যশোরে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ আদেশ দেন।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পাবলিক প্রসিকিউটর) ও জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক বলেন, এ মামলায় সাক্ষ্যপ্রমাণে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। একই সঙ্গে যেসব জায়গায় তাঁর বিরুদ্ধে এ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে, তা–ও প্রত্যাহারের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আফজাল হোসেন ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর যশোরে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করেন। আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য কোতোয়ালি থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। ২০১৫ সালে ২২ জানুয়ারি মামলাটি থানায় রেকর্ড করা হয়।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, তারেক রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ঘৃণা, বিদ্বেষ, অবজ্ঞা ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন, যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। যশোর কোতোয়ালি থানা–পুলিশ তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সৈয়দ সাবেরুল হক বলেন, ‘ওই মামলায় যথার্থ তথ্যপ্রমাণ না থাকায় রাষ্ট্রপক্ষের গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলাটি প্রত্যাহারের জন্যে নিম্ন আদালতে আবেদন করি। কিন্তু আদালত আবেদন অগ্রাহ্য করেন। এরপর আমরা আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হই, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক মামলা। এ মামলার কোনো মেরিট নেই। এ কারণে আদালতে তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘ছবি কূটনীতি’ একালে ও সেকালে

ছবি নিছক কোনো ব‍্যক্তিগত স্মৃতি নয়। ছবি একটি টেক্সট, আর রাজনৈতিক দুনিয়ায় এই ছবির ব‍্যবহার বরাবরই কূটনৈতিক কৌশলের অংশ। বিখ‍্যাত মানুষদের সঙ্গে ছবি দিয়ে মানুষ তার ক্ষমতা এবং সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে অন‍্যকে জানান দেয়। বিখ‍্যাত মানুষদেরও তা করতে হয়। তাই কূটনীতিতে ব্যবহৃত ছবির পেছনের রাজনীতি নিয়েও জনগণের আগ্রহের শেষ নেই। 

সম্ভবত সে কারণেই সম্প্রতি ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে দ্বিপক্ষীয় বৈঠককালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া একটি ছবি নিয়ে জনপরিসরে বেশ আলোচনা হলো। 

৫ আগস্ট বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের পর গত ৪ এপ্রিলই প্রথম নরেন্দ্র মোদি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎ হলো। সেখানে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস নরেন্দ্র মোদিকে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে তোলা একটি ছবি উপহার দেন। ছবিটিতে দেখা যায়, ওই সময় মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত ১০২তম ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে মুহাম্মদ ইউনূসকে স্বর্ণপদক পরিয়ে দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। 

গত আট মাসে প্রধান উপদেষ্টা বিখ‍্যাত ব‍্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে একটি ছবির অ্যালবাম দিয়েছেন। অ্যালবামটি মূলত জুলাই গণঅভ‍্যুত্থান নিয়ে। সেখানে আছে ছবি, গ্রাফিতিসহ অনেক কিছু। কিন্তু নরেন্দ্র মোদির ভাগ‍্যে সে বই জুটল না। তিনি দেখতে পেলেন না গণঅভ্যুত্থানের নানা ধরনের ডকুমেন্টেশন। 

কেন ড. ইউনূস এই ছবি বাছাই করলেন উপহার হিসেবে? শুধু তাই নয়, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎকে সরকার খুবই ফলপ্রসূ হিসেবে বিভিন্ন মাধ‍্যমে প্রচার করছে এবং সবখানেই এই উপহারের ছবি ব্যবহৃত হচ্ছে। এ কারণেই ছবি কূটনীতির বিষয়টি চলে আসে।

এটি ড. ইউনূসের ব‍্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা ছবি। বিভিন্ন সংবাদমাধ‍্যমেও এই ছবি সেই সময় প্রকাশিত হয়েছিল। ড. ইউনূসের মতো নোবেল বিজয়ীর জন্য এর আলাদা তাৎপর্য এতদিন ছিল না। কিন্তু সেই ছবিই এখন বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক মেরামত করার কাজে ব‍্যবহৃত হয়েছে। 

