চুপ করুন, ছোট মানুষ: পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ইলন মাস্ক
Published: 10th, March 2025 GMT
ইউক্রেনে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ব্যবহার নিয়ে গতকাল রোববার পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাডোস্লা সিকোরস্কির সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং ধনকুবের ইলন মাস্ক বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) ওই দিন তাঁরা একের পর এক পোস্ট দিতে থাকেন।
স্টারলিংক বন্ধ করার কথা উল্লেখ করে মাস্কের একটি পোস্টের জবাবে সিকোরস্কি ইঙ্গিত দিয়ে লেখেন, এমন যেকোনো হুমকি দেওয়ার কারণে ইন্টারনেট সরবরাহকারী অন্য প্রতিষ্ঠান খোঁজা শুরু করতে হবে।
ইলন মাস্ক স্টারলিংক বন্ধ করে দেবেন বলে যে কথা উঠেছে, রুবিও তা তাৎক্ষণিক উড়িয়ে দিয়ে সিকোরস্কির প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার আহ্বান জানান।
একটু পরপর এই তিনজন এক্সে পাল্টাপাল্টি পোস্ট করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত মাস্ক সিকোরস্কিকে ‘ছোট মানুষ’ বলে সম্বোধন করেন।
স্টারলিংকের সিস্টেমটি স্পেসএক্সের মিশনের অংশ, যা বিশ্বজুড়ে যুদ্ধক্ষেত্রের মতো প্রত্যন্ত এবং সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করে।
স্টারলিংক ‘ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর মেরুদণ্ড ’—এ কথা লিখে এক্সে পোস্ট করেন মাস্ক। এরপরই রোববার বিষয়টি নিয়ে তাঁদের তিনজনের মধ্যে বিতর্ক বেঁধে যায়। মাস্ক লিখেছেন, ‘আমি যদি এটি বন্ধ করে দিই, তবে তাদের পুরো রণাঙ্গন ভেঙে পড়বে।’
এরপর সিকোরস্কি মাস্কের পোস্টের জবাবে বলেন, পোল্যান্ড এই পরিষেবার (স্টারলিংক) জন্য অর্থ পরিশোধ করছে।
সিকোরস্কি লিখেছেন, ইউক্রেনের স্টারলিংকগুলোর জন্য পোলিশ ডিজিটাইজেশন মন্ত্রণালয় প্রতিবছর প্রায় পাঁচ কোটি ডলার খরচ করে । তিনি বলেন, ‘স্পেসএক্স যদি একটি অনির্ভরযোগ্য সেবাদানকারী হিসেবে প্রমাণিত হয়, তবে আমরা অন্য সরবরাহকারীদের সন্ধান করতে বাধ্য হব।’
রুবিও এক্স পোস্টে লিখেছেন, ‘স্টারলিংক থেকে ইউক্রেনকে বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে কেউ কোনো হুমকি দেয়নি। স্টারলিংক ছাড়া ইউক্রেন অনেক আগেই এই যুদ্ধে হেরে যেত এবং রুশরা এখন পোল্যান্ডের সীমান্তে থাকত। তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।’
মাস্ক পরে সিকোরস্কির পোস্টের জবাবে তাকে ‘ছোট মানুষ’ বলে অভিহিত করেন।
মাস্ক লিখেছেন, ‘চুপ করুন, ছোট মানুষ। আপনারা খরচের একটা ক্ষুদ্র অংশ পরিশোধ করেন। আর স্টারলিংকের কোনো বিকল্প নেই।’
স্টারলিংক টার্মিনালগুলো ইউক্রেনের সামরিক অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আক্রমণ শুরুর পর থেকে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশটিতে হাজার হাজার টার্মিনাল রয়েছে, যার মধ্যে ২০২৩ সালের জুনে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের কেনা ৫০০টি পর্যন্ত টার্মিনাল রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন
এছাড়াও পড়ুন:
খুঁটির জোরবিহীন ইউক্রেন
হোয়াইট হাউস ইঙ্গিত দিয়েছে শান্তি আলোচনার তারিখ নির্ধারণের পরে সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু মার্কিন অস্ত্র ও গোয়েন্দা তথ্য আবার প্রবাহিত হতে শুরু করলেও, ইউক্রেনীয় জেনারেলদের তাদের সবচেয়ে বড় সমর্থকের সুবিধামাফিক যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। কেননা তারা অস্ত্র ও গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ ইচ্ছামতো বন্ধ করে দিতে পারে। যুদ্ধক্ষেত্রে এই নতুন অনিশ্চিত বিশ্বে প্রভাব পড়বে।
