াররা ভারতের মধ্যস্থতায় আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাতে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর যে সাজানো নির্বাচন আয়োজন করেছিল, তা যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করেছিল। এমনকি তড়িঘড়ি করে ওই নির্বাচন করতে যুক্তরাষ্ট্র চাপও দিয়েছিল।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ভুল ভূমিকার কথা স্বীকৃতি পাওয়ার পর ভারতের ভূমিকারও মূল্যায়ন করা জরুরি হয়ে গেছে। কারণ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানো ও পরবর্তীতে ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী জুলুম পীড়ন চর্চায় ভারতের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। এর মধ্যে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসার দুই মাসের মাথায় বিডিআর সদর দফতর পিলখানায় ৫৭ জন বীর সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে, যেখানে ভারতের সম্পৃক্ততা ওপেন সিক্রেট।
এছাড়াও ভারত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সকল নিপীড়নকে কূটনৈতিক প্রটোকল ভেঙে প্রকাশ্যেই সমর্থন করেছিল। এর মধ্যে একে একে বিরোধী দলীয় শীর্ষ নেতাদের সাজানো বিচারে ফাঁসি, মাওলানা সাঈদীর রায়কে ঘিরে একদিনে দুই শতাধিক মানুষকে গুলি করে হত্যাসহ হাজার হাজার বিরোধী নেতাকর্মীকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা এবং সর্বশেষ চব্বিশের জুলাই গণহত্যা রয়েছে। ভারত এতটাই বেপরোয়া ছিল যে, হরহামেশাই বাংলাদেশী নাগরিকদের গুম করে দেশটির কারাগারে নিয়ে আটকে রাখা হতো।
বিবৃতিতে ফ্যাসিবাদী জমানায় ভারতের ভূমিকার মূল্যায়নের দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে, দেশটি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে বাংলাদেশ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লুটে নিয়েছে। যার মধ্যে অনেক অন্যায্য অসম চুক্তি এখনো বহাল থাকায় বাংলাদেশের জনগণ চব্বিশের দ্বিতীয় স্বাধীনতার পরেও শোষণের শিকার হচ্ছে। এ অবস্থায় একটি কমিশন গঠন করে ভারতের ভূমিকার সার্বিক মূল্যায়ন করার বিকল্প নেই।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, জুলাই গণহত্যাসহ ফ্যাসিবাদী নির্যাতন নিপীড়নে ভারতের সরকার ও কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নীরবতা পালন করলেও জনগণ ঠিকই মনে রেখেছে। ভারতকে সৎ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক করতে হলে সব ভুল ও অপরাধের কাফফারা দিতে হবে।
শনিবার (৮ মার্চ) এক আলোচনায় বাংলাদেশে তিনবার কূটনীতিকের দায়িত্ব পালন করা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপরাষ্ট্রদূত জন এফ ড্যানিলোভিচ ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের আঁতাত ও দলটি ক্ষমতায় যাওয়ার পর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অধোগতির কথা তুলে ধরেন। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে ভুল করেছে তাও তিনি বর্ণনা করেন।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সমর থ সরক র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
বিএসইসিতে আন্দোলন: এখনও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেননি চেয়ারম্যান
গত বৃহস্পতিবারে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কর্মকর্তারা লাগাতার কর্ম বিরতির ঘোষণা দিলেও আজ রোববার বেশিরভাগ কর্মকর্তারা কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। কর্মকর্তাদের ডেস্কে গিয়ে দেখা গেছে, স্বাভাবিক কোন কাজ চলছে না। সকলের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারের সব অংশীজনদের সঙ্গে আজ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত টানা দু'ঘণ্টা বৈঠক করেছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদসহ তিন কমিশনার।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ জানান, তিনি এখনও কোনো কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য আলোচনা করেননি।
গত বুধবার বিএসইসির চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারকে চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে তাদের পদত্যাগ দাবি ও চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে চেয়ারম্যানের গানম্যান আশিকুর রহমান বাদী হয়ে নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম ও রেজাউল করিমসহ ১৬ জন কর্মকর্তাকে আসামি করে একটি মামলা করেছিলেন।
রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় করা ওই মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আজ কমিশনে কাজে যোগদান করেননি।
সাংবাদিকরা বিএসইসির চেয়ারম্যানের কাছে ওই মামলায় কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা হবে কিনা, কিংবা এ বিষয়ে কমিশনের পরবর্তী সিদ্ধান্ত কি জানতে চেয়েছিলেন। চেয়ারম্যান এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দেননি।
এর আগে কমিশনের সঙ্গে শেয়ারবাজার অংশজনরা জরুরি বৈঠক করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম এবং পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, কর্মকর্তাদের যৌক্তিক কোনো দাবি বা ক্ষোভ থাকলে তা যথাযথ আইন ও নিয়ম মেনে প্রক্রিয়ায় কমিশন বা সরকারের কাছে জানানোর উপায় রয়েছে। কমিশনের কোনো সিদ্ধান্তে কেউ বিক্ষুব্ধ হলে তা আইনি প্রক্রিয়ায় মোকাবেলা করারও অধিকার অন্য সবার মত কমিশন কর্মকর্তাদেরও রয়েছে। এ ঘটনায় দেশের শেয়ারবাজারের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
গত বুধবার চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অবরুদ্ধ করে তাদের দাবি জানানো এবং পরবর্তী ঘটনাক্রমগুলো ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত- এমন মন্তব্য করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান বলেন, সকল অংশীজন আশা করে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর যাতে না ঘটে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ দায়িত্বশীল আচরণ করবেন।
ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, বিএসইসি হচ্ছে শেয়ারবাজারের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ সংস্থার সুনাম সংবেদনশীলতা ও মর্যাদা সমুন্নত রাখার দায় বাজার সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের।
বুধবারের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় কমিশনের নিরীহ, সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তারা যাতে কোনোরূপ হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে কমিশনের কাছে অনুরোধ করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে বিগত দিনে শেয়ার বাজারে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন তিনি।
মমিনুল ইসলাম আরও জানান, উদ্ভূত ঘটনায় শেয়ারবাজারে লেনদেন স্বাভাবিক রাখতে তৎপর রয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। এ ঘটনায় কেউ যাতে পরিস্থিতির সুযোগ নিতে না পারে, তার জন্য স্টক এক্সচেঞ্জের সারভিলেন্স এবং মনিটরিং কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে আজ ঢাকার শেয়ারবাজার ডিএসইতে স্বাভাবিক লেনদেন হলেও দর হারিয়েছে ২৭৪ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড। দর বেড়েছে ৫৮টির।
টাকার অংকে মোট লেনদেন হয়েছে ৩৩৬ কোটি টাকার শেয়ার ও ফান্ড। তবে প্রধানমূল্য সূচক ডিএসইএক্স ২৯ পয়েন্ট হারিয়ে ৫১৭৪ পয়েন্টে নেমেছে।