হতে পারে ড. ইউনূস মোদিকে স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন– মোদি তাঁকে আগেই সম্মানিত করেছেন, এখনও তা অব‍্যাহত রাখবেন। দ্বিতীয়ত, তিনি যে এই ছবি এতদিন যত্নে রেখেছেন– সেটি মোদিকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া। ৫ আগস্টের পর প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সরকার ‘আগের মতোই আছে’ দাবি করলেও বাস্তবতা যে ভিন্ন, তা ‘সাধারণ মানুষ’ও বুঝতে পারে। তাই ব‍্যক্তিগত ছবি উপহার দিয়ে ইউনূস সম্ভবত ২০১৫ সালের বন্ধুত্বকে স্মরণ করিয়ে ‘তেতো’ হওয়া কূটনৈতিক সম্পর্ক ‘মিষ্টি’ করার চেষ্টা করেছেন।

ছবি কূটনীতি বাংলাদেশে এই প্রথম ঘটল, তা নয়। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের সেই সময়কার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি২০ সম্মেলনে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে একটি সেলফি তোলেন। ছবিতে হাস্যোজ্জ্বল বাইডেনের সঙ্গে শেখ হাসিনা এবং তাঁর মেয়ে পুতুলকেও দেখা যায়। তখন ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে প্রচার করা হয়েছিল, বাইডেন নিজেই এ সেলফি তুলতে চেয়েছেন। 

তখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ ছিল। তাই সেই সেলফি রাজনৈতিক ময়দানে ব‍্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। সেই ছবি বিশেষত বিএনপি নেতাদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে বলে দাবি করেছিল আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্টই বলেছিলেন, সেলফি কাউকে রক্ষা করতে পারবে না এবং তিনি আওয়ামী নেতাদের সেই ছবি গলায় ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন‍্যও বলেছিলেন। 

কে কাকে কী উপহার দেবেন, সেটি একেবারেই ব‍্যক্তিগত বিবেচনার বিষয়। কিন্তু জুলাই অ্যালবামটি নরেন্দ্র মোদিকে দেওয়া হলো না কেন? আমার জানামতে, সেই বইয়ের বিভিন্ন অংশে ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা, ঢাকা’ প্রভৃতি স্লোগান-সংবলিত গ্রাফিতি ও ছবি রয়েছে। তাই হয়তো ধরে নেওয়া হয়েছে– সেই বই দিলে কূটনৈতিক সম্পর্ক ‘ভালো’ হওয়ার পরিবর্তে আরও খারাপ হতে পারে। 

প্রশ্ন হচ্ছে, এতদিন ভারতের বিরুদ্ধে ‘আধিপত‍্য’  বিস্তারের অভিযোগ করে ব‍্যক্তিগত স্মৃতির ছবি উপহার দিয়ে কোন উদ্দেশ্য পূরণ হবে? উপরন্তু, এতদিন সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ভারতের জন্য অস্বস্তিকর কথাবার্তার পর ২০১৫ সালের ছবি দিয়ে কি নরেন্দ্র মোদিকে খুশি করা যাবে? বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং নতুন দল এনসিপি সমর্থকরাই বা ইউনূস-মোদি সাক্ষাৎ নিয়ে কেন এত উচ্ছ্বসিত? যাই হোক, অভ‍্যুত্থানের আলোকচিত্র ও গ্রাফিতি বইয়ের বদলে ব‍্যক্তিগত সংগ্রহের ছবি উপহারের কূটনীতি ভারতকে খুশি করতে চাওয়ারই বার্তা দেয়।

সরকারের প্রতিশ্রুতি ঠিক থাকলে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হবে। রাজনীতির ময়দানে এ নিয়ে আলোচনা কম নয়। তবে কি সব দলই মনে করছে, আমাদের নির্বাচনে ‘ভারত ফ্যাক্টর’ আগের মতোই গুরুত্বপূর্ণ? 

জো বাইডেনের সঙ্গে শেখ হাসিনার সেলফি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় তুলতে পারলেও ওই সরকারের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ক উন্নয়নে সেলফিটি তেমন কাজে আসেনি। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহই তার প্রমাণ। এই প্রেক্ষাপটে ড. ইউনূসের ‘ছবি কূটনীতি’ কতটা সফল হবে– এ প্রশ্ন কেউ তুললে তাকে অন্তত তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।

জোবাইদা নাসরীন: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ‍্যালয়
 zobaidanasreen@gmail.com

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ছবি কূটনীতি’ একালে ও সেকালে