ইউক্রেন এখন এক ভয়াবহ উভয় সংকটের মুখোমুখি– হয় সীমিত সম্পদ নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাও অথবা শত্রুর কাছে জমি ছেড়ে দিয়ে সেনাশক্তি সংহত করো এবং রাজনৈতিক ফায়দা পেতে শত্রুপক্ষকে ভৌগোলিক সুবিধা দাও। যুদ্ধের গতিবিধি বরাবরই উপকরণ সরবরাহের ওপর নির্ভর করেছে। মস্কো আশা করে, কিয়েভের কাছে গোলাবারুদের অভাব দেখা দিলে তখন তারা নতুন আক্রমণ শানাবে। প্রকৃতপক্ষে ২০২৪ সালে পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য এসেছিল ইউক্রেনে সরবরাহ ঘাটতির সময়ে।
রাশিয়া সুবিধা পেতে কামানের গোলা ব্যবহার করেছে। কৌশলগত শহর আভদিভকারের উত্তর ও পশ্চিমে অগ্রসর হতে বিমানের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে মাঝে মাঝে ইউক্রেনের প্রতিটি কামান শেলের বিপরীতে রাশিয়া পাল্টা ২০টি শেল নিক্ষেপ করেছে। ২০২৫ সালে যুদ্ধক্ষেত্রগুলোর দিকে তাকালে বোঝা যায়, রাশিয়া দক্ষিণ ইউক্রেনের খেরসন থেকে উত্তরে খারকিভ পর্যন্ত নিজেদের চলমান আক্রমণাত্মক অভিযান জোরালো করতে এবং রাশিয়ান কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় ইউনিটগুলো বিতাড়িত করার জন্য যে কোনো সরবরাহ থামিয়ে দিতে পারে।
এর মানে ইউক্রেনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোথায় কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টির আগেই নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে এবং কোথায় রাশিয়ার সৈন্যদের হতাশ করার জন্য সুযোগ বুঝে বিলম্বিত কর্মসূচি নিতে হবে। সুবিধা নিতে শত্রুপক্ষকে ভৌগোলিক জায়গা ছেড়ে দেওয়া একটি পুরোনো সামরিক কৌশল, কিন্তু যখন ভূখণ্ডটি আপনার সার্বভৌম অঞ্চল হয় তখন এটি বিশাল রাজনৈতিক মূল্য সৃষ্টি করে। অতএব, বিলম্বিত পদক্ষেপের সামরিক যুক্তি ইউক্রেনে রাজনৈতিক ঝুঁকি তৈরি ও বেসামরিক মনোবল কমিয়ে দেয় এবং সরকারের যুদ্ধ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বেসামরিক সমর্থন দুর্বল হয়ে পড়ে।
এই সংকট যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেন তার প্রচেষ্টাকে কোথায় এবং কীভাবে গুরুত্ব দেবে, তা নির্ধারণ করবে। প্রথমত, রাশিয়ার বিরুদ্ধে দূরপাল্লার হামলা দিন দিন আকর্ষণ হারাবে। ইউক্রেনকে তার প্রতিরক্ষামূলক
অভিযানের জটিলতা কমাতে হবে এবং নিজস্ব ভূখণ্ডের অনেক ভেতরে ফিরে আসতে হবে।
দ্বিতীয়ত, রাশিয়া শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ করে না। এটি আলোচনার টেবিলে সুবিধা নিতে জবরদস্তিমূলক বিমান হামলা চালায়। মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিত থাকায় রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনীয় শহর ও অবকাঠামোর ওপর হামলা বাড়ানোর একটি দুর্দান্ত সুযোগ রয়েছে, যা কিয়েভকে তার সম্মুখ সারির প্রতিরক্ষা বা রাজনৈতিক কেন্দ্র রক্ষা করতে বেদনাদায়ক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবে। ভিয়েতনাম থেকে ইউক্রেন পর্যন্ত বিমানশক্তি ঐতিহাসিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ দরকষাকষির হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন উত্তর ভিয়েতনামে পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে বোমা হামলা চালিয়েছিলেন। রাশিয়া এখন ইউক্রেনের সঙ্গেও একই আচরণ করতে পারে।
এ অবস্থান থেকে বলা যায়, রাশিয়া প্রতিরক্ষা দুর্বল করা এবং মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে ইউক্রেনের শহর ও অবকাঠামোর বিরুদ্ধে তার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন অভিযান কঠোরতর করতে পারে। কিয়েভ তার আকাশপথের সুরক্ষায় গোয়েন্দা তথ্য ও মার্কিন নির্মিত প্যাট্রিয়ট ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের মতো পদ্ধতির ক্ষেত্রে পশ্চিমা সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। তাই এই জবরদস্তিমূলক অভিযান কার্যকর হতে পারে।
বেঞ্জামিন জেনসেন: মেরিন কর্পস ইউনিভার্সিটির অ্যাডভান্সড ওয়ারফাইটিং স্কুলের কৌশলগত
অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক; দ্য কনভারসেশন থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম