টাকা আত্মসাৎ, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা
Published: 10th, March 2025 GMT
প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাহকের নামে ঋণ মঞ্জুর করে টাকা আত্মাসাতের অভিযোগে ঝালকাঠির একটি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
রবিবার (৯ মার্চ) সকালে ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতে মামলাটি করেন ভুক্তভোগী গ্রাহক মো. হোসেন মল্লিক ওরফে হোচেন মল্লিক। আদালত মামলাটি তদন্ত করে সিআইডিকে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
মাগুরায় শিশু ‘ধর্ষণ’: প্রধান আসামি ৭ দিন, বাকিরা ৫ দিনের রিমান্ডে
মাগুরায় শিশু ‘ধর্ষণ’
নিরাপত্তার শঙ্কায় আসামিদের নেওয়া যায়নি আদালতে, হয়নি রিমান্ড শুনানি
বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা শান্ত মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আসামি হলেন- শরীফ মো.
মামলার বাদী হোচেন মল্লিক নলছিটি উপজেলার রাজনগর এলাকার বাসিন্দা।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, আসামি শরীফ মো. হেমায়েত উদ্দিন অগ্রণী ব্যাংকের নলছিটি শাখায় কর্মরত থাকাকালীন ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর অসৎ উদ্দেশ্যে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বাদীর স্বাক্ষর জাল করে সৃজিত কাগজপত্রের মাধ্যমে বাদীর নামে ৩০ হাজার টাকা কৃষি ঋণ মঞ্জুর করে সম্পূর্ণ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। ২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর ঋণ খেলাপী হিসেবে বাদীকে ব্যাংক থেকে ঋণ আদায়ের তাগাদাপত্র দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি অগ্রণী ব্যাংকের নলছিটি শাখা কার্যালয়ে শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে লিখিত অঙ্গীকারনামার মাধ্যমে ঋণ হিসাব নম্বর ০২০০০১১১৩৬৮৬৩-এর সম্পূর্ণ ঋণ গত ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আসামি পরিশোধের অঙ্গীকার করেন। ওই সময়ের মধ্যে আসামি ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় বাদী আদালতে মামলা করেন।
ঢাকা/অলোক/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গুদাম উন্নত করা দরকার
বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে কিনা, তা নিয়ে নানা শঙ্কার খবর আসছে। প্রতি বছর এই শঙ্কা থাকে, লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয় না। এর পেছনে কিছু সাধারণ কারণ থাকলেও এলাকাভেদে এর ভিন্নতা আছে। তবে দিনের শেষে ফলাফল– চাষির দীর্ঘশ্বাস।
দেশে বোরো ধানের ৪৭ শতাংশ উৎপাদন করেন ক্ষুদ্র চাষিরা। ৩৩ শতাংশ চাষি নগদ টাকায় জমি ভাড়া নিয়ে চাষ করেন, আর ২৬ শতাংশ ভাগচাষি। উৎপাদন খরচ বেশি আর দাম কম হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এই তিন ধরনের চাষি। তারা মূলত ঋণ করে ও পারিবারিক অর্থ বিনিয়োগ করে ধান চাষ করেন। এর পর উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে ধান বেচে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। সরকার প্রতি বছর যে চাল সংগ্রহ করে, তাতে মূলত চালকল মালিকরা লাভবান হন।
এসব কারণে প্রতি বছর ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন তলানিতে থাকে। উপজেলা শহরের খাদ্যগুদামে গিয়ে কৃষকরা ধান বিক্রির ধকল পোহাতে চান না। তাই সরকার নির্ধারিত মূল্যের অনেক কম দামে ব্যবসায়ীদের কাছে ধান বিক্রি করে দেন। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে রাজ্যভেদে কৃষিপণ্যের সরকারি সংগ্রহের পরিমাণ হচ্ছে মোট উৎপাদনের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। উৎপাদন খরচের ওপর তারা ২০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা যোগ করে সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। যদিও কৃষকদের দাবি থাকে ৫০ শতাংশ মুনাফার।
আমাদের দেশে কৃষিকাজে খরচ বেশি, মুনাফা কম। মূল্যস্ফীতির চাপও গ্রামেই বেশি, এতে নাকাল অবস্থায় কৃষক। তাদের চিকিৎসার অভাব, শিক্ষার অভাব। মাঠে তাদের সাপে ছোবল দেয়, বজ্রপাতেও মারা যায়। কিন্তু তার কোনো প্রতিবিধান সচরাচর হয় না। সরকারি সাহায্য-সহায়তার ক্ষেত্রেও তাদের হিস্যা কম। বাংলাদেশের একজন কৃষক বছরে কৃষি উপকরণ ভর্তুকি পায় মাত্র ৯০০ টাকা। চীনে এর পরিমাণ ২০ হাজার টাকা। ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও বলিভিয়ায় কৃষকপ্রতি ভর্তুকির পরিমাণ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। এ বঞ্চনার কথা সবার অনুধাবন করা দরকার। বৈষম্যবিরোধী নীতিমালা প্রণয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা দরকার আমাদের গরিব ও নিরীহ কৃষকদের।
সরকার যদি খাদ্য সংগ্রহের পুরোটা ধান হিসেবে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি কিনে নেয়, তাহলে তা কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের জন্য ভালো হবে। সরকারি গুদামগুলোতে কৃষক ধান বিক্রি করতে গেলে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় ধানের আর্দ্রতা নিয়ে। কৃষকের বড় অংশ সাধারণত ভেজা ধান বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। কিন্তু সরকার ১৪ শতাংশের বেশি আর্দ্রতা থাকলে তা কিনতে চায় না। এ সমস্যার সমাধান হিসেবে স্থানীয় পর্যায়ে আর্দ্রতা অনুযায়ী ধানের দাম ঠিক করা যেতে পারে।
সরকার চালকলগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ধান সেখানে ভাঙাতে পারে। দেশের বেশির ভাগ বড় চালকলে ধান শুকানোর আধুনিক ব্যবস্থা আছে। ধানের আর্দ্রতা বেশি হলে চালকল মালিক দ্রুত তা সরকারি গুদাম থেকে নিয়ে যাবেন। আর আর্দ্রতা কম থাকলে সরকার তা গুদামে রেখে দিয়ে সুবিধামতো সময়ে ভাঙানোর ব্যবস্থা করবে।
কৃষকের কাছ থেকে ধান সরাসরি কিনতে পারলে সেটা খুবই ভালো কাজ হবে। তাহলে কৃষক দাম পাবেন। কিন্তু তার আগে এত ধান, এত কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি কেনার মতো অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রথমেই গুদামগুলোকে উন্নত করতে হবে। ভবিষ্যতে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে অটোরাইস মিলেও বিনিয়োগ করার কথা ভাবতে হবে।
লেখখ : ড. জাহাঙ্গীর আলম খান, কৃষি অর্থনীতিবিদ